
একদিন, নগ্ন পায়ে ঘাসের বুকে উদ্দেশ্যহীন হাঁটা, অন্যমনষ্ক। আর তুমি এলে নিঃশব্দে, পায়ে তোমার সূর্যালোক। থমকে দাঁড়ালাম, ইতস্তত, কচি ঘাসের বিগলিত সবুজ, থকথকে, সান্দ্র। চোরাবালি, চোরাঘাস, সূর্যতাপে দগ্ধ। ডানা ছড়িয়ে, স্নিগ্ধ সৌরভে আরও কাছে এলে তুমি। ধীরেধীরে। উত্তাপ ছড়ালে শরীর জুড়ে, পোড়াতে চাইলে সহসা। অতঃপর তাকালে ডাকিনী-মোহিনী, জমকালো সূক্ষ্ম দৃষ্টি তোমার। সরু চোখে খুঁজে বেড়ালে পোড়া দাগ, দগদগে ফোস্কা, নখ দিয়ে ছুঁতে চাইলে অগ্নিক্ষত। তোমার আত্মবিশ্বাস, তুমি পুড়িয়েছো কিছু।
সংশয়াত্মায় চলে যাচ্ছিলে যখন, আমি দেখছিলাম টকটকে লাল সূর্য, অস্ত যাচ্ছিলো তোমার হৃদয়ে, অন্যথায় হতে পারে সেটা প্রত্যূষের নিশান্ত আভা। ওর ফাঁক গলে ক্লান্ত পাখিরা ফিরে যাচ্ছিলো নীড়ে, পাতাবাহারের ঝোপে নিরুদ্বেগ এলিয়ে পড়ছিলো কোন একাকী ঘাসফড়িং, ঝরণার ওপাশ হতে লাফিয়েছিলো কোন সুশান্ত স্যামন। পৃথিবীর অতলে বইছিলো নতজানু তরলধাতু, মেরুর মায়ায় চুম্বকায়িত অরোরা; আর তাই নির্ভুল গতিপথে, শান্ত মনে, ছোট্ট খোপে ফিরতে পেরেছিলো এক স্বর্গীয় সাদা পায়রা, বুকে তার রক্তক্ষত। তুমি দ্রোণাচার্যের অজ্ঞাত শিষ্য। ব্যাধের মতন নির্বিকার, ধনুকের মতন বাঁকানো। দূর হতে তীর ছুঁড়েছো, ফলায় গরল-হলাহল। ঘাড় ঘুরিয়ে যখন বলে গেলে, 'প্রিয়তম, অহং তোমার আঁধার', তোমার পায়ের কাছে, ঘাসের ওখানটায় তখন এক গহবর-কুহর, আর তুমি পেলব পায়ে, আলতো চাপে, পুঁতে গেলে তোমার দীর্ঘশ্বাসের বীজ, আর কিছুটা অভিশাপ। চাপা দিলে অতীত, মৃত্তিকার আর্দ্রতায়; সিক্ত করলে চোখের জলে, শুষ্ক ফোঁটায়।
চলে গেলে যখন, আঁধার ছেয়ে এসেছে। হাতড়ে হাতড়ে এলাম গর্তের কাছে, শরীরে কাঁদামাটি। মুখ ঝুঁকিয়ে দেখে নিলাম অতল ওয়ার্মহোল। ছোট্ট আলেফ। এক লহমায় দেখে নিলাম সময়ের আদি, সময়ের অন্ত, টানা সুতো। সময়টা শুধু তোমার। আমি নিস্পৃহ নিষ্কাম দেবতা দর্শক।
তুমি যদি শুধু আজ থাকতে দেবী, দেখতে অহংবোধের সেই মহীরুহ। ওর ডালপালায় কর্কশ পাখিদের কলকাকলি, নির্দয় চোখের পেঁচা বসে গিলছে নৃশংস। জটাজুট ঝুরি নেমে এসেছে সেই গাছের; জন্ম দিয়েছে নতুন অহং।