somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড়লোকদের ব্যাপারস্যাপার

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগ লেখা আর পত্রিকায় লেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ভাষাগত পার্থক্য তো আছেই, বিষয়বস্তু নিয়ে অনেক সাবধান থাকতে হয়। কোন লেখায় কে আবার আহত হয় বোঝা মুশকিল, হোক না রম্য। তাই লিখতে হলো একটা শালীন রম্য। আজ ছাপা হয়েছে রসালোতে।


আবারও সেরা ধনী হয়েছেন বিল গেটস। তিনি নাকি সেকেন্ড আয় করেন ৩ হাজার ডলার। মানিব্যাগ থেকে ১ হাজার ডলারের নোট পড়ে গেলে তা আবার পকেটস্থ করেন না। কারণ তাতে যে সময় চলে সেই একই সময়ে এরচেয়েও বেশি আয় করেন। বিল গেটস-এর একার যে সম্পদ, বিশ্বের ১৪০টি দেশের এক বছরের আয় তার চেয়ে কম। এই অক্টোবর মাসেই সংবাদটা ছাপা হয়। তারপরেই জুলমত তরফদারের মাথায় ধনী মানুষরা মোটামুটি গেঁথে গেল।
ছোটবেলায় পড়েছিলেন অর্থই অনর্থের মূল। এখন আর এসব কথা বিশ্বাস করেন না। এটা ঠিক যে দুনিয়ায় অর্থ ছাড়াও আরও অনেক লোভনীয়, মোহনীয়, রসালো জিনিষ আছে। কিন্তু সমসা হচ্ছে সেই সব জিনিষও কিনতে হয় অর্থ দিয়েই।
ধনী হওয়ার নানা তরিকা আছে। টাকা ধার নিয়ে বেমালুম ভুলে যাওয়া একটা বড় তরিকা। বাংলাদেশে একসময় একসময় এটাই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় পন্থা। তবে নিয়ম হচ্ছে অল্প টাকা ঋণ নিলে চলবে না। নিতে হবে বড় অংকের অর্থ। কেউ যদি ১শ টাকা ধার নেয় তাহলে সেটা একান্তই তার সমস্যা। কিন্তু ব্যাংক থেকে ১শ কোটি টাকা ধার নিলে সেটা তখন ব্যাংকের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা থেকে অনেক ব্যাংক এখনও বের হতে পারেনি। আর এই সমস্যা ব্যাংকের ঘাড়ে দিয়ে কোটিপতি হওয়ার সংখ্যা বাংলাদেশে মোটেই কম নয়।
জুলমত তরফদারের বন্ধু সালেম মিয়া, একজন সফল ব্যক্তি। কারণ সালেম মিয়া দুই হাতে টাকা আয় করে। তবে জুলমত জানে, সালেম মিয়ার চেয়েও সফল ব্যক্তি এই দেশে আছে। এই যেমন, মিসেস সালেম। কেননা তিনি বিয়ে করার জন্য সালেম মিয়াকে খুঁজে বের করতে পেরেছিলেন।
সালেম মিয়ার বউয়ের কথাই যখন আসলো তখন জুলমত তরফদারের সেই পুরানো গল্পটা মনে পড়লো। একজন মহিলা কি কোনো পুরুষকে লাখপতি বানাতে পারে? উত্তরটা হলো- পারে, যদি পুরুষটি কোটিপতি হন।
পরিস্থিতি আর আগের মতো নাই। বরং উল্টাটাও আছে। গজনফর আলী একজন কোটিপতি। সদ্য একটি চেম্বারের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সাংবাদিকরা গেছে সাক্ষাৎকার নিতে। নানা প্রশ্ন। একজন প্রশ্ন করলেন-‘আমরা জেনেছি যে আপনি শূন্য হাতে একটা মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তাহলে আপনার কোটিপতি হওয়ার রহস্য কী।
গজনফর আলী-আমার পকেটে ছিল মাত্র ১০ টাকা। আজ থেকে ৩০ বছর আগের ঘটনা। আমি সেই ১০টাকা দিয়ে ৪টা আপেল কিনেছিলাম। সেই আপেল কলের পানি দিয়ে ধুয়ে চকচকা করে বিক্রি করি ১২ টাকায়। দু’টাকা লাভ হয়েছিল।
সাংবাদিক: তারপর?
গজনফর আলী: ১২টাকা দিয়ে আমি আবার ৫টি আপেল কিনি। সেই আপেল পরিস্কার আর চকচকে করে বিক্রি করি ১৫ টাকায়। সেই ১৫ টাকা দিয়ে ৬টি আপেল কিনে বিক্রি করে পাই ২০ টাকা।
সাংবাদিক: তারপর?
গজনফর আলী: এভাবে প্রথম মাস শেষে আমার লাভ হয় ৪০ টাকা।
সাংবাদিক: তারপর কী হল? এভাবেই কোটিপতি হয়ে গেলেন?
গজনফর আলী: আরে না। এভাবে কি আর কোটিপতি হওয়া যায়। তারপরেই তো আমার স্ত্রীর বাবা মানে আমার শ্বশুর মারা গেলেন। আর আমি তার কয়েক কোটি টাকার পুরো সম্পত্তি পেয়ে গেলাম।
জুলমত তরফদার জানেন এই যুগে আজকাল সবাই প্রায় এই পথেই বড় লোক হয়েছেন। শ্বশুরের সম্পত্তি অবশ্য সবচেয়ে বেশি পান সরকারি আমলারা। বেতন যাই পান, ঢাকায় অনেকেরই একাধিক গাড়ি-বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিক। ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা। যখনই কেউ ধরা পড়েন জানা যায় সবই শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি, বউয়ের নামে রাখা।
জুলমতের বন্ধু সোলায়মান মৃধা বাড়াবাড়ি ধরণের বড়লোক। কত টাকা আছে তা সে নিজেও জানে না। নিজের কত টাকা আছে তা যিনি জানেন তিনি নাকি আর ধনীর সংজ্ঞায় পড়েন না। কিন্তু এক সময়ে এই সোলায়মান মৃধাও ফেঁসে গেলেন এক মামলায়। জেল থেকে বাঁচতে গেলেন শহরের নামি একজন আইনজীবীর কাছে।
সোলায়মান মৃধা-আমি জেলে যেতে চাই না।
আইনহজীবী-কেন, জেলে যেতে চান না। অপরাধ করলে তো শাস্তি পেতেই হবে।
সোলায়মান মৃধা-আমার অনেক টাকা। আমি জীবনকে এখনো উপভোগ করতে চাই। তাছাড়া আমি জানি ধনীরা কখনো জেলে যায় না।
আইনজীবী-ঠিক আছে। আমি ব্যবস্থা করছি। আসলেই ধনীরা কখনো জেলে যায় না। আপনি বাসায় যান।
কথা রেখেছিলেন আইনজীবী। সোলায়মান মৃধা ৫ বছর মামলা চলার পর যখন জেলে গেলেন তখন সে আর ধনী ছিল না। এখন সেই আইনজীবী নিজেই দেশের সবচেয়ে বড় ধনীদের একজন।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
৪৯টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সেই এফ-১৬

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৪





শর্ত ছিল, আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্যই ব্যবহার করা যাবে। পাক বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলির উপর নিয়মিত নজরদারির বন্দোবস্তও ছিল চুক্তিতে। কিন্তু তা ফাঁকি দিয়েই ভারতের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮


কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....


ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৬ বছরে কয়েক হাজার মানুষকে গুম-খুন করেছে, লাখ লাখ মানুষকে নিপীড়ন করেছে। সারাদেশে তুমুল বেগে লুটপাট চালিয়েছে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃষ্ট (ছোটগল্প)

লিখেছেন বোকা মানুষ বলতে চায়, ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৯



বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই আব্বার সাথে দেখা। আমাদের পুরাতন ঢাকার এই জীর্ণ পুরাতন বাড়ির একটাই ভালো দিক, মাঝখানে একটা পেয়ারা গাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল উঠান। পেয়ারা গাছের নীচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১০ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামে যে দল গঠন করেছিলেন, তা থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দুরত্বে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সুশাষন প্রতিষ্ঠিত না করলেও বিএনপির বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×