মাসের শেষ সপ্তাহ চলে। পকেট পুরাই ফকফকা। এরমধ্যে পোলা-মাইয়ার স্কুল থিকা থ্রেড সহ নোটিশ দিতাছে জুন মাস পর্যন্ত বেতন ক্লিয়ার করেন নইলে জরিমানা আছে। ওদিকে আমার অ্যাজমার ট্যাবলেট আর প্রেসারের ট্যাবলেটও শেষ। দুই পাতা ওষুধও কেনা লাগে কিযে করি।
গতমাসে অফিসের কলিগ মালেক ভাইয়ের কাজ থেকে ধার নিছি পাঁচ হাজার টাকা। বেতন পাইয়া দিয়াও দিছি কিন্তু এ মাসে আবার ধার চামু লজ্জাও লাগতাছে।অফিস শেষ কইরা এই কয়টা দিন হাইটাই বাসায় আসি। ঘন্টা খানেক লাগে।
গ্রামে মা'য়ের আথ্রাইটিসের হাটুর ব্যাথায় নামাজ কালাম চেয়ারে বইসা সারতে হয়। কিন্তু টয়লেটে গেলে বাংলা কমোডে আর বসতে পারে না। গত মাসে বলছি - এমাসের মায়না পাইয়াই তোমারে হাই কমোড বসায়া দিমু। মনে হয় এই মাসেও পারমু না। কারন আব্বার গলব্লাডারের অপরেশন এই মাসেই করা লাগবে। ডাক্তার প্রায় পঞ্চাশ হাজারের হিসাব দিছে। টাকার যোগাড় এখনো হয় নাই।
প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে দুই বছর আগে যে লোন নিছিলাম সেই লোন এখনো শোধ হয় নাই। পাঁচটা ইনস্টলমেন্ট বাকি। এডজাস্ট কইরা যে আবার এ্যাপলাই করুম তারও কোনো লাইন পাইতাছিনা ।
ছোট বোনটা বিবাহযোগ্য হইছে আরো তিন চার বছর আগে। তার বিবাহ দেয়া জরুরী। দুই মাস আগে একটা ব্যাংকার পাত্র পাইছিলাম কিন্তু পাত্রের পরিবার থিকা সাফ জানায়া দিছে মেয়ের বাপ ভাইগো ঢাকায় বাড়ি ঘর নাই। সম্বন্ধ ক্যানসেল।
গত ছয় মাস ধরে বাড়িওয়ালার কাছে সব সময় এক মাসের বাসা ভাড়া বকেয়া থাকছেই। এ মাসে তিনি রিকুয়েষ্ট করছে তার ছেলে সাইপ্রাস যাবে। টাকাটা অবশ্যই যেন দিই।
বউ তিন মাস ধইরা ঘ্যান ঘ্যান করতাছে - বাসার ওয়ালটন ফ্রিজটা নষ্ট হয়া গেছে। মাছ-মাংশ, তরি-তরকারি ভালো থাকেনা। ঘড়ঘড় শব্দ করে রাতে ঘুমের ডিষ্টার্ব হয়। বৌয়ের আদেশ -এবার ভাগে কোরবানি দেয়া লাগবে না, একটা নতুন ফ্রিজ কিন্না দাও।
আমি অফিস শেষ করে, লাঞ্চ বক্সটা কাঁধে ঝুলিয়ে মতিঝিল থেকে হাঁটা শুরু করি। প্রেসক্লাবের সামনে এসে ১০ টাকার চিনা বাদাম কিনি। বাদাম খুঁটতে খুঁটতে আবার হাঁটা শুরু করি। হাইকোর্ট, কার্জন হল, দোয়েল চত্বর পেরিয়ে শহীদ মিনারের গাছ তলায় এসে বসি। ঘামে ভেজা শার্টের দুটো বোতাম খুলে বসে বসে ভাবি আবোল-তাবোল হাবিজাবি কত কিছু।
হঠাৎ ১৪-১৫ বছর বয়সী মন্টু মিয়া চায়ের ফ্লাক্স হাতে সামনে এসে বলে "মামা রংচা দিমু এক কাপ? মাত্র ৫ ট্যাকা দিয়েন"
আমি ওয়ান টাইম চায়ের কাপে চুমুক দেই আর ভাবি চায়ের কাপের বাষ্পীয় ধোয়ার সাথে সাথে চিন্তাগুলোও যদি উড়ে যেতো লম্বা লম্বা চাম্বোল গাছের চুড়া আর কৃষ্ণচূড়ার উপর দিয়ে। আনমনে তাকিয়ে তাকিয়ে আরো ভাবি " আহা জীবন তুমি কতোইনা মধুর"
ঢাকা, ১৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
ছবি সুত্রঃ গুগল মামু
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৮