বাংলাদেশে তীব্র সমালোচিত এবং একই সাথে সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তিটির নাম সম্ভবত মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। একজন ব্যক্তি বিশাল সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন কোয়ার্টারের মানুষের কাছে একই সাথে পরম পুজনীয় আবার চরম ঘৃণার পাত্র হয়; জিনিসটা অবাক করার মতই। খানিক অস্বাভাবিক।তার সমালোচনাকারীরা কিন্তু একাধিক মহলে বিভক্ত। সকল ক্রিটিককে এক করে ফেলাটা টেকনিকালি ভুল।
১) জনাব জাফর ইকবালকে নিয়ে স্রেফ দুই খানা কথা বলার আছে। জাফর ইকবার নাস্তিক না আস্তিক; ইসলামফোব নাকি বিরাট আল্লামা শায়খুল হাদিস; সেইটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নাই। নাস্তিক হলে কিছু যায় না, বিরাট আস্তিক, হযরত মাওলানা হলেও কিছু আসে না।
হ্যা, উগ্র মৌলবাদিদের আসে। এরা অনাদিকাল থেকেই জাফর ইকবালকে নাস্তিক, ইসলামের শত্রু বলে আসছে। সেইটা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে না।
জাফর ইকবালের সমস্যা হল, তিনি একটা ফ্যসিস্ট রেজিমের বৈধতাদানকারী! এইটা এতোটাই গর্হিত অপরাধ, এর কাছে অন্যান্য অভিযোগ অনুযোগ তূচ্ছ। একজন বুদ্ধিজীবীর সবচেয়ে বড়ো নৈতিক অসততা হল বুদ্ধিবৃত্তিক সার্ভিস দিয়ে অন্যায়কে জায়েজ করা, জনমানুষের আশা আকাঙ্খার বিরুদ্ধে গিয়ে অত্যাচারীর পক্ষে অস্ত্র(কলম) ধরা।
এখন দয়া করে এই এক্সকিউজ দেখায়েন না, উনি ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সৎ, একেবারে তার মোচের রঙের মতো সাদাসিধে, অমায়িক।
এইটা খুবই ফালতু যুক্তি। উইন্সটন চার্চিল ছিলো মদ্যপ, মেজাজি, রুক্ষ ব্যাবহার। নারী আসক্ত। কথিত আছে তার ৩/৪টা রক্ষিতা ছিলো। অপরদিকে হিটলার ছিলো একেবারে ক্লিন ব্যক্তি ইমেজের অধিকারি। তার বান্ধবীর প্রতি বিশ্বস্ত, সুইসাইডের আগে বিয়েও করে। শিল্পীমনা, আর্টিস্ট। তাই ব্যক্তিজীবনে কে কেমন; সেইটা দিয়ে বৃহত পরিসরে কর্মের বিচার করা যায় না।
সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে এইখানে একটা একেবারে নিজস্ব মতামত দিতে চাচ্ছি(যদিও জিনিসটা নিয়ে তেমন আগ্রহ নাই, তবুও বলা):
জাফর ইকবালের নাস্তিকতার জন্য না, বরং প্রচ্ছন্ন ইসলাম বিদ্বেষের কারনেই হুজুরেরা তার উপর ক্ষেপা। কেননা, জাফর সাহেব কেনো; আরেক স্বনামধন্য ‘ডাকতার’, যিনি নোবেল পেয়ে আওয়ামিলিগ সভানেত্রী’র ব্যক্তিগত ঈর্ষায় পড়ে রোষানলের শিকার হয়ে যথেষ্ট হেনস্থা হয়েছেন; (নাম বলবো না। বললে, চাকরি থাকবে না :-|)।
তিনিও মনে মননে পুরোপুরি নাস্তিক। জিন্দেগীতেও মনেহয় আল্লাহ খোদার নাম নেননি(এখন ঘরের কোণে লুকিয়ে খতমে কুরআন দিয়ে এত্তেকাফ করেন কি না, তা তো বলতে পারবো না!)। কেবলমাত্র নামের বামপাশে মোহাম্মাদ থাকাই একমাত্র চিহ্ন যে তিনি মোহামেডান! তাকে তো জনাব জাফরের মতো কোনও প্রতিক্রিয়াশীল মহলের বিরোধীতায় পড়তে হয়নি।
মিস্টার জাফরের সাথে তার পার্থক্য হল, ইসলাম সম্বন্ধে ভালো/মন্দ কিছুই বলেন নি। জাফর সাহেবের প্রচ্ছন্ন ইসলাবিদ্বেষ ভিমরুলের চাকে ঢিল মারার মত অবস্থা বলা যায়। এই পার্থক্যটাই জাফর ইকবালকে একটা গোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
যাই হোক, এইটা নিয়েও মাথাব্যাথা নাই। এই পথ তিনিই বেছে নিয়েছেন।
২) আরেকটা খেলো অভিযোগ হচ্ছে তিনি কেনো মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি,যেখানে তার বাবা যুদ্ধে শহিদ হন, তবুও তিনি অস্ত্র হাতে না তুলে কোদাল ঠুকে ট্রেঞ্চ খুঁড়েছেন, ইত্যাদি। এইটাও খুবই হালকা, প্রায় হাস্যকর একটা অভিযোগ। যুদ্ধে অংশ নেয়া(এবং কিভাবে অংশ নেয়া, সেইটাকি সরাসরি কমব্যাট না অন্য কিছু)- এইটা একটা চয়েস। যুদ্ধ করলেই কেবল আমি যুদ্ধের চেতনার দীক্ষা দিতে পারবো, এরকম প্রি-রিকুইজিট কিছু থাকা উচিত না। হ্যা, এইটা নিয়ে স্যাটায়ার হতে পারে, হালকা পিঞ্চ হতে পারে; কিন্তু এইটা ‘অভিযোগ’ হিসেবে গণ্য করলে মূল অভিযোগের অন্তঃসারশূণ্যতা প্রমাণ হয়।
৩) তাহলে প্রশ্ন হল, জাফর ইকবালের সমস্যাটা কী?
এইখানে, একটা মজার কথা মনে পড়ল। কোনও এক সেলিব্রিটির স্টাটাসে এই ব্যাপারে কথা বলায় তিনি একটা কবিতার লিঙ্ক ধরিয়ে দিলেন এবং কাঠাল পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কবিতাটা পুরোপুরি মনে নাই, শেষ লাইনটা ছিলো, তাহলে সমস্যাটা শুধুই জাফর ইকবালে। কবি’র নাম সম্ভবত মৃদুল আহমেদ বা মৃদুল মাহবুব, এরকম।
যা হোক, সমস্যা আছে বটে। সমস্যা না থাকলে একজন মানুষের পক্ষে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে বিরাগভাজন হওয়া সম্ভব হত না। যেমনটা বললাম, তিনি ফ্যাসিস্ট রেজিমের বৈধতাদানকারী। এইখানে অনেকে একটা জিনিস গুলিয়ে ফেলে।
একটু ঝেড়ে কাশি, এই কথাটা বলায়, সবচেয়ে বেশী যেই পালটা যুক্তি শুনতে হয়, তিনি আওয়ামিলিগ সমর্থক, কোনও সমস্যা?
না! কোনও সমস্যা তো নাই।
কিন্তু তিনি কি ‘শুধুই’ আওয়ামি সমর্থক? বা এই ‘কারনে’ মানুষ তাকে অপছন্দ করে? আওয়ামি সমর্থক হলেই বা দোষের হবে কেনো!
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এসেছে যেই দলটার হাত ধরে, যেই সংগঠনের অদ্ভুদ্যয়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে আছে; ৬ দফা, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, মহান স্বাধীনতা; এসেছে যেই দলটার হাত ধরে, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন সংগঠন, তার সমর্থক হওয়া তো মোটেও কোনও ‘অপরাধ’ না! এমনকি সরাসরি সেই দলের নেতা হলেও তো সমস্যা নাই!
তাহলে?
তাহলে, ব্যাপার হল, আওয়ামি সমর্থক হওয়া আর অন্যায়ের সমর্থনকারী; এক নহে!
একটা ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সংগঠনের সমর্থক/কর্মী/নেতা হওয়া;
আর-
একটা অনৈতিক ফ্যাসিস্ট রেজিমের অত্যাচার অনাচার; উন্মত্ত লুটপাট, রিভার্ভ চুরি; ব্যাংক ডাকাতি, ১৬ কোটি জনগণের সম্পদ নিয়ে লুটতরাজ; এই অনাচার, অন্যায়ের বৈধতা দেয়া, জায়েজ ঘোষণা করা; লুটতরাজ জারি রাখতে প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদীদের উপর নেমে আসা অত্যাচার-দমন পীড়ন, গুম-খুন-ক্রসফায়ারের খড়গ নেমে আসা; এবং এই জঙ্গলি উন্মত্ততাকে জায়েজ বলে সার্টিফিকেট দেয়া; এক জিনিস নয়!
এই সূক্ষ পার্থক্যটা ‘স্যারভক্তগণ’ ইচ্ছাকৃত ভাবে গুলিয়ে ফেলেন, অথবা বুঝেন না কিংবা বুঝতে চান না!
_____________________________
এইটাই হল জাফর ইকবালের অসুখ। ডায়াগনসিস করে পিন পয়েন্ট এই অসুখটাই পাওয়া যায় কেবল। এরপর কেউ, জাফর ইকবালে সমস্যা কী- জিজ্ঞেস করলেই এই নোটের লিঙ্কটা ধরিয়ে দিবো।
আসুন, এবারে জাফর ইকবালের একটা গান শুনি।
______________________________
সামহয়ারইন-এ ১০০ বছর পর লগইন করলাম। পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হল কেনো বুঝলাম না। পাসওয়ার্ড টাসওয়ার্ড আবার ভুলে যাই। মনে থাকে না :-|
আগেরটা মুখস্ত হয়ে গেছিলো

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:১৯