আপডেটঃ
রাজন মরে গেছে এবং চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে আমাদের ভেতরের পশুস্বত্বার এক নিদারুণ প্রকাশ। ইনকগনিটো ভাইয়ের চমৎকার একটি লেখা- একজন রাজনের জন্য
দিব্যেন্দু দ্বীপ লিখেছেন- পাগলের প্রলাপ : রাজন, তুই যেন ক্ষমা না করিস
Pelob Chakraborti লিখেছেন- বলুন, কেমন করে সহ্য করি
ঘটনার বহুলতা এবং কিছু বস্তব চিত্র ধরে শ।মসীর লিখেছেন- লজ্জা পাওয়ার বিব্রত হবার ক্ষমা চাওয়ার মত কিছু ঘটে নাই ।
শেখ এম উদ্দীন লিখেছেন- নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, সাগরে ভাসমান অর্থনীতি এবং ২৭ + ১ টি লাশ
তারেক সালমান জাবেদ লিখেছেন- এ কেমন নির্যাতন
আমাদের আবেগ কতটা বাস্তবতার মুখ দেখে নাকি আমরা সবাই স্ববিরধীর ভূমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছি? নেফার সেটি লিখেছেন- আজ যারা রাজন হত্যার বিচার চাচ্ছেন তারা নিজেরাই পরবর্তীতে ঠিক থাকবেন তো..???
সাবু ছেেল লিখেছেন- একটি সাহায্যের আবেদনঃ জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করতে অতি দ্রুত এদের ফাঁসি চাই!
রাজনকে নিয়ে ব্লগার নতুন অভিনেতার লেখা কবিতা- অভিমন্যু একা
রেজা ঘটক লিখেছেন- পিটিয়ে শিশু হত্যার পর ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে !!!
কিছু নেতিবাচক কাজও ইতিবাচক হয়ে জিইয়ে রয় সমাজে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। সামাজিক কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি অন্যতম দিক নিয়ে আমি ময়ূরাক্ষী লিখেছেন- শিশু অপরাধ ও মানবিকতা বা মনুষ্যত্ব
রাজন হত্যা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের একটি বাস্তব চিত্র। এই চিত্রের শেকড় অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন ব্লগার বোকা মানুষ বলতে চায়- রাজন হত্যাকাণ্ড, আমাদের সমাজ এবং অপরাধের শিকড়ের সন্ধান
আনফ্লিঞ্চিং লিখেছেন- অসুস্থ সমাজব্যবস্থার অবনতির একটা রূপ রাজনের মৃত্যুটা
মোস্তাক খসরুর ছড়া- কামরুল আর রাজনের দুই ফল।।
ভিন গ্রহের এলিয়েন লিখেছেন- জাতি আজ বর্ববরতার সামনে বাকরুদ্ধ
বন্ধু তুহিন প্রাঙ্গনেমোর এর কবিতা- "রাজন'
চুরির অপরাধে সিলেটে রাজন নামের ১৩ বছরের এক বাচ্চা নির্মম ভাবে খুন হয়েছে। যে খুনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোস্যাল নেটওয়ার্কে। ভিডিওটিতে দেখা যায় কিছু মানুষ চরম পৈশাচিক উল্লাসে একটি শিশুকে বেঁধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করছে। শিশুটির কান্না এক ফোঁটা পানির আকুতি এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া দেখে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের কোমল(!) মানবিক(!) হৃদয় হাহাকার করে উঠছে। দাবী তুলছি খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির। যদিও খুব দ্রুতই নতুন কোন ইস্যু আমাদের মন থেকে এই নির্মম হত্যার স্মৃতি মুছিয়ে দিবে। তবুও আশা করবো বিচারের কাজে নিয়োজতি দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যাতে টাকা ও ক্ষমতার কাছে বিক্রি না হয়ে সঠিক নিয়মের মধ্যে থেকে এই অপরাধের সুষ্ঠ বিচার নিশ্চিত করেন।
এবার আসুন আমরা নিজেরা দাঁড়াই এই খুনের কাঠগড়ায়। ১৩ বছরের একটি ছেলের যখন স্কুল ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়ার কথা অথবা ব্যাট হাতে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার কথা তখন কেন সে বাধ্য হয়েছে এমন এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যেখানে তাকে চোর অপবাদ পেতে হয়েছে? পেতে হয়েছে নির্মম নির্যাতনের মুখে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে? সে যদি অপরাধ করেও থাকে তবুও তাকে অপরাধী বলার সুযোগ নেই, কারণ সভ্যতার ইতিহাস, ধর্ম, নৈতিকতা বা আইন কোনকিছুই একজন শিশুকে অপরাধী বলার সুযোগ আপনাকে আমাকে দেয়নি। এ অপরাধের দায়ভার সমাজের, এ অপরাধের দায়ভার আমাদের। হ্যাঁ, আপনি আমি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্র এ হত্যার দায়ভার সকলের।
দিনের পর দিন এই রাষ্ট্রটিকে আমরা কলুষিত করে চলেছি, আমাদের সীমাহীন লোভ ও ক্ষমতার নেশায় প্রতি মুহুর্তে কেড়ে নিচ্ছে এমন হাজার হাজার রাজনের মুখের অন্ন, শিক্ষা বাসস্থান সহ সবকিছু। ঠেলে দিচ্ছি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের এক ভয়ংকর অনিশ্চিত পথে। সীমাহীন লোভ ধ্বংস করে দিয়েছে আমার নুন্যতম বিবেকবোধ, আমরা একেকজন হয়ে উঠেছি ভয়ংকর পিশাচ।
রাজনের জন্য আমরা বিচার চাইবো, তারপর সময়ে ভুলে যাবো। এবং আবারো আমরা আয়োজন করতে বসবো আরো রাজনদের হত্যার মঞ্চ তৈরী করতে। কারণ এই হত্যাকান্ড দেখার পরও আপনার আমার মধ্যে নিজেদের কৃতকর্মের ব্যাপারে অনুশোচনা আসবে না। রাজনের মৃত্যুতে চোখের জল মুছে আমরাই বের হবো কারো জন্য মিষ্টির হাড়ি নিয়ে, টাকার ব্যাগ নিয়ে, পদ্মার বড় ইলিশ নিয়ে যাতে কারো ব্যবসার লোন পাশ হয়, কারো চাকুরী হয়, কারো হয় প্রমোশন ইত্যাদি ইত্যাদি। বড়কর্তা রসগোল্লার হাড়ি থেকে একটা রসগোল্লা মুখে পুড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলবেন, "বুঝেছেন সাহেব, এত কম টাকায় এখন আর কিছু হয় না, আরেকটু বাড়ান। তাছাড়া ছেলে বায়না ধরেছে এবার ঈদে তাকে নতুন আরেকটি গাড়ী দিতে হবে। আমিও ভাবছি আরেক দফা হজ্জ করে আসবো আপনার ভাবীকে নিয়ে। সব মিলিয়ে খরচ তো আর কম নয়!" আর এদিকে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যস্ত থাকবে রাষ্ট্রীয় আপ্যায়ন ব্যায় বাড়াতে, নইলে আবার অতিথিদের কাছে ইজ্জত থাকবে না! কারণ আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র অতিথিদের বলতে অপারগ যে, "দুঃখিত অতিথিগণ, আপনাদের এক কাপ চা আর একটা সমুচার বেশী কিছু খাওয়াতে পারছি না, কারণ আমাদের রাজনরা অভুক্ত আছে।" আমাদের নীতি নির্ধারকগণ কোটি টাকা দামের গাড়ীর বদলে কম দামের গাড়ীতে চড়ে বলবেন না যে, "দুঃখিত আমাদের রাজনদের পায়ে জুতো নেই।" আর আমরাও বলবো না যে, "দুঃখিত নিজের অন্যায় সুযোগ নিতে পারবো না কারণ তাতে আমাদের রাজনরা অভুক্ত থাকবে।"
চিনে নিন হত্যাকারীদের
জন্মই যার আজন্ম পাপ
এই সেই হত্যাকান্ডের হোতা। সৌদি আরব পালিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত রেহায় পায়নি। (ছবিঃ নতুন ভাইয়ের কমেন্ট থেকে প্রাপ্ত)
ছবিসুত্রঃ ফেসবুক থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:২৪