আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভর দিয়ে
না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা
খুকুর নাচন দেখে যা ।
শিশুদের জন্য ছড়ায় ভোঁদড় নিয়ে কথামালায় নীজ পরিবারের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তরে নিজের জন্যই কিছু তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি । আমরা অনেকেই পাকৃতিক বন্য পরিবেশে ভোঁদড় দেখেনি, এর সম্পর্কে তেমন কিছু জানিওনা, শিশুদের জন্য ছড়ায় নিশাচর এই প্রাণীটি নিয়ে শিশুমনের কিছু প্রশ্ন যথা ভোঁদড় কোথায় থাকে , কি খায়, বাচ্চা দেয় না ডিম দেয়, নৌকা বড় না বোয়াল মাছ বড়, ভোঁদড় কিভাবে নাচে ইত্যাদি হরেক রকম প্রশ্নের মুখে নীজকে বড়ই অসহায় মনে হল । তাই কিছুটা অনুসন্ধানে ভোঁদড়কে নিয়ে যা পাওয়া গেল তা সকলের সাথে শেয়ার করার মানষে এই লিখার অবতারনা । আমরা অনেকেই জানি, ভোঁদড় একটি আধা জলচর মৎস্যভূক স্তন্যপায়ী প্রাণী। ছোট কান, চওড়া মাথা তেলতেলা শরীর, লম্বা লেজ , হাসের পালকের মত পা নিয়ে গঠিত প্রাণীটি দেখতে বেশ সুন্দর । অস্ট্রেলিয়া ও এন্টারটিকা ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই ভোঁদড় আছে, ভোঁদড়েরা পৃথিবীর বুকে আছে প্রায় ৩ কোটি বছর ধরে । বাংলাদেশে ভোঁদড়ের তিনটি প্রজাতি দেখা যায়; যথা ওরিয়নটাল ইন্ডিয়ান স্মল ক্লোড ওটার, ইউরেসিয়ান ওটার ও ইন্ডিয়ান স্মোথ কোটেড ওটার। উল্লেখ্য ভোঁদড়কে ইংরেজীতে ‘ওটার’ বলে । সবগুলির বাংলা নাম হচ্ছে উদ , উদবিড়াল ও ভোঁদড় বা মাছনেউল ।
ছবি- ২/২৮ : বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির ভোঁদড়
বাংলাদেশে যে ভোঁদড়টি বেশী পাওয়া যায় সেটা হলো ইন্ডিয়ান স্মোথ কোটেড ওটার । বাংলাদেশের প্রায় সব নদীতেই এদের পাওয়া যায় ।
ছবি -৩/২৮ : ইন্ডিয়ান স্মোথ কোটেড ওটার বা ভোঁদড়
ভোঁদড় সাধারণত লিপ্তপদী অর্থাৎ হাঁসের পায়ের মতো আঙ্গুলগুলো পাতলা পর্দা দিয়ে জোড়া লাগানো ফলে এরা সাতারে হয় পটু ।
ছবি -৪/ ২৮ : হাসের পায়ের মত ভোঁদড়ের পা
এদের লেজ মোটা আকারের এবং শরীর লম্বাটে গড়নের। বেশির ভাগেরই পায়ে ধারালো নখযুক্ত থাবা আছে। সাঁতার কাটার সময়ে ভোঁদড়ের নাক ও কানের ফুটো বন্ধ থাকে। এদের নাকের ডগায় লম্বা গোঁফের মতো খাড়া লোম থাকে। এদের শক্তিশালী ছুঁচালো দাঁত আর মাড়ি পিচ্ছিল শিকার ধরতে বা মাছের মুড়ো চিবোতে অত্যন্ত কার্যকর।এদের লেজ চ্যাপ্টা, ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি। ভোঁদড় লিপ্তপদী বলে পানির নিচে খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে এবং পানির উপরে মাথা না তুলে ডুব দিয়ে একবারে প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
ছবি- ৫/২৮ : পানিতে ডুব দিয়ে ভোঁদড়ের চলা
ভোঁদড় বা উদবিড়ালের একপ্রকার বিকট গন্ধ রয়েছে; অভিজ্ঞজনেরাও এ গন্ধকে বাঘের গন্ধ বলে ভুল করতে পারেন। ভোঁদড়েরা দলবেঁধে থাকলে প্রচন্ড চেঁচায়। অধিকাংশ সময় এরা বাচ্চা সাথে নিয়ে শিকার খোঁজে। ভোঁদড়ের মূল খাদ্য মাছ, তবে এরা অন্যান্য জলজ অমেরুদন্ডী প্রাণী, যেমন: কাঁকড়া, পানির ব্যাঙ ইত্যাদিও দলবেঁধে শিকার করে থাকে।
ছবি- ৬/ ২৮ : ভোঁদড়ের মাছ ও কাঁকড়া শিকার
বেশিরভাগ ভোঁদড় জলাশয়ের কিনারে, গর্তে বাস করে। শিকার করা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছাড়া এরা পানিতে নামে না, ডাঙাতেই বেশিরভাগ সময় কাটায়। ভোঁদড়, জোয়ারপ্রবণ এলাকায় বাসা তৈরি করে, জোয়ার-সীমানার উঁচুতে কোনো বড় গাছের তলায় গর্ত করে। গর্তের কয়েকটি মুখ থাকে, নদীর তলদেশ পর্যন্ত গর্ত থাকে , শত্রুর আক্রমন ঘটলে এই সুরঙ্গ পথে এরা পালিয়ে যায় । গর্তে ঢুকতে হয় জলের তলা দিয়ে। কিন্তু বাচ্চা প্রসবের জায়গাটি থাকে শুকনো এলাকায়।
ছবি- ৭/২৮ : গর্ত হতে ভোঁদড়দের সুরঙ্গ পথে নদীতে নেমে আসা ও প্রয়োজনে সে পথেই পলায়ন করা
ভোঁদড় সমাজবদ্ধ জীব। এরা বেশ ক্রীড়াপ্রবণও। বুদ্ধিমান এই প্রাণীগুলো বেশ বন্ধুবৎসল এবং সহজেই পোষ মানে। অনেক স্থানে, বিশেষত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও সুন্দরবন এলাকায় পোষা ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে শতাদ্বিকাল ধরে যা এই পোস্টের পরবর্তী অংশে দেখা যাবে ।
ছবি- ৮/২৮ : ভোঁদড়দের দলবদ্ধভাবে বসবাস
ছবি- ৯/২৮ : আমাদের সুন্দরবনে যে ভোঁদড়টি পাওয়া যায় সেটি হলো ওরিয়েনটাল স্মল ক্লৌড ওটার
ভোঁদড়ের গর্ভকাল ২ মাস । ভোঁদড় জলাজয়ের ধারে জোয়ার থেকে দুরে গর্তের ভিতরে লতাপাতার বিছানো সয্যায় প্রতিবারে ৩ থেকে ৪ টি বাচ্চা জন্ম দেয়।
ছবি- ১০/২৮ : নবজাতক ভোঁদড়ের বাচ্চা
ছবি- ১১/ ২৮ : জন্মের পর বাচ্চার চোখ বন্ধ থাকে
ছবি- ১২/২৮ : চার হতে পাঁচ সপ্তাহ পরে ভোঁদড়ের বাচ্চার চোখ ফুটে
জন্মের পর বাচ্চা ৬ মাস মায়ের সাথে থাকে , এ সময় বাবা মাছ ধরে বাচ্চাকে খাওয়ায় ও গর্তের বাহিরে থেকে পাহারা দেয় । ২ মাস বয়স থেকে মা বাচ্চাদেরকে শিকার ধরতে শিখায় এসময় বাচ্চাদেকে মা খেলা ও সাতার শিখায় ।
ছবি- ১৩/২৮ : বাচ্চার খেলা ও সাতার শিক্ষা
ছবি- ১৪/২৮ : ভোঁদড়েরা কাঁদায় গড়াগড়ি করতে বেশী পছন্দ করে
আগেই বলা হয়েছে ভোঁদড় সাতার ও মাছ ধরায় বেশ পটু । তাই বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল বিশেষ করে নড়াইল ও সুন্দরবন এলাকার জেলেরা এদেরকে পোষ মানিয়ে ও প্রশিক্ষন দিয়ে মাছ ধরার কাজে লাগায় । ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা প্রক্রিয়াটি বেশ টেকনিকেল । দু’জন জেলে নৌকা চালায়। দু’জন জাল ধরে রাখে। জেলেদের এক একটা নৌকায় ৪/৫ টা ভোঁদড় বা ধাইরা থাকে ( সুন্দরবন এলাকায় ভোঁদড়কে ধাইরা বলে) । ভোঁদড়কে জালের সঙ্গে পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের গলায় রশি দিয়ে বাধা থাকে। জেলেদের প্রশিক্ষনলব্দ ভোঁদড় মাছকে তাড়িয়ে পানিতে পেতে রাখা জালের দিকে নিয়ে আসে । জেলেরা ভোঁদড়ের গায়ে রসি লাগিয়ে এর দিক নিয়ন্ত্রন করে ।জাল থাকে ভোঁদড়ের পিছনে ,জালের সামনে থাকা ভোঁদড়গুলি মাছকে জালের দিকে তাড়া করে , ঝোপ ঝারে , কোটরে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকা মাছগুলি ভোঁদড়ের তাড়া খেয়ে বের হয়ে আসলে ভোঁদড় সেগুলিকে জালের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে আসে , সে গুলি পরিনামে জেলের জালে ধরা পরে । এসব ভোঁদড় যত বেশি মাছ খায় তার চেয়ে বেশী মাছ ধরে । এভাবে জেলেকে মাছ ধরার কাজে সাহায্য করে ।
ছবি- ১৫/ ২৮ : গলায় রশি বেধে ভোঁদড়কে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নদীর পানিতে
এরা মাছ তাড়িয়ে এনে জালে প্রবেশ করায়। কখনো কখনো ডুব দিয়ে বড় মাছ ধরে এনে তুলে দেয় জেলের হাতে।
ছবি- ১৬/২৮ : মাছের সম্ভাব্য অবস্থান বিবেচনায় ভোঁদড় সমেত জেলেদের স্থান পরিবর্তন
ছবি- ১৭/২৮ : ভোঁদড় পানিতে থাকা মাছকে তাড়িয়ে জালের দিকে নিয়ে আসছে( ১)
ছবি- ১৮/ ২৮ : ভোঁদড় পানিতে থাকা মাছকে তাড়িয়ে জালের দিকে নিয়ে আসছে( ২)
ছবি- ১৯/ ২৮ : জেলেরা জালে আটকে পরা মাছকে নৌকায় টেনে তুলছে
নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোয়ালবাড়ি। এ গ্রামে জেলেরা খেয়ে না খেয়ে সংরক্ষণ করে চলেছে বিলুপ্তপ্রায় ভোঁদড়। স্থানীয় ভাষায় এদের ধেঁড়ে নামে ডাকা হয়। জেলেদের জীবিকার অন্যতম হাতিয়ার এই ভোঁদড়, কেননা এই ভোঁদড় দিয়ে তারা মাছ ধরে। তাই ভোঁদড় তাদের সন্তানের মতো। নিজের সন্তানকে খেতে দিতে না পারলেও ভোঁদড়ের বাচ্চাকে গরুর দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এই গ্রামের লোকেরা। ওই ভোঁদড়রাই জেলেদের জালে তুলে দিচ্ছে ট্যাংরা, পুটি, বাইন , শোল গজার বোয়ালসহ নানা জাতের মাছ । এ কারণে ভোঁদড় সেখানকার জেলেদের কাছে খুবই প্রিয় ।
ছবি- ২০/২৮ : নড়াইলের চিত্রা নদীতে ভোঁদড়ের সহায়তায় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ।
নড়াইল শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দুরে কলোড়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি নামক একটি গ্রামের জেলে পাড়ায় প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। এদের অধিকাংশই খাল-বিল, নদী-নালা থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পরিবারের মহিলারা বাড়িতে বসে জাল তৈরি, কোথাও জাল কেটে গেলে ঠিক করাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে। কত বছর ধরে তারা ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরছে তার সঠিক তথ্য কেউ জানাতে না পারলেও তাদের বাবা, ঠাকুর দাদারা এর সাহায্যে মাছ শিকার করত বলে জানা যায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম হতে।
ছবি- ২১ /২৮ : পরিবারের মহিলারা বাড়িতে বসে জাল তৈরি করছে
ছবি- ২২/ ২৮ : নড়াইলের ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলে ও তাদের নৌকা
ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের এই পেশাটি বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। প্রায় ২শ’ বছর ধরে মাছ শিকার করে আসছেন এলাকার জেলে পরিবারগুলো। প্রতিটি জেলে নৌকার একপ্রান্তে জেলেদের থাকার ঘর আরেক প্রান্তে ভোদড়ের জন্য আলাদা করে ঘর বানানো থাকে। এই ঘরে ওরা রাতে ঘুমায়। মাছ ধরার সময় হলে ঘরের ডালা খুলে দিলেই লাফিয়ে পড়ে পানিতে তারপর মাছ শিকার করতে থাকে। বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে নদীতে মাছ থাকে তাই ভোদড়দের খাবারের জন্য বাড়তি পয়সা ব্যয় করতে হয় না। জেলেদের ধরা মাছেই তাদের খাওয়া চলে যায়। কিন্তু বাকি সময়ে নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় সে সময় বাইরে থেকে মাছ কিনে খাওয়াতে হয় এদের । জেলেরা ভোঁদড়গুলোকে সন্তানের মত লালন পালন করে।
জেলেদের পোষা একটি মা ভোঁদড় প্রতিবছর ৪/৫ টি বাচ্চা জন্ম দেয়। বাঁচ্চা ভোঁদড় মায়ের দুধ ও গরুর দুধ পান করে। এরা বাচ্চা গুলির সুন্দর সুন্দর নামও দেয়, নড়াইলের নদীর নাম যথা চিত্রা, নবগঙ্গা প্রভৃতি নামে এরা বাচ্চাদের নামকরণ করে । বাচ্চার বয়স ছয় মাস পার হলে এরাই মাছ ধরার জন্য পানিতে নামে।
ছবি- ২৩/২৮ : জেলেদের পোষা ভোঁদড়ের বাচ্চা চিত্রা ও নবগঙ্গা
নদীতে মাছের পরিমান কমে যাওয়ায় ভোঁদড়কে ঠিকমতে খাবার যোগান দেয়া জেলে পরিবারদের জন্য ক্রমেই দু:সাধ্য হয়ে পরছে । ভোঁদড়েরা সাধারণত তাদের শরীরের ওজনের তুলনায় ২০ পারসেন্ট পরিমাপের খাদ্য দৈনিক খায় । তাই মাছ আহরনের সিজনের বাইরে এদের জন্য মাছের যোগান দেয়া বেশ কঠীন হয়ে পরে । ক্ষুধার তাড়নায় ভোঁদড়েরা অনেক সময় অস্থির হয়ে উঠে, প্রচন্ড চিল্লা চিল্লি করে মাতিয়ে তুলে জেলে পাড়া ।
ছবি- ২৪/২৮ : ক্ষুধার্থ ভোঁদড়ের চিল্লা চিল্লির দৃশ্য ।
নদী-খালে পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ না থাকায় ভোঁদড়দেরে উপযুক্তভাবে পরিচর্চায় অপারগতার কারণে অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানা যায়। একটি ভোঁদড় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
ছবি- ২৫/২৮ : বিক্রয়ের জন্য রাখা ভোঁদড়ের পাল
ভোঁদড়ের চামরা খুবই মুল্যবান ও এর চাহিদা বিশ্বের সর্বত্র । তাছাড়া জেলেদের বন্ধু হিসাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম । বিভিন্ন চিরিয়াখানায় ও সার্কাসে এদেরকে দিয়ে দেশে বিদেশে বিপুল সংখ্যক দর্শকের চিত্তবিনোদন ও মনোরঞ্জন ঘটানো হয় ।
ছবি-২৬/ ২৮ : ভোঁদড় দিয়ে চিড়িয়াখানায় দর্শক মনোরঞ্জন
বর্তমানে বাংলাদেশে ভোঁদড়ের সংখ্যা আশংকা জনকভাবে কমে যাচ্ছে । কারনে অকারণে এদেরকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হচ্ছে । তাই দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে । বাংলাদেশের রাজশাহী , বগুড়া , দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে প্রচুর সাওতাল নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠির বসবাস । এদের কাছে মাছ , কাঁকড়া , শুকর ,বন মোরগ মুরগি , বন জঙ্গলের পশু , পাখি , খরগোশ , গুইসাপ , ইঁদুর, বেঁজি ও ভোঁদড়ের মাংস খুবই প্রিয় খাবার । এরা পাকা শিকাড়িও বটে । এদের কাছেও এই উদবিড়াল তথা ভোঁদড়েরা মাঝে মাঝেই ধরা খেয়ে নিধন হচ্ছে । দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ময়মনসিংহ , নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের হাউর বাউর এলাকায় প্রচুর ইউরেশিয়া ভোঁদড় এর বসবাস । নীশাচর এই প্রাণীটি রাতের আধারে পুকুর জলাশয় ও মাছের খামার হতে মাছ খেয়ে ফেলে বলে এদেরকে সুযোগ পেলেই স্থানীয়রা নিধন করে ফেলে । একদিকে খারারের দুস্প্রাপ্যতা অন্যদিকে মানুষের হাতে পরে এরা সারাদেশেই দ্রুত বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে । বাংলাদেশে তাই ভোঁদড় এখন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসাবে ঘোষিত । জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য এদের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ অভয়ারন্য ও কনজারভেশন ।
উল্লেখ্য যে জাপানে ২০১২ সনে ভোঁদড় বিলুপ্ত প্রাণী হিসাবে ঘোষিত হয়েছে , অধুনা তারা ভোঁদড়কে হোক্কাইডো দ্বীপের বনে বাদারে পুণর্বাসিত করার জন্য একটি কর্মসুচী হাতে নিয়েছে । International Otter Survival Fund (IOSF) নামে একটি সংগঠন এ লক্ষ্যে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করছে ।
ছবি- ২৭/২৮ : জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে বিলুপ্তঘোষিত ভোঁদড় পুর্নবাসন কার্যক্রম ।
জানা যায় IOSF সারা বিশ্বব্যপী বিলুপ্তপ্রায় ভোঁদড় সংরক্ষনের জন্যও সহায়তা করছে । এই প্রানীটিকে সংরক্ষনের জন্য IOSF এর সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগড় বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের গবেষক শিক্ষক ড: ফিরোজ Wildlife Rescue Centre (WRC) এর অংশ হিসাবে একটি Otter Rescue Centre স্থাপন করেছেন বলে জানা যায় ।
দেশের সংস্লিস্ট সরকারী ও বেসরকারী এনজিওরাও সুন্দরবন এলাকাসহ দেশের অপরাপর স্থানে যথোপযুক্ত প্রকল্প প্রনয়নের মাধ্যমে IOSF এর কাছ হতে সহায়তা নিতে পারেন । নিন্মে তাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হল।
ছবি- ২৮/২৮ : International Otter Survival Fund (IOSF) এর অবস্থান ও ঠিকানা
বাংলাদেশের জীব বৈচিত্র হতে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীটি নীজেদের টিকে থাকার জন্য সহৃদয় মানুষের সাহায্য চায় ।
ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।
সুত্র :
১) গুগল অন্তর জাল
২) প্রকৃতি ও ভোঁদড়, চ্যনেল আই, ঢাকা, বাংলাদেশ
৩) ভোঁদড় , এশিয়াটি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ।
৪) IOSF : Available at Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:০৮