প্রযুক্তি ব্যবহারেও নেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের সমঅধিকার
ডিজিটাল বাংলাদেশ করার লক্ষে বর্তমানে প্রযুক্তির নতুন নতুন গবেষণা আর উদভাবন নিয়ে কাজ হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেক গুলোই আবার বাংলা ভাষায় মোবাইল ফোনের উপযোগী প্রযুক্তি। কারণ, এখন মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে। আর এর সাহায্যে করা যায় না এমন কিছুই নেই। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন এই প্রযুক্তি গুলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহারের উপযোগী কি না? হয় তো কখনও ভাবেন নি! তবে আজ একটা গল্প শুনাই। ঠিক গল্প না একটা কষ্টের অভিঞ্গতা।
অভিঞ্গতাটি সেয়ার করার আগে কিছু তথ্য জানানো প্রয়োজন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা এ্যান্ড্রোয়েড সিসটেমের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টকব্যাক নামের একটি স্ক্রীন রিডার এর সাহায্যে। এর সাথে ভয়েজ সিন্থেসাইজার যুক্ত থাকে। এছাড়াও ইংরেজী সহ অন্যান্য ভাষার কিছু ভয়েজ সিন্থেসাইজার গুগোল প্লেস্টোরে পাওয়া যায়। তেমনি একটি ভয়েজ সিন্থেসাইজার হল ই-স্পিক। ই-স্পিক এর সুবিধা হল এর একটি বাংলা ভার্শন আছে। এর সাহায্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা বাংলা যেকোন ওয়েব সাইট এর কন্টেন্ট পড়তে পারবে। যদিও এই ভয়েজ সিন্থেসাইজারটি দাম খুব বেশি না, মাত্র এক ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য এটা খুবই দূসপ্রাপ্য। কারণ, এটি কেনার জন্য যে ইন্টারন্যাশনাল কেডিট কার্ড প্রয়োজন, তা বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে নেই। তাই চাইলেও বাংলাদেশের বেশির ভাগ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ এই এ্যাপসটি ব্যবহার করতে পারছে না। এবার বলি আমার কষ্টের কথা।
আমার একটা বাজে স্বভাব হল আমি অন্যান্য সকলের (দৃষ্টিমান মানুষ) মতই টেকনলোজির সব সুবিধা ভোগ করতে চাই। অন্য সবাই যেমন মোবাইলের মাধ্যমে বাংলা অনলাইন নিউজ পড়ে, ব্লগিং করে, ফেস বুকিং করে, বাংলায় কম্যান্ড করে। আমিও চাইলাম সেই সুবিধা গুলি ভোগ করতে। তাই অনেক কষ্টে, কাট-খড় পুঁড়িয়ে বাংলা ই-স্পিক ভয়েজ সিন্থেসাইজার যোগাড় করি। তারপর মহা আনন্দে তা দিয়ে বাংলা বিভিন্ন সাইট দেখতে থাকি। সাথে সাথে চলে ফেস বুকিং। বাংলায় বিভিন্ন সাইট দেখতে দেখতে সকলের মত চাইলাম বাংলায় লিখতে। একটা বিশ্বাস ছিল, গুগোল প্লে স্টোরে এত্ত গুলো বাংলা কিবোর্ড আছে এর মধ্যে একটা না একটা আমার ব্যবহার উপযোগী হবেই। আর আমার ভুলটা ছিল সেখানেই। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার দেশের যারা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন , তাঁরা কখনই আমাদের (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ) কথা ভাবেন না। আমি গুগোল প্লেস্টোর থেকে সব বাংলা কিবোর্ড যেমন বিজয়, রিদমিক, অভ্র, মায়াবী, বর্নালী আরও কিছু (নাম ভুলে গেছি) বাংলা কিবোর্ড নামিয়ে সেগুলো ইন্সটল করে খুব আগ্রহ নিয়ে বাংলা লিখতে গেলাম। আর খেলাম এক বড় ধরণের ধাক্কা। একটাও কিবোর্ড আমার উপযোগী অর্থাৎ এক্সেসেবল করে তৈরী করা হয় নি! অথচ আমার মত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের এক্সেসেবল করার জন্য বার্তি তো কোন খরচের ব্যাপার ছিল না। শুধু কিবোর্ডটি তৈরী করার সময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের এক্সেসিবিলিটির ব্যাপারটা লক্ষ রাখলেই হত। আমারো তো আছে প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার।
আজ আপনারা যখন বাসে কিংবা রিক্সায় বসে ফেস বুকে বন্ধুদের বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কিংবা বন্ধুদের পোষ্টে কম্যান্ড করছেন বা মোবাইল দিয়ে ব্লগিং করছেন, তখন আমার অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন কম্পিউটারের সামনে বসবো আর কখনই বা তাদের শুভেচ্ছা জানাব। এ এক চরম অসহায়ত্ব! আজ আমার এই লেখাটি পড়ে হয় তো অনেকেরই মন খারাপ হবে, কেউ কেউ আবার কষ্টও পাবেন। কিন্তু বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আমিও কম কষ্ট নিয়ে এই কথা গুলো লিখছি না। আমার হয় তো আপনার বন্ধু হবার কোন যোগ্যতাই নেই, শুধু মানুষ হিসেবে এতটুকু অনুরোধ করব, আপনি কিংবা আপনার পরিচিত জন যখনি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করবেন কিংবা প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করবেন তখন যেন আমার মত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের এক্সেসিবিলিটির বিষয় গুলো একটু মাথায় রেখে কাজ করেন। আর যদি তাই সম্ভব হয়, তবে আমরাও চলতে পারি আপনাদের পাশে পাশে, রাখতে পারি ভূমিকা জাতীয় উন্নয়নে। আপনাদের সুন্দর মুহূর্তটুকু নষ্ট করবার জন্য আন্তরিক ভাবে দূঃখিত। সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।
আশিকুর রহমান অমিত
ফেস বুক: facebook.com/ashiqur.rahmanamit.7
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭