এক.
ম্যাক আর মিনিকে খাবার দিচ্ছেন শায়লা । প্রতিদিন সকালে এসময়টা ওদের ব্রেকফাস্ট টাইম । শায়লা খাঁচা পরিষ্কার করেন , নতুন বেসপ্লেট দেন । তারপর ট্রে তে করে সূর্যমুখীর বীচি আর কাজুবাদাম নিয়ে আসতেই তারা বুঝে ফেলে এখন উড়াউড়ি বন্ধ করে খেয়ে নেবার পালা । আজও এর ব্যতিক্রম হলোনা । ওদেরকে খাবার দিয়ে শায়লা দেখেন ইশতিয়াক অফিসের জন্য রেডি ।
-আজ ফিরবে তো ? মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করেন শায়লা ।
-কেন ? কাজ আছে ?
-না এমনি জানতে চেয়েছি ।
-শিওর না । ফোন করব ।
শায়লা ব্রেকফাস্ট টেবিলে থাকতেই ইশতিয়াক বের হয়ে গেলেন অফিসের উদ্দেশ্যে ।
এবার শায়লার অখন্ড অবসর । পত্রিকা হাতে বারান্দায় বসেন । রাস্তায় লাগোয়া বাড়ি । ছুটতে থাকা সবাইকে দেখে ভাবেন -"আচ্ছা, সব মানুষই কি ইশতিয়াক এর মতো ? নাকি সবই তার কপাল ?" একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে অজান্তেই ।
আজ আর রান্না করবেন না । দরকার নেই । মনে হচ্ছে সে আজ ফিরবে না । এই বিশাল প্রাচুর্যপূর্ন ফ্ল্যাটে ম্যাক আর মিনিই শায়লার কথা বলার সঙ্গী । মানুষ না হয়েও আপনজন ।
একেকটা দিন যে কিভাবে কাটে ! টেলিভিশনের রঙিন ভুবনে চোখ রেখে ভাবেন-তন্ময় হয়ে । এই তো সেদিনের কথা সব । কতগুলো বসন্ত পার হয়ে গেলো । কখন যে চোখ লেগে এসেছিলো টেরই পাননি । ম্যাক চেঁচিয়ে উঠাতে পলকা ঘুমটা চলে গেলো ।
সন্ধ্যা হব হব করছে । দ্রুতহাতে সব পর্দা টেনে দেন। বারান্দার দরজা বন্ধ করেন । রুটিনমাফিক কাজ সব । ইশতিয়াক আসবে তো ?
ভোর হয়ে গেলো । এখনো তো এলো না । মধ্যবয়সের এ প্রতীক্ষা বড় অসহ্য লাগে । কোথায় হতে পারে এখন ? অফিসে ? ক্লাব ? কিংবা কারো ফ্ল্যাটে ? শায়লা ভাবতে চান না । বছর কয়েক আগেও কে বিশ্বাস করতো...আর এখন ....স্রেফ নিয়তি...
দুই.
কেটে গেলো আরো একটা দিন । অফিসের কাজ এখনও ফুরোয়নি ? শায়লা আপনমনে হাসেন । হঠাৎই মনে হয়-আচ্ছা, ইশতিয়াক নেই, তবে সে কেন পড়ে আছে তার ফ্ল্যাট আগলে ? বড় অবহেলিত মনে হয় নিজেকে । শিকল নেই কোথাও, তবু আছে যেন ! চোখ জ্বালা করে । বন্দি ! মায়ার শেকলে ! কার মায়া এ ? সংসারের ? হবেও বা !
হঠাত পাখি দুটোর দিকে চোখ পড়ে । ম্যাক ও মিনি । তারই উপহার । আচ্ছা, ওরা কি শায়লার ভালোবাসা বুঝতে পারে ? কি মনে হতে পায়ে পায়ে এগিয়ে যান শায়লা । খাঁচার দরজা খুলে ম্যাক কে বের করে উড়িয়ে দেন। ম্যাক ফিরে তাকায়- মিনি ! শায়লা এবার মিনিকেও উড়িয়ে দেন । একটু হেসে বলেন - ভালো থাকিস । অজান্তেই গলাটা ধরে আসে ।
তিন .
ভোরে বারান্দার দরজা খুলতেই বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে পড়েন শায়লা । রেলিং এর একপাশে জড়সড় হয়ে বসে ম্যাক মিনি । তাকে দেখেই তারস্বরে চেঁচামেচি করতে করতে ছুটে এলো । মাথায় , হাতে বসে , বারবার ঠোঁট ছুঁয়ে যেন বলতে চাইলো - "আমরা ফিরে এসেছি ! আর যাবো না তোমায় রেখে ! " শায়লা হঠাত হৃদয় দিয়ে অনুভব করলেন - ম্যাক মিনি হারিয়ে যেতে গিয়েও ফিরে এসেছে ! তাহলে ইশতিয়াক ও কি পারে না ফিরতে ? তার কাছে ? আসবে...নিশ্চয়ই আসবে ! শায়লার গাল দুটো ক্রমশই জলের ছোঁয়া পায় ।
মানবীর চোখের জল , পাখির চেঁচামেচি আর সকালের এক টুকরো রোদ-শায়লার বারান্দায় যেন নতুন এক ভোরের বার্তা দিয়ে যায় ...
# আমার লেখা প্রথম গল্প কিংবা বলা উচিত-গল্প লেখার চেষ্টা । বেশ আগে লেখা যদিও । একটা অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে লেখাটা ঘিরে...প্রথম বলেই হয়তো !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১০