অনেকদিন পর লিখতে বসেছি আজ । হয়ত আজও লিখতাম না কিন্তু ভিনদেশী কোন বন্ধুকে শুভেচ্ছা পাঠানোর জন্য লেখা ছাড়া কিছুই পেলাম না ।
আমার স্মৃতিশক্তি অনেক কম ,তাই ভুলেই গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল । সেই শীতের সকালে আমাদের সাক্ষাৎকার ছিল সেদিন ,আমি ছিলাম জ্বরে আচ্ছন্ন ,মা আর আমি রিক্সা করে সাতসকালে হাজির হয়েছিলাম ক্যাম্পাসের নোটিশবোর্ডের সামনে । দেখলাম দুটো ছেলে নোটিশবোর্ড ঘাঁটছে তাদের কি জিজ্ঞাসা করেছিলাম বা তারা কি জবাব দিয়েছিল তা মনে নেই । চার বছর পর ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় তুমি মনে করে দিয়েছিলে সেইদিনের ছেলেটি তুমি ছিলে ।
এরপর প্রায়ই দেখতাম ক্লাসে খোঁচা মেরে একে ওকে পচাতে ,বৃষ্টির জুতো ফেলে দিয়েছিলে। আমি একবার তোমার মাঙ্কি ক্যাপ মাথা থেকে নিয়ে দৌড় দিয়েছিলাম তাও তুমি কিছু বলনি ।
মানুশ স্বভাবতই নির্ভরশীল কারো না কারো উপর । আমিও নির্ভর করতাম আমার বন্ধুদের উপর । যেদিন আমার নির্ভরতার সেরা বন্ধুটিকে হারালাম সেদিন থেকে আমি একা হয়ে গিয়েছিলাম । ক্যাম্পাস ট্যুরে যাবার আগে ভেবেছিলাম খুব কষ্ট পাব একা সেখানে অথচ যাবার পর বুঝেছিলাম অদৃশ্য ভাবে তুমি সাথে আছ আরেকজন নির্ভরযোগ্য মানুষ হয়ে ।
যেদিন ক্যাম্পাসে রাগ ডে নিয়ে তোমরা প্লান করছিলে সেদিন আমি বাধা দিয়েছিলাম পুরো ক্যাম্পাসের সাথে করব না বলে তুমি তোমরা সেদিন পারতে আমার কথা না শুনতে কিন্তু তোমরা ক্যাম্পাসের সব ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের গালি ঝাড়ি থ্রেট হজম করেও আমার প্রস্তাব না কর নি ।ধীরে ধীরে তোমার প্রতি নির্ভর করতে শুরু করলাম । যেদিন আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে আসব সেদিন খুব কষ্ট হচ্ছিল একা একা কিভাবে এত জিনিসপত্র বাড়ি নিয়ে আসব ? অনেক লজ্জার মাথা খেয়ে তোমাকে সাথে নিয়ে কুরিয়ার করলাম । সেদিন রোজা ছিল আমি বার বার জিজ্ঞাসা করছিলাম কেঊ ঢাকা যাবে নাকি? আমি তার সাথে যাব, কাঊকে না পেয়ে তুমি বললে তুমি নিজেই ঢাকা যাবে আমিও খুশি মনে রাজি হয়ে গেলাম । সেদিন তোমার সাথে রাস্তায় অনেক কথা হল ঢাকায় নেমে আমায় বাসার কাছাকাছি পর্যন্ত এগিয়ে দিলে । আমি তখনও জানতাম না সেদিন রাতেই তুমি আবার রাজশাহী চলে যাও, তুমি শুধু আমার জন্যই ঢাকায় এসেছিলে ।
এরপর ঢাকায় আসার পর কত জ্বালিয়েছি তোমাকে তার ইয়ত্তা নেই। যখন যেখানে ডেকেছি তখনই তোমাকে কাছে পেয়েছি বন্ধু হিসেবে। তুমি দূরদেশে চলে যাবে জানতাম কিন্তু ভাবিনি আমি এতটা একা হয়ে যাব তোমার প্রস্থানের পর। নির্ভরতার স্থান খালি হয়ে গেলে মানুষ অসহায় বোধ করে আমিও করতাম । এখন নিজেকে সামলে নিয়েছি । সামনের দিনগুলোতে আর এই ভুল করব না । শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা আর করব না।
বন্ধু এখন তোমার জন্মদিনের শেষ প্রহর। জানি আমার এই লেখা তোমার কাছে হাস্যকর লাগবে তবুও বলি, আমি আমার নির্ভরতার মানুষ হিসেবে তোমাকে আজীবন বন্ধু হিসেবে পেতে চাই।আমি জানি যে ব্যক্তি বন্ধুহীন তার মত অভাগা আর নেই । আমি অভাগা হতে চাইনা । চিরদিন তোমাকে একজন ভালোবন্ধু হিসেবেই পেতে চাই । অনেক কিছুই লিখব ভেবে বসেছিলাম কিন্তু লিখতে বসার পর আর কিছু মাথায় আসছে না এমনই হয় স্মৃতি স্মৃতিতেই থাকে তা কলমে আসতে চায় না ।
আমার এক নির্ভরতার মানুষের জন্য লেখা কবিতা তোমাকেও দিলাম কেননা তুমিও আমার একজন নির্ভরতার মানুষ ।তোমাকে দেয়ার মত আমার কাছে এর চাইতে বেশি কিছুই নেই ।
ভালো থেকো বন্ধু ,আকাশ ছাড়ানো স্বপ্ন দেখো ,
বাউন্ডুলে হয়েই আমার বন্ধু থেকো ।
কি দেব তোমায় ?
কি দেব ভেবে ভেবে করেছি কতক রাত পার,
আর-ডি ,নিউমার্কেট ঘুরেছি বহুবার,
কি দেব আজ তোমার শুভক্ষণে ?
ভেবেছি গতকাল,আজ ভোর,সন্ধ্যে ।
কতকিছু খুঁজেছি আপন মনে,
দেবার কিছু পাইনি খুঁজে উপহারের বনে।
গোল-চত্বরের শিওলি ফুলের সুবাস,
জিরো-পয়েন্টের সব রজনীগন্ধা,
কাঠগোলাপের প্রতিটি পাপড়ি
আর গন্ধরাজের একটি স্তবক,
তোমাকে দিলাম।
গভীর রাতের গূঞ্জন তোমাকে শুনালাম,
কুয়াশা ভেজা ভোরে তোমাকে হাঁটালাম,
কনকনে শীতের সকালে তোমাকে জাগালাম,
সূর্যাস্ত দেখাতে পদ্মার পাড়ে নিয়ে চললাম।
বেলদারপারের ডাবল শিকের বার্গার খাওয়ালাম,
জিরো-পয়েন্টের লেবু চা খাওয়ালাম,
জীবনানন্দের একগুচ্ছ কবিতা পড়ার অনুরোধ করলাম,
তোমার প্রিয় হিন্দি মুভি ডিভিডি করে রাখলাম।
আমার সাধ আর সাধ্যে শুধুই অনুভুতি,
যার সবই আমার পঙক্তি।
সবই হয়ত কাল্পনিক অথবা কাব্য-
তবে এই ছিল তোমার প্রাপ্য।
শুভ জন্মদিন 'vessilli' ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৪