( ছয়ফলমুল্লুক - বদরুজ্জামাল এক যুবরাজ ও পরীকন্যার প্রেম ভালবাসা , এডভেন্চার, বিশ্বাস, যাদু , দু:খ দুর্দশা ও বিশ্বাসঘাতকতার বিশাদময়কাহিনী । এই অতি পুরাতন রূপকাহিণীর ছড়ানো ছিটানো টুকরু টুকরু অংশ গুলি যার কাছ থেকে শুনা তার বিবরণীর সাথে কবির নিজস্ব কাব্যিক কিছু ধরণ মিশেল দিয়ে এর একটি সচিত্র কাব্যবিবরণী নীচে তুলে ধরা হয়েছে )
ছয়ফল মুল্লুক বদরুজ্জামাল উপাক্ষান
যাত্রার আদলে চালু ছিল ষাটের দশকে
ভাওয়াল অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে
পথে ঘাটে অহরহ বাজত একটি গান ।
জামাল রূপে পাগল হয়ে
দেশ ছাড়িলাম জাহাজ লয়ে
ডুবল জাহাজ লবলং সাগরে
আমারে যে ধইরা নিল
দেয় দানবে ।
এটি মুলত মধ্যযুগীয় এক মিশরীয় রুপকথা
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম এর প্রকাশ গাথা
নিম্মে এই রূপ কথার হল সংক্ষিপ্ত সচিত্র বর্ণন
সাথে রয়েছে কবির নীজ স্বাধিনতার সংমিশ্রন।
কাহিণী বিবরণীপ্রাক সবিনয়ে দুটো কথা বলতেই হয়
ছয়ফল মুল্লুক সরোবর হিমালয়ের কাগান উপতক্যায়
১০৬০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে গিয়েছিলাম ২য় দফায়
মেজিক ক্যমেরায় সরোবরের দৃশ্য কিছু হয়েছিল ধারণ
স্থানীয় এক বৃদ্ধের কাছে পাওয়া যায় এর কাহিণী বিবরণ।
শুন মোর কথা বলেই বিবরণ দাতা করলেন শুরু
আমি পরী দেখি নাই তবে বিধাতার মহাত্ব দেখেছি
প্রতি পুর্ণীমা রাতে লেকের ধারে নিথর পানির পরে
দুর আকাশ হতে পড়ত ঝরে কিছু ঝক ঝকে তারা
চাদের আলোর নির্মলতায় থাকত তারা আত্মহারা ।
বহু রাত লেকের ধারে বসে দেখেছি আমি
ভাসমান আলোক হাজার তারার জ্যোতি
দেখেছি তাদের হারিয়ে যেতে পাথরের তলে
আমি পরীকন্যা বদরু জ্জামালকে দেখিনি
দেখেছি তাকে নিয়ে নিয়তির নিষ্ঠুর দুলনি ।
একদা নীল নদের দেশে ছয়ফলমুল্লুক নামে বসতি এক যুবরাজ
যেমনি ছিল দেখতে সুদর্শন তেমনি ছিল তার বিরত্বের গুনকির্তন
ছয়ফল মুল্লুকের চাওয়া পাওয়ার অধরা থাকতনা কোন তার রাজ্যে
একদিন রাতে ঘুমের ঘোরে দেখা এক স্বপ্ন করল তার শান্তি হরণ।
স্বপ্নে সে দেখল চার দিক পাহাড় বেষ্টিত এক মনোরম সরোবর
যার নির্মল সবুজাব জলারাশীতে পরে পুর্ণীমার চাদের বিচ্ছোরণ
সরোবরের জলে সাতটি পরীতে স্নান করে খুলে রেখে তার ডানা
সরু মসৃন দেহ পল্লবিত নীল চোখ চুল যেন তাদের বেণী খুলা ঝর্ণা ।
সাতটি পরীর একটি যেন গ্রাস করেছে সখিদেরে নীজ রুপ আবেসে
মুখটি যেন তার পুর্ণ শশী সে হল বদিউ হাসিতে যখন তার মুক্তা ঝরে
দেখে তাই ছয়ফ হয়ে যায় বিমুর্ত ভাষাহীন জল নিয়ে চোখে উঠে জেগে
বদরুজ্জামাল পরী এমনতর রূপসি জীবনে সে কভু দেখেনি এর আগে ।
রজনী অবসানে সাইফ হয় সকাতর
পিতা রাজাধিরাজ প্রাতরাশে জিজ্ঞাসে
মুখখানী মলীন কেন কুমার কি হয়েছে
অধোবোদনে যুবরাজ বলে পিত
ভালবাসায় হয়েছি যে আমি নীত।
খুশী আপ্লোত পিতা কুমারের কাছে জানতে চান
কোন সে কন্যা এক্ষনি রাজ্যমধ্যে করিব ঘোষনা
হবে সমারোহে রাজপ্রাসাদে বিয়ের আয়োজন ।
বিষাদের সুরে যুবরাজ কয় সে যে রাজকন্য় নয়
সে যে পরীদের রাণী বদরুজ্জামাল নামে পরিচয় ।
রাজার মুখটি হল ভার শুনে কুমারের কথা বললেন তিনি
ছাইফ বুজতে পারছনা কি নিদারুন কথা বলছ একখানি
পরী এ যে একটা পাখী আগুনের জীব মায়াবী এক নারী
চাদের আলো ফুরালে ডানা মেলে যাবে উড়ে তোমায় ছাড়ি ।
নিরাশার সুরে বললেন রাজা আগুনের জীব পরী কি পারবে
মাটির পৃথিবী অভিমুখী মানবেরে দিতে সুখ মানবীয় কাম রাগে
তিনি তাই বললেন তীব্রভাবে মাথা নেরে এ ধারণা পরিত্যাগ কর
দুর্বিপাক ছাড়া এটা আর কিছু আনবেনা বয়ে তব জীবনের তরে ।
কিন্তু ততক্ষনে সময় বয়ে যায় রাজ পরামর্শটুকু হারায় হেলায়
ছাইফের হৃদয়ে জ্বলা আগুন রয়েই যায় মন তার শুধু হাতরায়
সে সরোবরে যেখানে পরী করিত সিনান তাকে খোঁজার আশায়
চাইল সে রাজ অনুমতি তাকে খুঁজে পেতে সেই দুর অমানিশায় ।
পাত্রমিত্র রাজজ্যোতিষী নিয়ে রাজা বসলেন এক আলোচনা সভায়
কুমারের ভাগ্যলিপি করে পরিদর্শন রাজ জ্যোতিষী যখন বললেন
কুমার যাবে দুরদেশে নৌবাহন আর অশ্বারোহণে তার যৌবন লগনে
অদৃষ্টে আছে লিখা কুমার পাবে পিতৃ আজ্ঞা তার প্রতিজ্ঞা পালনে
হলেন রাজা সম্মত দিলেন তাকে আজ্ঞা যেতে নৌ ও অশ্বারোহনে ।
বছর ছয়েক ধরে ছাইফ খুঁজল তাকে তন্ন তন্ন করে নীল নদের ঠিকানায়
করল বিচরণ আলেকজান্দ্রিয়া হতে শুরু করে সিনাই এর প্রতিটি কোণায়
রাস্তায় ঘুরে চোখ লাল চুল উসকু ছেঁড়া তার জুতা প্রেম দ্বারা হয় তার ক্ষয়
মানুষ আর চিনেনা তাকে যেখানে যায় সকলেই তারে পাগল বলেই কয় ।
রাস্তায় যাকে পায় সকলকেই সে শুধায় দেখছনি তোমরা একটি সরোবর
দেখায় যাকে বিশুদ্ধ সাদা পাহারের রং মেখে মুক্তো দানা পান্নার মতন
কেও কি শুনেছ এমন জায়গার কথা যেখানে পুর্ণীমা রাতে পরীরা করে স্নান
শুনে পাগলের কথা সকলে মিলে তাড়িয়ে তাকে শহরেই করে অপসারণ।
একদিন কায়রোর প্রান্তদেশে ঘুরাঘুরি কালে ছয়ফুল দেখে এক দরবেশ
বসে আছে জলপাইতলে করে সে চিন্তা দরবেশ দিতে পারে কোন সন্ধান
ত্রস্তপদে তার কাছে যাওয়ার কালে ছয়ফুল দেখে আশাতীত ভাবে দরবেশ
চেয়ে আছে তার দিকে কাছে গেলে বলে এখানে আছি বসে তোমারী জন্যে।
দিয়ে মৃদু হাসি দরবেশ বলল রাজকুমার ছইফ তোমার জন্যে বসে আছি
গত ছয় বছরে তার সাথে এমন করে যুবরাজ ডেকে বলেনি কেও কথা
ছইফ কিছু বলার আগেই দরবেশ তার হাতখানি টেনে নিয়ে গুজে দিলেন
তাতে শত সহয্র বছর পুরাতন একটি মেষচর্ম গোলাকার সুলেমানী টুপি।
ধন্যবাদ করে জ্ঞাপন ছইফ জিজ্ঞাসিল টুপিটি নিয়ে সে করবে কি এখন
দরবেশ বললেন ডেলে দিও এর ভিতর আছে যত বাসনা তোমার গোপন
হতবিহ্বল ছয়ফল গুজে দিল টুপি নীজ শিরোপর ঘটল মেজিক অত:পর
সুলেমানী টুপি মহুর্তে তাকে নিয়ে চলছে ধেয়ে সেই পানে যাছিল তার মনে।
বাতাসের ঝাপটার সাথে সাইফ অনুভবে পৃথিবী দুলছে দুরে তার পদতলে
চোখ মেলে দেখে সে আকাসের রং কানে বাজে গুড়গুড় শব্দ একটি দমক
মধ্যআকাসে বিজলী চমক দৈত্যদানবের বজ্র হুংকার অফ্রিয়াসের বাশির সুর
হঠাৎ করে ধরণিতে পরে তার পদ,চোখ মেলে চেয়ে দেখে নীচে এক সরোবর।
(হিমালয়ের কাগান উপত্যকায় অবস্থিত বর্তমানে ছয়ফল মুল্লুক সরোবর নামে জগতে খ্যাত)
এই সরোবর দেখতে পান্না সবুজ আয়নার মত শান্ত সুকঠিন তুষারাবৃত ধনুক বৃত্তাকার
দেখে তার রূপ সাইফের আনন্দ অপার ভাবে তার স্বপ্নের সরোরর বুজি ধরা দিল এবার
চিল্লায়ে কয় আমি এবার পাব পাইবই তারে, অবোধ শিশুর মত ডিগবাজি দেয় বার বার
বদিরুজ্জামাল চিত্রটি মন থেকে টেনে এনে বলে আমার কষ্টের দিন বুজি শেষ হল এবার ।
বেহুস ছা্য়ফ ভুলে গেল ভুলে কেমন করে সে এল জাতনা সে সুলেমানী জীনের কথা
জীনটি এবার মানুষের বেশ ধরে তার সামনে এসে বলল একটি কথা রাখবে মনে সর্বদা
জীনের দিকে সকৌতুকে তাকিয়ে ছাইফ বলে কি কথা বল এখনে, বলল জীন সে কথা
পরী রাণী জামালকে দেখতে তুমি পাবেনা আগুনের জীবের আসল রূপ যায়না দেখা ।
দৈর্যহীন ছায়ফ জিজ্ঞাসিল জীনে পরী রাণিকে দেখতে হলে কি করতে হবে তাকে
তোমাকে প্রার্থনা করতে হবে চল্লিশ দিন এক টানা একে দরবেশি কথায় বলে চিল্লা
এসময়ে বন্ধ থাকবে তোমার খানাপিনা পারবেনা অতিক্রমে তোমার বসার বৃত্তখানা
তখনই কেবল দেখতে পাবে পরী রাণির আসল রূপখানা, বলে কথা জীন নিরুদ্দেশ ।
এটা মনে হল অসম্ভব একমাত্র নবি রাসুল সুফি দরবেশই পারেন দিতে এরকম চিল্লা
যেমনটি দিতে পেরেছিলেন মুসা নবি রাসুল মোহাম্মদ ও বাবা ফরিদ ও গঞ্জে শাকর
অন্যরা এরকম চিল্লায় হয় গেছে মারা না হয় ক্ষুধা তৃষ্ণায় হয়েছে শুধুই সম্বিতহারা ।
তবে ছাইফ চায়না যেতে দমে,ভাবে সে ছয় বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছি পথে প্রান্তরে
ক্ষুধা অনাহার অনিদ্রায় মানুষের নির্যাতনে ভোগে, তবে কেন এখন পারবনা চিল্লায়
তাই সরোবরের দক্ষীন প্রান্তে একে নিয়ে বৃত্ত চারপাশ চোখ মুদে বসে যায় চিল্লায়
সময় কাটে প্রার্থনায় প্রার্থনায় রবি ডুবে যায় শশী উঠে ছয়ফ হয় দুর্বল হতে দুর্বল
মুখ হয় মলীন ব্যাথা হয় ভারী শ্রবন হয় বধির দিন গননা যায় ভুলে প্রতিদিন কাটে
অপেক্ষায়, প্রতি রাত কাটে অপেক্ষায় কখন পরী আসে এই আসে বুজি এ তল্লাটে।
কিন্তু বদর জামাল তো আসেনা , এক রাতে ছয়ফল দেখে সূর্য যেমন হিমালয় ঢালে
মৃত্যু বান হানে গোধুলি আকাশ পানে কুমার ছয়ফ তেমনি নীজ বৃত্ত ভিতরে ভাবে
বেচে কি থাকবে আরো একদিন দেখতে বদিউজ্জামালে শরীর যে হতেছে নিস্তেজ
তবে এই চিল্লা শেষের সময় আসন্ন ভেবে মনটি তার ক্রমেই হতেছে শান্ত ও সতেজ ।
পুর্ণিমা রাতের পুর্ণ চাঁদে পর্বত বেষ্টিত লেকের অক্ষিগোলক অন্ধকার আকাশে
ঝক ঝকে রূপালী আলোর প্রদিপ্ত শিখা দেখে ছয়ফল মুল্লুক হৃদয়ে অনুভবে
শান্তির পরশ, ভাবে আজ নিশীতে যাই যদি মরেও হব যে জগতের সেরা সুখী
হঠাৎ কানে বাজে একটি শব্দ দুর হতে ভেসে আসা পাখি পালকের দাপা দাপি গুঞ্জন
তারপর কাছাকাছি মনোরম টুংটাং শব্দ সাথে হাজার সুরের মনমাতানো মৃদু ঘন্টাধ্বনি
অবাক নয়নে ছাইফ দেখে একটি সাদা মেঘ পশ্চিম হতে আসছে ধেয়ে সরোবর পানে ।
ছাইফ ভাবে মৃত্যুর দুত আসছে ধেয়ে তবে সে রাত তার মরিবার জন্য ছিলনা ধার্য
পুর্ণিমা রাতটি ছিল ছয়ফের চিল্লা সম্পন্নের এক দুর্লভক্ষন কারণ এই রাতটি ছিল
ককেসীয় পর্বতে অবস্থিত কোহেকাফ এর মায়াবী পরীদের স্নানের জন্য নির্ধারিত
সেখানকার পরীরা তাদের রাণী বদরজামালকে নিয়ে এই রাতে স্নানের জন্য আসত ।
সাদা মেঘ ধীরে ধীরে লেকের তীরে নেমে সাতটি রূপে হল প্রকাশ সাত আনন্দময়ী প্রাণী
মেলে দিল অঙ্গ স্বর্নালীকেশ সুবর্ণ নেত্র, দেহটিও চন্দ্রপ্রভা ডানা দুটি যেন উড়ন্ত শুভ্রশীখা
দেখে এদৃশ্য ছাইফ হল নির্বাক দৌরে পালাল পাথরের পাশে চুপিসারে যেন দেখতে পারে
চুপিচুপি দেখে পরীদের হাসি কেমন করে রাখে তারা ডানা খুলি পানিতে দেয় ঝাপ তৎপর
কেমন করে লেকের গভীরে ডুব দিয়ে ধিকিধিকি জলে হঠাৎকরে হয়ে যায় পাকা খেলোয়াড়।
তারপর সে দেখে বদর জামাল পাখনা খুলে সকলের শেষে নামে লেকের জলে
চোখ দুটি শিশুর মত দীর্ঘ তার চুল পুর্ণচন্দ্র মুখখানি পানিতে ভেসে উঠে উছলে
এ যেন তার জীবনে দেখা সুন্দর নারী পরমানন্দের অনুভুতিতে ছইফ হয় অজ্ঞান
তার ছয় বছর চল্লিশ দিনের সংগ্রাম পায় যেন গতি সহসাই সে হয়ে যায় সজ্ঞান ।
চার পর্বে সমাপ্য : পর্ব ২ অচিরেই আসছ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:১২