ঠোঁটের ইশারা দেখেই রিমু বুঝে নিত আমার নেক্সট বাক্য কি হবে। মুচকি হেসে বলত আমি শিউর যে - তোমার নেক্সট বাক্য চৌদ্দটি শব্দের ভিতরে থাকবে, দুইটি ইংরেজি, তিনটি আঞ্চলিক আর বাকিগুলো শুদ্ধ বাংলা। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও চৌদ্দ শব্দের উপরে যেতে পারতাম না। ও, রিমু কে সেটাও তো আপনাদের বলা হয়নি। রিমু হল এক যাদুবতীর নাম। যার কাছে যাদু শিখতে গিয়ে জেনেছিলাম প্রেম আসলে যাদু ছাড়া আর কিছু নয়! যদিও অবশেষে আমার প্রেম বা যাদু কোনটাই ভাল করে শেখা হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ যখন স্টেজ থেকে নেমে আসছিলাম, তখন দর্শকরা আমার দিকে তাকিয়ে বিদ্রূপ করে বলছিল জাহাজ চালানো দূরে থাক আদার ব্যবসাও তোমাকে দিয়ে হবে না। সত্যি-সত্যি জাহাজ চালানো বা আদার ব্যবসা এর কোনটাই এই জীবনে চেষ্টা করা হয়নি, বা কখনও হবেও না।
রিমু সবসময় আমার থেকে দুই হাত দূরে বসতো। দুই হাত দূরে বসে ঘ্রাণ শুকে সে সহজেই বলে দিতে পারত আমার ঘরের ফুলদানী কতদিন ধরে খালি পড়ে আছে। সেটা সে কেমন করে বলে দিত সেটা আমার কাছে বিরাট একটা রহস্য ছিল। সেই রহস্য উদঘাটন করতে গিয়েই কিন্তু আমি রিমু'কে প্রথম ছুঁয়েছিলাম। রহস্য উদঘাটনে ব্যার্থ হলেও প্রাপ্তিটা ছিল রিমু'র প্রথম স্পর্শ। আমি জানিনা কেন আমি আমার ঘরের ফুলদানী খালি রাখতাম, কোনদিন জানার চেষ্টাও করিনি। ফুলের অভাব ছিল সেরকম কিছু না, ফুলের বাগান বা ফুলের দোকান সবসময়ই আমার কাছাকাছি ছিল। আসলে আমি সবসময় রিমু'র কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিলাম, কাছাকাছি বলতে তার থেকে এক হাত দূরে অথবা আরও কাছাকাছি। বন্ধুরা বলত দুই হাত দূরে থেকে তো আর প্রেম হয়না! কিন্তু বন্ধুদের কথা ভুল প্রমাণ করে আমাদের প্রেম হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বলতে আমার আর রিমু'র। সে এক মজার ঘটনা। এক মধ্য-দুপুরে আমরা বসেছিলাম পাশাপাশি, পাশাপাশি বলতে দুই হাত দূরে, হঠাৎ করে একটা সাপ আমাদের সামনে দিয়ে ফতফত করে ছুটে গেল। রিমু আমাকে ঝাপটে ধরে বলল আসও আমরা দুজন একসাথে বিষ পান করি। আমি সাপকে ধন্যবাদ দিলাম।
আমাদের প্রেমের প্রথম বর্ষপূর্তির পরের বছরে একশ নব্বই বার আমার শরীর গরম করে জ্বর এলো। একশ নব্বই বার সে আমার কপালে হাত রাখলো। সে বলতে রিমু। আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝাতে চাইলাম শরীর গরম হওয়া মানেই ভাইরাসজনিত জ্বর নয়। সে মুখ শুকনা করে বলতে লাগলো - দেখ এই জ্বর একদিন আমার সতিন হবে। কত বিচিত্র সে জ্যামিতিক হিসাব, একশ নব্বই, হ্যাঁ একশ নব্বই বার-ই প্রেম নেমেছিল আমাদের শরীরের গভীরতায়। অবশেষে জ্বর আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আর রিমু আমায় বলে গেল - একটা মেহেদি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে সেখানে আমাকে পারফর্ম করতে হবে। উৎসব শেষ করে আমি ফিরবো।
এরপর জ্বর আমার জীবনে বারবার ফিরে এসেছে কিন্তু সাথে রিমু আসেনি। জ্বর কিভাবে চিরস্হায়ীভাবে আমার মাঝে থাকতে পারে তার প্রেসক্রিপশন আনার জন্য আমি বেশ কয়েকবার আমার বন্ধু ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। জ্বর চিরস্হায়ীভাবে আমার মাঝে রাখতে চাই শুনে ডাক্তার বন্ধু প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে সে বলে উঠে - এখনও দেখি রিমু-জ্বর তোর ঘাড় থেকে নামেনি। তার কথা শুনে আমি ভাবতে থাকি রিমু কি আসলে জ্বর ছিল, যে আমার ঘাড়ে চেপে বসেছিল? রিমু এখন এক পরদেশি বাবু'র বিছানা সঙ্গী। শুনেছি পুরা একদিন উড়ে উড়ে সে পরদেশির কাছে গিয়ে পৌছেছে। তাদের দুজনের মাঝখানের দূরত্ব নিয়ে আমি মাঝেমাঝে ভাবি - দুই হাত, এক হাত নাকি কোন দূরত্বই থাকেনা। তখন মনে পড়ে যায় আমাদের তো একসাথে বিষ পান করার কথা ছিল। মনে পড়ে যায় এক মধ্যদুপুরে একটা সাপ ফতফত করে আমাদের সামনে চলে গিয়েছিল ।
বুকপকেটে বিষের শিশি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যে যুবক, সে অপেক্ষা করে তার শরীর গরম করে জ্বর আসুক। তখন দু'জনে মিলে আয়োজন করে বিষপান করা যাবে। দুজন মানে আমি আর শমিতা।