আপডেট-১
পোষ্টটি স্টিকি হওয়ার কারণে এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পোষ্টের লিংকও এই পোষ্টে সংযুক্ত করা হলো।
মার্গারিটা মামুন ও কলসিন্দুরের মেয়েরা- মঞ্জুর চৌধুরী
আমরা সবাই লোকাল বাস- খলিলুর রহমান ফয়সাল
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোথায় আপনার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশান?- রেজা ঘটক
তোরা মেয়ে হয়ে কেন ফুটবল খেলতে এলি?- চাটগাইয়া জাবেদ
যেই দেশে গুণীর কদর নেই, সেই দেশে গুণীর জন্ম হয় না- ...নিপুণ কথন...
বিসিবি, বাফুফে এবং অনূর্ধ্ব -১৬ প্রমীলা ফুটবল দল- আমিনুর রহমান
হাজারো সমস্যায় জর্জরিত আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। অশিক্ষা, দারিদ্র্য, জনসংখ্যার চাপ, সন্ত্রাস, মাদক সবকিছু প্রতিদিন আমাদের গলা চেপে হত্যা করতে চায়, তারপও বেঁচে থাকার অপার তাগিদের মধ্য দিয়ে আমরা বেঁচে থাকি, স্বপ্ন দেখি কোন একদিন দু'বেলা পেট ভরে খেতে পারবো, পাবো একটি নিরাপদ বাসস্থান। এভাবেই আমাদের দিন যায়, স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত হই, শংকিত হই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায়। এই শংকার রেখা আরো বিস্তির্ণ হয় যখন দেখি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার একটা সুন্দর পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। পড়াশুনার নামে শিশুদের কাঁধে ভারী বইয়ের ব্যাগ, বিনোদন বলতে কম্পিউটার অথবা মোবাইল গেম। শিক্ষা বাণিজ্যিকিকরণ ও ভূমি দস্যুদের অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ ও দখলের সবচাইতে বড় ভুক্তভোগী আমাদের এই শিশুরা। একটি সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আমরা তাদের দিতে পারিনি সুস্থ বিনোদনের জন্য একটি খেলার মাঠ।
আমার এ লেখার উদ্দেশ্যে দেশের শিশুদের সার্বিক বিকাশের তাত্ত্বিক আলোচনা নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে সদ্য শৈশব থেকে কৈশরে উত্তীর্ণ হওয়া দেশের কয়েকজন মেধাবী সন্তানকে নিয়ে। তারা বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৬ মহিলা ফুটবল দলের সদস্য।
কিছুদিন আগে অনুর্ধ ১৬ মহিলা দলের কোচ ছোটন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যাই। স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখেই দেখি সিঙ্গাপুর অথবা তাইওয়ান কোন এক দেশের মেয়েরা প্র্যাক্টিস শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামে ঢুকেই ইরানের মেয়েরা প্র্যাক্টিস করছে। আমি বেশ অবাক হয়ে ছোটন ভাইকে জিজ্ঞাসা করি, 'এইসব লম্বা চওড়া মেয়েদের সাথে আমাদের মেয়েরা পারবে!' ছোটন ভাই উত্তর দেয়ার আগেই সহকারী কোচ লিটু ভাই হেসে উত্তর দেয়, 'কি বলেন! এই টুর্নামেন্টে আমরাই টপ ফেবারিট।' মেয়েগুলো নেপালে আর তাজিকিস্তানে গিয়ে ভালো খেলেছে জানতাম কিন্তু পুরো দল এমন আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর থাকলে কোন মানের খেলার প্রয়োজন সেটাই মনে মনে কল্পনা করছিলাম। যদি মূল পর্বের খেলা দেখার সময় সুযোগ না জোটে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের মেয়েদের প্র্যাক্টিস সেশন দেখেই যাবো। ওদিকে আমার কাজিনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান সে সন্ধ্যায়, বারবার ফোন আসছে আর আমি ফাঁকি দিচ্ছি আমাদের মেয়েদের প্র্যাক্টিস দেখবো বলে। সেদিনই ছিলো এই মেয়েদের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ।
মূল পর্বের খেলার কথা বলে লেখাটি দীর্ঘায়িত করতে চাই না। মাননীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আমরা জানি মেয়েদের খেলার কিছু অংশ টেলিভিশনে আপনি নিজেও দেখেছেন, দেখেছেন লাল সবুজ পতাকা হাতে তাদের বিজয় উল্লাস।
হারতে হারতে আমরা যখন বিশ্ব দরবারে আত্মপরিচয় সংকট এবং উপহাসে আমাদের মাথা নুইয়ে আসতে চায়। তখন এই মেয়েগুলোকে পাওয়া আমাদের কাছে সৌভাগ্য ও আশার সঞ্চার করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই মেয়েদের যত্ন নিন, প্রশিক্ষণ সহ তাদের অন্যান্য মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করুন। মুহুর্মুহু পরাজয়ের ভীড়ে আমাদের এই আশাটিকে বাঁচিয়ে রাখুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
জানি সব সমস্যার জন্য আপনার শরণাপন্ন হওয়া সমীচীন নয়, এক প্রধানমন্ত্রী পক্ষে সবদিক দেখা সম্ভবও নয়। কিন্তু কি করবো বলুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আর তো কেউ নেই যার কাছে চেয়ে পাওয়ার আশা করতে পারি। যারা পাঁচ তারকা হোটেল ভাড়া নিয়ে নির্বাচন করতে পারে কিন্তু এই মেয়েদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করতে পারে না তাদের কাছে চাইতে যাওয়াটাও তো লজ্জার। তাই বাধ্য হয়ে আপনার শরণাপন্ন হলাম। আপনার একটু সুদৃষ্টি সম্ভাবনাময় এই মেয়েদের কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এনে দিতে পারে লাল সবুজের একটি বিশ্বজয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৬