ইয়াজিদিদের প্রধান তীর্থ স্থান লালেশ মন্দির
ইয়াজিদি নাম শুনলেই অনেকের মনে হতে পারে এরা ইসলামের পঞ্চম খলিফা মুয়াবিয়ার ছেলে ইয়াজিদের বংশধর (ইয়াজিদ নিজেও ষষ্ঠ খলিফা ছিলেন)। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইয়াজিদিদের সঙ্গে ইয়াজিদিদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরেও শুধুমাত্র ইয়াজিদের নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণেই সুন্নি ও শিয়া মুসলিমদের কাছে ঘৃণিত হয়ে আসছে এই সম্প্রদায়টি। কেননা উমাইয়া বংশের খলিফা ইয়াজিদের প্রতি সুন্নী ও শিয়া উভয় অংশের প্রচণ্ড ঘৃণা রয়েছে।
লালেশ মন্দিরে ইয়াজিদিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইদ আল জামায় অংশ নিয়েছে অনুসারীরা
এদিকে ইয়াজিদি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত এই সম্প্রদায়টি নিজেদের পরিচয় দেয় ‘দাসিন’ হিসেবে। ইয়াজিদি শব্দটি এসেছে ইজদ থেকে যার অর্থ দেবদূত। ইয়াজিদিদের প্রতি ঘৃণার অন্য একটি কারণ হলো তাদের রহস্যময় ধর্মীয় বিশ্বাস। গবেষকদের মতে সম্প্রদায়টির ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে খ্রিষ্টান, ইসলাম, ইহুদি, জরথ্রুস্টবাদের মত ধর্মগুলো থেকে। ইয়াজিদিদের বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা পুরো বিশ্বকে সৃষ্টি করার পর সাতটি পবিত্র আত্মার হাতে এর দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান আত্মাটির নাম হল মালিক তাউস। ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্ম অনুসারে মালেক তাউস আসলে শয়তানের অপর নাম। সে কারণে ইয়াজিদিদেরকে অনেক মুসলিম ও খ্রিস্টান শয়তানের উপাসক মনে করে। তবে কুর্দিশ ভাষাতাত্ত্বিক জামেল নেবেজের মতে তাউস শব্দটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ হল সৃষ্টিকর্তা।
এদিকে বর্তমানে সুন্নি বিদ্রোহীদের কোপানলে পড়লেও সুন্নি শাসক সাদ্দামের সুদৃষ্টিতেই ছিল ইয়াজিদিরা। তার শাসনামলে এ সম্প্রদায়টিকে আরবদেরই একটি অংশ হিসেবে মনে করা হত। এসময় তাদেরকে কুর্দিদের বিপক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়। তবে কুর্দিস্তান আধা-সায়ত্বশাসিত অঞ্চল হয়ে যাওয়ার পর থেকেই উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ কুর্দি সশস্ত্র সংগঠন পেসমার্গা’র হয়ে সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। ২০০৩ সালের পর থেকেই কুর্দিরা ইয়াজিদিদের কুর্দিদের একটি অংশ হিসেবে মেনে নিলেও সব সময় বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেনি।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে লালেশ মন্দিরের দেয়ালে চুমু খাচ্ছেন এক ইয়াজিদি নারী
জাতিগত দিক থেকে উত্তর ইরাকের এই সম্প্রদায়টি হল কুর্দিদের একটি সম্প্রদায়। ধারণা করা হয় খ্রিষ্টের জন্মের দু’হাজার বছর আগে থেকে এই সম্প্রদায়টির অস্তিত্ব রয়েছে। তবে সারা বিশ্বে এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে পুরো বিশ্বে সম্প্রদায়টির এক লাখের বেশি মানুষ রয়েছে। তবে সম্প্রদায়টির নিজেদের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয় তাদের সংখ্যা আট লাখের মত। ওয়েবসাইটটির দাবি অনুযায়ী কেবল জার্মানিতেই সম্প্রদায়টির ৩০ হাজার শরণার্থী রয়েছে।
লালেশ মন্দিরের বাইরে চলছে ইয়াজিদিদের ঐতিহ্যবাহী নাচ
সম্প্রদায়টির মধ্যে নারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী প্রচলিত রয়েছে। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে নারী হত্যা ও সম্প্রদায়ের বাইরে নারীদের বিয়ের ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি রয়েছে সম্প্রদায়টির মধ্যে। কিছু দিন আগে সুন্নি একটি ছেলেকে বিয়ে করার কারণে সম্প্রদায়টির এক নারীকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। গণমাধ্যমে ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর সম্প্রদায়টিতে নারীদের অপমানজনক অবস্থানের কথা ফাঁস হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২