সাধারণ ভাবে যৌন হয়রানি বলতে শিশুর সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়া, স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হাত দেয়া, হস্তমৈথুন করা বা মোবাইলে অথবা ইন্টারনেটে তাকে যৌন কার্যকলাপের ছবি দেখানোকে বোঝায়।
বাংলাদেশে প্রতি ৪ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৬ জন ছেলে শিশুর মধ্যে ১ জন যৌন হয়রানির শিকার হয় যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তবে দুঃখের ব্যাপার হল শিশুর ওপর যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুদের নিয়েই সচেতনতা সৃষ্টি করতে দেখা যায় বাংলাদেশে। এই সচেতনতার বৈষম্য শুধু মিডিয়া আর এনজিও গুলোতেই নয়, বৈষম্যের সূচনা হয় পরিবার থেকেই। একটা পরিবারে মেয়ে এবং ছেলে সন্তানের ভেতর দেখা যায় মেয়ে শিশুর নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশী সচেতন থাকেন বাবা মায়েরা। কিন্তু একটি ছেলে শিশুও যে যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে সে ব্যাপারে অনেক পরিবারের বিন্দু মাত্র ধারণাও থাকে না।
গবেষণায় বলা হয় যৌন হয়রানির শতকরা ৭৫ ভাগই ঘটে থাকে শিশুর নিকট আত্মীয় দ্বারা। এই তালিকায় রয়েছে শিশুর কাজিন, গৃহ শিক্ষক, ড্রাইভার, বাবা মায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বড় ভাইবোনের বন্ধু বান্ধব, প্রতিবেশী ইত্যাদি। শিশুরা মূলত পুরুষ দ্বারাই যৌন হয়রানির শিকার হয়। নারীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হওয়ার মাত্রা খুব কম কিংবা তেমন নেই বললেই চলে। ছেলে শিশুরাও যে হয়রানির শিকার হয় তা মূলত পুরুষদের দ্বারাই ঘটে থাকে।
যৌন হয়রানির শিকার ছেলে শিশুটি লজ্জায় এবং ভয়ে বিষয়টি বলতে পারে না পরিবারকে। আবার পরিবারকে বিষয়টা কোন ভাবে অবহিত করা হলেও বাবা মায়েরা বিষয়টা সেইভাবে আমলে নেয় না। ছোট বলে আদর করে এই যুক্তি গেলানো হয় শিশুটিকে।
এখন আসি ছেলে শিশুর ওপর যৌন হয়রানির ফলে ছেলেটির মনে কি রূপ প্রভাব ফেলে। ছোটবেলায় নিজের অজান্তে যে হয়রানির ঘটনা ঘটে থাকে একটি শিশুর সাথে সে সেটাকে এক সময় ইতিবাচক হিসেবে নেয়। পরবর্তীতে ছেলেটি নারীর বদলে পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে সে সমকামি হয়ে ওঠে। হয়ত অনেকের ধারণা সমকামিতার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ হরমোনজনিত কারণে কিংবা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। তবে ছেলে শিশুর ওপর যৌন হয়রানিও যে এর অন্যতম কারণ তা অনেকের অগোচরে রয়ে গেছে। হয়রানির শিকার ছেলেটি হয়ত পরবর্তীতে নারীদের সংস্পর্শে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে কিন্তু অনেক সময় সমকামিতার অভ্যাস ছাড়তে পারে না, পরিণামে নিজেকে উভকামি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
শেষ কথা হল, একজন মানুষের সেক্স চয়েজ কি হবে তা অনেকাংশে তার নিজের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সেই যৌন চাহিদা মেটাতে যেন কোন শিশুকে ব্যবহার না করা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আর পারিবারিক ভাবেও যৌন হয়রানির ব্যাপারে সন্তানদের অবগত করতে হবে। পরিবারের একটা কন্যা সন্তানের জন্য বাবা মায়েরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকেন ঠিক তেমনি একটি ছেলে সন্তানের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। মিডিয়াও এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। আমাদের পাশের দেশগুলোও ছেলে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি নিয়ে নানা ধরণের সচেতনতামূলক সিনেমা, নাটিকা ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। নানা ধরণের ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশেও দরকার আছে এগুলোর। সেই সাথে প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৫৫