সেদিন ছিল পৌষের এক ঝিম মারা বিকেল ।
ধানকাটার পরের বিষন্নতাকে সাথী করে
খড়কুটোর নিস্তেজতা ওড়ানো বাতাস-
ভেসে এসে থমকে দাড়ায় আমার আংগিনায়।
এমনই এক বিকেল, যখন
সাদা বকেরা স্মৃতিকাতরতায় ঝিমায় কেবলি-
জলভরা বিলের পুরনো সুখস্মৃতি রোমহ্নন করে করে ওরা
বিয়োগ ব্যথায় বড্ড কাতর!
গোবরে লেপা উঠোন
কৃ্ষাণীর চোখের মত চমকে উদ্ভাসিত।
এখানে সেখানে পরে থাকা ধানের ছড়ায় -
ঠুসি পরানো বলদের চোখের লোভাতুর চাহনি।
নিরন্ন মানুষের হৃদয়ে নবান্নের উতসব জাগিয়ে-
ফেরারী হওয়া পৌষের দিনগুলোর
এক নি:সংগ বিকেলে,
তাকে আমি প্রথম দেখেছিলেম!
ঘরের দাওয়ায় দু'পা ছড়ানো
এক এলোকেশীর-
মাথায় চিরুনী চালানোর মুগ্ধকর তন্ময়তায়,
কখন যে কেটে গেল
শীতের সেই বেলা অবেলার স্বল্প প্রহর!
ওর চোখের আলোয় সেদিন, আমার বিষন্ন বিকেলগুলো হয়ে উঠেছিল ঝলমলে!
সোনালী ধানের ছড়ায় বসে বসে
শীষ দিয়ে যাওয়া দোয়েলগুলোকেও
কেন যেন, আরো আপন মনে হল সেদিন।
নীল সাদা লেইসে বাধা
তার দুই বেণীতে, সেদিন যেন
নীলাকাশ নেমে এসেছিল সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে!
হরিণী দু'চোখ- কাজল কালো,
যেন তপ্ত মরুর বুকে স্বস্তির মেঘ-বর্ষণ!
আমায় দেখে সেই এলোকেশী একটু হেসে তাকায়,
আঠাশ বছরের জীবন-যৌবন মুহুর্তে স্থবির হয়,
আমি প্রবেশ করি সেই চোখের নীড়ে।
সেদিন আকাশে বাতাসে ছিল মুক্তির গান-
ছিল শৃংখল মুক্তির প্রহেলিকায় উন্মত্ত-
পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনের ভালোলাগায় উজ্জীবিত
রুদ্রাক্ষের ভ্রমর গুঞ্জন!
মাটির সোঁদা গন্ধ আর
ধুয়া ধুয়া কুয়াশার বিষন্ন প্রলেপমাখা
এক পৌষের বিকেলে-
প্রথম দেখেছিলেম তাকে!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৭