somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প সন্তান হারা বেদনা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যমুনা শপিং মলের একটা শো-রুমে শার্ট দেখছি। একটা শার্ট দেখতে বেশ ভালো লাগছে! এত দামি শার্ট কেনা যাবে না। আমি এখানে মাঝেমধ্যে আসি ঘুরে ঘুরে দেখি কখনো কেনা হয় না।

এ সময় হুট করে একজন মহিলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মহিলা আমাকে জড়িয়ে ধরিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন!

আমার কেমন আনইজি লাগছে! মহিলা আমার মায়ের চেয়েও বয়সে বড় হবে।

মহিলা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলছেন, এতদিন কোথায় ছিলি বাপ? আমার সোনাটা বলেই আমাকে চুমু দিতে শুরু করলেন!

আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। মহিলা আর কঠিন করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!

আমার কেমন খারাপ লাগছে! এ সময়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি এক আপা হাত জোর করে ক্ষমা চাচ্ছে!

আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কী করবো?

মহিলা বললেন, "এই শার্ট তোর পছন্দ হয়েছে বাবা?"

আমি কিছুই বললাম না। উনি একইরকম কয়েকটা শার্ট নিয়ে কাউন্টারের দিকে গেলেন।

এ সময় আপুটা দ্রুত আমার কাছে এসে বলল, "কিছু মনে করো না ভাই। উনি আমার মা। আমার ছোটো ভাইটা ছাত্র আন্দোলনে মারা গেছে! ভাইটা দেখতে তোমার মত ছিলো!"

মহিলা আমাকে ইশারায় ডাকছে এদিকে আয় বাবা! আমার এখন কেমন কান্না পাচ্ছে! মহিলার জন্য মায়া হচ্ছে!

আমি ধীরে ধীরে মহিলার কাছে গেলাম। উনি বললেন," আর কিছু কিনবি না বাবা? কতদিন তোকে নিয়ে শপিংয়ে বের হই না!"

আমি বললাম, "আজ আর কিছু কিনব না। আরেকদিন।"

মহিলা বললেন, "চল বিরিয়ানি খাই। তোর পছন্দের বিরিয়ানি! "

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি। মহিলা আমাকে বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছেন! আমার একটু লজ্জা লাগছে! কিছু বলছি না ওনার জন্য কেমন মায়া হচ্ছে।

আমি বললাম, " আপনি খান।"

মহিলা বললেন," তুই আমাকে আপনি বলছিস কেন বাবা? আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এই লুনা দেখ বাবু আমাকে আপনি বলছে!"

আপুর চোখে পানি। উনি ভাঙা গলায় বলল, " মা বাবু এখন বড় হয়েছে না!"

মহিলা বললেন, "এই আইসক্রিম দাও এখানে।"

রেস্টুরেন্টের একজন বলল, "ম্যাডাম এখানে আইসক্রিম নেই।"

মহিলা ক্ষেপে গেলেন," কী আমার বাবুর প্রিয় আইসক্রিম নেই?"

আপুটা দ্রুত উঠে গিয়ে ম্যানেজার কে কিছু বললেন, ম্যানেজার সাথে সাথে জড়ান কন্ঠে বললেন, "এক্ষুনি দিচ্ছি ম্যাডাম।" বলে চোখ চোখ মুছতে মুছতে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।

খাওয়া শেষ করে বের হয়েছি। মহিলা আমার হাত ধরে রেখেছেন। এ সময় গাড়ি থেকে একজন লোক নেমে আসল। আমার সামনে এসে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলেন! লোকটা মনে হয় লুনা আপার বাবা।

লোকটা বলল, "বাবুকে ছাড় সায়লা। ওকে হলে দিয়ে আসতে হবে।"

উনি লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, "বাবুকে হলে দিলা কবে? আমার বাবু হলে থাকবে কেন! ঢাকায় আমার এত বড় বাড়ি। আমি বাবুকে বাড়িতে রাখব।"

"তুমিও বলেছিলে বাবু ওর নিজের মত থাকবে ভুলে গেছ?"

আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি। ওনার চোখের কোনায় জ্বল জমেছে!

লোকটা বলল, "বাবু তো তোমার সাথে দেখা করতে আসবেই! "

"সত্যি আসবি বাবা? এতদিন আসলি না কেন!"

অনেক কষ্টে আমার হাত ছাড়ান হলো। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। মহিলা কেমন মায়া মায়া চোখে আমার দিকে আছেন। আমার খুব খারাপ লাগছে!

অনেক সময় পরে লোকটা বললেন, "তোমার নাম কী বাবা?"

"আসিফ।"

"তুমি দেখতে অনেকটা বাবুর মত! লুনা যখন তোমার ছবি পাঠাল। আমি প্রথম দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম। তুমি কিছু মনে করো না বাবা।"

আমি কী বলব বুঝতে পারছি না! এদের কষ্টটা বুঝতে পারছি।

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "বাবু মারা গেছে আজ চল্লিশ দিন হলো! সায়লা কে সহজে কিছুই খাওয়ান যাচ্ছে না। এতদিন পরে আজ ওর মুখে হাসি দেখলাম। লুনা বলল, আজ নাকি তোমার সাথে খেয়েছে!"

আমি নীরব হয়ে বসে আছি! আমার খুব খারাপ লাগছে!

"তোমার বাসা কোথায় বাবা?"

"যাত্রাবাড়ী। আপনি আমাকে এখানে নামিয়ে দেন আমি চলে যেতে পারবো।"

উনি কিছুতেই আমাকে নামতে দিলেন না। গাড়ি চলছে।

অনেকটা সময় পরে উনি বললেন," তুমি মাঝে মাঝে সায়লাকে একটু সময় দিতে পারবা? তুমি যখন ফ্রি থাকবা আমাকে ফোন করো আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। আমি ভাবতেই পারছিলাম না সায়লাকে কী করে বাঁচিয়ে রাখবো! আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছেন! "

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামল। আমি নীরবে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। অনেকটা সময় গাড়িটা থেমে থাকল!
( লেখাটি ফেসবুক সংগৃহীত )
লেখক সেলিমা বেগম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×