গতকালের সামুর পাতায় ''যে সময়টা আমরা ব্লগে ব্যয় করছি, কখনও কি ভেবে দেখেছি তা আমাদের আখিরাতের জন্য কতটা কাজে লাগছে” ? এ শিরোনামে একজন শ্রদ্ধেয় ব্লগারের মুল্যবান প্রশ্নের প্রতি মনযোগ আকৃষ্ট হয়। মন্তব্য করতে গিয়ে মনে হল লিখার কলেবর মন্তব্যের ছোট্ট পরিসরে বেমানান দেখাবে । তাই পৃথক পোষ্টে এ লিখা ।
প্রত্যেক নর নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যকীয়তার কথা অনেক মনিষীই বলেছেন । জ্ঞান অর্জন বিষয়ে আল্লাহ কি বলেন তা নিয়েই আলোচন করা যাক যাক । আল্লাহ (বরকতময়), তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের রুযী দিয়েছেন, আমাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন। তিনি বলেন :’’নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি,, আমি কি তাকে দেইনি চক্ষুদ্বয়, জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয় ,বস্তুতঃ আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি ( সুরা বালাদ আয়াত ৪,৮, ৯ ও ১০ )
পবিত্র কোরানের আয়াত থেকে দেখা যায় যে ভাল মন্দ সম্পর্কে বিচারবুদ্ধি জ্ঞান ও শারিরিক সামর্থ দিয়ে শ্রম নির্ভররূপে মানব সৃষ্টির পর আল্লাহ তাঁর দ্বিন ও ইসলাম সস্পর্কে জ্ঞান চর্চার জন্য নির্দেশ দান করেছেন এবং এটাও বলতে শিখিয়েছেন :
‘’হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।‘’ ( সুরা তাহা আয়াত ১১৪ )
তিনি (আল্লা) আরো বলেন “হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন( সুরা হুজরাত, আয়াত ১৩)।
আল্লার কালামের প্রতিটি অক্ষর পাঠের জন্য রয়েছে ১০ টি করে নেকী । তার মানে প্রতিটি অক্ষরই সমান গুরত্বপুর্ণ এবং পাঠের সাথে যদি তা কার্যে প্রতিপালন করা হয় তাহলে আরো অনেক বেশী নেকী । আল্লাহ মানব জাতিকে বিভিন্ন জাতিতে ও গোত্রে বিভক্ত করেছেন যাতে করে তারা পরস্পরে পরিচিত হতে পারে । এখানে জাতি ও গোত্রের কোন পরিধি বা ক্ষেত্র সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই । পরস্পরে পরিচিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে । এতে অবশ্যই রয়েছে নেকী কেননা এটাতো কোরানের আয়াতেরই একটি বাস্তব প্রয়োগ। ব্লগে বিচরণকারী ভাই বোনেরা একটি ব্লগীয় গোত্র হিসাবে প্রতি নিয়তই একজনের সাথে পরিচিত হচ্ছে , মতামত শেয়ার করছে, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে । তবে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবরই রাখেন (সুরা হুজরাত আয়াত ১৩)।
যখন আল্লাহ তার বান্দাকে জ্ঞান দান করেন তখন সে আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে আরো বেশী জানবে এবং জানতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। সে যত বেশি জানবে আল্লাহর গুণাবলীর সঙ্গে সে আরো বেশী পরিচিত হয়ে ওঠবে। ফলে তার মনপ্রাণ সৃষ্টিকর্তার উপাসনার জন্য আরো বেশী যোগ্য ও নিষ্ঠাবান হয়ে উঠবে, বিনীতভাবে তাঁর কাছে সমর্পণ করতে পারবে, তার হৃদয়ে আল্লার প্রতি প্রেম ও মহব্বত সৃষ্টি হবে আল্লার সৃস্টি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য একজন ব্লগার, যে নিয়মিত ব্লগে বিচরণ করে সে অন্য যে কোন শিক্ষা মাধ্যমের চেয়ে অতি অল্প আয়াসে উম্মোক্ত ব্লগ ভান্ডার থকে প্রচুর সচিত্র জ্ঞানগর্ভ তথ্য আহরণ পুর্বক নীজ জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে । ব্লগ ভান্ডার থেকে জ্ঞান আহরণের বিষয়ে এর বেশী আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না । তার পরেও আলোচনার একটি ফলপ্রসু উপসংহারে পৌঁছার জন্য দু একটি উদাহরণ ধর্মীয় ক্ষেত্র থেকেই টেনে এনে দেয়া হ’ল যেহেতু আলোচনার ফোকাসটিই ব্লগ ও আখেরাত সম্পর্কীয় ।
পবিত্র কোরানের সুরা হা মীম এর ১২ নং আয়াত পড়তে গিয়ে দেখা যায় আল্লাহ বলেন “অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা” ( হা মিম আয়াত ১২) । এখন ব্লগে ‘আল্লার অলৌকিত্ব’ শীর্ষক একটা লিখায় বিজ্ঞানীদের গবেষণা লব্ধ একটি চিত্র দেখা যেতে পারে :
তথ্য চিত্রে দেখা গেল সত্য়ি সত্যিই আকাশের বায়ুস্তরে কয়েকটি স্তর বিন্যাস রয়েছে যা কোরানের আয়াতের সত্য়তা ও আল্লা প্রদত্ত বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ । এটা দেখার পরে সংশ্লিষ্ট ব্লগারের মনে আল্লার প্রতি তার বিশ্বাস নিশ্চয়ই আরো প্রগাঢ় হবে ।
অনুরূপভাবে কোন এক সময় সুরা আম্বিয়ার ৩১ নং আয়াত পড়তে গিয়ে দেখা গেল আল্লাহ বলেন “আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়।( সুরা আম্বিয়া ২১:৩১ )। এখন আল্লার সৃষ্টি রহস্য শীর্ষক ব্লগের একটা লিখা থেকে বিজ্ঞানীদের গবেষণা লব্ধ নিম্মোক্ত চিত্রটি দেখতে পাওয়া গেল :
Spematic section: mountains have deep roots under the surface
চিত্রে দেখা যায় পর্বতের মুল (roots) কিভাবে ভুপৃষ্ঠে গ্রথিত যেন পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে ।
অন্য আর এক সুরা আর রহমান আয়াত ১৯-২০ পড়ার সময় জানা গেল “তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন,উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।“ ( আর রহমান আয়াত ১৯-২০)। পরবর্তীতে ব্লগে কারো এক লিখায় বিজ্ঞানীদের গবেষণা লব্দ এরকমই একটি চিত্র দেখা গেল :
চিত্রে দেখা যায় যে ভুমধ্য সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের পানি একটির সাথে আর একটি স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখে চলেছে । এখন সহজেই বুঝা যায় এটা দেখার পর আল্লার প্রতি ঐ ব্লগারের বিশ্বাসের মাত্রাটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে ।
এ ছাড়াও ব্লগে যে যত বেশী বিচরণ করতে পারবে সে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা, শিল্প সাহিত্য, সমাজকল্যান, রাজনীতি , সমাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মীয় বিষয়ে তত বেশী জ্ঞান লাভ করতে পারবে । অন্য কিছু বাদই দিলাম শুধু মাত্র ধর্মীয় বিষয়ে কোরান ও হাদিস নিয়ে যে সকল আলোচনা এখানে প্রতিনিয়ত হয় তা নিয়েই যে কেহ ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতে পারে । তাছাড়া ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে নিবিষ্ট মনে একাগ্র চিত্তে আরো অনেক সময় দিতে হয় এর পিছনে । এখানে ইসলামের কল্যানে, নির্যাতিত মানবতার কল্যানে, ইসলামের বিরোদ্ধে বিধর্মীদের প্রচারণা ও যাবতীয় প্রোপাগান্ডার বিষয়ে শক্ত হাতে কলমের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অপুর্ব একটি সুযোগও বিদ্যমান কারণ ব্লগটাই হলো মুক্ত চিন্তা প্রকাশের শক্তিশালী একটি মাধ্যম । এখানে উল্লেখ্য় যে, অবিশ্বাসীদেরকে আল্লার প্রতি বিশ্বাসে ফিরিয়ে আনার জন্য দ্বিন ও ইসলামের পথে আনার লক্ষে কাজ করা তথা জিহাদে সামিল হওয়াকে অনেকেই অতি উচ্চমাত্রার পুণ্যের কাজ বলে বিশ্বাস করেন । আর জিহাদেরও নিম্মোক্ত পাঁচটি প্রকার আছে যথা :
Jihad of the heart/soul (jihad bin nafs/qalb)
Jihad by the tongue (jihad bil lisan)
Jihad by the pen/knowledge (jihad bil qalam/ilm)
Jihad by the hand (jihad bil yad)
Jihad by the sword (jihad bis saif)
বিভিন্ন ধরনের উগ্র কার্যকলাপের প্রক্ষিতে এবং এর অপব্যবহারের কারণে এখন বিশ্বব্যাপী Jihad by the sword (jihad bis saif) নিরোৎসাহিত করা হচ্ছে । কিন্তু কলমের যুদ্ধও তো একটি জিহাদ, যা আখেরাতে একজন ঈমানদার ব্যক্তির বেহেসতের রাস্তাকে সহজতর করতে পারে । অবশ্য আখেরাতে কার কি হবে সেটি আলেমুল গায়েব একমাত্র আল্লাই ভাল জানেন । যাহোক, ব্লগের পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা , দিনের পর দিন , বছরের পর বছর পার করে অনেকেই, পারলে সকলেই নীজ নীজ কাংখিত ক্ষেত্রে প্রভুত জ্ঞান ও অশেষ পুণ্য অর্জন করে আখিরাতের সুখের জন্য সম্বল নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে নিতে পারেন । তবে ব্লগে বিচরণের পাশাপাশি নীজেদের চরিত্রকে পুত পবিত্র রেখে কোরান ও সুন্নার আলোকে অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় বিধানাবলী যথানিয়মে নিয়মিতভাবে প্রতিপালন ও করতে হবে । তারপরেও আখিরাতের প্রতিফল একমাত্র আল্লারই হাতে । তবে একথা নির্ধিদায় বলা যায় নিয়ত ও সৎকর্ম তথা আমল গুনেই পুণ্য প্রাপ্তি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২০ ভোর ৬:০২