অরিত্র,
তোমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, কে তোমার প্রিয়-দীপাবলী নাকি মাধবীলতা । তুমি অনেক্ষণ ভেবে উত্তর দিয়েছিলে- দীপাবলী, মনে আছে তোমার ? দীপাবলির ভালোবাসা,ত্যাগ,সংগ্রাম তোমায় বেশি মুগ্ধ করেছিল । আমি একটু মন খারাপ করেছিলাম তখন । কারণ আমার যে মাধবীলতাকে ভীষণ পছন্দ ! কতোবার যে নিজেকে মাধবীলতা ভেবেছি ! কতোগুলো দিন মেয়েটা অনিমেষের জন্যে অপেক্ষা করেছে বলো ? সোজা কথা নয় তো !
তবে ইদানিং খুব বাবলির কথা মনে হচ্ছে জানো ! সেই যে সে অভি আর ঝুমাদেবীর সখ্যতা দেখতে পেল ,তারপরের কটাদিন যে বেচারির কি যন্ত্রণায় কেটেছে, তা আজকের আমায় দেখেই বুঝতে পাচ্ছি । অবাক হচ্ছো তো ? এই আমিই কি আমার পরিবর্তনে কম অবাক হচ্ছি বলো !
অথচ একটাসময় নিজেকে খুব রবোমানবী ভাবতাম । অনুভূতি নেই তা নয়, আছে, ভীষণ তীব্র অনুভূতি । তবে তা সুপ্ত রাখতে পারার ক্ষমতা নিয়ে মনে মনে যে গর্ব ছিল না,তা বলতে পারি না । কিন্তু আজ তবে এতোটা দহন কী করে উত্তপ্ত লাভা হয়ে সব শৃঙ্খল নিমিষেই নাই করে দিচ্ছে !
আমার শান্ত, চর জাগা বুকের জলে এ কোন সর্বনাশা ঘূর্ণি হয়ে তুমি এলে ?
ভীষণ উদ্দাম তুমি । প্রলয়ঙ্করী কালবোশেখীতে উচ্ছ্বসিত তোমায় দেখে, এই আমি কুঁকড়ে যাই । তোমার বিস্তৃত বুকেই খুঁজে পেতে ঠাঁই করে নিই তিতিরছানার মতো । তবু যেন শূন্যতা জাগে । আমার যে ঝড়ে আতঙ্ক ! আমি বরাবরই চেয়েছি একান্ত নিরিবিলি এক দুপুর, দুটো অলস ঘুঘু কিংবা ডাহুকের ডাক শুনে দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া একটা রেললাইন,তার দুপাশ ধরে হাত ধরে হেঁটে যাওয়া তুমি আর আমি, আর আমাদের এক মহাকাল গল্প ।
অথবা একটা শান্ত,গভীর কালো টলমলে দীঘির জলে পড়ন্ত বিকেলের ছায়ায় ভেসে বেড়াবার কালে,আমায় তুমি কবিতা শোনাবে, আর আমি তোমাতে বিভোর হবো । তোমার ভরাট কন্ঠে খুব কষ্টের একটা কবিতা শুনে আমি যখন চোখ বুজে কাঁদবো, তুমি তখন ফিসফিস করে আমায় ডাকবে । তোমার খুব প্রিয়, খুব ভালোলাগার, একান্ত গোপন কোন একটা নামে । যে নামটা কেবল আমার । কেবলই আমার হবে ।
অরিত্র, তোমার নাহয় ঝড় থাকুক । ঝুমঝুম বৃষ্টি থাকুক । আমায় দেওয়া এক মহাকাল গল্প নাহয় বাদই থাকুক । আমি নাহয় তোমার জীবনে উষ্ণ কোন প্রণয় লগন নই ; নই উচ্ছল কোন স্বপ্নও ; তবু কোন এক ভোরের ঘোরে, যখন তুমি ঘুমোতে যাবে, নাহয় ভুল করেই, একটু ভালোবেসে আমায় একটা নাম দিও ?
ভীষণ অন্ধকার কোন একলা বৃষ্টির রাতে যখন খুব ভয় করবে আমার,শরীরের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরবার জন্যে যখন তুমি সেখানে থাকবে না,আমি সেই অন্ধকার, স্যাঁতসেতে বাতাসে শুনে নেবো তুমি আমার সেই নাম ধরে অস্ফুটে ডাকছো !
শীতের কোন হিম কুয়াশার ভ্রান্তিভেদে, যদি কোনদিন এই পত্র তোমার ঠিকানা চিনে নেয়, আমায় সেদিন একটা নাম দেবে,অরিত্র ?
ইতি,
আমি,
অরিত্রের অরিত্রীয়া ।
#কাল্পনিক_চিঠিপত্র_এক
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:২৭