somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১৪

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (৯)

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: শুভঙ্করের ফাঁকি: (২)

পুনরাবৃত্তি: সংবিধানের প্রস্তাবনায় ও দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে মোট ১৮টি ধারায় মূলনীতিগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এই মূলনীতিগুলিতে এত অসঙ্গতি ও ফাঁকি বিদ্যমান যে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেও শেষ করা যাবে না। আমি বিদগ্ধ পাঠকদের শুধু মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য খুব সংক্ষেপে আলোকপাত করবো।

জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে

সমাজতন্ত্র (Socialism):

সমাজতন্ত্র (Socialism) হলো একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মতবাদ। এই মতবাদে সমাজের সকলের জন্য সমান অধিকার এবং ন্যায়সঙ্গত সম্পদ বণ্টনের উপর জোর দেয়। সমাজতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো উৎপাদনের উপকরণ যেমন ভূমি, শ্রম, পুঁজি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে সমগ্র সমাজ বা রাষ্ট্রের মালিকানা থাকা। এর লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক অসমতা, শোষণ, এবং দারিদ্র্য দূর করা।

সমাজতন্ত্রের আরো একটি লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের জন্য মৌলিক চাহিদাগুলি নিশ্চিত করা, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, এবং খাদ্য, যাতে কেউ আর্থিক অসাম্যের কারণে বঞ্চিত না হয়। অর্থাৎ এমন একটি সমাজ তৈরি করা যেখানে সম্পদের বণ্টন ন্যায্য এবং সবাই সমান সুযোগ পায়।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত থাকে। ফলে নতুন উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তামূলক কার্যকলাপে বাধার সৃষ্টি হয়। এতে উৎপাদনশীলতা সীমিত হয়ে পরে এবং ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে আমলাতন্ত্র এবং দুর্নীতির সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এই ব্যবস্থায় সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার বৃদ্ধি পায়। এতে ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ বেড়ে যায়।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং মালিকানা সীমাবদ্ধ হয়ে পরে। এতে মানুষের সৃজনশীলতা এবং কর্মদক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে। এটি ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর না করে সরকারী নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং মন্দার দিকে নিয়ে যায়।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদনশীলতার অভাবে প্রয়োজনীয় সম্পদের সংকট দেখা দিতে পারে, যার ফলে জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সমাজতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই রয়েছে, এবং এর কার্যকারিতা নির্ভর করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর। এটি সাম্যবাদী সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে, কিন্তু এর সাথে অনেক বাস্তব চ্যালেঞ্জও থাকে।

আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে কোন মতবাদের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়া এই লেখার উদ্দেশ নয়। সংবিধানের অসঙ্গতি এবং স্ববিরোধী বিষয়গুলি আলোচনা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য।

সমাজতন্ত্র (Socialism) মতাদর্শকে সংবিধানের মূলনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার একই সাথে এমন কিছু মতাদর্শ এবং নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে যে যা সমাজতন্ত্র (Socialism) মতাদর্শের পরিপন্থী।

সংবিধানের ১৩ ধারায় মালিকানার নীতি ঘোষণা করে বলা হয়েছে, "উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বন্টনপ্রণালীসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন জনগণ এবং এই উদ্দেশ্যে মালিকানা-ব্যবস্থা নিম্নরূপ হইবে:

(ক) রাষ্ট্রীয় মালিকানা, অর্থাৎ অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারী খাত সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের মালিকানা;

(খ) সমবায়ী মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে সমবায়সমূহের সদস্যদের পক্ষে সমবায়সমূহের মালিকানা; এবং

(গ) ব্যক্তিগত মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তির মালিকানা৷

কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে দেশের সব বড় বড় শিল্প, ব্যবসা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিগত খাতে, যা সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের পরিপন্থী এবং সংবিধানে বর্ণিত অন্যান্য বিধানেরও পরিপন্থী। বাংলাদেশের উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বন্টনপ্রণালীসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক জনগণের হাতে নেই, বরং এইগুলি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে অলিগার্ক, মাফিয়া চক্র এবং অসৎ ব্যক্তিবর্গ।

ভূমি, শ্রম, পুঁজি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর রাষ্ট্রের মালিকানা পরিবর্তে সংবিধান ও আইনের দ্বারা ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের পরিপন্থী।

সবগুলি মতাদর্শ আলোচনা করার পর দেখা যাবে কি ভাবে পরস্পর বিরোধী মতবাদগুলিকে একই সাথে একটি সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সমাজতন্ত্রের বিপরীতে গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের বিপরীতে জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি স্ববিরোধীতা ও বৈপরীত্য বিদ্যমান।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১৩

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উৎসর্গের উৎসর্গ

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৪৩

লেখার বিপরীতে যাকে রেখেছি
সে ছায়া তুমি,
পিয়াসী বালক বালক ভাবনায়
শুভ্র মন আমার,
গানের সুরে দিন কাটে,
আক্রোশে ভেঙে যায় উম্মাদ নীরবতা,
নিঃশব্দে, গড়গড়িয়ে।
প্রতিটি শব্দের গঠন তোমাকে ঘিরে,
তোমার প্রতিচ্ছবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

৩১০৮ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার বিচার চাই ??

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৫৪

বিভিন্ন সুত্র থেকে বেরিয়ে এসেছে , এই বার এই আন্দোলনে ৩১০৮ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে , আন্দোলনকারিরা। আন্দোলনকারিরা ৪০০ থানাতে আক্রমন করে এবং প্রতি থানাতে গড়ে প্রায় ৮ জন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট কথন......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:৪৬

সামহোয়্যারইন ব্লগে আমার জুলভার্ন আইডি'র বয়স ১৫ বছর ৬ মাস। আমার প্রথম আইডি বাবুয়া' লিখেছি ২ বছর ৫ মাস। সব মিলিয়ে সামহোয়্যারইন ব্লগে যুক্ত আছি প্রায় ১৮ বছর। এই ১৮... ...বাকিটুকু পড়ুন

৩১০৮ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা; ভাকু-রা মাঠে নেমে পরেছে!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৫

হারুনের ডান্ডা ছাপ পড়া এক অসভ্যের প্রতি। প্রতিবাদ।

লিখেছেন আমি সাজিদ, ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০

এই ব্লগে সবাই জানে আমি স্বৈরাচার বিরোধী ছিলাম। ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে কথাও লিখেছি। টানা সপ্তাহে যখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, যারা বাইরে আছি লিখে গেছি। স্বৈরাচার পতন হল, মানলাম। নতুন আঙ্গিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×