somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মাজার আর পূজার গাছের টাকা চুরি; জিয়া-মুজিবের মাজার ধ্বংস করার খায়েসের সাথে সুশীল খিচুড়ী

০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে থাকতে ক্লাসের বারান্দা দিয়ে যখন আমি হেঁটে আসতাম তখন ছেলে-মেয়েরা আড়ালে আমাকে ঝড়,তুফান,সাইক্লোন বলত।পাড়ার মুরব্বীদের কয়েকজন আবার আমাকে জ্বীনও বলত।কারণ,আমাকে দেখা গেল একটু আগে খেলছি একটু পর দেখা গেল কারো বড়ই গাছে ঢিল মারছি অথবা পুকুরের মাঝখানে ঢুব দিয়ে কাদা তুলে বন্ধুদের দিকে ছুড়েঁ মারছি।আমার বিরুদ্ধে অনেকের অনেক রকম অভিযোগ থাকলেও কারু কিছু চুরি করেছি এমন অপবাদ নিয়ে এলাকার কেউ কখনো আসতে পারেনি (অবশ্য রাতের আধাঁরে যে কত মানুষের ডাব গাছের ডাব নাই করে দিয়েছি )।কিন্তু বন্ধু মহলে আমার যে গুণটির জন্য বিখ্যাত ছিলাম সেটি হচ্ছে মাজারের টাকা আর মোমবাতি চুরি, হিন্দুরা পূজা শেষে একটি গাছের নিচে পূজা করে টাকা দিয়ে যাওয়ার পর সে টাকা চুরি করা।এই টাকা চুরি ব্যাপারটা কৌশলে হলেও মাজারের মোম লোকজনের সামনে থেকেই নিতাম।আমার আব্বু প্রচন্ড ইসলামিক মাইন্ডের হলেও মাজার,ওরষ ,মানুষ মরলে হুজুর দিয়ে কবর যেয়ারত,মসজিদে রুটি হালুয়া দেওয়া,চল্লিশা করা এইসবের ঘোর বিরোধী।এবং আব্বুর কাছ থেকেই এইসব সম্পর্কে বেশ ধারণা পেয়েছি।ধর্মে কি লেখা আছে সেই ব্যাখ্যা আমার কিশোর মনে না দিয়ে আব্বু পারিপার্শ্বিক কিছু উদাহরন দিয়ে মাজার,পাগলা বাবার দরবার এইসব ভন্ডামীর যে সচ্চ ধারণা দিয়েছেন তা খুব কম বাবাই দিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

একজন মানুষ কবরে শুয়ে আছে তার কবরের চারপাশে দেওয়াল তুলে দিয়ে খাদেম নিয়োগ,টাকা উঠিয়ে বাৎসরিক ওরষে কল্কিতে টান দিয়ে মাঘ মাসের ৭তারিখে কি ঘটায়লো রাব্বানা আলু ভাজি তেল মিশাইলে হয়বা দিওয়ানা কিংবা গাউছালাজুম মাইজ ভান্ডারে আইনা কারিগর আল্লা বানায়া দেনা কলবের ভিতর চিল্লাতে চিল্লাতে নেংটা হয়ে যাওয়া মাজারের শহর চট্রগ্রামের মাজারগুলোর একটি কমন দৃশ্য।বাংলাদেশে মাজার,পাগলা বাবার দরবার এসব বিনা পূঁজির চরম লাভজনক ব্যবসা।আমার ভাইয়ার সবচাইতে কাছের বন্ধুটির নানী উনার ছেলের গ্রীস থেকে পাঠানো লক্ষ লক্ষ টাকা এই মাজারে খাইয়েছে।একবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় উনি ঘরের টিভি বিক্রি করে মাজারে ছাগল দিয়েছেন।আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি মাজার আছে।শুক্রবার হলেই সেই মাজারে মহিলারা মুরগী,কবতুর,চাল-ডাল দিয়ে আসে আর একজন মৃত মানুষের কাছে সন্তান কিংবা রোগ-ব্যারাম ভাল হওয়া সহ যত সমাধান আছে সব সমাধানের জন্য মানত করে আসে।এমন দৃশ্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আছে ।

মাজার-পাগলা বাবার দরবারে কি হয় মাজারে/পাগলা বাবার দরবারে কেন যায় মানুষ তা আমরা সবাই জানি।আমরা যে জিনিসটি আরো জানি সেটি হচ্ছে গ্রামের গেয়োঁ ভূত (মানুষ),অশিক্ষিত মানুষরাই মাজার-পাগলা বাবার দরবারে যায়।আসলেই কি তাই?চলুন,এমন একজন মানুষের কথা জেনে নেয় যিনি অনেক শিক্ষিত আধুনিক একজন মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত।তিনি আর কেউ নন আমাদের সাহারা খাতুন (উনাকে নিয়ে কিছু বলতে ভয় লাগে।সেদিন কার কমেন্টে দেখলাম উনাকে বুয়া খাতুন বলায় অনেকেরই নারীবাদী প্রেম উতলে পড়েছে )।বিডিআর বিদ্রোহের নারকীয় তান্ডবের পর যখন সারাদেশে শোকের ছায়া তখন আমাদের সাহারা খাতুন কোথায় গিয়েছেন আপনি জানেন?ঊনি গিয়েছেন মুন্সীগনজ জেলার গজারিয়া থানার প্রত্যন্ত এলাকার রায়পাড়া গ্রামের নিয়মিত ক্লিনসেভ করা সামছু পাগলার কাছে গিয়েছিলেন দোয়া চাইতে ।কতটা আহাম্মক,ব্যাকুব হলে এমন কাজ করতে পারে সাহারা খাতুন সে বিষয়ে প্রশ্ন না করে কিংবা সাহারা খাতুনকে আগামীবার ভোট দেওয়ার আগে একবার ভাবতেও বলার জন্য যে রুচিঠুকু দরকার আমার তা নেই।আওয়ামীলীগ বিএনপি সহ বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক শিক্ষিত নেতারাই মাজার জেয়ারত পাগলা বাবার দরবারে গিয়ে দোয়া নিয়ে আসে মুজিব কোট,পান্জাবীর পকেটে ভরে।রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় বাম দল এবং জামাতই মাজার-পীর বাবার দরবার নিয়ে কোনরকম ভন্ডামী করেনা এই সত্য অনেকের মানতে কষ্ট হলেও এটাই চরম সত্য।

আমাদের প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রী ভোটের প্রচারণা শুরু করে শাহজালালের মাজার জিয়ারত করে আর নির্বাচন জিতলে সেই জেতার শোকরানা আদায় করা হয় মুজিব অথবা জিয়ার-মাজার জেয়ারতের মধ্য দিয়ে।এবং উনাদের দু‌'জনের পিছনে লাইন ধরেন মন্ত্রী-এমপি,আমলা,বুদ্ধিজীবি,সুশীল সমাজ।কয়েকমাস পরপর চন্দ্রিমা উদ্যান কিংবা গোপালগন্জের দিকে গাড়ির বহর ছুটে যায় পরদিন পত্রিকার জিয়ার মাজারের পাশে দাড়িঁয়ে ক্রন্দনরত মোনাজাতের ছবি/মুজিবের মাজারের পাশে ক্রন্দনরত ছবিসহ খালেদা-হাসিনারা পত্রিকার লিড নিউজ হয়।দেশের মাজার-পাগলা বাবার দরবার সহ কিছু ধর্মীয় ভন্ডামী নিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মনে হয় একবার সংসদে বক্ততা রেখেছিল।এর আগে কিংবা পরে আর কেউ মাজার-পাগলা বাবার দরবার নিয়ে কেউ সংসদে বক্ততা রেখেছে কিনা আমার জানা নেই।ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র/ফতোয়া/পর্দা করার জন্য নারীরা পিছিয়ে পড়ছে সহ কত কি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় কিন্তু সারাদেশে মাজার-পাগলা বাবার দরবারে ওরষের নামে মদ জুয়া গান্জার আসর বসে,সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে যে প্রতারণা হয়ে আসছে বছরের পর বছর এই ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই।কারণ,তাহলে যে মুজিব-জিয়ার মাজার শুধু কবর হয়ে যাবে।সেখানে গিয়ে ফুল দিয়ে কান্নাকাটি-হাতাহাতি করে নিউজ না হলে নেত্রীর শাড়ীর আচঁলে যে দেশপ্রেম বেধেঁ রেখেছে তা নেত্রী দেখার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।

হাসিনা-খালেদা এবং উনাদেরর দলের নেতা-নেত্রীদের জিয়া-মুজিবের কবর মাজার হওয়ার উপকারিতা অনেক।কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবি ,সুশীল সমাজ ,প্রথা বিরোধী লেখকদের এই নিয়ে নিরবতা কেন? হুমায়ন আজাদ,আহমেদ শরীফের মত প্রথাবিরোধীরা যেখানে কিছু হলেই ধর্ম খুজেঁ পায় /নারী মুক্তির ডাক দেয় সেখানে ধর্মের নাম বেচেঁ মাজার কিংবা পাগলা বাবার দরবারের নামে যেসব নষ্টামী ভন্ডামী হচ্ছে তার জন্য কয়টি প্রবন্ধ,বই,কবিতা লিখেছে?যুগযুগ ধরে অন্ধকারে থাকা এইসব মানুষগুলোর ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে আনতে কি করেছে?লালসালু গল্পের ধারে কাছের আর একটি গল্প পড়ার সুযোগ হয়েছে কি এইসব প্রথা বিরোধীদের কাছ থেকে?সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই নিয়ে কতটি সভা সেমিনার করেছে?প্রথম আলোর বদলে যাও বদলে দাও এ যেসব সুশীলরা সারাদেশে বদলে দেওয়ার জন্য কত কি করল তাদের মুখ থেকে একবারও শুনিনি মাজার-পাগলা বাবার দরবারে যাওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাবনা পাল্টে দেওয়ার শপথ নিতে।সুশীল কি বুদ্ধিজীবি,কবি কি কলামিষ্টদের মাজার-পাগলা বাবার দরবার নিয়ে কিছু বলার সাহস নেই।তাহলে হাওয়া ভবন কি সুদাসদন থেকে খাম আসা বন্ধ হয়ে যাবে।রাষ্ট্রীয় টাকায় বিদেশ ভ্রমনের সুযোগ হারানোর ব্যাকুব কতজনইবা আছে?

দেশে যতদিন মুজিব-জিয়ার কবর মাজার হিসেবে উপস্থাপন হবে,এবং দুইজনের মাজারের পাশে রাজনীতি যতদিন ততদিন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ মাজার-পাগলা বাবার দরবারে যাবে ভাগ্য বদলের মানত করতে রোগ মুক্তির জন্য গজার মাছকে খাদ্য দিতে ,সন্তানের জন্য মাজারে ঘন্টার পর ঘন্টা সেজদায় পড়ে থাকবে...
উপরের হারামীদের চর্বি আরো বাড়বে ...
-----------------
মুছে যাওয়ায় রিপোস্ট।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:০৮
৪০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এনসিপিকে আমাদের দেশের তরুণ-যুবা'রা ক্ষমতায় দেখতে চায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৫

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে পাড়া-মহল্লায় জনতার আদালত গঠনের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি তথা এনসিপি। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' তথা চর মোনাইয়ের পীর সাহেবের দল এনসিপিকে আগে থেকেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাতৃ ভাণ্ডার

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ৩:২৬



আমাদের দেশে মিষ্টি পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া বিরল ব্যাপার। ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে যারা যাতায়াত করেন মাতৃ ভাণ্ডারের সাথে পরিচিত নন এমন মানুষও মনে হয় খুব বেশি নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপি জামায়াতের শাখা, এই ভুল ধারণা ত্যাগ করতে হবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

প্রিয় রাজীব ভাই,
আপনি আমার আগের পোস্টে কমেন্ট করেছেন যে, এনসিপি জামায়াতের শাখা। আপনার এনালাইসিস ভুল! ওরা জামায়াতের শাখা নয়। এনসিপি-কে বুঝতে হলে, আপনাকে জামায়াতকে জানতে হবে। আমি একটু বিস্তারিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×