somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবু বিহঙ্গ--- ওরে বিহঙ্গ মোর?!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি, আমার বাবার বিশাল বইয়ের লাইব্রেরীর প্রায় প্রতিটি বইএর সাথে আমি সময় পার করেছি। আমি এই বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছি । একা একা। প্রিতিটি পদক্ষেপে আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশিলতা তৈরীর আপ্রান চেষ্টা ছিল আমার বাবা মার।

তারা পেরেছে আমাকে সেই ভাবে তৈরী করতে। ‘পারবনা’ শব্দটা আমি আমার অভিধান থেকে বাদ দিয়েছিলাম। ভয় কি জিনিস আমি চিনি না শুধু ঐ একটি ছাড়া , তাই আমি ছিলাম শুধু ছেলেদের ব্যাপারে কঠোর।

হ্যাঁ এক কথায় আমি অসামান্য হয়েই বড় হচ্ছিলাম। আমার বাবা মা আমার স্মৃতি থেকে সেই দুঃস্বপ্ন মুছে ফেলার জন্যই আমাকে এভাবে বড় করেছে। আমি যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম,আমার বাবা তখন উঠে পরে লাগলেন আমার বিয়ে দিতে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছেলের সাথে। তার নাম রিয়াজ। সে তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। এই ছেলের পরিবার ও আমাদের পরিবারের সম্পর্ক বেশ মধুর। এই মধুর সম্পর্ককে আরও গভীর করবার জন্যই এই ব্যবস্থা।

বিয়ে!! আমার চমকে উঠার পালা। বিয়ে মানেই তো সামাজিক ভাবে স্বীকৃত যৌন সম্পর্ক। আমার অনুভুতি কাউকে বোঝাতে পারি না। মাকে বললে- মা শুধু হাসে, কত কি বুঝায়, তার স্বপ্নের কথা বলে। আমি শুধু ভেসে যাই এক ভয়ার্ত অন্ধকারের দিকে। বাবা তার অনন্য সুন্দর ক্ষমতা দিয়ে আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করে আমার সম্মতি আদায় করে। দাদুকে বললাম-- দাদু আমি বিয়ে করব না এখন, আমার সামনে অনেক পথ আমি সেই পথ পাড়ি দেব।
বাবা দাদুকে বুঝালেন--- আমি যে মানসিক অবস্থানে আছি, আরও একটু বয়স হলে আমাকে আর তারা বিয়ে দিতে পারবে না।

নিরুপায় আমি রিয়াজের সাথে দেখা করি। তাকে খুব করে বুঝালাম আমি বিয়ে করব না। সে আমাকে বলল উপযুক্ত কারন পেলে সে অবশ্যই আমাকে বিয়ে করবে না।

কিন্তু উপযুক্ত কারনটা কি, তাই তো তাকে বলতে পারলাম না। তার সামনে বসে নিজেকে উন্মুক্ত করতে পারলাম না, আমার যুক্তি সে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল।

আমার বয়স যখন তিন বছর চার মাস সাত দিন সেই দিনের কথা আমি বলছি। সেই দিন থেকে শুরু আমার দুঃস্বপ্ন দেখা । আজ আমি সাতাশ বছর পার করছি এই দুঃস্বপ্ন থেকে আমার মুক্তি হলো না। মাঝে মাঝে বাবার কাছে ছুটে যেয়ে বলি ---তোমার এত ক্ষমতা আমাকে একটু মুক্তি দাও এই দুঃস্বপ্ন থেকে। তখন ডাক্তার আসে আমাকে দিনের পর দিন ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে, আমি আবারও সেই স্বপ্ন দেখি।

আমাদের বাসার কাজের লোক বাবার সাথে খেলবার জন্য এসেছিল। সে বড় হয়েও আমাদের বাসায় ছিল । বাবার সাথে শহরে চলে এসেছে। আমার সাথে সারাদিন খেলত।
সেদিন সকালে আমি তার সাথে খেলছি। --হটাৎ সে আমার প্যান্ট খুলে দেয়, আমাকে চেপে ধরে, প্রচন্ড ব্যাথায় আমি চিৎকার করতে চাইলে সে আমার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে। এরপর যখন আমি চোখ মেলি, তখন আমি মার কোলে হাসপাতালে।


বাসায় এসে প্রচন্ড অস্থিরতার একটা চিঠি লিখলাম রিয়াজ কে। আমার প্রথম প্রেম পত্র। তাকে লিখলাম আমার সব কথা যা জানে আমার পরিচিত জনদের মধ্যে মাত্র ছয় জন। আজ রিয়াজ জানল, এই নিয়ে সাত জন। কুরিয়ার সার্ভিসে পোস্ট করলাম সেই চিঠি। পরদিন দুপুরে রিয়াজ আমাকে ফোন করে বলল “আমি টি এস সির সামনে অপেক্ষা করছি তুমি আস, আর যদি না আস তবে যতদিন আসবে না আমি এখানেই বসে থাকব।“

একেই বোধ হয় বলে প্রেমে পরা । আমার ভেতরের সব সংকোচ সব ভয় কোথায় যেন উড়ে চলে গেল? এই প্রথম মনে হল, কেন আমি জানি না কোন জামাটা পরলে আমাকে বেশি মানায়? একটু লিপস্টিক কি দেব ঠোঁঠে? কেন আমি চুল বাঁধতে পারি না?

আমি জানি না ও কি বলবে আমাকে? তবু মনে হচ্ছে ও যেন ওর হৃদয় থেকে আমাকে ডেকেছে। আমি গেলাম তার সামনে, দেখি ফুটপাথে বসে চা খাচ্ছে। আমাকে দেখে পিচ্চিকে ডেকে বলল,- আর এক কাপ চা দিতে।
আমি আর ও সেদিন প্রচন্ড রোদ মাথায় করে সারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর হেঁটে বেড়িয়েছি। সন্ধ্যায় রিক্সায় করে বাসায় ফেরার সময় আমার হাত ধরে বলেছে ---তুমি বোকা মেয়ে, কোন বুনো শুয়োর যদি কাউকে আক্রমন করে তবে আমি বুনো শুয়োরকেই আঘাত করব । তুমিতো ছিলে শিশু কেন মনে রেখেছ তা, ভুলে যাও। জীবনটা খুব সুন্দর, তাই সেখানে কাঁটা থাকে। সেই কাঁটা কাউকে কাউকে আঘাত করে তাই বলে কি সবাই কাঁটার আঘাতের ক্ষত নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তোমার সুযোগ আছে সেই ক্ষত সারাবার। তা তুমি সারিয়ে তোল। এস জীবনকে সুন্দর করি।
আমি শুধু ওর কথা শুনেছি আর কেঁদেছি। এভাবে আমি কখনও কাঁদিনি।

এরপর তারা সুখে জীবন কাটাতে শুরু করিল। গল্পের কাহিনী এমন হলেই বোধ হয় ভালো হতো। কিন্তু গল্পটা যে শেষ হয়েও হয় না শেষ ।
আমি মা হতে চাই, বিবাহিত জীবনের দশ বছর পরও সেই দুঃস্বপ্ন আমাকে নতুন করে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এই পৃথিবীর কোন ডাক্তার কোন ক্ষমতাবান ব্যাক্তি পারবেনা আমাকে মা বানাতে। এমনকি টেষ্টটিউব বেবী নেবার মত ক্ষমতা আমার নেই। সবাই বলে দিয়েছে তোমার জীবনের সেই দুর্ঘটনা তোমার মা হবার সমস্ত ক্ষমতা হরন করেছে।

আমি চাই একটি শিশু আমার গর্ভে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠুক আমি তাকে পলে পলে ক্ষনে ক্ষনে আনুভব করব। বলতে পারেন আমার অপরাধটা কী? কিসের শাস্তি আমি পাচ্ছি।





একটি শিশু তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে চিৎকার করে কাঁদছে। আর আমার কানে এসে বাজছে “তুমি আমার মা হবে?? তুমি আমার মা হবে?” মা হব না আবার-- মা হবার জন্য এই বিশ্বসংসার আমি তন্নতন্ন করে ঘুরেছি। এই শরীরটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছি।
আমি তোমারই মা হব।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:০০
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×