নাবিলা মেয়েটি বারান্দায় বসে পাকা রাস্তার পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে দেখে। গাছের সাথে দূর থেকে কথা বলে। গাছটাকে ঘিরে তার অনেক সত্যকল্পনা। কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে যখন লাল ফুল ফুটত মনে হত আকাশে লাল মেঘ জমে আছে। এই লাল মেঘের জন্ম হয়েছে যেন কান্না হয়ে ঝরে পরার জন্য। নাবিলা লাল মেঘ নিয়ে ভাবতে থাকে। আবার যখন ক্লাস করে বাসায় আসবে তখন দূর থেকে রাস্তার পাশের লাল ফুল গুলো মাটিতে লেপ্টে যেন রাস্তাধরা দিয়ে লাল কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে। লাল কার্পেট বিছিয়ে নাবিলার সারাদিনের ক্লান্ত কে নিমিষে শীতল করে তোলে। মেয়েটি ভাবে এই আগমনী বারতা কিভবে কৃষ্ণচূড়া গাছ বুঝে ফেলে তার জন্য লাল ফুল বিছিয়ে রেখেছে রাস্তায়। আবার রাতের জোস্নার আলোতে গাছটি ভয়ংকর লাল হয়ে ফুটে থাকে।মনে হয় আকাশে আগুন লেগে আছে। নাবিলা প্রত্যেকবার রাতে বারান্দায় এসে গাছটির দিকে তাকালে বুকে বোবা ভয় জেগে উঠতে চায়। মনে হয় যেন লাল চোখে গাছটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। শাসন করতে চাচ্ছে ।
নাবিলা ভোরে চা, বিস্কিট আর মোবাইল নিয়ে বারান্দায় শান্ত হয়ে বসে। নিজেকে কেন জানি আজ খুব হাল্কা লাগছে। অশান্ত পৃথিবী আজ শান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে পাশের বাসার ছেলেটিকে বলা যায় জানো আজ আমার মন খুব খারাপ। মন ভাল থাকলেও বলতে হয় মন খারাপ। ছেলেরা মেয়েদের মন খারাপের গল্প শুনতে চায়। যদি বলা যায় মন ভাল তাহলে তারা আর কথা খুজে পায় নাহ। সুমিরকে ডেকে বলতে ইচ্ছা করছে চল এমন কোথাও যাই যেখানে রাস্তার দুই ধারে কাশফুল ফুটে আছে। আচ্ছা ঢাকা শহরে কাশফুল পাব কোথায়। কাশফুল এখন বাসার ছাদের বিষয়। সুমির প্রতিদিন বাসায় ঢোকার সময় কেচি গেটের সাথে ধাক্কা খায় । এই ছেলের ধাক্কা খাওার অভ্যাস আছে। ওর সাথে আমার পরিচয় ঘটনাটা এমন, সেদিন করা রোদ পরতেছিল। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় ছেলেটি এসে আমাকে বলল, গাছটি খুব কষ্ট পাচ্ছে। গাছের মুখ থাকলে সে হয়ত এখন সব পথযাত্রীকে ডেকে বলত ভাই একটু পানি হবে আমার খুব তৃষনা। গাছের কষ্টে আমার কষ্ট হয়। মানুষ কষ্ট পাবে গাছের তো কোন জটিলতা নেই গাছ কেন কষ্ট পাবে। সুমির নাবিলাকে বলল, সারাদিন বারান্দায় বসে কি দেখেন ? নাবিলার জবাব, গাছ দেখি । কৃষ্ণচূড়া গাছ । সুমির বলল, আমিও রাতে বসে বসে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখি । নাবিলা বলল যদি আমরা গাছের মত এক জায়গাতেই স্থির থাকতাম আর গাছগুলো হেটে বেড়াত তাহলে কি হত? সুমির বলল, তাহলে আমাদের ঘিরে কিছু লতা গাছ বেড়ে উঠত। আমরা থাকতাম শীতল। বলেই ছেলেটি হুরহুর বাসায় ঢূকে গেল। সেদিনের পর থেকে নাবিলার মনে হচ্ছিল ছেলেটির সাথে আবার কেন দেখা হচ্ছে নাহ। তার কথা বলার সময় বারবার চোখের পাতা পরে। দেখতে ভাল লাগে তা না অনেক্ষন তাকিয়ে থাকেলে মায়া লাগে। হটাঠ নাবিলার ফোন আসল ফোন রেখে সে চায়ে চুমুক দিল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে সে কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকাল। আমার কৃষ্ণচূড়া গাছ ভাল আছে।
শুক্রবার সকালে রাস্তা শান্ত থাকে। কিন্তু সেদিন অনেক মানুষের শব্দ শুনে নাবিলা বারান্দায় এসে দাড়াল। দেখল কিছু মানুষ কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে ঘিরে আছে। দেখে নাবিলার মন আঁৎকে উঠল। রাস্তায় এসে নাবিলা জানল রাস্তা বড় করা হবে গাছটা কেটে ফেলা হবে। নাবিলা এক দৌড়ে ছাদে গেল। ছাদে গিয়ে দেখে সুমির বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সুমিরকে কাদো কাদো গলায় বলল, এমন ঘটনা দেখা পাপ। মনটা বিষণ্ণবদন হয়ে মলিনতায় ভরে উঠছে আমার। আমি কান্না করব আপনি আমার পাশে বসে থাকেন। নাবিলা এখন ফুপিয়ে কাঁদছে ছাদে বসে। সুমির নাবিলার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার অনেক টাকা হবে আমি অনেক বড় জায়গা কিনব। যেখানে সবুজ ঘাসের শেষ প্রান্ত মিশেছে নীল আকাশের সাথে। সে জায়গার মাঝখানে থাকবে কৃষ্ণচূড়া গাছ। আমি দূরে বসে তাকিয়ে থাকব সে গাছের দিকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলে যখন গাছ ভরে থাকবে আমি গাছের দিকে তাকিয়ে আমার তুমির কথা ভেবে অশ্রুসিক্ত হব। নাবিলার মন আঁতকে ওঠে । নাবিলা মেয়েটির সব ওই কৃষ্ণচূড়া গাছকে ঘিরে। কিন্তু তার ভাবনায় ডুকে পরে শান্ত বিষ । নাবিলা ভাবতে থাকে সে কৃষ্ণচূড়া গাছ হয়ে আছে সুমিরের সেই নীল আকাশের নীচে যেখানে সবুজ ঘাসে ভরে আছে। আর সুমির তার তুমিকে নিয়ে সেই গাছের পানে চেয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২০