শিহাব চা পান করতে অফিসের বাইরে। টং দোকানগুলো ভালো চা বানায়। পরিচিত দোকানি হেসে রং চা বানানোর প্রস্তুতি নেয়। শিহাবের কেমন পছন্দ সে জানে।
ছেলে কোলে নিয়ে একজন দোকানের সামনে আসে।
' এই ম্যাংগো চকলেট কত?'
- পাচ টাকা।
' দেন একটা। ... আগের একটা কি খাতায় লিখছিলেন?'
দোকানি হ্যা বলে চা'র কাপ তলা মুছে শিহাবের দিকে এগিয়ে দেয়।
চা'র কাপে চুমুক দিতে দিতে শিহাব একজন বাবাকে দেখে। ছেলের হাতে চকোলেটের প্যাকেট। খুলতে পারছে না। হেসে বাবা কাভার থেকে খুলে চকোলেট বের করে ছেলের হাতে দেয়। ছেলের মুখে হাসি। বাবার চোখে তৃপ্তি! নাক দিয়ে সর্দি ঝরছে ছেলের। বাবা মুছে দিলেন পরম মমতায়।
শিহাব মনের কোথায় যেন স্মৃতির ঘুন পোকাদের উপস্থিতি টের পায়। অনেক আগে এক বেকার বাবা তার সন্তানকে নিয়ে এক দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। মেয়ে বায়না ধরে, ট্যাং এর পাঁচ টাকার প্যাকেট কিনে দিতে। সেদিন শিহাব নামের এক বেকার- অথর্ব বাবা মেয়ের চাহিদা পুরণ করতে পারেনি।
কষ্টগুলো হৃদয়ের অনুভূতির ঝিল্লিগুলোকে নাড়িয়ে দিতে চায়। চা'র কাপ রেখে বিল মিটিয়ে অফিসে ঢোকার সময় শিহাব ভাবে-
' একজন মানুষ তার সমগ্র জীবনে কত রকমের অভিজ্ঞতাই অর্জন করে। প্রত্যেকের জীবন এক একটা উপন্যাস।'
বেকার বাবাদের কি বাবা বলা যায়? আজ নিজের জীবনে সফলতা এসেছে যদিও। তবে বিগত সময়ের বুকের নাগরিক জীবনে- জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক বাবার, সেই সময়ের হৃদয় পোড়া ঘ্রাণে উদ্দেলিত হবার মত পরিচিত জনেরা কেউ ছিল না।
সময় কতটা দু:সময়ের ভিতরে ছিল তখন।
বাবাদের সমগ্র জীবনে এমন ঘুন পোকাদের উপস্থিতি থেকেই যায়...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ৯:১৮