somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্প: সতর্কতা যেখানে একমাত্র অবলম্বন

১৪ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকম্প কি?

ভূমিকম্প বলতে পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনকে বোঝায়।
হঠাৎ বুঝতে পারলেন আপনার ঘরের কোনো জিনিস নড়ছে, দেয়ালের ঘড়ি, টাঙানো ছবিগুলো নড়ছে, আপনিও ঝাঁকুনি অনুভব করছেন, তখন বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে।
ভূমিকম্প বা ভূকম্পনঃ ভূ মানে পৃথিবী আর কম্পন হলো কাঁপা; সোজাভাবে ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর কেঁপে ওঠা। তার মানে পৃথিবী যখন কাঁপে তখন আমরা তাকে ভূমিকম্প বলি।
পৃথিবীতে বছরে গড়ে কত ভূমিকম্প হয়, শুনলে কপালে উঠতে পারে চোখ। বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। তবে এগুলোর অধিকাংশই মৃদু যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু।
আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে গভীর ভূমিকম্প বলে।

ভূমিকম্পের কারণ
ছোটবেলায় গল্প শুনতাম, পৃথিবীটা একটা বড় ষাঁড়ের শিংয়ের মাথায়। ষাঁড়টা যখন এক শিং থেকে অন্য শিংয়ে পৃথিবীটা নিয়ে যায় তখন সবকিছু কেঁপে ওঠে। আর ভাবতাম, এজন্যই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের কারণ এটা নয় বটে, তবে পৃথিবীর গভীরে ঠিকই একটা পরিবর্তন হয়।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে…
১. ভূপৃষ্ঠজনিত
২. আগ্নেয়গিরিজনিত
৩. শিলাচ্যুতিজনিত
পরিমাপ
সিসমোগ্রাফ আবিষ্কারের আগে মানুষ শুধু বলতে পারত ভূমিকম্প হয়ে গেছে। কিন্তু কোন মাত্রায় হলো, বলা সম্ভব ছিল না। আধুনিক সিসমোগ্রাফের বয়স প্রায় ১৫০ বছর। ভূমিকম্প মাপা হয় দুইভাবে- তীব্রতা এবং প্রচণ্ডতা বা ব্যাপকতা। ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয় রিখটার স্কেলে। স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা।
মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলেই এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা
৫ - ৫.৯৯ মাঝারি
৬ - ৬.৯৯ তীব্র
৭ - ৭.৯৯ ভয়াবহ
৮ - এর ওপর অত্যন্ত ভয়াবহ

ভূমিকম্প হলে করণীয়

১। ভূমিকম্পের সময় অনেকে টেবিল, চেয়ার, বিছানা ইত্যাদির নীচে আশ্রয় নেন- যা অবশ্যই পরিহার করা উচিত। কিন্ত কিছুদিন আগেও এটা ভূমিকম্পের সময় বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি ছিল, যা ‘Duck and Cover’ পদ্ধতি নামে পরিচিত। পৃথিবীর বড় বড় ভূমিকম্পে উদ্ধারকর্মী হিসেবে যারা কাজ করেছেন তারা বলছেন- ভূমিকম্পের সময় ‘Duck and Cover’ পদ্ধতি যারা অনুসরণ করেছে, তাদের বেশিরভাগকেই তারা নিহত অবস্থায় পেয়েছে। ডাগ কপ নামক একজন অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মী ১৯৮৫ সালে মেক্সিকো সিটির ভূমিকম্পে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। প্রথম যে দালানটিতে তিনি ঢোকেন, সেটি ছিল একটি স্কুল। ভূমিকম্পের সময় স্কুলের বাচ্চাদের বলা হয়েছিল Desk-এর নীচে আশ্রয় নেবার জন্য। তারা প্রতিটি শিশুকেই Desk-এর নীচে গুঁড়িয়ে যাওয়া অবস্থায় পান। এক্ষেত্রে ভূমিকম্পের সময় যেটা হয়- দালান ভেঙ্গে পড়ার সময় Ceiling-এর সম্পূর্ণ ভার এসব Object-এর ওপর পড়ে, তাতে এর নীচে আশ্রয়গ্রহণকারীর বেঁচে থাকার কোন উপায় থাকে না। তাই, ভূমিকম্পের সময় Desk, টেবিল ইত্যাদি কোন কিছুর নীচে ঢুকে আশ্রয় নেয়া ঠিক না।
২। উদ্ধার কর্মীরা আরো লক্ষ্য করেছেন- দালান ভেঙ্গে পড়ার সময় Ceiling যখন কোন Object-এর ওপর পড়ে একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গা বা Void-এর সৃষ্টি হয়। একে তারা বলছেন ‘Safety Zone’ বা ‘Triangle Of Life’। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোন আসবাব বা বড় কোন Object যেটা কম Compress করবে- এরকম কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ছোট্ট একটু Void-ই যথেষ্ট। বিপন্ন অবস্থায় কুকুর, বিড়াল এবং শিশুদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল কুন্ডলি করে গুটিশুটি হয়ে যাওয়া। ভূমিকম্পের সময় মানুষেরও এটা অনুসরণ করা উচিত। তাহলে বিভিন্ন অবজেক্টের পাশে গুটিশুটি করে আশ্রয় নিলে এগুলো ভূমিকম্পের সময় যে ছোট Void-এর সৃষ্টি করবে তাতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৩। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ভুমিকম্প হলে কোন হুড়াহুড়ি করার দরকার নেই। গড়িয়ে মেঝেতে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। তার মানে আবার বিছানার নীচে যেন ঢুকবেন না, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন। তেমনি ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেয়া এসবও করবেন না। সোজা কোন সোফা বা ২নং Point-এ যেভাবে বলেছি সেভাবে ঘরের মধ্যেই কোন Object-এর পাশে আশ্রয় নিন।
৪। অনেককে বলতে শুনেছি ভূমিকম্পের সময় দরজার নিচে আশ্রয় নিলে নাকি বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে! দরজার নিচে বা পাশে থাকলে নির্ঘাত মারা পড়বেন। যদি দরজার নিচে থাকেন তবে Ceiling-এর নিচে চাপা পড়ে মারা পড়বেন আর যদি পাশে থাকেন দরজা আপনাকে দু’ভাগ করে কেটে ভেঙ্গে পড়বে।
৫। ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। সিঁড়ির ‘Moment Of Frequency’ দালানের চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় দালান ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।
৬। চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। দালানের ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার ‘Escape Route’ বা ‘উদ্ধার পাবার রাস্তা’ Block হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি থাকলে Block কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
৭। ভূমিকম্পের সময় যদি গাড়িতে থাকেন, তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পাশে বসে বা শুয়ে পড়ুন। গাড়ির ভেতরে থাকলে রাস্তার ওপরের বিভিন্নObject গাড়ির ওপর পড়ে গাড়িকে চূর্ণ করার ফলে মারা যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৮। যারা পত্রিকা অফিসে কাজ করেন তাদের জন্য সুসংবাদ। উদ্ধারকর্মী যাদের পত্রিকা অফিসে উদ্ধার কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তারা বলেছেন- পত্রিকা অফিস বা যেসব অফিসে বড় বড় কাগজের স্তুপ আছে, সেগুলো কখনো Compact করে না। কাজেই এসব কাগজের স্তুপের পাশে তারা বড় বড় Void খুঁজে পেয়েছেন। যারা এসব অফিসে কাজ করেন, তারা নিশ্চিন্তে কাগজের স্তুপের পাশে আশ্রয় নিন।
৯। সব বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘After Shock’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেষ পা কাটতে হতে পারে।
১০। প্রথম ভূমিকম্পের পর Utility Line-গুলো (গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন Damage দেখলে Main Switch বন্ধ করে দিন।
আগেই যা করণীয়
১। পরিবারের সবার সাথে বসে এ ধরণের জরুরী অবস্থায় কি করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে- মোট কথা আপনার পরিবারের Emergency Plan কি সেটা ঠিক করে সব সদস্যদের জানিয়ে রাখুন।
২। বড় বড় এবং লম্বা Furniture-গুলোকে যেমন- শেলফ ইত্যাদি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন যেন কম্পনের সময় গায়ের উপর পড়ে না যায়। আর ভারী জিনিষগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখুন।
৩। বিছানার পাশে সবসময় টর্চলাইট, ব্যাটারী এবং জুতো রাখুন।

ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করণীয়
১। ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য আগেই সাথে রুমাল বা তোয়ালে বা চাদরের ব্যবস্থা করে রাখুন।
২। ম্যাচ জ্বালাবেন না। দালান ধ্বসে পড়লে গ্যাস Lick হয়ে থাকতে পারে।
৩। চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ Option হিসেবে বিবেচনা করুন। কারণ, চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতিকারক ধুলাবালি ঢুকে যেতে পারে। পাইপে বা দেয়ালে বাড়ি দিয়ে বা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন। তবে ভাল হয় সাথে যদি একটা রেফারির বাঁশি থাকে, তার Preparation নিয়ে রাখুন আগেই।
আর কথায় তো আছেই- “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো”
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×