যে মেয়েটি মেডিকেল স্কুলে ঢুকার আগে সেক্স অথবা ট্যাক্স কোনটাই বুঝত না। চোখ বড় বড় করে বলত ইয়দাঊট বুকস আই ইউল বি ডাই, নো বুকস দ্যান নো লাইফ। সেই মেয়ে মেডিকেল স্কুলে ঢুকার পর ট্যাক্স বুঝতে শুরু করল। কি করলে কত টাকা ফেরত আসবে, কি করলে কত টাকা ফেরত দিতে হবে, জটিল সব হিসাব কেল্কুলেটারের মত বলে দিত। মেডিকেল স্কুল শেষ করার পর সে তার পঁচিশতম জন্মদিন পালন করতে সমুদ্রে গিয়েছিল। সেখান থেকে সামুদ্রিক বাতাস তার শরীরে লাগিয়ে বাড়িতে ফিরার পর সে ট্যাক্স অথবা বই বিষয়ক সবকিছু ভুলে গেল, সবকিছু ভুলে সে শুধু সেক্স বুঝতে লাগলো।
অন্যদিকে যে মেয়েটির এক সময় বৃষ্টিতে এলার্জি ছিল। বৃষ্টি দেখলেই গায়ে জ্বর চলে আসত, গায়ে কম্বল মুড়ে সারা বৃষ্টি-বেলা শুয়ে থাকত। আর মুখ বাঁকা করে বলত -শালার বৃষ্টি সারা দিনটা মাটি করে দিল! সে মেয়েটি একবার বন্ধুদের সাথে পিকনিকে পাহাড় দেখতে গিয়েছিল। সেখান থেকে সে তার শরীরে পাহাড়ি বাতাস লাগিয়ে বাড়িতে ফিরার পর সে বৃষ্টি দেখলেই রোমান্টিক হয়ে উঠতে লাগলো। অবসরে গুনগুণ করে গায় আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, প্রেম দিব মেপে। যখন বৃষ্টি আসত তখন জানালা খুলে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি-জল দুই গালে মাখায়। সে মেয়েটির কাছে বৃষ্টি এখন খুব হট লাগে, বৃষ্টিতে সে সেক্সের গন্ধ পায়।
ফারিয়া, তৃতীয় আরেকটা মেয়ে, একটু পাগলাটে, ক্ষ্যাপা স্বভাবের। মস্তবড় কিছু একটা করে ফেলার প্যাশন নিয়ে যে নাটক,সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখে। সে ঠিক করেছে জীবনের শেষ স্ক্রিপ্টটা কোন কোরিয়ান বা ফেঞ্চ পরিচালকের জন্য তার বিশেষ অনুরোধে লিখবে। ইদানিং উপরে উল্লেখিত মেয়ে দুটিকে প্যারালাল রেখে একটা স্ক্রিপ্ট লিখবে ভাবছে। সেই ভাবনা থেকেই এই দুটি মেয়ে্র কাছাকছি পৌছার চেষ্টা করছে। সে খুব আশাবাদী খুব শীঘ্রই সে তাদের ভিতরে ঢুকে যাবে। পুরা স্ক্রিপ্টে দুটি পরিপৃর্ণ চরিত্র থাকবে। দুটি বিপরীতমুখী চরিত্র ধীরেধীরে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। শেষ দৃশ্যে দেখা যাবে দুজনের একি পথ, পাশাপাশি ছায়া অতঃপর মুখামুখী। তবে একদম শেষ দৃশ্যের মুখামুখী ব্যাপারটা নিয়ে ফারিয়া খুবভালভাবটেনশনে আছে। কারণ মুখামুখি ব্যাপার আমাদের সমাজে সবাই সহজভাবে মেনে নিতে পারেনা। ফারিয়া খুব ভাল করে বোঝতে পারছে এই মুখীমুখী দূশ্যের জন্য হয়ত সিনেমার দুই মেয়েকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে, সাথে তাকেও দাঁড়াতে হতে পারে।
এত উৎকন্ঠার পরেও এক সময় ফারিয়া তার স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ করবে। সেই স্ক্রিপ্টে সিনেমা বানানো শেষ হবে। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী সিনেমায় শেষ দৃশ্যে দুটি মেয়ের মুখামুখী হওয়ার ব্যাপারটাও থাকবে। সিনেমাটা দেখার পর এক দল মানুষ ক্ষ্যাপে সিনেমার পোষ্টার ছিঁড়ে তারা রাস্তায় নেমে জ্বালাও পুড়াও করতে পারে। আরেক দল মানুষ ভেবে বসবে ফারিয়া এবং সিনেমা টিম তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। কিন্তু তাদের কেউই বুঝবে না যে এটা একটা সিনেমা, স্বল্পদৈর্ঘ্য দুইটা সমান্তরাল জীবনের প্যারালাল অবস্হান নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। এবং এখানে স্ক্রিপ্ট রাইটারের কোন অস্তিস্ব নেই, এমনকি নেই কোন প্রতিচ্ছবি। আছে শুধু দুটি মেয়ে মুখামুখী হওয়ার গল্প,তাদের মুখিমুখী হওয়ার পরের প্রতিকুলতার গল্প এবং সেই বদলে যাওয়া মেয়েদের ভিতরে ঢুকে পড়া তৃতীয় আরেকটা মেয়ের সমাজ বদলে দেয়ার প্যাশন!