আপনারা কি রিয়ার এডমিরাল (অবঃ) মোশারফ হোসেন খান কে চেনেন? না চেনাটাই স্বাভাবিক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন অপ্রচারিত নায়ক। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমানের কথা আমরা সবাই জানি। তিনি পাকিস্তানী যুদ্ধ বিমান নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা কয়জন জানি যে আরেক জন বীর ছিলেন যিনি একটি পুরো সাবমেরিন দখল করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন?
১৯৭১ সালে ফ্রান্সের উপকূলীয় শহর তুলুনে পাকিস্তানের একটি সাবমেরিনে ততকালীন লেঃ কমান্ডার মোশারফ হোসেন সহ বাংলাদেশের মোট ১১ জন নাবিক প্রশিক্ষনরত ছিলেন। লেঃ কমান্ডার মোশারফ হোসেন এবং অপর ৮ জন বাংলাদেশী নাবিক সিদ্ধান্ত নেন সাবমেরিনটি তারা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য, তাদের এই দুসাহসী পরিকল্পনার কথা পাকিস্তানীদের কাছে ফাঁস হয়ে যায়। জীবন রক্ষার তাগীদে তাদেরকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পালিয়ে আসতে হয়। কিন্তু তাদের সাথে ১ জন বাংলাদেশী নাবিক পালিয়ে আসতে পারেননি, পাকিস্তানীদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন তিনি। জেনেভায় তারা ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন।
ভারতীয় দূতাবাসের সহায়তায় তারা ৯ এপ্রিল ১৯৭১ নয়া দিল্লি এসে পৌছান। এখানে এসে লেঃ কমান্ডার মোশারফ হোসেন একটি বিশেষ গোপনীয় (Top Secret) নৌ কমান্ডো প্রশিক্ষন পরিচালনা শুরু করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৩০০ জন প্রশিক্ষন শুরু করলেও পরবর্তীতে সর্বমোট ৪৯৯ জনকে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়।
লেঃ কমান্ডার মোশারফ হোসেনের প্রশিক্ষিত এই বাহিনী ১৬ আগষ্ট ১৯৭১ চট্টগ্রাম, মংলা, নারায়রগঞ্জ ও চাঁদপুরে যুগপদ ভাবে পাকস্তানী সরবরাহ জাহাজ সমূহে সফলভাবে মাইন হামলা করে। ঐতিহাসিক এই হামলাটি “অপারেশন জ্যাকপট” নামে পরিচিত।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে লেঃ কমান্ডার মোশারফ হোসেন কে বীর উত্তম খেতাবে ভূসীত করা হয়। তিনি বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে দীর্ঘ সময় অবদান রেখে রিয়ার এডমিরাল পদে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বর্তমান সরকার এই বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:০০