'যতদূর অদেখা বকুল'
.
.
.
.
.
.
টেনিস বল এমন সমস্ত জানলা ভাঙার গল্প জানে। ব্যাটে বলে ঠিকমতো করতে পারলেই বকুলদের বাড়ি। আমার শৈশব তখনো পাড়ার মোড়, দত্তবাড়ির শানবাঁধানো খেলার মাঠ আর হাঁটু ছলে যাওয়া। সেলাই খোলা জামায় বকুল তখন খেলার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া টেনিস বল।
বকুলের সাথে হঠাৎ কখনো দেখা হলে জানতে চাইতাম— তোমার ফুল ফোটে? এই প্রশ্নে হেসে উঠতো ওর আড়চোখ। সেও কী ভীষণ দু’চোখ! যেন সমুদ্রের সেলাই খুলে দিচ্ছে কেউ। এরপর আমি আর কখনো সমুদ্র দেখিনি। তবে গলির মাথায় রোজ এসে বসা জুতো সারাই করা লোকটার কাছে— সমুদ্র যাবার পথ শুনেছি বহুবার। মাঝেসাঝে কোন এক কৌটো খুলে, সে নাকের কাছে ধরতো। বলতো সমুদ্রের গন্ধ। সমুদ্রফেরৎ কারো জুতো থেকে খুঁটে রেখেছে। আমরা গন্ধ নিতাম। আমার কাছে কেন জানি বকুল মনে হতো। অন্যদের কাছে সমুদ্র। আচ্ছা, বকুল কি তার শেমিজের ভিতর সমুদ্র লুকিয়ে রাখার উপায় জানে। আমি তার পথ ধ’রে একদিন সমুদ্রে পৌঁছে যাই। আমার ফেরার পথে ঝ’রে পড়ে— যতদূর অদেখা বকুল।
শালতারগাঙ পেরিয়ে সে’বার মাতাল ট্রেন মাস্টার ন’বগি শীত নিয়ে ঢুকে পড়েছিল আমাদের পাড়ায়। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে দেখা যেত, দৃশ্যের নখে শরাবখানার চৌকিদার নিদে জুলুজুলু চোখে কুয়াশা এঁকে দিচ্ছে। কোনকোন ঘুম ভাঙা দৃশ্যে— বকুলের ঢুলে ঢুলে পড়া নামাজের ধ্বনি বাড়ি খেত মা’র উলুধ্বনির গায়। এযেন ব্যথার পাশে জ্বলে থাকা কিছু বিষ পিঁপড়ের ট্রমা।
ভোরবেলা সঙ্গে ক’রে বকুল এমন কোন ব্যথাগ্রস্তদিনে আমাদের বাড়িতে আসে। জলে ডুবে মরা লাশের মতো ফুলে ওঠে ওর চোখমুখ। ফিরে যাবার পথে আমায় ঠিকানা বলে যায়— শুভপুর।
এরপর বকুলদের বাড়িতে এসে ওঠে রেণুদি’রা। আমার বয়স ততদিনে পৌঁছে গেছে গার্লস কলেজের কোমর পর্যন্ত। কাপের ঘ্রাণ নিতে নিতে আমি এখন চায়ের দিকে সরিয়ে রাখি ঠোঁট। এই সমস্ত অবহেলা নিয়ে বকুলফুলের আত্মহত্যা টুকে রাখে রোদ।
.
.
.
.
শুভ্র সরকার[/সব
.
.
ছবি: Peter Zelei
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩২