আমাদের পূর্বপুরুষ অর্থাৎ আমাদের বাবা দাদাদের প্রজন্মকে একটা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম সংঘাত সহিংসতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৫র যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সহিংসতা ইত্যাদি। বলা চলে আমাদের আগের দুই প্রজন্মের এতো বেশি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে যে প্রকৃত অর্থে তারা কখনও খুব বেশি সময় সুখ শান্তি উপভোগ করতে পারেনি। বরং তাদের সময়টা ছিলো অনিশ্চয়তায় ভরা।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ যখন আস্তে আস্তে স্থিতিশীল হতে শুরু করলো সে সময় বা তার কিছু পর থেকে আমাদের প্রজন্মের জন্ম হতে থাকে। যেহেতু আমাদের বাবা দাদারা আন্দোলন সংগ্রামে জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছেন এবং কৈশোর যৌবন তারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে উপভোগ করতে পারেননি তাই তারা চাইতে থাকলেন আমাদের প্রজন্মকে সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে। আমরা বড় হতে থাকলাম আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি করা একটি নিরাপদ বলয়ের মাঝে। একইসাথে আমাদের নিরাপদ জীবন তৈরির লক্ষ্যে আরোপিত হতে থাকলো নানাবিধ বিধিনিষেধ। সেসব বিধিনিষেধরই অন্যতম হলো রাজনীতি বিমুখতা।
আমাদের বাবা দাদাদের তিক্ত কঠিন অভিজ্ঞতার কারণে তারা আমাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইতেন। শেখাতেন ভালো বুদ্ধিমান মেধাবী ছেলেমেয়েরা রাজনীতি করে না। তারা আসলে ভেবেছিলেন দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো রাষ্ট্রের নিরাপদ বলয়ে একটি নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপদ জীবন পাবে। কিন্তু এটি তাদের ভুল ছিলো, তাদের আরোপিত এই রাজনীতি বিমুখতা দেশে রাজনৈতিক শুন্যতা তৈরি করে দেশকে রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে। সেই একই ভুল আমরাও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিখিয়ে যাচ্ছি!
রাজনীতি হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। রাজনীতি বিমুখতা ব্যক্তির অধিকার আদায়ের পথকে রুদ্ধ করে। তাই আমদের উচিত প্রজন্মকে রাজনীতি বিমুখ নয় বরং রাজনীতিমুখী ও রাজনৈতিক সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৮