মানুষের মৌলিক অধিকার কয়টি? অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা। ছোটবেলার পাঠ্যপুস্তকে মানুষের এই পাঁচটি মৌলিক অধিকারের কথা পড়ে এসেছি। না, মানুষের মৌলিক অধিকার ছয়টি। সুবিচার পাওয়া মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রখ্যাত ফরাসী ঔপন্যাসিক বালজাক বলেছেন, "আইন হচ্ছে মাকড়শার জালের মতো। ছোট কিছু পড়লে আটকে যায়, বড় কিছু পড়লে ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়।" বালজাকের মতো আপনিও কি তাই মনে করেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে কি আইন দিয়ে সুবিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না? নাকি আইন সুবিচারকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না? নাকি আইনগুলো এভাবেই তৈরি হচ্ছে যেখানে প্রচ্ছন্ন ভাবে হলেও ক্ষমতাবানের স্বার্থ সংরক্ষণ করে? নাকি আইন নিজ গুণেই এমন যে এর গোলক ধাঁধার পথ এতটাই জটিল হতে বাধ্য যে একমাত্র ক্ষমতাবানের পক্ষেই সে গোলধ ধাঁধার পথ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব আর সাধারণের সে গোলক ধাঁধায় পথ হারানো ব্যতীত ভিন্ন কিছু নেই? আর যার কারণে আমরা সচেতন বা অচেতন ভাবে মেনে নিচ্ছি যে ন্যায় বিচার আসলে আপেক্ষিক, আপনার অবস্থার প্রেক্ষিতে নির্ভর করবে বিচার প্রক্রিয়া ঠিক কেমন হবে?
জলি এলএলবি ২০১৩ সালে হিন্দি ভাষায় নির্মিত একটি কমেডি ধাঁচের চলচ্চিত্র। ১৯৯৯ সালে সঞ্জীব নন্দ নামে এক শিল্পপতি পুত্রের মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে তিন পুলিশ অফিসার সহ ছয় ব্যক্তিকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিতি মুভিটি সে বছর সেরা চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করে।
জগদীস ত্যাগী ওরফে জলি (আরশাদ ওয়ার্সি) আইন পেশায় নতুন। আইন পেশায় তার আদর্শ খ্যাতিমান উকিল তেজিন্দর রাজপাল (বোমান ইরানী)। জলির স্বপ্ন একদিন রাজপালের মতো সেলিব্রিটি উকিল হওয়া। এমন একটি স্বপ্ন নিয়েই একদিন সে স্থানীয় আদালতের বদলে চলে আসে দিল্লিতে। ঘটনা চক্রে সে সময় দিল্লি আদালতে চলছিলো বহুল আলোচিত শিল্পপতি পুত্র রাহুল দেওয়ানের মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথে ঘুমন্ত পাঁচ ব্যক্তির নিহত হওয়ার মামলা। সে মামলায় আসামী পক্ষের উকিল জলির সেই স্বপ্নের এডভোকেট রাজপাল। এবং আদালত রাহুলকে নির্দোষ ঘোষণা করে। পরিচিতি লাভের আশায় জলি সেখানে "পাবলিক ইন্টারেস্ট লেটিগেশন" দাখিল করে। এরপর ঘটতে থাকে বিভিন্ন ঘটনা এবং আইনী মারপ্যাচ। মূল কাহিনী শুরু এখান থেকেই।
সুভাস কাপুরের পরিচালনায় চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন জলি চরিত্রে আরশাদ ওয়ার্সি, এডভোকেট রাজপাল চরিত্রে বোমান ইরানী, সন্ধ্যা চরিত্রে অমৃতা রাও এবং বিচারক তিরুপতি চরিত্রে সুরবাস শুক্লা। সুরবাস শুক্লা এই চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সে বছর সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে ভারতের জাতীয়চলচ্চিত্র পুরষ্কারে ভুষিত হন।
ডাক্তার তার ১৪ বছরের ছেলেকে দিয়ে রোগীর অপারেশন করিয়ে গিনেস বুকে নাম তোলার চেষ্টা, গানের কপিরাইট নিয়ে দুই পক্ষের মামলা, জলির ভুল ইংরেজি বানান যেমন আপিলের জায়গায় আপেল, প্রসিকিউশনের জায়গায় প্রস্টিটিউশন ইত্যাদি ইত্যাদি মিলিয়ে পুরো মুভিটা আপনাকে হাসাবে, মুখকে প্রসারিত রাখবে। কিন্তু সব শেষে আপনাকে ভাবাবে, আপনার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সাধারণ ঘটনাবলী দিয়েই প্রশ্নবিদ্ধ করবে জুডিশিয়াল সিস্টেমকে। কারণ জলি এলএলবি একটি সিরিয়াস চলচ্চিত্র, জুডিশিয়াল সিস্টেমের উপর এক অনবদ্য স্যাটায়ার। সত্যিই কি আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতাসীনের স্বার্থ সংরক্ষণ? নাকি বিচারিক ব্যবস্থা দুষ্টচক্রে জর্জরিত হয়ে ন্যায় বিচার আজ পলাতক? নাকি সবই সিস্টেম!!?? আর যদি প্রেক্ষাপট ধরা হয় আমাদের বাংলাদেশ তাহলে বলতে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক আসলে "বিশেষ ক্ষমতা আইন" নামক এক পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি, যার থেকে এক মুহুর্তের জন্যও আমাদের মুক্তি মেলেনি, সবাই সে আইন বাতিলের আশ্বাস দিয়েছে শুধু। মানুষের মৌলিক অধিকার আসলেই পাঁচটিই! জলি ভুল বলেছে, বাস্তুহারা মানুষের আসলে ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার নেই।
মুভিটি প্রথম দেখি একটি টিভি চ্যানেলে, ভালো লাগায় একজনের থেকে কম্পিটারের হার্ড ড্রাইভে ভরে আনি। যে কারণে মুভিটির ডাউনলোড লিংক দিতে পারছি না। কারো জানা থাকলে ডাউনলোড লিংক দেয়ার অনুরোধ থাকলো। ইউটিউব থেকে মুভিটির ট্রেলারের লিংক দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২৬