রাও ফরমান আলী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণরের উপদেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবি হত্যার প্রধান রূপকার হিসাবে তিনি চিহ্নিত। এই হত্যাকান্ড হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বর। তবে হামিদুর রহমান কমিশনের কাছে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে হত্যা যে হয়েছিল তা তিনি স্বীকার করেছিলেন। তার দাবি ছিল বধ্যভূমিতে লাশ পাওয়া গিয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর এবং তিনি আত্মসমর্পন করেন ১৬ ডিসেম্বর।
তবে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন কমিশনকে। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের ৯ বা ১০ তারিখ তাকে পিলখানায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন মে. জে. জামসেদ। সেখানে গিয়ে তিনি অনেকগুলো গাড়ি দেখতে পান। জেনারেল জামসেদ তখন গাড়িতে উঠছিলেন এবং তাকেও সঙ্গে আসতে বলেন। গাড়িতে পথে জেনারেল জামসেদ তাকে জানান যে তারা কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে চাচ্ছেন। রাও ফরমান আলী কমিশনের কাছে দাবি করেছেন যে তিনি এর বিরোধীতা করেছিলেন। গাড়িতে করে নিয়াজির কার্যালয়ে যান, সেখানেও নাকি তিনি এই পরিকল্পনার বিরোধীতা করেছিলেন।
পাকিস্তান যেভাবে ভাগ হলো বইতে ফরমান আলী এ বিষয়ে আরও লিখেছেন, ‘বিরোধীতা শোনা হয়নি এবং কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি এখনো জানি না তাদের কোথায়। সম্ভবত মুজাহিদদের প্রহরায় তাদের কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে পাকি সেনাবাহিনীর তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং আÍসমর্পনের পর তারা পালিয়ে যায়।’
এরপর ফরমান আলীর দাবি সম্ভবত মুক্তিবাহিনীই পাক বাহিনীর বদনাম তৈরির জন্য বন্দীদের ও মুজাহিদদের মেরে ফেলে।
জেনারেল নিয়াজি তার বইতে ফরমান আলীতে একজন সুযোগ সন্ধানী ও ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। নিয়াজির লেখাতেও ইঙ্গিত আছে যে ফরমান আলীই বুদ্ধিজীবি হত্যার নেপথ্যে। তিনি লিখেছেন, ফরমান আলী তাকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে তাকে পাকিস্তান ফেরত পাঠানো হয়। বুদ্ধিজীবি হত্যার অভিযোগে তাকে মুক্তিবাহিনী তাকে মেরে ফেলতে পারে বলে ফরমান আলী এই অনুরোধ করেছিলেন এবং সে সময় তাকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একজন মানুষ বলে মনে হয়েছিল।
আরেকজন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা, সে সময়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকী বলেছেন, ‘মে. জে. ফরমান আলী ছিলেন বেসামরিক প্রশাসনের দায়িত্বে। তিনি জানতেন না এমন কিছু সেসময় ঘটতো না।’
সাবেক তথ্য সচিব ও লেখক আলতাফ গওহর বলেছেন, ১৫ ডিসেম্বর রাতে তিনি রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর এক বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিকে আটক অবস্থা থেকে ছাড় করিয়েছিলেন।
আবার জেনারেল নিয়াজিও ১৯৭১ নিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেই বই তিনি উৎসর্গ করেছেন রাজাকারদের। তিনি পাকিস্তানি, পাকিস্তানি বা সেনা সদস্যদের নয়, বরং উৎসর্গ করলেন রাজাকারদের। তিনিও কিন্তু রাও ফরমান আলীকেই অনেক কিছুর জন্য দায়ি করেছেন। বইটির নাম দ্য বিট্রেইল অব পাকিস্তান।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:১৭