শৈত্য প্রবাহের এক অলস দুপুরে রেজাউলের মুদি কাম চায়ের দোকানে কয়েকজন পুরুষ বসে আছে। চাদরে আবৃতা নারী জরুরী কিছু গৃহস্থালি জিনিস কিনতে দোকানে আসে। নিজের শরীরের প্রকৃতির দানকে চাদর পারেনি ঢেকে রাখতে। অলস লোকগুলি শীতের তীব্রতায় থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। সবাই নারীকে দেখে। একটু বুঝি উষ্ণ হয় নারীর ঢেকে থাকা সম্পদের ভেতরের গোপন সম্পদকে কল্পনায় নিজেদের চোখে দেখে! নিজেদের ভেতরের আদিম মানুষটি বুঝি ক্ষণিকের তরে জেগে উঠে ওদের।
মানুষ কখন পশু হয়ে উঠে? চোখের দৃষ্টিতে জ্বলে ওঠা অদম্য কাম লালসায়, ঝরে পড়া লালার সিক্ততায় ভিজে ভিজে নারী ব্যথিত হয়। বাজার নিয়ে ফিরে চলা এক নারীর পেছনের দিকে তাকিয়ে থাকা পুরুষগুলির দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে রেজাউলের চা'র দোকানটির আশপাশ। শোভন-অশোভনের বাছ-বিচার কবেই উঠে গেছে! নারী হাঁটে আর তাঁর সামনে পিছনে জ্বালা ধরানো দৃষ্টির তীব্রতায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে গলে যায়।
এভাবেই এ দেশের নারীরা অহর্নিশ পরিবার এবং সমাজ থেকে এই দৃষ্টির তীব্রতর ভোগাকাংখায় জর্জরিত হয়ে বেড়ে ওঠে। ভিতরে গড়ে ওঠে এক নতজানু মনোভাব। পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠা তাঁর আর হয় না। তাই নিজ সন্তানদেরকে ও সে এক পরিপূর্ণ মানুষ থেকে একজন পূর্ণ পুরুষে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়।
ভোগবাদী এই সমাজে নারীর সন্তানও ওভাবেই বেড়ে উঠে... অন্য নারীদেরকে দেখে দেহের বাঁকে বাঁকে লুকানো সম্পদকে নিজের করে পেতে চায়... উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে কল্পনার লাগাম ছেড়ে দেয়... নারী তাদের মননে কখনোই নারী হয়ে ওঠে না... কেবলি এক মাংসপিন্ড... যাকে দলিত মথিত করে বিকৃত আনন্দ পাওয়া যায়... এভাবেই ওরা বেড়ে উঠে... ওদের সন্তানেরা বড় হয় এই আবহে... পৌনঃপুনিক এভাবেই একদিন একটা দেশ পূর্ণ হয়ে যায় কামার্ত কিছু অপূর্ণ পুরুষে!
এক বিষণ্ণ নারী নিজের ঘরে ফিরে... আসলেই কি নারী হিসেবে ঘরে ফিরতে পারে সে?
★ মামুনের অণুগল্প
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯