somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশী টপ গান (Top Gun)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবঃ) সাইফুল আজম দুইটি ভিন্ন দেশের বিমান বাহিনীকে এয়ার টু এয়ার কমব্যাটে (Dogfight) পরাস্ত করার এক অনন্য গৌরবের অধিকারী। সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে পাবনা জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন এবং দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত কোলকাতাতে তার শৈশব কাটান। ১৯৪৭ সালে তার পরিবার পূর্বাঞ্চলে চলে আসে যা মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) অংশে পড়ে। ১৯৫৫ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে গমন করেন এবং সেখানে তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান এয়ারফোর্স একাডেমীতে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে পাইলট অফিসার পদে কমিশন পান।

সাইফুল আজমকে Cessna T-37 বিমান দ্বারা জেট বিমানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে F-86 Sabre এর উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তাকে এরিজোনিয়ার লিউক এয়ারফোর্স বেজে পাঠানো হয়।

১৯৬৫ সালে তরুণ ফ্লাইং অফিসার থাকা অবস্থায় তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি Folland Gnat বিমান ভূপাতিত করেন, যার স্বীকৃতি সরূপ তিনি সিতারা-ই-জুরাত (বাংলাদেশের বীরবিক্রম এর সমতুল্য, পাকিস্তানের তৃতীয় সামরিক বীরত্বের খেতাব) খেতাবে ভূষিত হন। এর দুই বছর পর ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সাইফুল আজম প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে ইসরাইলী বিমান ভূপাতিত করার খ্যাতি অর্জন করেন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মাত্র দুইটি মিশনে তিনি একটি Vatour Bomber, একটি Super Mystere এবং একটি Mirage IIIC ভূপাতিত করেন। এর ফলে তার মোট শিকারের সংখ্যা দাড়ায় চারে। অদ্যাবধি তিনি ডগফাইটের ইতিহাসে ইসরাইলী বিমানের সর্বচ্চো শিকারি। তার অসাধারণ কৌশল ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জর্ডান ও ইরাক উভয় দেশই তাকে বীর পদক প্রদান করে।

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি চারটি F-86 Sabre এর ফরমেশনে অংশ নিয়ে ভারতের ভূমীতে আক্রমণের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেন। হঠাৎ দুইটি ভারতীয় Folland Gnat (Folland Gnat, F-86 এর চেয়ে Superior) তাদের পথ রোধ করে। ঘটনার জেরে সৃষ্ট ডগফাইটে সাইফুল আজম একটি Folland Gnat গোলাবর্ষণ করে ভূপাতিত করেন (পাইলট, ফ্লাইং অফিসার ভি মায়াদেব নিরাপদে Eject করে বেরিয়ে আসলে তাকে যুদ্ধবন্দি করা হয়)। অন্য Folland Gnat টি রনেভঙ্গ দিয়েছে বুঝতে পারার পর সেটিকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।

১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম এবং অপর আরেক জন পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সারওয়ার সাদ কে রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীতে প্রেষণে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তারা রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীর Hawker Hunter অপারেট করতেন। তারা সেখানে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ৫ জুন ১৯৬৭ সালে আল মাফরাক থেকে উড্ডয়নের পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম একটি Mystere IV কে তার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন।

এই ঘটনার মাত্র দুই দিন পর, ৭ জুন ১৯৬৭ ইরাকী বিমান বাহিনীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইরাকী এয়ার ফিল্ড H-3 এ তিনি অবস্থান করাকালে, ইসরাইলী জঙ্গি জেট এয়ার ফিল্ড H-3 আক্রমণ করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম ইরাকী Hawker Hunter বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করে একটি Mirage III এবং একটি Vautour Bomber ভূপাতিত করেন (Vautour Bomber টির ছোট্ট কিছু ভগ্নাবশেষ সাইফুল আজমের Hunter এ গেঁথে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে তার সহকর্মীরা বুঝতে পারেন তিনি বিমানটিকে আকাশেই গুড়িয়ে দিয়েছেন)। উল্লেখ্য Mirage III সাইফুল আজমের Hawker Hunter এর তুলনায় বহুগুণে Superior। এছাড়া Mystere IV ও এয়ার টু এয়ার কমব্যাটের ক্ষেত্রে Hawker Hunter এর চেয়ে Superior। Mirage III, Mystere IV সাইফুল আজমের Skill, Tactics ও সাহসের কাছে পরাস্ত হয়েছে।


১৯৭১ সালে বাঙ্গালী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান বিমান বাহিনী Grounded করে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলে তিনি নতুন গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর Director of Flight Safety এবং পরবর্তীতে Director of Operation হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৭ সালে তিনি উইং কমান্ডার পদে পদোন্নতি পান এবং ঢাকা বিমান বাহিনী ঘাটির বেস কমান্ডার হন।

১৯৮০ সালে সাইফুল আজম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পর তিনি দুই টার্মে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি Film Development Corporation এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ছিলেন। তিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সময়ে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বর্তমানে নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সি, লিঃ (এয়ার ক্রাফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিও পরিচালনা করেন।

২০০১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। তিনি বাইশ জন “Living Eagles” এর একজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২৯
২৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×