আগামী২০১৯ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরীর কাজ চলছে । একদিকে রয়েছে সরকারী দলের ভিশন- ২০২১ এ মধ্যম আয়ের দেশ ও ভিশন-২০৪১এ উন্নত দেশের রূপকল্প অপরদিকে বিএনপির ভিশন- ২০৩০ । যদিও ভিশন ও ইশতেহার দুটো আলাদা বিষয় । তবে দুটোর সমন্বয় করে চুম্বক কথাগুলি ইশতেহার হিসেবে নির্বাচনের আগে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে বলে তাতে কোন সন্দেহ নাই ।
সরকারী দলের নির্বাচনী ইসতেহারে সম্ভবত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এমডিজি অর্জন, ব্লু- ইকনোমি ( সমুদ্র অর্থনীতি), এনার্জি ( জ্বালানি) সেক্টরের উন্নয়ন এবং শিক্ষিত যুব সমাজকে কাজে লাগানোর প্রাধান্য দেয়ার কথাবার্তা যুক্ত হতে পারে । ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি সে সাথে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা যে থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
ছবি-২ শেখ হাছিনা আর খালেদা জিয়ার ভিশন
অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন ২০৩০ এ যে রূপরেখা দিয়েছেন তার মধ্যে গুড পলিসি, গুড গভর্নেন্স , গুড গভর্নমেন্ট , নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য , দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ,গনভোট পুণপ্রবর্তন , ডাবল ডিজিট মাথাপিছু আয় প্রভৃতি রূপকল্পের ভিত্তিতেই তাদের নির্বাচনী ইশতেহার রচিত হবে বলেই ধারণা ।
দেশের বড় দুই দলের ভিশন যাই থাকুক না কেন নির্বাচনের বিষয়ে তাদের মিশন একটাই, তা হল ক্ষমতায় আরোহন, আর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের সুর একটাই , বিএনপির মুল আপত্তি হাছিনায়, আওয়ামী লীগেরও সাফ জবাব সংবিধানের বাইরে কোন কথা মানিনা, মানবনা।
ছবি- ৩: সংবিধানের বাইরে কিছু মানিনা মানবনা, তাহলে নির্বাচনে যাবনা যাবনা
যাহোক, তাঁদের মধ্যে কেও না কেও ক্ষমতায় আসবেন , কিভাবে আসবেন সেটা তাঁদের বিষয় , নির্বাচন এবং বিনির্বাচন বিবিধ ভাবেই এ দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে । কিন্তু দিন পরিবর্তন , আশা নিরাশা , সামাজিক জিবনের সর্বক্ষেত্রে রয়ে গেছে বিশাল বৈষম্য যা কোন মতেই কাম্য নয় । আমাদের দাবী একটাই সেটা হলো কল্যান রাস্ট্র ( Welfare state) । রাস্ট্রবিজ্ঞানীরা যদিও কল্যান রাষ্ট্রকে গণতন্ত্র , কল্যান ও পুঁজিবাদের কম্বিনেশন হিসাবে অভিহিত করেছেন তার পরেও ওয়েল ফেয়ার স্টেট হিসাবে স্বিকৃত দেশ সমুহের নাগরিকগন বেশ সুখ স্বাচ্ছন্দেই আছেন বলেই দেখা যায় ।
কল্যান রাস্ট্র এখন শুধুমাত্র একটি ধারনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । নাগরিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ রক্ষায় এখন এটা দুনিয়ার অনেক দেশেই কার্যকরী আছে । আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যুক্তরাজ্য , জার্মানি, ফ্রান্স, এবং নেদারল্যান্ডস অন্যতম ।পাশাপাশি নর্ডিক মডেল নামে পরিচিত কিছু দেশ যথা আইসল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, এবং ফিনল্যান্ডে কল্যান রাস্ট্রের অস্তিত্ব দেখা যায় । এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাস্ট্র , জাপান , কানাডা , অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও কল্যান রাষ্ট্রভুক্ত বলে দাবী করা হয় । ড্যানিস সোসালিষ্ট এসপিং-এন্ডারসন ঘোস্ট (১৯৯৩) বিশ্বের কল্যান রাস্টের একটি ম্যাপ করেছেন যা নীচের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।
ছবি -৪ : Esping –Anderson map : welfare states in the world
সুত্র: Esping‐Andersen, Gøsta. 1993. “The Comparative Macro‐Sociology of Welfare States”. In Luis Moreno (ed.) Social Exchange and Welfare Development, Madrid
কল্যাণ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা , কার্যাবলী ও বৈশিষ্ট ব্যপক তাতে কোন সন্দেহ নাই । ছোট এ পরিসরে এত গভীরে না গিয়ে আমাদের মুল আলোচনার সুবিধার্থে মোটা দাগে বলা যায় কল্যান রাষ্ট্রে কেন্দ্র হতে তহবিল প্রবাহিত হয় দেশের সকল সেবাখাত ( যথা শিক্ষা , স্বাস্থ্য প্রভৃতি) সহ ব্যক্তি পর্যায়ে সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অঙ্গে । প্রয়োজনীয় অর্থ আসে মুলত করারোপ হতেই , বিশেষ করে প্রগ্রেসিভ ইনকাম ট্যাক্সের মাধ্যমে, যেখানে আয় বেশি কর বেশি, আয় কম টেক্স কম , নিদৃষ্ট করসীমার নীচে যার আয়, তার কোন টেক্স নাই। এর ফলে বিত্তশালীদের কাছ থেকে গরীবের দিকে আয় ধায় বিবিধ উপায়ে ।
ছবি-৫: একটি আদর্শ রাস্ট্রে সামাজিক কল্যানমুলক কর্মসুচীর একটি তালিকা
উৎস : Click This Link
ছবি-৬ : কল্যান রাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর নাগরিকদের প্রাপ্য বেনিফিট প্রবাহের চিত্র
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আর্থার সিসিল পিগু ১৯২০ সনে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত THE ECONOMICS OF WELFARE গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়েই বলেছেন অর্থনৈতিক স্টাডির মুল লক্ষ্যই হল সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ।
ছবি-৭ : কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আর্থার সিসিল পিগু
এ সি পিগুর মতে বিশুদ্ধ তাত্বিক বিষয়ের চেয়ে অর্থনীতিকে বড় করে দেখতে হবে বাস্তব অবস্থার নীরিখে । তাঁর মতে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যদি সমাজের কারো কোন ক্ষতি না করে কমপক্ষে একজনের জন্য হলেও মঙ্গল বয়ে আনতে পারে তবে তাকে কল্যান অর্থনীতির আওতাভুক্ত করা যেতে পারে । আর এই কল্যান রাস্ট্র মডেলের একটি বিশেষ পরিক্ষীত কর্মসুচী তথা বাধ্যতামুলক ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কীমকে আমরা প্রয়োগ করতে আগ্রহী আমাদের মুল বিষয় সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীর সুযোগ সুবিধার সমতা বিধানের লক্ষ্যে । তবে তার পুর্বে অতি সংক্ষেপে দেশের সরকারী ও বেসরকারী খাতের কর্মসংস্থান ও চাকুরীর বর্তমান হালচাল সম্পর্কে একটি তুলনামুলক পর্যালোচনা করে নিব সংক্ষেপে । সে সাথে কল্যান রাষ্ট্র হিসাবে বিকসিত প্রথম কাতারের দেশ যুক্তরাজ্যে বাধ্যতামুলক ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কীমের অভিজ্ঞতার কিছু বিষয় রেফারেন্স হিসাবে এ লেখায় তুলে ধরা হবে সংক্ষিপ্ত আকারে ।
দেশের সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীর বর্তমান অবস্থার একটি তুলনা মুলক পর্যালোচনা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর )বিবিএস) তথ্য অনুসারে ২০১৫/১৬ সনে দেশে কর্মঠ জনবলের সংখ্যা ৬২.১০ মিলিয়ন । এই কর্মঠ জনবলের মধ্যে কর্মে নিয়োজিত (১৫+ বয়সের) জনবলের সংখ্যা ৫৯.৫০ মিলিয়ন ।বেকার মানুষের সংখ্যা ২.৬০ মিলিয়ন ।
ফরমাল ও ইনফরমাল খাতে নিয়োজিত জনবল
গত ২০১৫/১৬ সনে বিবিএস পরিচালিত Labour Force Survey (LFS) অনুযায়ী দেশের মোট ৫৯.৫০ মিলিয়ন কর্মঠ জনবলের মধ্যে মাত্র ৮.২৬ মিলিয়ন ফরমাল খাতে এবং ৫১.৩০ মিলিয়ন ইনফরমাল খাতে নিয়োজিত, যা মোট কর্মঠ জনবলের শতকরা ৮৬.২০ ভাগ। ফরমাল খাতের ৮.২৬ মিলিয়ন জনবলের মধ্যে সরকারী খাতে নিয়োজিত জনবল ১.৩০ মিলিয়ন তথা শতকরা ১৫ ভাগ বাদবাকী ৮৬ ভাগই বেসরকারী খাতে নিয়োজিত । উল্লেখ্য সরকারী খাতে নিয়োজিত সকল নিয়োগই ফলমাল খাতভুক্ত ।
সরকারী খাত
দেশে সরকারী খাতের চাকুরী বলতে গেলে সকলের কাছে সোনার হরিনের মত । সরকারী খাতে নিয়োজিত ১.৩ মিলিয়ন চাকুরীজীবীদের মুল মাসিক বেতন সর্বনিন্ম ৮২০০ টাকা হতে সর্বোচ্য ৮৬০০০ টাকা ( প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব) পর্যন্ত । সেই সঙ্গে সরকারী আবাসন, আবাসন সুবিধার অবর্তমানে বাড়ী ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা ও আনুতোশিক সুবিধা রয়েছে । বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুবিধা, পেনশন, কল্যাণ ভাতা, বাড়ি নির্মাণ ও গাড়ি কেনার জন্য ঋণ সুবিধা, বেতন কাঠামোর গ্রেড পদ্ধতির পরিবর্তন, বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণীকরণ পদ্ধতির বিলুপ্তি, ইফিসিয়েন্সি বার তুলে দেওয়া প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য । সরকারি চাকরিতে নিয়োগে মেধার প্রাধান্য, উপযুক্ত বেতন-ভাতার মাধ্যমে দক্ষতা, সততা ও উৎপাদনশীলতা, বস্তুনিষ্ঠ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, পদায়ন, দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সুযোগ রয়েছে বলে সরকারী নীতিমালায় বলা হয়ে থাকে । যদিও সরকারী চাকুরীতে দলীয় করনের একটি ঢালাও অভিযোগ সর্ব যুগেই উত্থাপিত হয় বিবিধ প্রকারে ।
বেসরকারী খাত
বেসরকারীখাতের ইনফরমাল সেকটরে নিয়োজিত ৫১.৩০ মিলিয়ন জনবলের মধ্যে শতকরা ৪২ ভাগই নিয়োজিত আছে স্ব-কর্ম সংস্থানে । যার মধ্যে ২২ ভাগ হল আনপেইড ফেমিলি হেলপার , শতকরা ২০ ভাগ দিনমজুর , ১৫ ভাগ কোন না কোন নিয়োগকারীর অধীন এবং বাদবাকি ৪ ভাগ অন্যান্য ক্যাটাগরীভুক্ত।
বেসরকারী চাকুরী খাতে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশী । স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন কোন চাকুরীতে চুক্তিপত্র বলতে গেলে নাই ( যেখানে চুক্তিপত্র আছে সেখানে চুক্তির শর্ত পুরাটাই মালিকের স্বার্থ রক্ষা করে) , চাকুরী হারানোর ভয়,স্বল্পকালীন কিংবা বিনা নোটিশে চাকুরী চলে যাওয়া সাধারণ ব্যপার ।
চাকুরির শর্তাবলী বিশেষ করে মজুরী,কর্মের গতি, কাজের পরিবেশের উপর কর্মচারীদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই । দর কশাকষির ক্ষমতাবিহীন অনিশ্চিত কাজের ঘন্টা , নিয়োগকর্তা দ্বারা জোড় করে কাজ আদায় কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অভাবে তাজরিন ফ্যাশনের মত বিপজ্জনক অবস্থা অহরহ ঘটছে ।
হাতে গোনা অল্প কয়টি ছাড়া বাকী সকল ক্ষেত্রেই নুন্যতম মজুরী হার হতেও নিন্ম বেতন যা দিয়ে নীজের সহ হয়না পরিবারের ভরন পোষন । মজুরীর বাইরে অন্য কোন সুযোগ সুবিধা যথা বাড়ী ভাড়া , যাতায়াত ভাতা, অসুস্থতা জনিত ছুটি ও ভাতা , প্রসুতি ও মাতৃত্বকালীন ছুটি, বোনাস ও উৎসব ভাতা, অবসরভাতা , কল্যানভাতা , দেশে বিদেশে কর্মকালীন প্রশিক্ষন এর কোনটিই নাই বেসরকারী চাকুরী খাতে ।
বেআইনীভাবে বরখাস্তের জন্য আইনী ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগের অভাব, বেআইনি দন্ড দান , বৈষম্য , যৌন হয়রানী , অগ্রনযোগ্য কাজকর্ম, ইউনিয়ন করার অধিকার বঞ্চিত, আর যেখানে ই্নউয়ন করার স্বিকৃতি দেয়া হয়েছে সেখানে তা বাস্তবায়নে মালিক পক্ষের অনিহা ও হয়রানী লক্ষনীয়, এমনকি গার্মেন্টস ও ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশদ্রোহিতার অভিযোগ অআনা হয়েছে ফলে ইউনিয়ন নেতাদেরকেও বিবিধ প্রকারের হয়রানীর স্বীকার হতে হয়, বিশেষ করে রফতানীমুখী তৈরী পোশাক শিল্প খাতে ।
যদিও শ্রম ও কল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীনে শ্রম পরিদপ্তর ,কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল, নিম্নতম মজুরী বোর্ড জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল,বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সরকারী প্রতিষ্টান রয়েছে, তবে তাদের সার্বিক পারফরমেন্স এখনো পরে আছে অনেক অনেক পশ্চাতে ।
সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীতে সমতা বিধান প্রসঙ্গ
সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীতে সমতা বিধান সময়ের দাবী হলেও এটি একটি হারকিউলিয়াস টাস্ক, তাতে কোন সন্দেহ নাই । অনেকে আবার এটাকে একটি ইউটুপিয়ান ধারণা হিসাবেও অভিহিত করতে পারেন । তবে সরকারী বেসরকারী চাকুরীতে সমতা আনার বিষয়ে যে সমস্ত দিকের উপরে গুরুত্ব দিতে হবে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নীচে তুলে ধরা হল ।
ক) শ্রমবাজারের ফরমাল সেকটরে সরকারী ও বেসরকারী খাতে নিয়োগে সমতা বিধান
সরকারী খাতের মত বেসরকারী খাতের সকল চাকুরী কিংবা কর্ম সংস্থানকে ফরমাল সেকটরে রুপান্তরিত করার বিষয়টি প্রথমেই বিবেচনায় নিতে হবে ।এর জন্য নতুন অবকাঠামো সৃজন সহ আর্থিক ও ভৌত সকল খাতে প্রয়োজনীয় স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট প্রয়োজন। এর জন্য উপযুক্ত পর্যায়ে যথাযথ স্টাডি ও কৌশল নির্ধারন করতে হবে সম্পুর্ণ দেশী বিশেষজ্ঞ দিয়ে । বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বিশেষজ্ঞ দিয়ে স্ট্রকচারাল এডজাস্টমেন্টের কাজ করালে ফল দিবে উল্টো । এ যাবতকাল পর্যন্ত তাদেরকে দিয়ে যত কাজ করানো হয়েছে তাতে হিতে বিপরিত হয়েছে , দেশের বৃহত্তম পাটকল আদমজি গেছে ভুতের পেটে , সেখানে অবশেষে দেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে আদমজীর বিশাল এলাকাটি ভরে উঠছে দেশী পাট শিল্পের বদলে বিদেশি সুতা আর কাপড়ের সেলাই কারখানাতে । তার পরেও বলা যায় আদমজির মত লোকসানী আর অব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানাকে যদি আদমজি ইপিজেটের মত বেসরকারী পর্যায়ে ছেড়ে দেয়া যায় তাহলে বেসরকারী খাতে ফরমাল নিয়োগের অনুপাত যাবে বহুগুন বেড়ে । কোন এক সময়ে তা সরকারী খাতের সমান অনুপাতে হয়েও যেতে পারে ।
ছবি-৮ : দেশের বৃহত্তম সরকারী খাতের পাটকলকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে বেসরকারী খাতে গড়ে উঠা আদমজি ইপিজেট
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রনীত Recent Employment Situation and Labour Market Developments in Bangladesh
পলিসি পেপারে বেসরকারী খাতের চাকুরীর বাজার উন্নয়নের বিষয়ে গুরত্ব দিয়ে ইফেকটিভ সোসাল ডায়ালগের কথা বলা হয়েছে । কিন্তু কোন্ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের এই মুল্যবান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তা জানা যায়নি , তবে অনেক খুঁজে পেতে তাদের স্টক হতে এই রিপোর্ট বের করে পড়তে হয়েছে ।
খ) নিয়োগ প্রত্যাসী জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি
চাকরি প্রার্থীদের দক্ষতার অভাব বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ । শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীরা দক্ষ নন। বিশেষ করে অ্যাগ্রো-প্রসেসিং ও পোশাক খাতে দক্ষতার অভাব প্রকট আকার ধারণ করে আছে । কৃষি ভিত্তিক এই দেশে ৫ টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ( সরকারী খাতে ৪টি ও বেসরকারী ১) , ও ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ৬ টি সরকারী ৩ টি বেসরকারী) কৃষি ফ্যাকাল্টি থাকার পরেও অ্যাগ্রো-প্রসেসিং খাতে মোট ৭৬ শতাংশ দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এর পরেই রয়েছে তৈরি পোশাক খাত । এ খাতে দক্ষ জনবলের অভাব ১ লাখের ওপর। গত ২৩শে জুলাই ২০১৭ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তৈরি প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের শ্রমবাজারে দক্ষতার অভাব’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতেই নাকি দক্ষ কর্মকর্তার অভাব রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৯ জন। আধাদক্ষ কর্মকর্তার অভাব রয়েছে ৪৮ হাজার ১৩০ জন এবং অদক্ষ শ্রমিকের অভাব ৮ হাজার ৫৭৭ জন। বিআইডিএসের এ গবেষণা প্রতিবেদনে যে কয়টি খাতে দক্ষতার অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অ্যাগ্রো-ফুড, আরএমজি, কনস্ট্রাকশন, হেলথকেয়ার, হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম, আইসিটি, লেদার, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিপ বিল্ডিং , ঔষধ শিল্প অন্যতম । এ প্রসঙ্গে অবশ্য অর্থমন্ত্রীর ভাষন হতে জানা যায় চলতি বাজেটেই নাকি দেশে ৫ লাখ দক্ষ কর্মকর্তা তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে । আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও তিনি জানান। জানা গেছে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে কানাডা সরকারের অর্থায়নে ও আই এল ও এর মাধ্যমে Bangladesh Skills for Employment and Productivity (B-SEP)
শিরোনামে দেশের জনবলের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। কামনা করি এটা আরো জোড়দার হোক ।
ছবি-৯ : বাংলাদেশ , কানাডা আইএলও প্রকল্প
তবে অর্থ মন্ত্রী দেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে বলার পাশাপাশি এও বলেছেন সরকার আর কত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে? সরকারের পক্ষে আর কর্মসংস্থান বিস্তার করার সুযোগ নেই। যা করার বেসরকারি খাতকেই করতে হবে। বাহ! বা এ না হলে অর্থমন্ত্রী । আমরা সকলেই জানি সরকারী নীতি ও সঠিক কর্ম পরিকল্পনাতেই বেসরকারী খাতের বিকাশ এবং কর্মসংন্থান সৃস্টি হয়। ক্রমবর্ধমান হারে কর্ম সংস্থান সৃস্টি করে দেশে বেকারত্ব লাঘবের জন্য সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে , এটাই তাদের কাজ , সরকারের পক্ষে আর কর্মসংস্থান বিস্তার করার সুযোগ নেই বলার জন্য নয় । জাতি আর কত দিন এমন কথা শুনবে তা আল্লাই জানেন ।
বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতরাই বেশি বেকার, এর নিরশন হওয়া দরকার
বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করেন৷ কিন্তু কাজ পান মাত্র সাত লাখ মানুষ৷ অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশ কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ পান না৷ সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি৷ এর ভয়াবহতা দেখা গেছে সাম্রতিক কালের বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের ক্ষেত্রে । ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে জন প্রশাসনে ২ হাজার ২৪ টি ( প্রশাসন ক্যাডারের ৩০০, পুলিশ ক্যাডারের ১০০টি পদসহ ৩৮তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে মোট ৫২০টি, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯টি এবং শিক্ষা ক্যাডারে ৯৫৫টি পদ ) পদের বিপরীতে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮জন প্রার্থী আবেদন করেছেনবলে জানা যায় ।
ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৫ জন ফি জমা দিয়েছেন । । আবেদন প্রতি ৭০০ টাকা হারে ( প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃতাতাত্বিক গুষ্ঠির জন্য ১০০টাকা ) সরকারী প্রাপ্তির পরিমান দাঁড়াতে পারতো প্রায় ২২.৯৪ কোটি টাকা তবে কিছুসংখ্ক প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃতাতাত্বিক গুষ্ঠির জন্য জনপ্রতি ফি ১০০টাকা এডজাস্ট করার পরেও ধারনা করা হয় এর মোট পরিমান ২০ কোটি টাকা হতে কোন অংশে কম হবেনা । এখন হিসাব করলে দেখা যায় জনপ্রতি ১ টি বিসিএস পদে লোক নির্বাচনের জন্য জাতিকে ব্যয় করতে হল প্রায় ১ লক্ষ টাকা, আর সরকারী কর্ম কমিশনের জন্য বাৎসরিক ৭৪ কোটি টাকা বাজেটের অংশ বিশেষ এ কাজের জন্য যুক্ত করা হলে এই ব্যয় আরো কয়েক গুণ যাবে বেড়ে । এত কিছুর পরেও সরকারী কর্ম কমিশনের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি বলেছেন , ‘সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের আস্থা ও আগ্রহ বাড়ছে। তাই এবার এত আবেদন পড়েছে। এর আগে কোনো বিসিএসে এত বেশি আবেদন জমা পড়েনি।’ তাদের জন্য আনন্দের বিষয়ই বটে !!! কিন্তু যার ঝোলা খালি হয়েছে সেই শুধু বুঝে জ্বালা কারে বলে ।
বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন বলেও জানা যায় । নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছেও খাতা পাঠানো হবে। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হবে বলে পিএসসি মনে করছে । কোচিং সেন্টারে গিয়ে বিগত বছর গুলির প্রশ্র পত্রের ভিত্তিতে প্রণীত গাইড বই অনুসরণ করে মুলত মুখস্ত বিদ্যার উপরে মাধ্যমিক স্তরের অংক , বাংলা ইংরেজী ও সাধারণ জ্ঞানের দেয়া উত্তরের ভিত্তিতে প্রকৃত মেধার যাচাই কিভাবে হবে তা বিরাট প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যপার (তবে প্রকৃত মেধাবীদের প্রতি যথাযোগ্য সন্মান রইল)। তাছাড়াও প্রতিযোগীতা হচ্ছে সদ্য স্নাতক ডিগ্রীধারীদের সাথে বিপুল সংখ্যক সরকারী বেসরকারী কলেজ ভার্সিটির আবেদনকারী টিচারদের। তাই মেধা যাচাই করে নির্বাচনের জন্য এ বিশাল ব্যয়বহুল কর্মযজ্ঞ যদি পরিচালনা করতেই হয় তাহলে সঠিক মেধা যাচাই এর জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড হওয়া প্রয়োজন। এটা বুদ্ধি খাটিয়ে বিবিধ ভাবে করা যায়। সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলি নিয়ে মন্তব্য ও প্রতি মন্তব্যের ঘরে মতামত বিনিময় করা যেতে পারে।
বর্তমান পর্যায়ে মেধা যাচাই এর জন্য পরীক্ষার বিষয় ভিত্তিক মান বন্টন ও মেধা যাচাইকারী পরিক্ষকদের বিষয়ে দুটো কথা বলার আছে ।
আলোচনার প্রয়োজনে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন কোচিং সেন্টার কতৃক অনলাইন হতে প্রাপ্ত বিষয় ভিত্তিক মানবন্টন নীচের সারণীতে দেখানো হলো ।
ছবি-১০ : ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস ও মান বন্টন ।
তথ্যসুত্র : Click This Link
উপরের বিষয় ভিত্তিক মান বন্টন হতে দেখা যায় এর প্রায় অর্থেক উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকলের আবশ্যিক বিষয় ভিত্তিক । বাদ বাকিগুলি বিশেষ বিশেষ শাখা ভিত্তিক । একটু উচ্চ পর্যায়ের বিষয় গুলিতে থাকা ১০০ নম্বরের জন্য যে যে বিষয়ে গ্রাজুয়েট ও পোষ্ট গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়াশুনা করেছেন তারাই ভাল করবেন। অন্যরা মেধা থাকলেও কোন অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান না থাকার জন্য সঙ্গত কারণেই ছিটকে পড়বেন ।
তাই অগতির গতি হল লাইন ধরে কোচিং সেন্টারে গিয়ে নীজেকে তৈরী কর। । লাভের লাভ কোচিং ব্যবসার । সুযোগটা তৈরী করে দিল সরকারী কর্ম কমিশন । ধরে নিলাম সকলের জন্য কোচিং সেন্টারে যাওয়ার প্রয়োজন না হলেও কমপক্ষে ২৫% তো কোচিং সেন্টারের সরনাপন্ন হবেনই । আর মাসের পর মাস ধরে উচ্চ হারের কোচিং ফিস কে হিসাবে ধরলে হয়ত দেখা যাবে কোচিং বানিজ্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে !!! এর সাথে যুক্ত হবে প্রায় ৪ লক্ষ পরিক্ষার্থীর উত্তর পত্র মুল্যায়নের জন্য পরিক্ষক গনের সন্মানী/পারিশ্রমিক যার পরিমানটিও বিশাল অংকের হবে বলেই ধারনা । তাই সব মিলিয়ে প্রায় শত কোটি টাকার এই নির্বাচনী ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে একটি উদিয়মান শিল্প সেকটর হিসাবে বিবেচিত হতে পারে । এর জন্য পুরা ধন্যবাদ দিতে হয় সরকারী কর্ম কমিশনকে !!! নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে দেশে একটি কথা চালু আছে অনেক আগে থেকেই তবে সেটা ছিল কাল তালিকাভুক্ত, কিন্ত এখন স্পষ্ট দিবালোকে সকলের চোখের সামনে আবেদনকারীদের অর্থায়নে দেশ জোড়ে চলছে প্রার্থী নির্বাচন ও তাদের প্রস্তুতি পর্ব বানিজ্য!!!
মেধা যাচাই এর জন্য উত্তরপত্র মুল্যায়ণকারীদের বিষয়েও দুটো কথা বলার আছে । বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষার সিলেবাস দেখে বুঝাই যায় এতে রয়েছে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের সমাহার, যাতে সাধারণ জ্ঞানের বিষয় হতে শুরু করে অংক , বিজ্ঞান , কম্পিউটার , তথ্য প্রযুক্তি যুক্ত আছে । একজন পরিক্ষক কিভাবে সকল বিষয়ের সঠিক মুল্যায়নে সক্ষম হবেন তাও এক বিরাট প্রশ্নের বিষয় । মনে হচ্ছে সকল বিষয় মুল্যায়ন করার জন্য জ্ঞান লাভের নিমিত্ব পরিক্ষকদেরও কোচিং এর প্রয়োজন হতে পারে । এর সমাধান হতে পারে কম্পিউটারে উত্তর পত্র পরীক্ষা করা । এতে করে বিশাল সংখ্যক উত্তর পত্র মুল্যায়নকারী নিয়োগের প্রয়োজন হবেনা , সময়টাও কমে যাবে । বিসিএস পরিক্ষা পরিচালনা ও উত্তর পত্র মুল্যায়নকারীদেরকে পারিশ্রমিক দানের জন্যই নাকি আবেদনকারীদের নিকট হতে উচ্চ হারে ফি নেয়া হয় বলে কমিশন কতৃপক্ষরাও বলে থাকেন । তাই এ খাতে ব্যয় কমাতে পারলে আবেদন পত্র ফিসটাও কমানো কিংবা একেবারে না নিলেও চলতে পারে । জনগনের অর্থে পরিচালিত সরকারী কর্ম কমিশন বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন ।
ছবি-১১ : বাংলাদেশ সরকার কর্ম কমিশন
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন দেশব্যাপি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচন করবেন এটাই স্বাভাবিক । সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়াদি ; প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদান, উক্ত কর্মের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় পদোন্নতিদান ও বদলিকরণ এবং অনুরূপ নিয়োগদান, পদোন্নতি বা বদলিকরণের জন্য প্রার্থীর উপযোগিতা-নির্ণয় সম্পর্কে অনুসরণীয় নীতিসমূহ ; অবসর-ভাতার অধিকারসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মের শর্তাবলীকে প্রভাবিত করে, এইরূপ বিষয়াদি ; এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃঙ্খলামূলক বিষয়াদি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)পরামর্শ প্রদান করাও কমিশনের কর্ম । সরকারী কর্ম কমিশনের জন্য এগুলি খুবই উত্তম কাজ তাতে কোন সন্দেহ নাই । এজন্য তারা প্রসংসার যোগ্য ।
তবে এখন প্রশ্ন হলো সরকারী বেসরকারী সকলেই প্রজাতন্ত্রের অধীন । দেশের চাকুরী খাতের একটি ছোট অংশ সরকারী খাতের জন্য যদি বিশাল কলেবলের অবকাঠামো ও বার্ষিক প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বাজেটের একটি সরকারী স্থায়ী কর্ম কমিশন থাকতে পারে তাহলে দেশের সর্ববৃহত বেসরকারী খাতে জন্য অনুরূপ সেবা দানকারী একটি বেসরকারী কর্ম কমিশন থাকলে বেসরকারী চাকুরী খাতের সকলের জন্য চাকুরী প্রবিধানমালা , নির্বাচন , নিয়োগ, পদায়ন , পদন্নতি , অবসরভাতা , অন্যান্ সুযোগ সুবিধা দেখা এবং সে অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্নধার রাস্ট্রপতিতে পরামর্শ করতে পারত । যদিও দেশে শ্রম ও কল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীনে বেসরকারী খাতের জন্য বিবিধ প্রকারের সেবা ও সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে তার পরেও যখন একটি সরকারী শুন্য পদের জন্য হাজার বেকার ও সকার সকলেই হুমরী খেয়ে পরে , তাহলে বুঝতেই হবে বেসরকারীখাতের উন্নয়ের জন্য নিয়োজিত বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান সমুহের সমুহের সাফল্যট কতটা ।
মধ্যপ্রাচ্যের তৈল সমৃদ্ধ দেশসমূহে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিকের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে আন্তর্জাতিক শ্রম দপ্তরের অধীনে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান শাখাকে আলাদা করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো নামে সম্পূর্ণ আলাদা যে সরকারী নির্বাহী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে সে রকম যদি আরো একটি প্রতিষ্ঠান করা যেতো যারা দেশের ভিতরেই যেখানে দক্ষ জনবলের তীব্র অভাব রয়েছে সেখানেই কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারতো , তাহলে ভিটেমাটি বিক্রি করে দেশের শ্রমিকদেরকে বিদেশের পানে ছুটতে হতোনা । ভিটে মাটি বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে তারা যে পরিমান রেমিটেন্ম দেশে পাঠায় তার থেকে কয়েকগুন বেশী সম্পদ নীজ দেশেই উৎপাদন করতে পারত , দেশে দক্ষ শ্রমিকের তীব্র চাহিদা রয়েছে এটাতো দেশের সরকারী গবেশনা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এবং খোদ অর্থমন্ত্রী নীজেও বলেছেন যার কথা লেখাটির মাঝের অংশে দেখা যাবে একটু খানি সামনের দিকে আগালেই।
ছবি -১২: জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ভবন
এ প্রসঙ্গে আরো বলা যায় জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য- এম.ডি.জি. অর্জনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- এন.জি.ও'র কাজের পরিধি বাড়াতে আসছে বাজেটে ১শ' কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন এম.ডি.জি. বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এম.ডি.জি. বাস্তবায়নে এনজিও'র ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব করেন তিনি। জানিনা বিশ্বের সর্ববৃহত এই বাংলা ব্লগের লেখা তাঁর নজরে পড়বে কিনা , তবে এ বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষন করা হল তিনি যেন সরকারী বেসরকারী খাতে চাকুরীর সুযোগ সুবিধার সমতা বিধানের বিষয়টি এম ডি জি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের পরবর্তী সন্মেলনে তুলে ধরেন । বেসরকারী খাতের চাকুরী যেন সরকারী খাতের পিছনে না পড়ে । ২০০০ পদের জন্য যেন ৪ লক্ষ আবদেন জমা না পরে । আমার নিশ্চিত ধারনা দেশে সরকারী চাকুরীর জন্য এই রেকর্ড পরিমান আবদেন পত্র জমা পড়ার বিষয়টি তাদের দৃষ্টি একবারেই এড়িয়ে গেছে । আর তাদেরই বা কি বলব, অল্প সংখক পদের বিপরীতে এত বিশাল মাপের আবদেন পত্র পড়ায় খোদ সরকারী কর্ম কমিশনের কর্তাব্যক্তি সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন সরকারী চাকুরীর প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা বেড়েছে বলেই এত বেশী আবেদন পরেছে। কিন্তু এটা যে দেশের চাকুরী বাজারের জন্য একটি অশনি সংকেত এ কথাটা তাদের বুঝাবে কে । নাগরিক প্লাটফরমতো ব্যস্ত আছে এন জি ও দের জন্য শত কোটি টাকার বাজেট বাগাতে।
ছবি-১৩ : নাগরিক প্লাটফরম,বাংলাদেশ
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে বেসরকারী খাতে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, বিপণন, আর্থিক সেবা খাত, শিক্ষা , প্রশাসন , কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পর্যটনশিল্প, আবাসন, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে ক্রমাগতভাবে উল্লেখযোগ্য হারে ৷ কাজের সুযোগ বেড়েছে টেলিযোগাযোগ, পোশাকশিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেও৷ এছাড়া বাংলাদেশের ওষুধশিল্পটিও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় একটি খাত হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে৷ সরকারি চাকরির বাইরে প্রতিবছর এসবখাতে এখন প্রায় ৭০ হাজার চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয় বলে জানা গেছে ।
এছাড়াও বাংলাদেশে পোশাক শিল্পখাতটি কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তারা চাহিদামত দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছে না ৷ বাংলাদেশের পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউসে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কয়েক হাজার, যাঁরা মোটা অঙ্কের বেতন পান ৷ মার্চেন্ডাইজার, প্যাটার্ন মাস্টার ও ডায়িংয়ে অনেক বিদেশি কাজ করেন ৷
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখন দরকার ডিজাইনার, বিশেষ করে ফ্যাশান ডিজাইনার৷ কিন্তু আমরা ভুরি ভুরি সাধারণ মাষ্টার ডিগ্রিধারী তৈরি করছি, যাঁদের কাজ নেই , ফলে বিসিএসে বাড়াচ্ছে ভীর ৷ অন্যদিকে ফ্যাশান ডিজাইনার আনছি বিদেশ থেকে৷ পোশাক খাতেই আমরা বছরে বিদেশিদের বেতন দিয়ে থাকি অন্তত পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ আমাদের দক্ষ জনশক্তি নেই বলে কর্মসংস্থানের পোশাক, চামড়া এবং ওষুধশিল্পের মত বড় তিনটি খাতের মূল পদগুলো এখন বিদেশিদের দখলে ৷
আরো দু:খের কথা হলো দেশে দক্ষ জনবলের এত বিশাল অভাব থাকার পরেও বিদেশে থাকা দক্ষ মেধাবীদেকে কেন দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছিনা সে বিষয়টি নিয়ে আমার পুর্বের পোষ্টে বিজ্ঞ সহব্লগারদের অনেক মুল্যবান মতামত পাওয়া গেছে । সকলের কথাতেই গভীর হতাশার সুর ব্যক্ত হয়েছে । বিদেশে উচ্চ পারিশ্রমিক ও অনুকুল পরিবেশের বিপরীতে দেশে উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাবই হতাশার মুল কারণ বলে সকলেই বলেছেন ।উচ্চ পারিশ্রমিক , সাথে সাথে নীজ মেধা ও দক্ষতার প্রমান দিতে পারলে তরতরিয়ে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহন সহজ বলেই যে শুধু দেশের মেধাবীগন বিদেশ ছেড়ে দেশে আসছেন না তাতো নয়, বরং দেশ হতে হাজার হাজার মেধাবী তরুন প্রতি বছর বিদেশে পারি জমাচ্ছেন । বিভিন্ন সুত্র হতে প্রাপ্ত বিদেশের উচ্চ বেতনের কয়েকটি চাকুরির চিত্র নীচে তুলে দেয়া হল শুধু বুঝাতে কেন তারা বিদেশের প্রতি আকৃষ্ট হবেন না ।
বিশ্বের যে চাকুরিতে বেতন সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে কয়েকটি চাকুরীর বেতনের দিকটা তুলে ধরা হল । চাকুরি বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘কেরিয়ারকাস্ট’-এর হিসেবে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি বেতন পেয়েছেন সার্জন বা শল্য চিকিৎসকরা ৷
ছবি -১৪ : শল্য চিকিৎসক
গড়ে একেক জন শল্য চিকিৎসকের বাৎসরিক বেতন ৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার৷ ফোর্বস কতৃক তৈরীকৃত তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন মনোবিজ্ঞানীরা ৷ তাদের গড় বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার৷ জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা জিপি চিকিৎসকদের চাহিদাটাও গোটা বিশ্বেই ক্রমশ বাড়ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গড় বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার৷৷মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে উচুঁ পর্যায়ের একেকজন কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ বা নির্বাহীর গড় বেতন বাৎসিক ২ লাখ মার্কিন ডলার৷
ভালো দন্ত চিকিৎসকের বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার । ফোর্বস-এর তালিকার ছয় নম্বরে রয়েছে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারের গড় বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার৷ আইটি স্পেশালিষ্টদের চাহিদাটাও তরতরিয়ে বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে অনুযায়ী পর্যাপ্ত চাকুরিপ্রার্থী এখনো পাওয়া যাচ্ছে না৷একজন আইটি স্পেশালিস্টের গড় বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার৷আর একটা উল্লেখযোগ্য উচ্চ বেতনের চাকরী হল ফার্মাসিস্ট । ফার্মাসিস্টদের গড় বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার৷ তাদের চাহিদাও বাড়ছে ক্রমশ৷বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয় এখানেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে ।
ছবি -১৫ : ফার্মাসিস্ট
উন্নতমানের অনুকুল পরিবেশ ও উচ্চ বেতন হারের কারনে বিদেশে কর্মরত বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশী মেধাবীগন দেশেতো ফিরছেনই না বরং দেশের মেধাবীগন উচ্চ বেতন ও নানাবিধ পরিবেশগত কারণে বিদেশমুখী হচ্ছেন । আর একে আরো উস্কে দিচ্ছেন দেশের কর্মকমিশন ও অন্যান্য সকল নীতি নির্ধারকেরা ।
দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণখাতে বিপুল আকারের শিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের অভাব থাকার পরেও বিসিএস ক্যাডারের হাজার দুয়েক শুন্য পদের বিপরীতে কেন প্রায় ৪ লক্ষের মত আবেদন পরে , কি মধু আছে সেখানে , আর কেনই বা সেখানে দেশের উচ্চ শিক্ষিত গ্রাজুয়েটগন হুমরী খেয়ে পরেন তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে । সেখানে শুধু বেকাররাই আবেদন করেননা অনেক ভার্সিটি শিক্ষক ও অন্য পেশার নন ক্যডার সরকারী চাকুরী জীবীগনও আবেদন করে থাকেন বলে দেখা গেছে।
উচ্চ বেতনে নিয়োজিত অনেক বেসরকারী কর্মকর্তগনও বিসিএস ক্যাডার কিংবা নন ক্যাডার পদের জন্য আবেদন করেন । বেতন যাই হোক না কেন তবু উচ্চ বেতনের বেসরকারী চাকুরী ছেড়ে তারা সরকারী চাকুরীর দিকেই বেশি ঝুকেন । এর কারণ বহুবিধ । অনেক সময় অনৈতিক সুবিধা হাতরিয়ে নেয়ার সুযোগ ছাড়াও সরকারী চাকুরীর নিষ্চয়তা, চাকুরী হারানোর ভয় না থাকা , ছুটিছাটা , বোনাস ভাতা , সরকারী গাড়ী বাড়ি , টেলিফোন সর্বোপরি অবসরকালীন গ্রাচুইটি, মোটা অংকের এক কালীন ও মাসিক পেনসন সুবিধা প্রভৃতি কারণে সরকারী চাকুরীর প্রতি মোহ থাকাটাই স্বাভাবিক । বেসরকারী চাকুরীতে দৃশ্যমান আর্থিক বেতনের পরিমান অনেক সময় বেশী দেখা গেলেও সরকারী চাকুরীর মত অনেক দৃশ্য ও অদৃশ্য দমনমুলক ব্যবস্থা বিশেষ করে হায়ার এন্ড ফায়ারের ভয় , তার পরেও নতজানু হয়ে সারা জীবন চাকুরী করেও অন্তিমকালে কোন রকম পেনসন সুবিধা না থাকার কারণে বেসরকারী চাকুরীর প্রতি মানুষের এত অনিহা। এখানে উল্লেখ্য যে সুযোগ সুবিধা কম হলেও সরকারী খাতের থেকে বেসরকারী খাতের জনবলের শ্রমিক উৎপাদনশীলতা অনেক বেশী । তাই এ মহুর্তে সরকারী চাকুরীর মত বেসরকারী চাকুরীর মধ্যে সমতা বিধান কিংবা ভারসাম্য বিধান অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে ।
এ লক্ষ্যে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বেশ সুন্দর সুন্দর কর্মসুচী গ্রহন করেছে । বিষয়টি এক দিনে আসে নাই, এর জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হয়েছে। ব্লগের এই স্বল্প পরিসরে এ বিষয়ে নাতিদীর্ঘ রচনাতে অনেকের অনীহা ধরতে পারে বিবেচনায় সকল বিষয় বিস্তারিত ভাবে বলা সম্ভব নয় এখানে । তাই বিশ্বের বুকে অন্যতম কল্যানমুলক দেশ যুক্তরাজ্যের কিছু অভিজ্ঞতার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হল এখানে শুধু একটা দিক নির্দেশনা দেখাতে । সকলের মুল্যবান আলোচনায় সঠিক গতি পাবে বলে ধারনা করি ।
ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কীম, যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সরকারী চাকুরীর মত বেসরকারী চাকুরীজীবীদেরকে সুবিধা দেয়ার জন্য ত্রিপক্ষীয় যথা সরকার , নিয়োগকারী এবং শিল্প শ্রমিকদের নীজ কনট্রিবিউসন ভিত্তিক স্বাস্থ্য বীমা কর্মসুচীর আদলে ১৯১১ সনে ‘’ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স এক্ট ১৯১১” নামে একটি কর্মসুচী প্রবর্তন হয় যুক্তরাজ্যে । এটিই ছিল বৃটেনে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং সে সময়কার সরকারের ব্যাপক সামাজিক কল্যাণ সংস্কারের একটি অংশ। সে সময় রাজনৈতিক দলগুলি ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স কে কিভাবে নির্বাচনী লিফলেটে ব্যবহার করেছিল তাদের সামাজিক কল্যানমুলক সংস্কারের জন্য তা নিন্মের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।
ছবি-১৭ : ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স লিফলেট
এই সংস্কারটি বৃটেনে শুরু হওয়ার পিছনের পটভুমির দিকে তাকালে দেখা যায় তারা এটা নিয়েছে জার্মানীর অভিজ্ঞতা হতে । সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বে যখন বিপ্লবের ডেও আছরে পড়ছিল তখন জটিল একটি রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা সমাজতান্ত্রিক শত্রুদের কাছে চলে যেতে পারে বিবেচনায় শ্রমিক শ্রেণীর সমর্থন লাভের লক্ষ্যে জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্ক (Otto von Bismarck) জার্মানীতে প্রথম কল্যান রাস্ট্রের প্রবর্তন করেন ।
ছবি -১৮ : ১৮৭১-১৮৯০ পর্যন্ত জার্মান সাম্রাজ্যের ক্ষমতাশীণ সোসালিষ্ট চ্যান্সেলর বিসমার্ক
অসুস্থ শ্রমিকদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য ১৮৮৪ সনে জার্মান চ্যন্সেলর বিসমার্ক প্রবর্তিত বাধ্যতামুলক বীমা ব্যবস্থাটিকে বৃটিশ লিবারেল সরকারের অর্থমন্ত্রী ( চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার ) লিয়ড জর্জ অনুসরণ করেন । তিনি ১৯০৯ সনে তার ইতিহাস বিখ্যাত “People's Budget ”বক্তৃতায় নতুন সামাজিক কল্যান কর্মসুচীর অর্থায়নের জন্য একটি অভুতপুর্ব কর কাঠামোর প্রস্তাব করেন, যার অধীনে বিত্তমানদের আয় এর উপরে প্রগ্রেসিভহারে ট্যাক্স ধার্য করার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার এই প্রস্তাবে সমর্থন করেন বৃটেনের সর্বকালের সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উইনস্টন চার্চিল, যিনি সে সময়ে বোর্ড অফ ট্রেডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন (পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বৃটেনে প্রধানমন্ত্রী ও ২০০২ সনে বিবিসি আয়োজিত ভোটে ( Poll) সর্বকালের সেরা বৃটিশ রাজনৈতিক ব্যক্তিতের স্বীকৃতি অর্জন করেন ) । এই রকম আয়কর ধার্যের জন্য লিয়ড জর্জ ও চার্চিল কে "Terrible Twins" হিসাবেও সে সময় অভিহিত করা হত । হাউস অব লর্ডসের বাধার মুখেও বাজেট বক্তৃতায় প্রস্তবিত বিষয়টি পার্লামেন্টে পাশ হয় । পরবর্তীতে পিপলস বাজেটটি একটি রেভলিউশনারী কনসেপ্ট হিসাবে গন্য হয় এই কারণে যে সেটাই বৃটিশ ইতিহাসে প্রথম বাজেট ছিল, যা করাপরোপের মাধ্যমে সংগৃহীত আয়কে কল্যানমুলক কর্মসুচীর আওতায় দেশের সকল নাগরিকের প্রতি সমভাবে বন্টনের কাঠামো ও সিসটেম প্রবর্তন করে । এর ফলেই পরবর্তীতে ১৯১১ সনে ‘’জাতীয় বীমা এক্ট ১৯১১’’ পাশে সহায়ক হয়েছিল ।
ছবি-১৯ : The "Terrible Twins" Lloyd George and Winston Churchill in 1907 during social reforms.
জাতীয় বীমা স্কীমের অধীনে সে সময়ে শ্রমিকদেরকে মুলত স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা প্রদান করা হতো, আর শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ও ফ্রেন্ডলী সোসাইটি গুলি এই জাতীয় বীমা স্কীমের কার্যাবলী বাস্তবায়নে গুরুত্ব পুর্ণ ভুমিকা পালন করত । ট্রেড ইউনিয়ন ও ফ্রেন্ডলী সোসাইটি বহির্ভুতদেরকে স্থানীয় পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে অসুস্থতাজনীত স্ব্যাস্থ বীমার সুবিধা দেয়া হতো ।এই আইনটি বেকার শ্রমিকদের জন্য কলুষিত সমাজের ঘুণেধরা কল্যাণমূলক সামাজিক প্রবিধানের ওপর নির্ভরশীলতা দুরিভুত করে। নতুন মডেলে গৃহীত সমাজিক কল্যান ব্যবস্থা দারিদ্র্যসীমার অবসানকে ত্বরান্বিত করে। এর ফলে ১৯২৯ সালের দারিদ্র্য আইনের ( Poorman’s Law) বিলুপ্তি ঘটে যার অধীনে মুলত দরিদ্রদেরকে ভিক্ষামুষ্ঠির মত যৎসামান্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হত ।
ছবি-২০ : Woodcut-16th century, gentleman giving alms to beggar
ন্যাশনাল ইনসিউরেসন্স এক্ট ১৯১১ এ মুলত দুটি অংশ ছিল । প্রাথমিকভাবে ন্যাশনাল ইনসিউরেন্সের আওতাধীন দুটি পরিকল্পনা একে অপরের পাশে চলছে, একটি হল স্বাস্থ্য ও পেনশন বীমা সুবিধা অন্যটি হল বেকারত্ব বেনিফিট যা সরাসরি সরকার কতৃক পরিচালিত ছিল।
প্রথম অংশ -১ : স্ব্যাস্থ্য সংক্রান্ত
ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স এ্যাক্ট পার্ট -১ এর আওতায় মেডিক্যাল বেনিফিটের ব্যবস্থা ছিল । বছরে £ ১৬০ পাউন্ডের ( বর্তমান হারে টাকার মুল্যে প্রায় ১৭৫০০টাকা) নিচে আয় অর্জন কারী সমস্ত শ্রমিককে এই ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কিমে সপ্তাহে ৪ পেন্স ( প্রায় ৪ টাকা) করে দিতে হতো ; নিয়োগদানকারিদেরকে দিতে হত ৩ পেন্স ( প্রায় ৩ টাকা ) এবং সাধারণ করদাতাদের পক্ষ হতে ( রাস্ট্রীয় কোষাগার ) দেয়া হত ২ পেন্স ( ২ টাকা) হারে। লয়েড জর্জ এটিকে "চারপেন্সের বদলে নয়পেন্স" বলে অভিহিত করেছিলেন । ফলস্বরূপ, শ্রমিকেরা অসুস্থতার জন্য ছুটি নিতে পারত এবং প্রথম ১৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সপ্তাহে ১০ শিলিং করে ভাতা পেত এবং পরবর্তী ১৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সপ্তাহে ৫ শিলিং করে পেত । শ্রমিকেরা বিনামূল্যে চিকিৎসাৎ সুবিধাও পেত । যক্ষ্মা ও অসুস্থতার জন্য একটি প্যানেল ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসার জন্যও তারা যোগ্য ছিল। পরবর্তীতে কো-অপারেটিভ উইমেনস গিল্ডের চাপের কারণে ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স এ্যাক্টটির মাধ্যমে মাতৃত্ব ভাতা ও সুবিধা প্রদানের বিষয় যুক্ত হয় ।
ছবি-২১ : A 1940 contribution card for an employed woman
সুত্র : Click This Link
এই ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কীমটি বাস্তবায়নে অবশ্য বেশ কিছু নিয়ম কানুন ও বাধ্যবাধকতা ছিল । এটি একটি ব্লগ পোষ্ট বিধায় ন্যাশনাল ইনসিউরেন্সের বিস্তারিত খুটিনাটি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়নি তবে এই লিংকে গিয়ে বিস্তারিত দেখে নেয়া যেতে পারে
ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স পার্ট -২: বেকারত্বকালীন সুযোগ সুবিধা
ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স এক্ট পার্ট-২ এর আওতায় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক শিল্প বিশেষত বিল্ডিং ট্রেডস, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাউন্ড্রি, যানবাহন উত্পাদন এবং করাতকল শ্রমিকদের জন্য সীমিত-সময় বেকার ভাতা প্রদানের বিধান ছিল। শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও করদাতাদের কাছ থেকে একটি নির্ধারিত হারে কনট্রিবিউশনের মাধ্যমে এর জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা ছিল । এর আওতায় শ্রমিককে প্রতি সপ্তাহে দিতে হতো ২.৫ পেন্স, নিয়োগকর্তাকে ২.৫ পেন্স, এবং সাধারণ করদাতাগন দিত( রাষ্ট্রীয় তহবিল হতে) ৩ পেন্স করে । এক সপ্তাহকাল কর্মে নিয়োজিত থাকার পরে বেকারত্বকালীন সময়ে একজন শ্রমিক ১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ৭ শিলিং করে বেকারভাতা প্রাপ্তি যোগ্য ছিল । ১৯১৩ সাল নাগাদ ২.৩ মিলিয়ন শ্রমিক বেকারত্ব বেনিফিট স্কিমের অধীনে বিমাভুক্ত হয়েছিল এবং প্রায় ১৫ মিলিয়ন শ্রমিক সিকনেস বেনিফিটের জন্য বিমাভুক্ত হয়েছিল ।
১৯৪২ সালে সরকার কতৃক গঠিত কমিশনের রিপোর্ট ( বেভারেজ রিপোর্ট নামে পরিচিত) অনুসারে সামাজিক বীমা নামে একটি পরিকল্পনাযর আওতায় আরো কিছু সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ করে কল্যান রাস্ট্র ব্যবস্থায় একীভুতকরণের জন্য প্রস্তাব করে । উল্লেখ্য
লর্ড ভেভরিজ একজন প্রখ্যাত বৃটিশ ইকনোমিস্ট এবং সেসাল রিফরমার । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধত্তর কালে বৃটেনকে আধুনিক কল্যান রাস্ট্রে রুপান্তরে বেভারিজ কমিশনের রিপোর্ট গুরুত্বপুর্ণ ভুমকা পালন করে । বেকারত্ব বীমা ব্যবস্থাটি বেভারিজ রিপোর্টের আলোকেই পুর্ণতা পায় ।
ছবি-২২ : William Beveridge, photographed in 1943
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে "যুদ্ধের পর" শির্ষক একটি জাতীয় সম্প্রচারে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য ‘দোলনা হতে কবর পর্যন্ত’ জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বাধ্যতামুলক জাতীয় বীমা (national compulsory insurance) চালু করার জন্য সরকারী প্রতিশ্রুতির ঘোষনা দেন ।
১৯৪৫ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বৃটেনে সরকারে পালাবদল ঘটে । এটলির নেতৃত্বে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে । সরকারের পালা বদল হলেও পুর্বতন কনজারভেটিভ পার্টির সরকার প্রধান চার্চিলের সরকারী প্রতিশ্রুতিকে বাতিল তো করেইনি বরং আরো জোড়ালোভাবে বস্তবায়ন করে বৃটেনকে কল্যান রাষ্ট্রের আদর্শে পরিনত করে । ১৯৪৮ সনে বৃটেনে ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স নামে একটি নতুন মন্ত্রনালয় সৃস্টি করে তার মাধ্যমে একটি সিংগেল স্টাম্প এর আওতায় নতুন কল্যান রাস্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা নাগরিকদেরকে প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় । কর্মে নিয়োজিতদের জন্য class 1 স্টাম্প কার্ড প্রবর্তন করা হয় , এবং এই কার্ড ১৯৭৫ সন পর্যন্ত বলবত ছিল ।
ছবি-২৩ A British 1948 National Insurance stamp, once used to collect contributions to the scheme
এর পরে এই স্টাম্প কার্ড রহিত করে NI কনট্রিবিউশনকে ফ্লাট রেটে আয় এর সাথে সম্পর্কিত করা হয় এবং একটি গড় বাধা ( flat rate) হারে Pay as you earn ( PAYE) আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।
এইন্যশনাল ইসনিউরেন্স এক্টে ব্যপক আকারে সস্প্রসারণমুলক একটি সংশোধনী আসে ১৯৪৮ সনে । এই সংশোধিত স্কীমের আওতায় প্রদত্ত বেনিফিট প্যকেজের মধ্যে প্রাথমিকভাবে অসুস্থতা ও বেকার ভাতা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে এতে অবসরকালীন পেনসন ও অন্যান্য আরো বেশ কিছু বেনিফিট যুক্ত করা হয় ।
সংক্ষেপে NI নামে পরিচিত ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স মুলত রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তহবিল আহরনের জন্য শ্রমিক ও নিয়োগকারী নিকট হতে অর্থ প্রাপ্তির নিমিত্ত একটি করারোপ ব্যবস্থা । প্রথম দিকে একটি স্ট্যাম্প এর মাধ্যমে এই স্কীমের জন্য শ্রমিকদের নিকট হতে প্রয়োজনীয় অর্থ আহরণ করা হলেও পরবর্তীতে PAYE system এর মাধ্যমে HM Revenue and Customs (HMRC) অধীনে এই NI কনট্রিবিউশন সংগ্রহ করা হয় । ন্যাশনাল ইনসিইরেন্স ভুক্ত হওয়ার জ্য প্রত্যেকেরই একটি ইউনিক ন্যাশনাল নাম্বার প্রয়োজন হয় । বৃটেনের নাগরিকদের ১৬ বছর বয়স হলে অটোমেটিক এ্ই নম্বর পেয়ে যায় , বিদেশী অভিবাসীদেরকে এ নম্বর পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় । এটা ছাড়া সেখানে কেও চাকুরী করতে পারে না সে সরকারী বেসরকারী যেটাই হোক না কেন । স্ব-কর্ম সংস্থানকারীদেরকেও এই NI নাম্বার বাধ্যতামুলকভাবেই থাকতে হয় ।
নীচের চিত্রে একজন বেসরকারী কর্মজীবির সাপ্তাহিক বেতন/মজুরী পরিশোধের পে স্লিপ দেখা যেতে পারে । এর মধ্যে তার আয় হতে প্রতি সপ্তাহে কি পরিমান এন আই ( NI) ও আয়কর কেটে নিয়ে সাথে সাথে সরকারের রাজস্ব অফিস HMRC জমা দেয়া হচ্ছে দেখা যেতে পারে । নিয়োগকারীও প্রতি সপ্তাহে কি পরিমান অর্থ তার কর্মীর অনুকুলে HMRC তে জমা করছে তাও দেখা যাবে এখান হতে । তাই একজন চাকুরীজীবী একটি চাকুরী ছেড়ে অন্য আর একটি নতুন চাকুরীতে গেলেও তার পেনসন কিংবা অন্যবিদ সুযোগ সুবিধার জন্য তার নিয়োগকারীর উপরে নির্ভরশীল হতে হবেনা । সময়কালে সরকার হতে যথা নিয়মে সে তার প্রাপ্যতা অনুযায়ি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ও অবসর ভাতা পেয়ে যাবে । সে সরকারী না বেসরকারী চাকুরীজীবী তা তেমন কোন বিষয় না ।
ছবি -২৪ : একটি পে স্লিপের নমুনা ।
সুত্র : https://moneysoft.co.uk/payslips/
স্ব-কর্ম সংস্থানকারী কোন ব্যক্তি কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবশায়ীকেও করসীমার বাইরে নীট আয়ের উপর একটি নিদৃষ্ট হারে এন আই কনট্রিবিউট করতে হয় । তার বেনিফিট এনটাইটলমেন্ট অক্ষুন্ন রাখার জন্য কোন গ্যাপ থাকলে তাও তাকে পুরণ করতে হয় । ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কীমের অধীনে প্রদেয় বেনিফিট প্যকেজের আওতায় প্রাপ্যতা অনুযায়ি বিভিন্ন রকমের বেনিফিট প্রদান করা হয়, যার মধ্যে বেকারত্বকালীন সাপ্তাহিক ভাতা, , মাতৃত্বভাতা , প্রতিবন্ধি ভাতা, মৃত্যুর পর অবসর ভাতা সহ কিছু এককালীন অর্থ দান করা হয় । উল্লেখ্য যে, কোন একজন তার কর্মজীবনে কি পরিমান এন আই কনট্রিবিউশন করেছে তার উপরে তার ভাতা ও বেনিফিটের পরিমান নির্ভর করে ।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা প্রায় ২২ ভাগই অর্জিত হয় ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স খাত হতে । যার পুরাটাই পুর্ণবন্টন হয় সামাজের সকল স্তরের নাগরিকের কাছে । একজন নিয়োগী যে হারে NI কনট্রিবিউট করে তার বিনিময়ে সে রাস্ট্রের কাছ হতে অনেক বেশী সুবিধা ভোগ করে । এ বিশ্বাসটা আছে বলেই সকলে স্বেচ্চায় এটা মেনে চলে । কেও দুই নম্বরী করলে আখেরে সে নীজেই ভোগে । কোন নিয়োগকারীও কোন ২ নম্বরী কাজ করে ধরা খাইলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আদালতের আদেশে চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় অতি স্বল্প সময়ের ভিতরে ।
ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স ফান্ড হতে সুনির্দিষ্ট ওয়েলফেয়ার খাতগুলিতেই শুধু অর্থ সংস্থান করা হয় , সকল প্রকার সরকারী খাতে ব্যয় নির্বাহের জন্য এনআই ফান্ড হতে অর্থায়নের সুযোগ নাই । তবে এ খাতের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকার সিউরিটি বন্ড ক্রয় খাতে বিনিয়োগ করতে পারে এবং উক্ত বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত অর্থ ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স ফান্ডেই জমা হয় ।
২০১৬/১৭ আর্থিক বছরে NI তহবিলে মোট জমাকৃত অর্থের পরিমান ছিল ৯৫.৮৬ বিলিয়ন পাউন্ড । NI তহবিলের খাতওয়ারী অর্থ ব্যবহারের বিভাজন নীচে দেখানো হল বেনিফিট প্রবাহের চিত্রটা দেখানোর নিমিত্ত :
রাস্ট্রীয় পেনশন ৯১.৭২ বিলিয়ন পাউন্ড
এমপ্লয়মেন্ট সাপোর্ট এলাউন্স ৪.৭০ বিলিয়ন
বিরিভমেন্ট বেনিফিট ০.৫৬ বিলিয়ন পাউন্ড
মেটারনিটি এলাউন্স : ০.৪৩ বিলিয়ন পাউন্ড
জব সিকার্স এলাউন্স ০.২৬ বিলিয়ন পাউন্ড
খ্রিস্টমাস বোনাস ০.১৩ বিলিয়ন পাউন্ড
অক্ষমতা বেনিফিট ০.৮৮ বিলিয়ন পাউন্ড
গার্জিয়ান’স এলাউন্স ০.০০২ বিলিয়নপা উন্ড
এই বিশাল আকারের ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স কার্যকলাপ সুচারুরূপে বাস্তবায়নে সরকারী সংস্থা Her Majesties Revenue and Customs (HMRC) বাৎসরিক ব্যয় হয়েছে ০. ৬৯ বিলিয়ন পাউন্ড যা NI খাতে আহরিত অর্থের ০.৭১ ভাগ মাত্র । কত সুচারু ও ব্যয় সাস্রয়ী তাদের এই সুবিশাল কল্যানমুলক আর্থিক কর্মকান্ড । সরকারী কোষাগারে জমাকৃত অর্থ যেন এদিক সেদিক হতে না পারে তার জন্য অতন্ত্র নজরদারী ব্যবস্থা রয়েছে । নিন্মে দেয়া Royal Coat of Arms এর চিত্রটি দেখা যেতে পারে । দুউ দিকে দুই ভয়ানক প্রহরী দাড়িয়ে আছে , একটু এদিক সেদিক করার কোন উপাই নাই ।
ছবি -২৫ : Royal Coat of Arms of the United Kingdom
১৯৫৩ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবথের সময়কাল হতে বর্তমান পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের সকল ক্ষেত্রে এই রয়্যাল কোট অফ আর্মস ((স্কটল্যান্ড ব্যতীত) ব্যবহৃত হয়।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য বাংলাদেশে ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের আয় ও মুনাফার উপর কর খাতে আয় ছিল
৬২৭৫৪.৩৩ কোটি টাকা। এর বিপরিতে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অবসর ভাতা খাতে ঐ অর্থবছরে ব্যয় হয় ৬৪৪৪৭.৪২ কোটি টাকা যা দেশের সকল আয়কর প্রাপ্তি থেকেও বেশী আর এর সিংহভাগই এসেছে বেসরকারী খাত হতে । বলা চলে সারা দেশের মানুষ আয়কর খাতে যে পরিমান টাকা রাজ কোষাগারে জমা দেয় তার পুরাটাই ব্যয় হয় সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরই পিছনে।
ছবি-২৬ : বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব ভবন
দেশের সরকারী ও বেসরকারী খাতের চাকুরী ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসমতা দুর করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের মত একটি ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স স্কীমের বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা বিষয়টি যদি আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক নীতি নির্ধারকেরা পর্যাপ্তভাবে বিচার বিশ্লেষন করে দেখতেন তাহলে সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীর সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সমতা বিধান সম্ভব হতে পারে । দেশের এত বিশাল রাজস্ব ভবনের শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ্যে যারা বসে আছেন তারা যদি পৃথিবীর কল্যানমুলক উন্নত দেশের সুফলদায়ক কর্মসুচীগুলির মধ্য থেকে উপযুক্ত বিষয়গুলি বেছে নিয়ে আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ায়ে পলিসি গ্রহন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের সরকারী ও বেসরকারী চাকুরী খাতে সমতা সহসা না আসলেও একটি গ্রহনযোগ্য মাত্রার ভারসাম্যতো আসতে পারে বলে বিশ্বাস করাই যায় । জানি দু এক দিনে এটা সম্ভব নয়, তবে একটু চেষ্টা করে দেখলে ক্ষতি কি । যাহোক এর জন্য সর্বাজ্ঞে প্রয়োজন জনগন ও দেশের রাজনৈতিক দলসমুহের আন্তরিক সদিচ্ছা ও নীজেদের মধ্যে মত বিনিময় করে জনমত গড়ে তোলা । তাই সরকারের নীতি নির্ধারক সহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলের , প্রতি আমাদের দাবী রইল যদি হিম্মত থাকে তাহলে নির্বাচনী ইসতেহারে সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীর সুযোগ সুবিধার সমতা বিধানের জন্য একটি প্রতিশ্রতি দেন । আমরাও দেখি আখেরে কে কতটুকু পারেন ।
লেখা ও তথ্য সুত্র : যথাস্থানে লিংক সুত্র আকারে দেয়া হয়েছে।
ছবি সুত্র : গুগল অন্তরজাল , সংস্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৮