উত্তরের যাত্রা লিখাটি তিনটি পর্বে বিনির্মিত । প্রথম পর্বে মেরুজ্যোতি দর্শন , পরবর্তী পর্বের বিষয় যথা সময়ে বলা হবে ।
মেরুজ্যোতি দর্শনার্থে উত্তরে যাত্রা
উত্তরে যাত্রা নিয়ে লিখার ইচ্ছাটি জাগে মেরু জ্যোতি দেখার কৌতুহল থেকে । মেরুজ্যোতির কথা প্রথম জেনেছিলাম ছোটবেলায় গুরুজনের কাছ থেকে। পরে ভূগোল বইয়ে পড়েছি মেরুজ্যোতিকে ইংরেজিতে অরোরা (Aurora) বলে । উত্তর মেরুর কাছাকাছি জায়গায় দেখতে পাওয়া অরোরাকে ‘অরোরা বোরিয়ালিস বা নর্দার্ন লাইটস’ আর দক্ষিণ মেরুতে দেখতে পাওয়া মেরুজ্যোতিকে ‘অরোরা অস্ট্রেলিস বা সাউদার্ন লাইটস’ বলে । অরোরার জোন সাধারণত পৃথিবীর চৌম্বকীয় মেরুর অক্ষ দ্বারা সংজ্ঞায়িত, চৌম্বক মেরু থেকে ১০ ডিগ্রি হতে ২০ ডিগ্রির মধ্যে এর অবস্থান । ম্যাপ দেখে বুঝা যায় উত্তর গোলার্ধের কোন কোন জায়গা থেকে অরোরাকে ভাল দেখা যায় ।
ছবি-২ : উত্তর গোলার্ধের অরোরা জোন , সবুজ ও লাল চিহ্নিত অংশ
অরোরাকে দেখা যায় উত্তর আমিরিকার আলাস্কা , কানাডার উত্তর পশ্চিম অংশ বিশেষ করে ইয়েলোনাইফ, ইউকন নোনাভাট ও নর্থ ওয়েস্ট টেরিটরিস হতে । ইউরোপের নরওয়ে , সুইডেন , ফিনল্যান্ড , আইসল্যান্ড , গ্রীনল্যান্ড ও রাশিয়ার উত্তরাংশ হতেও অরোরা দেখা যায় ।
উত্তর আমিরিকার আলাস্কা ও কানাডা হতে অরোরা দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এ যাত্রায় । কানাডাতে জানুয়ারিতে খুব শীত পড়ে। কিন্তু শীতেই তো দেখা যায় প্রকৃতির এই অনন্য সৃষ্টি অরোরা বোরিয়ালিসকে । উত্তর আমিরিকা বা কানাডায় যাদের বসবাস কিংবা সেখানে যাওয়া হয়েছে কোন কারণে, তাঁরা কানাডার রাজধানী অটোয়া হতে আরো প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উত্তর-পশ্চিমে যাত্রা করে যেতে পারেন ইয়েলোনাইফ শহড়ে । জায়গাটা আর্কটিক বেল্টের ২৫০ মাইল দক্ষিণে। ইয়েলোনাইফ ছাড়াও আরো একটা জায়গা আছে যা কানাডার ইউকন প্রদেশের হোয়াইটহর্স। এই জায়গাটাও খুব সুন্দর। তবে ইয়েলোনাইফ হোয়াইটহর্স থেকে আরও উত্তরে হওয়ায় ইয়েলোনাইফকেই বেছে নিলে অরোরা দেখার সম্ভাবনাই বেশী বলে জানা যায় এর ইতিহাস হতে ।
ফাসর্ট এয়ার বা এয়ার নর্থে ননস্টপ ফ্লাইটে প্রায় ৫ ঘন্টায় অথবা ওয়েস্ট জেট এয়ারলাইনসের কানেকটিং ফ্লাইট ধরে প্রায় দশ ঘণ্টার যাত্রায় অটুয়া থেকে ইয়েলোনাইফ পৌঁছা যায় । এয়ার পোর্ট হতে বের হলেই মেরু ভাল্লুকের (পোলার বিয়ার) একটা সুন্দর মূর্তি স্বাগত জানাবে।
ছবি- ৩ : আরোরা দেখার নিমিত্ত আগন্তকদেরকে স্বাগতম সম্ভাসনের জন্য দাঁড়ানো মেরু ভাল্লুকের মুর্তী
একটু তো ঘাবড়াতেই হয় যখন এয়ারপোর্ট হতে বের হয়েই দেখা যায় তাপমাত্রা - ৩২ C ডিগ্রী ইন্ডিকেট করছে । উল্লেখ্য ১৯৪৭ সনের ৩১ জানুয়ারীতে ইউলোনাইফের তাপমাত্রা -৫১.২C রেকর্ড করা হয়েছিল ।
ছবি-৪ : ইউলোনাইফের এয়ার পোর্টের বাইরে দিনের তাপমাত্রা ইন্ডিকেশন
তাই শিতাতপ নিয়ত্রিত গাড়ীতে করে হোটেলে পৌঁছে একটুখানি ওয়ারম্ড রিলাক্স । অরুরা টুর সার্ভিস গাইড সরবরাহকৃত বিশেষ ধরনের শীত প্রতিরোধক জেকেট পরিধান করে তাদের সাথে রাত ১০টার পরে অরোরা দেখার জন্য নিদৃষ্ট ভিউ পয়েন্ট প্রদি অরো উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু । ভিউ পয়েন্টটা একটু নিরালা-নির্জন জায়গায়। শহরের আলো যাতে না পৌঁছায় । শহরের আলো-দূষণ না থাকায় রাতের আকাশে কত যে তারা দেখা যায়, তা উপলব্ধি করা যায় সেখানে গেলে । অরোরা-র দৃশ্য দেখতে পাওয়ার জন্য সাধারণত রাত ১২টা থেকে রাত ২টা হচ্ছে সবচেয়ে ভাল সময়। সোলার ফ্লেয়ার তথা সৌর বিস্তারণের সময় সূর্য থেকে নির্গত অভিযুক্ত কণা (চার্জড পার্টিকল) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে ‘অরোরা’ সৃষ্টি হয় ,যার প্রক্রিয়া নীচের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।
ছবি-৫ : মেরু জ্যোতির সৃস্টি প্রক্রিয়া
সুত্র : Click This Link
রাত্রী ছাড়া দিবসে অরোরা দেখা যাবে না, তবে তাতে ক্ষতি নেই । এই ফাকে ঘুরে আসা যাবে বরফাচ্ছন্য ইয়োলোনাইফে সুর্যের আলো দেখতে । প্রথম এক দু্ই রাতে অরোরার দেখা না মিললেও দিনের বেলায় দেখা যাবে এমন রোদ্রজ্বল দৃশ্য , কেননা ইয়েলোনাইফ হচ্ছে কানাডার সবচেয়ে কোলডেস্ট সানিয়েস্ট সিটি ।
ছবি – ৬ : ইয়েলোলাইফে -৩০ হতে - ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গ্রেট স্লেভ লেকের পাইলট মনুমেন্টে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে এমন দৃশ্য ।
অরোরা দেখার জন্য রাত গভীর হতে এখনো অনেক বাকী । এই ফাকে নাসা এবং ইউনিভার্সিটি অফ অসলোর পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তথ্যের উপর ভিত্তি করে অরুরা সৃস্টি রহস্য একটু সংক্ষেপে দেখে নেয়া যেতে পারে ।
সূর্যই সৌর জগতের শক্তির আধার । জানা যায় সৌর বিস্তারনের সময় বিলিয়ন বিলিয়ন চার্জড পারটিকলস বা সৌর কনা ক্রমাগতভাবে সূর্যের চারিদিকে ছড়ায় । সূর্য অভ্যন্তরের প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এই চার্জড পাটিকেল গুলো সারফেসে দিকে ধাবিত হয় , তারা তখন পৃথিবী সহ সকল গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র লাইনের পথ অনুসরণ করে ।
ছবি – ৭ : সূর্যের অভ্যন্তরে বিলিয়ন বিলিয়ন এনারজেটিক পাটরিকলস টগ বটিয়ে ছুটাছুটি করে ।
ছবি – ৮ : সূর্যের অভ্যন্তরের চার্জড পারটিকেলসগুলী নিউক্লিয়ার রিএকসনের ফলে প্রভুত শক্তিতে পরিনত হয়ে এর সারফেসের দিকে নিয়ত ধাবমান থাকে
ছবি - ৯ : সূর্য অভ্যন্তরে ইলেট্রনিকেলি চার্জড পারটিকেলস গুলি মেগনেটিক ফিল্ড সৃস্টি করছে ।
ছবি - ১০ : সুর্য হতে তৈরী চার্জড পারটিকেলস গুলি নিয়ে সৃস্টি হয় মেগনেটিক ওয়েভ
ছবি-১১ : চার্জড পারটিকলস সমৃদ্ধ মেগনেটিক ওয়েব গুলি রাবার ব্যন্ড এর মত হয় সম্প্রসারিত
চার্জড পারটিকলস গুলি এরকম ভাবে বাহির পানে ধাবিত হয় , এক পর্যায়ে সংকোচিত হয়ে নিন্মের মত আকার ধারণ করে ।
ছবি - ১২ : একসময় এই রাবার ব্যন্ড ভেঙ্গে যায় ।
উপরের চিত্রের প্রান্তভাগের রাবার ব্যন্ড অংশটুকু মুল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রচন্ড বেগে বাহিরের দিকে ধাবত হয় ।
ছবি -১৩ : ছুটে যাওয়া এই ইলেকট্রনিকেলী চার্জড পার্টিকলসকে প্লাজমা বলে
ছবি - ১৪ : শত শত মিলিয়ন টনের প্লাজমা গুলি আরো বাহিরের দিকে ধাবিত হয় । এই ছুটে চলা প্লাজমা গুলিকে সোলার স্টর্ম বলে অভিহিত করা হয়
ছবি -১৫ : সুর্য হতে তৈরী হ ওয়া এই সোলার স্টর্ম বা সৌর ঝড় ঘন্টায় ৮ মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে বাহির পানে ধাবিত হয়
ছবি-১৬ : প্রতি ৬ ঘন্টায় এই সোলার স্টর্ম বা সৌর ঝড় বুধ গ্রহ অতিক্রম করে
ছবি -১৭ : প্রতি ১২ ঘন্টায় সোলার স্টর্ম শুক্র গ্রহ অতিক্রম করে
ছবি – ১৮ : এই সোলার স্টর্ম ১৮ ঘন্টা চলারপর আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছায় ।
এরা বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন পরমানুতে আঘাত হানে । এটা পৃথিবীতে পৌঁছানের পর শুরু হয় অদ্ভুত কর্মকান্ড ।
ছবি – ১৯ : পৃথিবীর মেগনেটিক ফিল্ড তখন সৌর ঝড়কে রিফ্লেস্ক করে আরোরা সৃস্টির পক্রিয়া শুরু করে দেয়
ছবি - ২০ : দুটো মেগনেটিক ফিল্ড একসাথে মিশে এবং পৃথিবীর অদৃশ্যমান গ্যাস মলিকুলসের সাথে সংঘর্ষে মেতে উঠে
ছবি -২১ : এই অদৃশ্যমান মেগনেটিক গ্যাস সংঘর্ষ মেরুর কাছাকাছি ঘনিভুত হয় এবং মেরুজ্যোতি তথা অরোরার সৃস্টি করে ।
পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষীন মেরুতে চৌম্বক ক্ষেত্র লাইন সবচেয়ে বেশী, তাই সেখানেই অরোরা দেখা যায় ।
ছবি – ২২ : পৃথিবীর দুই মেরুতে সৃস্ট আরোরা বা মেরু জ্যোতি
ছবি - ২৩ : উত্তর মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যোতি বা অরোরা দৃশ্য
অনু পরমানুর মাত্রা ও উচ্চতার বিভিন্নতায় অরোরার রংও ভিন্ন ভিন্ন হয় ।
ছবি – ২৪ : চার্জড পার্টিকেলগুলি ভূ পৃস্টের ১৫০ মাইল উচ্চতায় অক্সিজেনে আঘাত করলে লাল রঙের আলো সৃষ্টি হয়
ছবি - ২৫ : চার্জড পার্টিকেলগুলি ভু পৃস্টের ১৫০ মাইলের উপরে অক্সিজেনে আঘাত করলে সবুজ অলোর সৃস্টি হয় ।
ছবি – ২৬ : ভূপৃষ্ঠের ৬০ মাইলের উপরে নাইট্রজেনে আঘাত করলে নীল ও তার নীচে আঘাত করলে পারপল (বেগনিলাল ) রং ধারণ করে ।
এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যারা অরোরা-দর্শনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে আগাম জানিয়ে দেয়। তবু সব কিছু সত্ত্বেও মনে রাখতে হবে, অরোরা একান্তই অননুমেয় এবং তাকে দেখা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার! যাহোক, তাত্বিক আলোচনার বাইরে এবার যাওয়া যাক বাস্তবে আরোরা দেখার জগতে ।
অরোরা দেখার জন্য কমপক্ষে তিন দিন হাতে সময় নিয়ে যেতে হয় অরোরা জোনে । প্রথম দিনের চেষ্টায় অরোরা দেখতে ব্যর্থ হলেও থাকার হোটেলের জানালার পর্দা সরিয়ে বেশ কিছু অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য দেখে মন ভরে যায় । দুরে দেখা যায় শুধু সাদা তুষার আর তুষার— যত দূর চোখ যায়, কেবলই বরফ! ‘স্প্রুস’ নামে এক ধরনের দেবদারু গাছ ছাড়া আর কোনও রকম গাছই চোখে পড়বেনা ইয়েলোনাইফে । সেই সব স্প্রুস গাছও জানুয়ারীতে থাকে বরফাবৃত। দূরে বরফে মোড়া কিছু বাড়ীও দেখা যাবে, প্রকৃতি ও বাড়ী ঘরের এত সুন্দর দৃশ্য দেখে মনে হবে যাক, এখানে আসাটা একেবারেই যায়নি বৃথা !
ছবি-২৭ : তুষারে ( Snow) ঢাকা ইউলোনাইফের গাছপালা ও বাড়ী ঘর
প্রথম এক দু্ই রাতে অরোরার দেখা না মিললেও দিনের বেলাটায় দেখা যায় একটি রোদ্রজ্বল দৃশ্য কেননা ইয়েলোনাইফ হচ্ছে কানাডার সবচেয়ে কোলডেস্ট সানিয়েস্ট সিটি ।
ছবি – ২৮ : ইয়েলোলাইফে -৩৫ হতে -৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও গ্রেট স্লেভ লেকের পাইলট মনুমেন্টে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যের এমন ছবি ।
প্রথম দিনের চেষ্টায় অরোরা দেখতে ব্যর্থ হলে পরের দিন গুলিতেও প্রচেষ্টা নিতে হয় এবং যেতে হয় আরো একটু উত্তরের কোন ভিউ পয়েন্টে এবং সে দুর্গম জায়গায় যাওয়ার জন্য রয়েছে স্নো-মোবাইল বাহন । চালকের পিছনে একজন কি দুজন তাতে একসাথে বসা যায় ।
ছবি- ২৯ : স্নো- বাইক মোবাইল বাহন
রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে সৌভাগ্যক্রমে আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে অরোরার দেখা মিলে ! ভাগ্য ভাল থাকলে তা দারুণ ভাবেই মিলে যায় ,দেখা যায় আকাশের উত্তর দিক থেকে সবুজ আলো হঠাৎ দক্ষিণের দিকে এগোতে এগোতে পুরো আকাশ ছেয়ে গেছে ! সেই সবুজ আকাশের মাঝেই আবার কোথা থেকে লাল আলো এসে যেন নৃত্য করতে থাকে ! সেসময় আনন্দ-উল্লাস ধরে রাখে কে। আকাশে আলোর এই খেলা চলে বেশ কিছুক্ষণ। অরোরাকে লং এক্সপোজারে ক্যামেরায় ধরে রাখতে কোন ভুল যে হবেনা তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ।
তবে ডিজিটাল ক্যমেরায় বিভিন্ন রঙগের নৃত্যরত অরোরার দৃশ্য ধারণ করা হলেও তার সঠিক পরিস্ফোটন বেশ সমস্যাপুর্ণ । বিভিন্ন রংএর সমাহার ও চোখের নিমিশে অরোরার আকার ও রং পরিবর্তনের কারণে পরিস্ফোটনের পর ধারণকৃত দৃশ্য কতখানি কমনীয় হবে তা অনিশ্চিত । বিভিন্ন স্তরের হালকা মাত্রার অর্ধবৃত্ত ইমালসনের উপস্থিতি ছবিতে ফুটিয়ে তুলার বিষয়টি দারুনভাবে আনপ্রেডিকটেবল । অরোরার দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশিষ্টের কারণে লং এক্সপোজারে উঠানো ছবি অনেক সময় সঠিক চিত্র দেখাতে হয় ব্যর্থ । তাই ,অরোরার দৃশ্য দেখা ও ছবি তুলার জন্য সবসময় সার্ভিস টুর গাইডের সাথে ছবি তোলার জন্যও এক্সপার্ট ফটোগ্রাফার থাকে ।
ছবি-৩০ : এক্সপার্ট ফটোগ্রাফার কতৃক অরোরার ছবি ধারণ
অরোরার মনোমুগ্ধকর কিছু দৃশ্য করা হল সংযোযন ।
ছবি- ৩১ : ভুবন মোহিণী বোরিয়ালিস বা নর্দার্ন লাইটস এর দৃশ্য
অরোরাকে দেখা যায় উত্তর ইউরোপের স্কটল্যান্ড ( খুবই রেয়ার ও অনিশ্চিত) , নরওয়ে ও রাশিয়ার অরোরা জোন এলাকা হতেও ।
ছবি- ৩২ : গত ১২ বছর আগে ইউকের স্কটল্যান্ড হতে দেখা যাওয়া অরোরার একটি সুন্দরতম দৃশ্য ।
ছবি-৩৩ : নরওয়েতে দেখতে পাওয়া অরোরার ছবি
ছবি- ৩৪ : গ্রীনল্যান্ড হতে দেখা পাওয়া অরোরার ছবি
পৃথিবী ছাড়াও অন্য গ্রহের অরোরার ছবিও অধুনা হয়েছে ধারণ । বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিতে অরোরার একটি দৃশ্য নাসা ( NASA) মাত্র দিন কয়েক আগে রিলিজ করেছে ,যা নিন্মের ছবিতে দেখা যেতে পারে ।
ছবি- ৩৫ : The infrared image of southern aurora of Jupiter, as captured by NASA's Juno spacecraft on August 27, 2016.
সুত্র: Click This Link
এমন দৃস্টিনন্দন অরোরার বিষয়ে রয়েছে অনেক মিথ ও বিশ্বাস । উত্তর আমিরিকার মেরুবাসিরা মনে করে তাদের মৃত স্বজনেরা আকাশে রাতে নৃত্য করে , এবং উজ্জল রংগ মেখে নাচতে দেখলে তারা মনে করে তাদের মৃত স্বজনেরা সুখেই আছে (Hearne, Samuel ,1958) ।
দক্ষীন মেরুতে রয়েছে ঠিক এর উল্টো বিশ্বাস অ দক্ষীন অস্ট্রেলিয়ার দাইরী জনগুষ্ঠির মানুষেরা অরোর অআলোক রশ্মি প্রদর্শনকে মনে করে এটা অসত অআত্মাদের বৃহদাকারের অগ্নি জ্বলন । অনুরূপভাবে দক্ষীন অস্ট্রেলিয়ার নাগারিনডেরী জনগোষ্ঠির লোকেরা সেখানকার ক্যাঙ্গারু দ্বীপে দেখতে পাওয়া অরোওআকে বলে মৃতদের দেশ (‘Land of the Dead’) ।
১৮৬২ সনের ১৩ ডিসেম্বর আমিরিকায় গৃহ যুদ্ধের সময় ভার্জিনিয়ার ফ্রেডারিকবার্জ যুদ্ধ ফিল্ড হতে রাতে অরোরাকে দেখা যায় । যুদ্ধটা হয়েছিল কনফেডারেট অআর্মী ও Confederate Army of Northern Virginia এবং Union Army of the Potomac এর মধ্যে । কনফেডারেট আর্মী রাতের আকাশের আরোরার দৃশ্যেকে ভগবান তাদের সাথে আছেন বলে মনে করেছে কেননা এ দৃশ্য কদাচিত উত্তর মেরুর অরোরা জুন হতে এত দুরে দক্ষীনে দেখা যায় । আমিরিকার আর্ট মিউজিয়ামে রক্ষিত ও প্রদর্শিত Frederic Edwin Church এর আঁকা অরোরা বোরিয়ালিস এর বিখ্যাত চিত্র কর্মটি আমিরিকার গৃহযুদ্ধের কনফ্লিক্টকে রিপ্রেজেন্ট করে বলে ব্যপকভাবে আলোচিত । অরোরাকে নিয়ে অংকিত বিখ্যাত চিত্র কর্মটি নীচে দেখা যেতে পারে ।
ছবি- ৩৬ : আমিরিকার আর্ট মিউজিয়ামে রক্ষিত ও প্রদর্শিত অরোরা বোরিয়ালিস
সুত্র : American Art Museum
বর্তমান যুগেও অরোরাকে নিয়ে বেশ কিছু দু:শ্চিন্তার আছে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটা রেডিও ওয়েবে বিঘ্ন ঘটিয়ে রেডিও কমিউনিকেশনকে করতে পারে বিঘ্নিত , সোলার স্টর্ম বা সৌর ঝড় পৃথিবীর মেগনেটিক এনার্জিকে প্রভাবিত করে বিদ্যুত ব্যবস্থাকে করতে পারে বিপর্যস্ত । তবে সব কিছুর উপরে এটা এখনো মানুষকে দর্শন আনন্দই দিয়ে যাচ্ছে ।
উত্তর কিংবা দক্ষীন মেরুর অরোরা জোনে গিয়ে যারা এটা দেখতে অপারক তাদেরও হতাস হওয়ার কোন কারণ নেই । বিশেষজ্ঞরা বলেন প্রতিটি মানূষের শরীরেই নাকি অরোরার মত আলোর সৃস্টি হয় । বর্তমানে হাইটেক ইলেকট্রনিক গ্যাজেট , যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি উন্নয়নের ফলে আমাদের দেহের সূক্ষ্ম কম্পন ও আলোক রস্মি সনাক্ত করতে সক্ষমতা এসেছে । এর ফলে মানুষের দেহজ্যোতির ( human aura) ইমেজ কেপচার করা সম্ভব হচ্ছে । বিস্তারিত দেখার জন্য এখানে CLICK করুন Human BioEnergy Field : Click This Link
মহাবিশ্বের সুবিশাল শক্তি তরঙ্গের মত মানব দেহ ও মনেও মহাজাগতিক অরোরার মত নিন্মের চিত্রের মত অবস্থার সৃস্টি হয় নিয়ত ।
ছবি - ৩৭ : মানব দেহে অরোরার দৃশ্য !!!
শক্তি তরঙ্গের ভিত্তিতে ক্রমাগত ভাবে সচেতন বা অবচেতন স্তরে আমরা ইউনিভারসেল পরিবেশের সঙ্গে একটি মিথক্রিয়ায় রত । আমাদের মনের মধ্যে কিছু বিশেষ ক্ষমতা Extra sensory powers ( ESP ) যথা অলোকদৃষ্টি, টেলিপ্যাথি, দূরবর্তী দর্শন , ইত্যাদি ক্ষমতা আছে । যদি এই ESP ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরেও জ্ঞান লাভ করতে পারি । এই সমস্ত ক্ষমতার মধ্যে নিন্মবর্ণিত ক্ষমতা গুলির প্রয়োগ দেহের সুস্ব্যাস্থ্য ও মনের প্রশান্তব অর্জনে বেশ সহায়ক :
অলোকদৃষ্টি (স্পষ্ট দুরদৃষ্টি) - দূরে লোকচক্ষুর আড়ালে স্থান বা লুকানো কিছু দেখতে পাওয়া , শারীরিক চোখ ব্যবহার ছাড়াই মনের চোখ দিয়ে আলোকদর্শননে দৃশ্য ও মানসিক চিত্র উপলব্ধি করা ।
অরিক (Auric) দৃষ্টিশক্তি - এর ফলে দেহজ্যোতি রং দেখার সক্ষমতা লাভ হয় ও এর মাধ্যমে মুড, আবেগ, চিন্তা বা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বুঝার ক্ষমতা অর্জন করা যায় ।
এই আলো ও অরিক দৃস্টি শক্তিকে একটি চরকা আকারে নিন্মের চিত্রের মত ব্যলান্স করে দেহ - মনের সুস্বাস্থ্য ও প্রশান্তি বজায় রাখা সম্ভবপর হয়ে উঠে (Nishat Sharma 2016) ।
ছবি-৩৮ : চক্রাকারে মানব দেহে অরিকজ্যোতি শক্তি ও তার ভারসাম্য বজায়ের জন্য সাধনা
সুত্র: Click This Link
মহাজাগতিক ঘুর্ণন চক্রের মত মানব দেহের ঘুর্ণন চক্রে ভালবাসা ও শক্তি দুটোই প্রবাহিত । এ অবস্থায় দেহ ঘুর্ণন চক্রে সঠিক শক্তি প্রয়োগ আবশ্যক । মানব দেহের এই ঘুর্ণন চক্রে দেহজাত শক্তির সাথে ESP ক্ষমতাকে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করে ব্যালেন্স স্থাপনের মাধ্যমে দেহ মনে সুস্থতা ও প্রশান্তি বজায় রাখা সম্ভব , এই ভারসাম্য তৈরী করতে না পারলে শরীরে ব্যধি ও অসুখ বাসা বাধতে পারে । এমতাবস্থায়, আলোক-অরিক দৃস্টিতে দেহজ্যোতিকে শুধু যে অনুধাবন করা যাবে তাই নয়, এর মাধ্যমে মানবদেহে শারিরিক সুস্থতা এবং মানসিক প্রশান্তি আনাও সম্ভব হবে ।
এতক্ষন সাথে থেকে বিশ্ব ব্রম্মান্ড ঘুরে আসার জন্য ধন্যবাদ ।
তথ্য সৃত্র :
Nishat Sharma (2016), What Is Human Aura, at Click This Link
Hamacher, D.W. (2013). "Aurorae in Australian Aboriginal Traditions" (PDF). Journal of Astronomical History and Heritage. 16 (2): 207–219.
Hearne, Samuel (1958). A Journey to the Northern Ocean: A journey from Prince of Wales' Fort in Hudson's Bay to the Northern Ocean in the years 1769, 1770, 1771, 1772. Richard Glover (ed.). Toronto: The MacMillan Company of Canada. pp. 221–222
Space Weather Prediction Center. OVATION-Prime Auroral Forecast (N) at Click This Link
Wikipedia , at https://en.wikipedia.org/wiki/Aurora
ছবি সুত্র : গুগল অন্তরজাল
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:০০