(এক)
ময়না ভাই রাত দুইটার সময় ডাকলেন। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। কাচা ঘুম থেকে উঠেছি তাই বুক ধরফর করছে।
-কি হইছে ময়না ভাই?
-চলেন, ছাদে গিয়া একটা সিগারেট টেনে আসি।
-না, আপনি যান। আমি শুয়ে পড়লাম।
ময়না ভাইয়ের পুরো নাম ময়নাল হক তালুকদার। সবাই তাকে ময়না ভাই বলে ডাকে। আরামবাগের ব্যাচেলর মেসে থাকি আমারা একসাথে । ময়না ভাই বহু বছর ধরে এই মেসের স্থায়ি বর্ডার। উনি মতিঝিলের একটা সরকারি অফিসের কেরানি। বিয়ে-থা করেনি। বয়স চল্লিশের উপরে। ওনার দেশের বাড়ি পিরোজপুর জেলার পারের হাট গ্রামে। আমাদের মাঝেমধ্যে বলতো "চলেন পারেরহাট গিয়ে সাগরের মাছ খেয়ে আসি।"
ময়না ভাই বাউণ্ডুলে স্বভাবের মানুষ। হঠাৎ হঠাৎ করে উধাও হয়ে যেতন। এক সপ্তাহ পর ফিরে আসেন। একবার পাচ-ছয়দিন কোন খবর নাই হঠাৎ রাত তিনটার সময় আমাকে মোবাইলে কল করলেন। আমি ঘুম থেকে জেগে কল রিসিভ করলাম।
-কি ভাই, কি করেন?
-ময়না ভাই, এতো রাতে ফোন দিছেন এইটা জিজ্ঞেস করার জন্য?
- আরে ভাই, মনের সখ পুরন করতে একটা দারুন যায়গায় আছি। শুনবেন?
-বলেন কোথায় আছেন?
-বলেশ্বর নদীতে,
-মানে কি?
-মানে আইসা বলবোনে, রাখলাম।
বলেশ্বর নদীটা কোথায় আর রাত তিনটায় ময়না ভাই সেখানে কি করেন তা কে জানে। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
ময়না ভাই প্রতি বুধবার সারারাত ছাদে বসে থাকে। সেটা জোছনা রাত হোক আর অন্ধকার রাত হোক।
আমাদের মেসে রান্না করে জবেদা বেগম। জামালপুরের মেলান্দহে তার বাড়ি। প্রথম স্বামী মরার পর তার দ্বিতীয় স্বামী ঢাকায় এনেছিলো। তার পর বচ্ছর দুইয়েক পর সেই স্বামী আরেক মহিলাকে বিয়ে করে কামরাঙির চর থাকে।
জবেদা বেগমের বয়স ষাটের উপর। কেউ তাকে নানি বলে ডাকে কেউ খালা। শুধু ময়না ভাই আর আমি তাকে জবেদা বলে ডাকি। জবেদা বেগম মাঝে মাঝে বলেঃ
- কতো লোক আইলো গেলো ময়না ভাই শুধু থাইক্কা গেলো।
দুইদিন আগে চিটাগংয়ে কোর্টের মধ্যে পুলিশের চৌকিতে জঙ্গিরা বোমা হামলা করেছে। তাই ঢাকায় গতরাতে যৌথ বাহিনীর লোকজন জঙ্গি ধরার জন্য ব্যাচেলর মেস গুলোতে অভিযান চালিয়েছে।
ময়না ভাইকে ছাদে একা পেয়ে যৌথবাহিনি ধরে নিয়ে গেছে। সাথে আরো দুইজনকে রুম থেকে ধরে নিয়ে গেছে। রাতে মতিঝিল থানার হাজতে রাখা হবে। যাবার সময় আমাকে কানে কানে বলে গেলো। কালকে থানায় আইসেন কথা আছে। ময়না ভাইয়ের চোখে ভয়-চিন্তা এরকম কোন ভাবলেশহ দেখা গেলো না।
আমি সকালে হাজতে দেখা করতে গেলাম। ডিউটিরত এসআই জনাব মোফাজ্জল হোসেনকে দেখা করার অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন
-যান, মাত্র ৫ মিনিট টাইম। দশটায় সবগুলারে কোর্টে চালান দেওয়া হবে।
- স্যার, রাইতে কোন মারধর করা হয়েছে নাকি?
- আরে না, সামন্য একটু ছ্যাচা দেয়া হয়েছে, আসল ডলাতো রিমান্ডে নিয়া দেয়া হবে।
আমি হাজতের সামনে দাড়িয়ে ডাকলাম-
-ময়না ভাই, ময়না ভাই।
ময়না ভাই আসলেন, বাকি দইজনকেও খুজলাম। তাদের পেলাম না। রাতেই তাদের আত্মীয়রা ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
-ওহ কিশোর ভাই, একটা কাজ করবেন আমার জন্য?
-কি কাজ?
-সাত আট দিন পর আমার আমেনা খালাকে আমার খবরটা দিয়েন। সাথে কাগজ কলম আছে?
-কলম আছে, কাগজতো নাই।
-আচ্ছা কলমটা দেন।
একটু পর সিগারেটের প্যাকেটের ছেড়া একটুকরো কাগজে আমেনা খালার বাসার ঠিকানা লিখে আমার হাতে দিলো। আমি বল্লাম
-আজই খবরটা দিলে কি অসুবিধা?
- নাহ! জেলে যাবার এক্সপেরিমেন্টটা নিয়ে আসি।
(চলবে.......)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪২