আপনি কি দু: সাহসিক অভিযান খুঁজছেন - এমন কিছু যেখানে রোমাঞ্চ উপচে পড়বে - হামাগুড়ি ঘুরপথ বা প্রাচীন সংকির্ন প্যাসেজ এর মধ্য দিয়ে ,এগিয়ে যাবেন আপনার মাথায় পড়ানো একমাত্র বাতির আলোর দ্যোতিতে গুহার ভিতরে মাটির তলায় পথ করে নিবেন।
তাহলে এডভেঞ্চার করে আসতে পারেন কোন গিরি গুহায় । বড় ধরনের এডভেঞ্চার উপযোগী তেমন কোন গিরিগুহা বাংলাদেশে না থাকলেও বান্দরবনের আলী কদম গুহা , কক্সবাজারের দরিয়া নগর গুহা এবং খাগড়াছড়ির আলো টিলা গুহা ঘুরে আসা যায় । কক্সবাজারের দরিয়া নগর গুহা বাদরের গুহা নামেও পরিচিত । প্রায় ৫০০ মিটার দুর হতে বাদুরের কিচ মিচ শুনা যায় । এর এক মাইলের মধ্যে কোন জনবসতি নেই । প্রায় ৫০ জন চাকমা নৃতাত্বিক জনগুষ্ঠির বাস নিকটবর্তী গ্রামে ।
ছবি-১/ ৩৭ : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় আলোটিলা গুহা
খাগড়াছড়ির আলোটিলা গুহা পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় । এটা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত । প্রায় ১০০০ মিটার উচু আরবারী নামক পাহাড়ের নীচে আলোটিলা গুহা অবস্থিত । এর চারিদিকে রয়েছে ঘন সবুজ মনোরম বন ।
গুহাটি ১০০ মিটার লম্বা, ৫-১০ মিটার প্রসস্ত , প্রায় ৩-৮ মিটার গভীর , এর উপরিভাগ প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে মনোরম সবুজ বন । এ গুহার নীচ দিয়ে ঠান্ডা পানির স্রোতধারা প্রবাহিত, গুহার ভিতরটা গভীর অন্ধকারাচ্ছন্য, এর ভিতর দিয়ে পথ চলার জন্য টর্চ বা স্থানীয়ভাবে কিনতে পাওয়া যায় এক বিশেষ ধরণের ফ্লেইম বক্স ব্যবহার করতে হয় । নিরাপদে হাতে আলো নিয়ে ১৫ মিনিট হেটে এই আলোটিলা গুহা পার হয়ে যাওয়া যায় ।
ছবি ২/৩৭ : আলোটিলা গুহার অভ্যন্তরভাগ
গুহা অভিযানে বেশী রোমাঞ্চ আহরণে ইচ্ছুকগন হয়তবা এতটুকু ছোট বৈচিত্রহীন গুহা নিয়ে তেমন তৃপ্ত হতে নাও পারেন । এ অবস্থায় বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে নিকটস্থ প্রতিবেশী ভারতে এডভেঞ্চার উপযোগী বেশ কিছু গুহার কথা বিবেচনা করা যায় । সবচেয়ে নিকটবর্তী মেঘালয়ের পুর্ব খাসি হিলস, দক্ষীন গারো পাহাড় ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে রয়েছে রয়েছে অভিযান উপযোগী বেশ কিছু নাম করা বড় বড় গুহা ।
ছবি-৩/৩৭ : মেঘালয়া কেভস
মেঘালয়ের খাসী হিলসের গুহাগুলির মধ্যে দুটি যথা ক্রেম ডেম ও ক্রেম ফিলুত গুহার দৈর্ঘ এক কিলোমিটারেও বেশী । কিছু কিছু গুহার খননকাজ এখনো চলছে খনন চলছে , এমন এটি গুহা উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে । জয়ন্তিয়া ও গাড়ো পাহাড়েও রয়েছে বেশ কিছু গুহা যার কোন কোনটার দৈর্ঘ তিন কিলোমিটার থেকেও বেশী । এসমস্ত গুহায় এডভেঞ্চারে যাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু গাইডেড পর্যটন ব্যবস্থা । তবে বাংলাদেশ ও ভারতের গুহা তেমন বেশী রোমাঞ্চকর নয় । তাই আরো একটু বেশী রোমাঞ্চকর ও জীব বৈচিত্রময় গুহা এডভেঞ্চারে বেড়িয়ে পড়লে কেমন হয় । বাহ্যিকভাবে সমর্থবান না হলেও ভারচুয়ালী অনলাইনে আনায়াসে সেখানেতো যাওয়াই যায় । সামর্থবান ও সৌভাগ্যশালীরা হয়ত ইতিমধ্যে সেখানে একটি সফল অভিযান সম্পন্ন করেছেন , এই সুযোগে আশা করি তাঁদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাবে প্রাণভরে ।
অস্ট্রেলিয়ার জেনুলান গুহা এমন একটি গুহা যার বিচিত্র ভুগঠন শৈলীর সাথে যুক্ত হয়েছে আদিবাসী মানব গোষ্টী ও বিলুপ্তপ্রায় বিরল প্রজাতির কিছু জীব বৈচিত্রের কথা ।
ছবি-৪/ ৩৭ : অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস এলাকায় নীল পাহারে তিন কন্যা ঝুলন্ত শীলা
অস্ট্রেলিয়ার অবস্থিত নীল পার্বত্যঞ্চলে (Blue Mountain) প্রায় এক মিলিয়ন হেকটর জায়গা ব্যপী বিস্তৃত নাতিশীতোষ্ণ ইউক্যালিপ্টাস অরণ্যঘেরা অঞ্চলে চুনা পাথর মন্ডিত পাহাড়ে রয়েছে অনেক বৈচিত্রময় গুহা । ইউনেস্কো ঘোষিত আটটি সুরক্ষিত স্থান নিয়ে গঠিত এ নীল পাহাড় এলাকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের স্বাতন্ত্রমন্ডিত গন্ডোয়ানা আদিবাসী বিবর্তনীয় অভিযোজন । এখানে রয়েছে ইউক্যালিপ্টাস অবকাঠামো এবং পরিবেশগত বৈচিত্র্যতার ব্যতিক্রমী অভিব্যক্তি । অস্ট্রেলিয়ার জীব বৈচিত্রের শতকরা দশ ভাগেরও বেশী প্রজাতির উপস্থিতি রয়েছে এখানে , যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে বিলুপ্ত প্রায় অনেক বন্য প্রজাতির প্রাণী । ছোট ছোট লতা গুম্মের পাশ কাটিয়ে পাহাড়ী পথ মারিয়ে এ গুহায় যেতে হয় । ঐ এলাকায় ব্লো লেকের পারে অস্ট্রেলীয় পর্যটনকেন্দ্রের স্বয়ংসম্পূর্ণ গুল্ম কটেজ এক রাত অবস্থান করলে এটা নিশ্চিত যে সেখানকার পাহাড়ী বন্য পরিবেশে ক্যাঙ্গারুর দেখা পাওয়া যাবে ।
ছবি-৫/৩৭ : ছোট ছোট লতা গুম্মের পাশ কাটিয়ে সরু পথ মারিয়ে পাহাড় ডিঙ্গীয়ে গুহায় প্রবেশ পথ
এবরিজিনাল কালচার
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষীনের পার্বত্যাঞ্চলের নিউসাউথ ওয়েলস এর দক্ষীন-পুর্ব এলাকায় অবস্থিত একটি আদিবাসী জনপদের নাম গুনদানগুড়া । নিউপান নদী অববাহিকা হতে নীল পাহাড় তলে নীল হৃদ পর্যন্ত ছিল এদের বিচরণ ভুমি । ১৮০২ সালে ফ্রান্সিস বেরেলিয়ার তার অভিযানে দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় এই গুনদানগুরা আদিবাসী জনগোষ্ঠির দেখা পান । ১৮৪৬ সনে মহামারী আকারে ইনফ্লোয়েনজা দেখা দিলে গুনদানগুরা আদিবাসীদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে । ১৮৪৮ সনে এদের সংখ্যা অনেক কমে যায় ।
গুনদানগুরা আদিবাসীরা পশু-মানবে বিশ্বাসী ছিল। তারা বিশ্বাস করত যে পশু মানবেরা মেঘে, উচু পাহাড়ে, গাছের ডালে , গুহায় ও পানিতে বাস করে । পশু মানবেরা প্রয়োজনে নিজেদের চেহারা পরিবর্তন করতে পারে বলেও বিশ্বাস ছিল , তাদের সাথে যাদুকরি কুকুর ও যাদুর অস্র থাকত বলেও তারা বিশ্বাস করত ।
এ গুহা এলাকায় ছিল গন্ডোয়ানা আদিবাসিদের বাস । এখানে রয়েছে তাদের জীবনাচারের অনেক নিজস্ব সংস্কৃতির জীবন্ত চিহ্ন । এ গুহার প্রবেশ পথে অংকিত আছে গন্ডোয়ানা আদিবাসী গোত্রীয় শিল্পী টম ব্রাউন নির্মিত সুন্দর আর্টওয়ার্ক । আদি বাসী গন্ডোয়ানাদের রয়েছে বিচিত্র ভাষা যার কয়েকটি শব্দ যথা ; এয়াদী , উদ্যোং, ইয়াংগু, বরকা , মান্দো , জিনি বোরড়া বোরড়া , জিনদুংগুড়া এদাজী ।
অস্ট্রেলীয় সরকার অবশ্য আদিবাসীদেরকে আধুনিক জীবনাচারের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে । এখন অনেক গুনদানগুরা আদিবাসীই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত । গুনদানগুরা আদিবাসী শিল্পী অঙ্কিত একটি বিখ্যাত আর্টওয়ার্ক নিন্মে দেখা যেতে পারে ।
ছবি ৬/৩৭ : গুনদানগুরা আদিবাসী শিল্পী অঙ্কিত একটি বিখ্যাত আর্টওয়ার্ক
গন্ডোয়ানা আদিবাসী উপজাতিদের একটি গোত্র হল ‘’বুড়া বুড়া’’ এর বসবাস সংলগ্ন এলাকায় জেনুলান গুহা (Jenolan Caves) অবস্থিত ।
গন্ডোয়ানা উপজাতির প্রতিটি গোত্রের কাছে একটি বিশেষ বিশেষ পশু পবিত্র পশু হিসাবে চিহ্নিত ( একে তারা টোটাম বলে অভিহিত করে ) ।
আদিবাসী মানুষ বিশ্বাস করে, ইচ্ছাকৃতভাবে টোটেমকে আঘাত করা, হত্যা বা ধরে খেয়ে ফেললে তা পরিবারের উপর মহা দৈবদুর্বিপাক ডেকে আনে ।
বুড়া বুড়া গোত্রের টোটেম ( পবিত্র প্রাণী) হল “গুঙগুংগালিগুং বুড়া বুড়া”GUNYUNGGALINGLUNG BURRA BURRA
ছবি- ৭/৩৭ বুরড়া বুরড়া গোত্রের টোটেম ( পবিত্র প্রাণী) হল “গুঙগুংগালিগুং বুড়া বুড়া
এই টোটেমটাকে দেখা যায় গ্রীস্মকালে গুহা এলাকায় নিকটবর্তী ছোট ঠোট ঝর্ণার ধারে নদীর কিনারে । এই বুড়া বুড়া ও আরেক গোত্রের টোটেম ক্যাঙ্গারুকে নিয়েই রচনা করা হয়েছে জিনুলান গুহার মনোগ্রাম । এটাই এখন ব্যাবহৃত হচ্ছে এ গুহা সংক্রান্ত আস্ট্রেলীয় যাবতীয় প্রকাশনায় ।
ছবি-৮ / ৩৭ : গুনদানগুরা আদিবাসী শিল্পী অঙ্কিত জিনুলান গুহার মনোগ্রাম-১
ছবি-৯ /৩৭ : গুনদানগুরা আদিবাসী শিল্পী অঙ্কিত জিনুলান গুহার প্রবেশ পথের মনোগ্রাম-২
জেনুলান গুহার ইতিহাস
জেনুলান গুহাগুলি আদিবাসীদের নিকট অন্ধকারাচ্ছন্য “ বিনোমিয়া” স্থান হিসাবে হাজার হাজার বছর পুর্ব হতেই ছিল পরিচিত ।
গুহা সৃস্টি রহস্য
জিনুলান গুহা এক ধরনের ভুমির কার্স্ট রূপ । ভুতাত্বিক ভাবে নদীর গতিধারায় প্রাকৃতিক খিলানপথে পানি চোয়ে পাথর দ্রবিভুত করে বা পানি প্রবাহের ফলে ফাক বা ফাটল তৈরী হয়ে এর ভিতর গঠিত গুহা সদৃশ্য এক ধরনের ল্যান্ডফর্মকে "কার্স্ট" হিসাবে অভিহিত করা হয় । কার্স্ট ভূমিরূপের গঠন তখনই ঘটে যখন শিলা সহজে প্রাকৃতিক জলে দ্রবীভূত হয় । কার্স্ট ভূমিরূপের গঠন সাধারণত চুনাপাথর অঞ্চলে পাওয়া যায় ।
কার্স্ট হল ভূমিরূপ বিবর্তনের একটি জটিল অবস্থা যা মুলত গঠিত হয় বায়ু, পানি ও খনিজের যৌগিক উপাদানের মিথক্রিয়ায় যেখানে বৈচিত্র্যময় জৈবিক উপাদানগুলিই বেশী মাত্রায় এর গঠনে সহায়তা করে । কার্স্ট শব্দটি যুগোশ্লাভিয়ান ক্রাশ শব্দটি হতে এসেছে , শ্লাভিক এই শব্দটির অর্থ হল “ পানিবহীন শুন্যস্থান “ ।
পর্বতমালার যে অংশের উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং এর পানি চুয়ে চুয়ে নীচে চুনাপাথরের সংস্পর্শে এসেছে তখন তা পানিতে দ্রবিভুত হয়ে কার্স্ট ভূমিরূপের গঠন প্রক্রিয়ায় যে গুহা তৈরী হয়েছে তা ঐ এলাকায় জেনুলান গুহা বলে পরিচিতি পেয়েছে ।
ছবি - ১০/৩৭ জিনুলান গুহার অভ্যন্তরভাগ -১
ছবি –১১/৩৭ : জিনুলান গুহার অভ্যন্তরভাগ -২
ছবি –১২/৩৭: অগ্রবর্তী ভুতাত্বিক গুহা জরীপ কারীর জিনুলান গুহার অভ্যন্তর ভাগ পর্যবেক্ষন
অগ্রবর্তী ভুতাত্বিকক জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপদ গুহা গুলিতে ইচ্ছুক সাহসী অভিযাত্রীদেরকে অভিজ্ঞ গাইড এর তত্বাবধানে দু:সাহসিক অভিযানের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য
ভিতরে গমনের সুযোগ দেয়া হয় । প্রত্যেক পর্যটককেই গুহা অভিযানের সময় নির্ধারিত নিরাপদ পথ অনুসরণ করতে হয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে ।
ছবি-১৩/৩৭ নির্ধারিত নিরাপদ পথ অনুসরণ করে গাইড সহ জিনুলান গুহা পরিদর্শন -১
ছবি-১৪/৩৭ নির্ধারিত নিরাপদ পথ অনুসরণ করে গাইড সহ জিনুলান গুহা পরিদর্শন -২
ছবি-১৫/৩৭ : নির্ধারিত নিরাপদ পথ অনুসরণ করে গাইড সহ জিনুলান গুহা পরিদর্শন -৩
ছবি-১৬/৩৭ : নির্ধারিত নিরাপদ পথ অনুসরণ করে গাইড সহ জিনুলান গুহা পরিদর্শন -৪
ছবি-১৭/৩৭ : নির্ধারিত নিরাপদ পথ অনুসরণ করে গাইড সহ জিনুলান গুহা পরিদর্শন -৫
গুহার অভ্যন্তরভাগের অআরো কণেক দৃশ্যাবলি গুহা গ্যলারীতে ক্লিক করে দেখা যেতে পারে ।
গুহার ভিতরে ছবি তুলতে গিয়ে অনেকেই অনেক সময় অতি দুর্লভ অনেক বিষয় তাদের ক্যমেরা বন্দী করেন, যাকে দর্শকদের কাছে প্রায়শই ভৌতিক বলে মনে হয় , যার সাথে গুহার ক্যাটালগের ছবির কোনো মিলই পাওয়া যায়না । ২০১০ সালে একজন দর্শকের ক্যমেরায় ভুতের চোখের সাদৃশ্য একটি দৃশ্য ধরা পড়ে । তাই অনেকের ধারণা গুহায় নিশ্চয়ই ভুতেদের আনাগুনা আছে, তবে কতৃপক্ষ তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন ।
ছবি-১৮/৩৭ গুহায় ২০১০ সালে জনৈক দর্শকের ক্যমেরা বন্দী ভুতের চোখের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় এমন একটি চিত্র
গুহায় দু:সাহসিক অভিযান
কেহ যদি দু:সাহসিক গুহা অভিযানের জন্য একান্তই ইচ্ছুক হয় তাহলে অস্ট্রেলিয়ান এডভেঞ্চার কেভিং গ্রূপ প্রস্তুত আছে তাকে সর্বাত্বক সহায়তা দানের জন্য । সে ইচ্ছে করলেই নির্ধারিত ফি বাবদ অর্থের বিনিময়ে একটি অভিযাত্রী টিমের সদস্য হয়ে যেতে পারে অনায়াসে ।
ছবি-১৯/ ৩৭ : গুহায় দু;সাহসিক অভিযানের জন্য এডভেঞ্চার কেভিং কতৃক গঠিত টিম
এডভেঞ্চার কেভিং টিমের প্রত্যেক সদস্যকে কেভিং অভিযানের কারিগরী খুটিনাটি সম্পর্কে পুংখানু পুংখভাবে জ্ঞানদান করা হয় । তাদেরকে নিরাপত্তা হেলমেট, সেফটি বুট , জ্যকেট এবং হেডল্যাম্প সরবরাহ করা হয় । সাথে দেয়া হয় গুহার ম্যাপ , নিরাপদ গমন ও নির্গমন পথের বিবরণ , কোথায় হামাগুরী দিয়ে পথ চলতে হবে, কোথায় কোন জায়গায় ভয়ের কারণ ঘটতে পারে , কিভাবে তা সাহসিকতার সহিত মোকাবেলা করতে হবে তার একটি বিষদ বিবরণ থাকে অন্তর্ভুক্ত ।
এছাড়া প্রতিটি টিমের সাথে দুজন অভিজ্ঞ গাইডও যুক্ত থাকেন ।
ছবি-২০/ ৩৭ : হ্যাডল্যাম্প ও নিরাপত্যা পরিচ্ছদ পরিধান করে গুহায় এডভেঞ্চার
এখানে বলে রাখা ভাল, জেনুলান গুহাগুলির গঠণ একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং নীল পাহাড়ের এ অংশে এর গঠন এখনো অব্যাহত আছে ।সেখানে অভিযান চালিয়ে এখনো প্রতিনিয়ত অনেক নতুন নতুন গুহা পাওয়া যাচ্ছে । পাহাড়ের উপর ও পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত স্টিক্স নদীর (River Styx) পানি স্তরের নীচে নতুন গুহা পাওয়া যাচ্ছে তবে পুরাতন কিছু গুহা অবশ্য পলিমাটি দ্ধারা ভরাটও হয়ে যাচ্ছে ।
জেনুলান গুহা ও নীল পর্বতাঞ্চলে দেশীয় জীব বৈচিত্র( Blue Mountains native wildlife at Jenolan)
জেনুলান গুহার উপরিভাগে বিশালাকার সবুজ বন, নীচে ভয়াল গুহারাশী , পাশে অপরুপ নীল টলমলে পানির হৃদে রয়েছে জীব বৈচিত্রের সমাহার । গুহা পর্যটকদের কাছে গুহাভ্যন্তের মত রহস্যময় দৃশ্যাবলীর সাথে সেখানকার সংস্লিষ্ট জীব বৈচিত্রও কম আকর্ষনীয় নয় । দিবা ভাগে ও পুর্ণিমা রাতে দেখা মেলে অনেক ধরণের বৈচিত্রময় প্রাণীর । বিভিন্ন ধরণের অপরুপ সবুজ উদ্ভিদ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন অবয়বের প্রাণীর বিচরণ যার কিছু নীচের ছবি ব্লগে দেখা যেতে পারে ।
ছবি -২১/৩৭ পাহাড়ের সবুজ বন , গুহা ও নীল হৃদের ছবি
দেশীয় জীব বৈচিত্রের জন্য নীল পর্বতাঞ্চলের প্রায় ২৫০০ বর্গ হেকটর এলাকাকে ‘’ জেনুলান ক্রাস্ট করজারবেশন রিজার্ভ’ নামে বিশ্ব হেরিটেজ স্টেটাস দেয়া হয়েছে । এটা অস্ট্রেলিয়ার দেশীয় বন্য প্রাণীর গুরুত্বপুর্ণ আবাস হিসাবে গন্য । নিম্মের ছবি ব্লগে এ এলাকার কনজারভেশান রিজার্ভে বিচরণকারী কিছু বৈচিত্রময় প্রাণীর ছবি প্রদর্শিত হল।
১) জিনুলান গুহাবাসী প্রাণীদের মধ্যে বাদুর ও সরিসৃপ প্রজাতিই প্রধান ।
ছবি -২২/৩৭ : “গুঙগুংগালিগুং বুড়া বুড়া” (GUNYUNGGALINGLUNG BURRA BURRA ) সরিসৃপ প্রজাতির প্রাণী
ছবি- ২৩/৩৭ গুহাবাসী সবুজ ব্যাঙগ
ছবি- ২৪/৩৭ জিনুলান গুহাবাসী বাদুর ( গুহায় এদের দেখা মিলে সবসময় , প্রায় বিভন্ন ধনরের প্রায় ১০ টি র ও বেশী প্রজাতির বাদুর আছে এ সমস্ত গুহার আনাচে কানাচে ।
ছবি – ২৫/৩৭ গুহাবাসী বাদুর -২
ছবি – ২৬/৩৭ গুহাবাসী ইদুর ( প্রায় ৮ প্রকারের বিভিন্ন প্রজাতীর ইদুর বাস করে এসমস্ত গুহা অঞ্চলে
ছবি – ২৭ /৩৭ : অতিকায় বৃহত আকারের গুহাবাসী ইদুর
ছবি- ২৮/৩৭ জিনুলান গুহা নিকটস্থ নীল হৃদ অধিবাসী ‘প্লেটাইপুস ‘ ( কদাচিত দেখা যায় তাই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী শ্রেণীভুক্ত )
ছবি – ২৯/৩৭ ক্যঙ্গারু
ছবি –৩০/৩৭ গুহাবাসী সজারু
ছবি – ৩১/৩৭ ব্রাস টেইলড রক ওয়ালবি
ছবি -৩২/ ৩৭ গুহাবাসী প্রাণী টয়লড
ছবি – ৩৩/৩৭ ইস্টার্ন কল ( মুল ভুমিতে বিলুপ্ত প্রায় প্রানী )
ছবি-৩৪/ ৩৭ : গুহার পাহারাদার মাকরসা ( প্রায় পাহারের অনেক গুহামুখেই পাওয়া যায় )
ছবি-৩৫/৩৭_ লম্বা লেজোয়ালা বিলুপ্তপ্রায় পাখী
ছবি – ৩৬/৩৭ রঙ্গীণ টিয়া পাখী
ছবি – ৩৭/৩৭ গ্যাং গ্যাং ককাটু ( এই পাখীটিকে সব সময় বহুল পরিমানে বিচরণ করতে দেখা যায় )
প্রতি বছর প্রায় ২২০০০০ ভিজিটর এই জিনুলান গুহা অভিযানেন জন্য সেখানে পরিভ্রমন করেন । অস্ট্রেলীয় পর্যটন সেবা কেন্দ্র ব্যক্তিগত বা দলভিত্তিক প্যকেজ টুরের আওতায় , যাতায়াত , আবাসিক ( নিকটেই বিভিন্ন ধরনের পর্যটক কটেজ ও গ্রান্ড হোটেল গড়ে উঠেছে ) ও সাইট পরিদর্শনের এর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকেন ।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী এলাকার জিনুলান গুহার মত বাংলাদেশের গিরি গুহা গুলিকেও দর্শকদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলা যায় যদি এই গুহাগুলীর আভ্যন্তরীন দৃশ্য ও এর জীব বৈচিত্রের সমাহার ঘটিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারেন ।
ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।
ছবি ও লিখা সুত্র : সংস্লিষ্ট স্থানে লিংক হিসাবে দেয়া হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:০২