মানুষ তার অভিজ্ঞতায় দেখল তৃণভোজী প্রাণীসমুহ তুলনামুলক নিরীহ হয় যারফলে তাদের শিকার করা সহজ। এই অভিজ্ঞতা থেকে তারা চলে আসতে শুরু করল তৃণ অঞ্চলে। সময় বয়ে চলল, কালের পরিক্রমায় তারা আরো শিখল কিছু নিরীহ প্রাণী অতি সহজের তাদের পোষ মানে। তারা স্থায়ী হতে শুরু করল। কালে কালে তারা দেখল এইসব তৃণ থেকে যে বীজ হয় তা খাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ উপযুক্ত এবং উপাদেয়। বদলে গেল মানুষের ইতিহাস। তারা স্থায়ী চাষাবাদ ও গবাদী পশুপালন শুরু করল। সভ্যতার এই বিবর্তনের ছোঁয়া তাদের বিশ্বাসবোধকেও বিবর্তিত করল। পরিবর্তিত হতে থাকল তাদের উপাসনার ধরন। সাথে মানুষের সহজাত কৌতুহলও থেমে থাকল না। আবিষ্কার করে চলল প্রকৃ্তির নানা গোপন তত্ত্ব।
যাই হোক, আমরা দেখে নেই পৃথিবীর সব থেকে বড় মরুদ্যান নীল নদ এর তীরে গড়ে উঠা প্রাচীন মিশরীয়দের সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিহাস এবং সেই সাথে একটি ধর্মীয় বিবর্র্তন।
কৃ্ষি ভিত্তিক জীবন ধারণ ও সমাজ ব্যবস্থার মূল শর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ। যে কারণে আদিম কৃ্ষি ভিত্তি সভ্যতা গুলো আমরা কোন বড় নদীর ধারে দেখতে পাই। মিশরীয় সভ্যতাও মূলত কৃ্ষিকাজের উপর ভর করেই গড়ে উঠেছিল। তাছাড়া মরুর ভেতর এমন পানির উৎস এবং কৃ্ষিকাজের সুব্যবস্থা অনেক দলকে তাড়িত করেছে নীল নদের তীরে বসতি স্থাপন করার। কিন্তু প্রকৃ্তি তার অমোঘ নিয়মের মতো সেখানেও লুকিয়ে রেখেছিল রহস্য। তাদের কাছে স্থায়ী কোন বর্ষপঞ্জি না থাকার কারণে তারা ঠিক জনতনা নীল নদে কখন প্লাবন আসে। যে কারণে স্থায়ীভাবে চাষাবাদ করা সেখানে তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। মানুষ থেমে থাকেনা, চলতে থাকল প্লাবনের সময়ে খোঁজ। তখনকার বিজ্ঞানীরা খেয়াল করে দেখল আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি সুর্যোদয়ের ঠিক আগে পুব আকাশে দেখা যায় ঠিক সেই সময়টায় নীল নদে প্লাবণ আসে (মধ্য জুন)। শুরু হল সময় গণনা। গোড়াপত্তন হল ইতিহাস কাঁপানো এক সভ্যতার। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল সেই তারাটির নাম লুব্ধক। ইংরেজীতে সিরিয়াস । যা ক্যানিস মেজর নক্ষত্রমন্ডলে অবস্থিত। গ্রিক মিথোলজি অনুসারে আকাশে এই নক্ষত্র মন্ডল কুকুর হিসেবে চিহ্নিত হয়।
কিন্তু এখানেও সমস্যা থেকে যায়। এটা আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হলেও আরো কিছু উজ্জ্বল তারা সাথে গুলিয়ে ফেলাটাই সাধারণ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। যে সমস্যার সমাধান করতে সেই সময়ের বিজ্ঞানীগণ কালপুরুষ নক্ষত্রমন্ডলের সহায়তা নেয়। যে নক্ষত্র মন্ডলের ইংরেজী নাম অরিওন । গ্রিক মিথোলজির বিখ্যাত শিকারী যার এক হাতে খড়গ আরেক হাতে সিংহের চামড়া সম্বলিত মাথা।
অরিওন নক্ষত্রমন্ডল
অরিওন নক্ষত্রমন্ডলের মাঝের তিনটা তারাকে একত্রে বলা হয় অরিওন বেল্ট । তিনটি তারার নাম যথাক্রমে আলনিতাক , আলনিলাম এবং মিনতাকা ।
বিজ্ঞানীগণ দেখলেন এই তিনটি তারাকে সরল রেখা ধরে যদি সরল রেখা টেনে নিচের দিকে যাওয়া হয় তাহলে যে উজ্জ্বল তারার কাছ দিয়ে সেটাই লুব্ধক। নিচের ছবির লাল রেখাটি খেয়াল করুন
হাইপোথিসিসঃ
আমরা অনুমান করে নিতে পারি গ্রিক মিথোলজিতে যেখানে ক্যানিস মেজরকে কুকুর হিসেবে তুলনা করা হয়েছে মিশরীরা সেখানে শেয়াল। সাধারণ মানুষ তাকে ধরে নিয়েছে তাদের এক দেবতা হিসেবে। যার ফলশ্রুতিতে তাদের উপাসনায় এসেছে শেয়াল দেবতা আনুবিস ।
আনুবিস বা শেয়াল দেবতার সাথে সাথে চলে এসেছে সেই নক্ষত্র প্রদর্শক অরিওন বেল্ট। যার অবস্থান অনুপাতের সাথে মিল পাওয়া যায় গীজার বৃহৎ তিনটি পিরামিডের যা অরিওন কোরিলেশন থিওরী নামে পরিচিত ।
আর তার কাছেই তাদের প্রধান দেবতা সিংহ মুখের
স্পিংকস মুর্তি। গ্রিক মিথোলজির সেই সিংহের মাথা হাতে শিকারীর সাথে তুলনা করা যায়।
পরিশিষ্টঃ
বিশ্বাস ও কৌতুহলে সংমিশ্রণই মানুষের সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস। বিশ্বাস মানুষকে দিয়েছে সান্তনা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয় থেকে মুক্তি, অসহায়ত্ত্বে ভরসা। কৌতুহল দিয়েছে জীবন ধারণের অনুসংগ, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি এবং চিন্তার খোরাক।
সব শেষে শিল্পীর কল্পনায় প্রাচীন নীলনদের চিত্র
** লেখার ভুলত্রুটি মার্জনীন
ছবিসুত্র ইন্টারনেট
সকল লিংক উইকিপিডিয়া
উৎসর্গ - ধুসর ইতিহাস হাতড়ে বেড়ানো ব্লগার জ্বিন কফিল ভাই কে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬