somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছেন ঢালচরের জেলেরা?

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলার সর্বদক্ষিণের উপজেলার নাম চরফ্যাশন। এই চরফ্যাশন উপজেলার একেবারে প্রান্ত সীমায় মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থলের ছোট্ট একটা দ্বীপের নাম ঢালচর। তিনদিক থেকে ভাঙ্গনের মুখে থাকা ছোট্ট এই দ্বীপটির জনবসতি প্রায় সম্পুর্ণই জেলে নির্ভর। নিসর্গ প্রেমিকদের কাছে এই দ্বীপের আরেকটি পরিচয় হলো কেওড়া বন ও তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতের মতো প্রাকৃতিক সৌন্ধর্য্যের লীলাভূমি এই ঢালচর।

প্রকৃতির এই সৌন্ধর্য্য উপভোগ করতে আমরাও কয়েকজন মিলে গিয়েছিলাম ঢালচর। প্রকৃতির কোলে রাত যাপন করে ফিরতি পথে ট্রলার ঘাটের এক রেস্তোরায় আমাদের কথা হলো ঢালচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আবুল কালাম পাটোয়ারীর সাথে তাঁর কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম স্থানীয় জেলেদের সমস্যা সম্ভাবনা ও চওয়া নিয়ে।

এবারের মৌসুমে কেমন মাছ পাচ্ছেন?
আলহামদুলিল্লাহ্‌ অন্যান্য বছরের চাইতে এবছর মাছ অনেক বেশি।

শোনা যায় স্থানীয় জেলেরা মাছের ন্যায্য দাম পায় না?
মাছ বিক্রির সাথে জেলেদের পাশাপাশি আরো অনেকে জড়িত। স্থানীয় জেলেদের মাছ যদি শুধু দেশের বাজারের চাহিদা মেটানোর কাজে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেটা কারো জন্যই অতটা লাভজনক না।

তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন বিদেশে মাছ রপ্তানীর সুযোগ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন?
জেলেদের ন্যায্য দাম দিতে হলে এর বিকল্প নাই। শুধু দেশের বাজারে আমাদের মাছ বিক্রি করে সেটা দিয়ে জেলেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব না।

বিদেশে মাছ রপ্তানির সুযোগ বেশি করলে দেশের বাজারে মাছ সংকট দেখা দিতে পারে?
না, যে পরিমাণ মাছ আহরিত হয় তাতে বিদেশে মাছ রপ্তানি আরো অনেক বাড়ালেও দেশের বাজারে মাছের কোন সংকট তৈরি হবে না।

এবার হয়তো মাছ বেশি ধরা পড়েছে বলে আপনি এটা বলছেন কিন্তু প্রতি বছর তো পর্যপ্ত মাছ আহরিত নাও হতে পারে?
মাছ ধরা না পড়লে রপ্তানি কতটুকু করা যাবে সেটা নাহয় পরে বিবেচনা করা গেলো কিন্তু যখন মাছ বেশি ধরা পড়ছে তখনও তো রপ্তানির সুযোগ সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।

আপনি শুধু একটা সমস্যা চিহ্নিত করলেন। স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার পর্যাপ্ত উপকরণের সংকট কি নেই?
সেটা তো আছেই। সরকার থেকে জেলে প্রতি চাল দেয়া হয় ৩০ কেজি, জাল দেয়া হয় ২০ কেজি। তাও অল্প কিছু জেলেকে এটা দেয়া হয়। এটা দিয়ে তো একটা মাছ ধরার ট্রলার নামানো সম্ভব না। যার কারণে জেলেরা স্থানীয় মহাজনদের কাছে দাদনের স্মরণাপন্ন হয়। দেখা যায় একেকজন জেলের দাদন আছে চার লাখ পাঁচ লাখ।

তাতে তো বলা যায় জেলেরা মহাজনদের কাছে একপ্রকার জিম্মি?
বলা যায় আবার যায়ও না। একটা নৌকার পেছনে খরচ হয় ৫ লাখ ৭ লাখ টাকা, জাল লাগে ২০ থেকে ৩০ মণ। এখন তারা যদি দাদন না পায় তাহলে এ টাকা তারা সংগ্রহ করবে কোথা থেকে।

ঢালচরের জেলেদের কত শতাংশ সরকারী চাল আর জালের সুবিধা পায়?
এটা খুব বেশি না। এই ঢালচরে জেলে আছে ধরেন পাঁচ হাজারের মতো আর সরকারী চাল জাল এগুলো পাচ্ছে ৫০/১০০ জন।

জেলেদের দাদনের হাত থেকে বের করে আনা সম্ভব কীভাবে বলে মনে করেন?
জেলেদের নিজস্ব তো কোন টাকা পয়সা নাই। এখন সরকারীভাবে জেলেদের যদি মাছ ধরার উপকরণ দেয়া হয় তাহলে হতে পারে। কিন্তু এটাও তো অনেক টাকা সরকারে পক্ষে জেলে পিছু এত টাকা দেয়াও সম্ভব হবে কিনা!

এক কাজ করলে কেমন হয়। ধরেন ২০/৩০ জন জেলে নিয়ে সমবায় ভিত্তিতে জেলেদের মাছ ধরার পর্যাপ্ত জাল ও মাছ ধরার ট্রলার দিলে?
এটা হলে হতে পারে। তবে শুধু ট্রলার আর জাল দিলেই তো হবে না। তারা যে মাছ ধরে আনবে তাদের ন্যায্য দামটাও নিশ্চিত করতে হবে। যতদিন মাছের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যাবে ততদিন কোনভাবেই জেলেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করা সম্ভব না।

ঢালচরবাসী হিসেবে আপনাদের বর্তমান চাওয়া কি?
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ঢালচরটা কীভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রতি বছর অনেক মানুষ ভিটেমাটি হারাচ্ছে। সরকার যদি কিছু ব্লক ফেলে ভাঙ্গনটা রোধ করার চেষ্টা করতো তাহলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে যারা ভিটেমাটি হারাচ্ছে তাদেরকে নতুন জেগে উঠা চরগুলোতে বৈধভাবে বসবাসের অনুমোদন দিলেও আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে দিন যাপন করতে পারি।



ঢালচরের একটি বাজার


চলছে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা এই ফাঁকে জেলেরা ঠিক করে নিচ্ছে তাদের উপকরণ


ঢালচরের মেঠোপথ


কথা বলছেন সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আবুল কালাম পাটোয়ারী (ছবি- জেরিফ)


নিসর্গ(ছবি- আমিনুর রহমান)


তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত

ভ্রমণ পিপাসুগণ প্রায়ই ছুটে যান দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যেখানে অনেক কারণেই মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোর নিয়মিত খবরাখবর নেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা। তাই ট্রাভেলারগণ চাইলেই পারেন প্রকৃতির পাশাপাশি সেখানকার স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা চাওয়া পাওয়ার তথ্য তুলে আনতে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির এই মুক্ত গণমাধ্যমে এটি হয়ে উঠতে পারে নাগরিক সাংবাদিকতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত। যার মাধ্যমে বিকল্প গণমাধ্যমে উঠে আসবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষে জীবনযাত্রা, চাওয়া-পাওয়া ও সুখ-দুঃখের চিত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×