ঘটনাটা চার দিন আগের। ভলভো বাসে করে মহাখালী থেকে মতিঝিল যাচ্ছি। ফার্মগেটে এসে মাগরিবের আজান হয়ে গেল। সেদিন আমি রোজা রেখেছিলাম। পানি আর ছোলা দিয়ে ইফতারি করলাম বাসেই। বাস প্রায় ফাকা।
আমার সামনে চার পাঁচ সিট আগে বসে আছে বোরকা পরা এক মহিলা। মহিলার দু চোখ ছাড়া আর সব কিছু ঢাকা। হাতে ও পায়ে মোজা। তার আগের সিটে বসে আছে এক সদ্য তরুণী। তারা দুজন আলাদা বসেছিল। কিন্তু আজান দেয়ার পর তারা পাশাপাশি বসল। বোরকা পরা মহিলাটি তার ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করলেন। টিফিন বক্স সাজানো ইফতারির বিভিন্ন সামগ্রীতে। দুজন মিলে খেতে শুরু করলেন।
বোরকা পরা মহিলা তার মুখের নেকাব খুলেননি। বরং এক হাতে নেকাব তুলে তার ভেতর খাবার মুখে তুলে দিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে পাশে বসা মেয়েটা বেশ আধুনিক ও খোলামেলা পোশাক পরা। গায়ে ওড়না নেই। কালো স্কার্টের সাথে লাল টপস পরায় তাকে বাঙ্গালি বলে মনে হচ্ছিল না। চকচকে পোশাকের কারণে তার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। তার কানে মোবাইল ফোনে হেডসেট। খাওয়ার সময়েও তার কান থেকে হেডসেট খুলেনি।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম, বোরকা পরা মহিলাটি মেয়েটিকে খাবার ঠেলে দিচ্ছে আর মেয়েটি মামনি আর খাব না বলে বিরক্তি প্রকাশ করছে।
তারা দুজন মা ও মেয়ে। অথচ কী অবাক কাণ্ড ! তাদের পোশাকে রাত দিন তফাৎ। রমজান মাস। মা তার সর্বাঙ্গ ঢেকে রেখেছে বোরকায়। আর মেয়ে তার আধুনিকতা ফুটিয়ে তুলতে খোলামেলা বিদেশী পোশাক পরেছে।
অথচ বোরকা যদি পরা হয় পুরুষের চোখের আড়াল করার জন্য তবে তরুণীদের বেশি করে বোরকা পরা দরকার। মধ্যবয়স্ক মহিলাদের প্রতি পুরুষের আগ্রহ যতটুকু থাকে, তার তুলনায় তরুণীদের প্রতি বেশি আগ্রহ থাকে। অথচ মা বোরকায় আবৃত থেকে মেয়েকে খোলামেলা পোশাকে রেখেছেন। হওয়ার কথা ছিল উল্টো। হয় দুজনে আধুনিক পোশাক পরবেন, নচেৎ দুজনে বোরকা পরবেন।
আমার এক বন্ধু বলে, মায়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাই বোরকায় ঢাকা। মেয়ের তো বিয়ে হয়নি। তাই একটু দেখিয়ে না চললে হবে কেন ? নইলে তো ছেলেরা পছন্দ করবে না।
তরুণী মেয়েটিকে খোলামেলা পোশাকে রেখে মধ্যবয়স্ক মায়ের বোরকা পরা কিভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত হল বুঝতে পারলাম না। এটা কোন রেওয়াজ ?