somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-৬

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (১)

খুব ছোট একটি অসঙ্গতি দিয়ে শুরু হয়েছে যাতে পাঠকরা বুঝতে পারেন কত হেলাফেলা করে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।

নোট: সংবিধানটি প্রথমে ইংরেজিতে প্রণয়ন করা হয়, পরে সেটা বাংলায় অনুবাদ করা হয়। উভয় ভাষার সংবিধানকে নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু সেই সাথে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। তাই এই লেখা বাংলাতে হলেও ব্রাকেটে ইংরেজি শব্দ বা ব্যাখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ (article) না ধারা (section)?

যেকোন আইনকে প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা করার জন্য ধারাবাহিক ভাবে সাজাতে হয়, যেমন অনুচ্ছেদ (article), ধারা (section), দফা (clause) ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সংবিধানে ১ থেকে ১৫৩ টি ক্রমিক সংখ্যা আছে। এই ক্রমিক সংখ্যাগুলি অনুচ্ছেদ (article), না কি, ধারা (section) হিসাবে পরিচিত হবে?

সংবিধানের শুরুতেই প্রস্তাবনার (Preamble) ঠিক নিচে সূচি (Contents) দেয়া হয়েছে। এই সূচির বাম দিকে ১ থেকে ১৫৩ ক্রমিক সংখ্যার ঠিক উপরে এই ক্রমিক সংখ্যাগুলিকে ধারাসমূহ (Sections) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ভিতরে সর্বত্র এই সংখ্যাগুলিকে অনুচ্ছেদ (article) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই পর্যন্ত পড়ে অনেকেই একটা কুতর্ক শুরু করে দিতে পারেন যে সূচি (Contents) সংবিধানের অংশ না। তাই সূচিতে কি লেখা আছে তাতে কিছু যায় আসে না। আপাতত এই কুতর্কে না যেয়ে এটা বলা যায় যে সরকারি ভাবে প্রকাশিত সংবিধানের একটি নির্ভরযোগ্য দলিলে ক্রমিক নম্বরগুলির পরিচয় ধারা (section) না লিখে অনুচ্ছেদ (article) লেখা যেত। তাহলে আপাতত এই জায়গায় কোন অসঙ্গতি থাকতো না।

আইনের পরিভাষায়, এমন কি আভিধানিক অর্থেও অনুচ্ছেদ (article) এবং ধারা (section) এক জিনিস নয়।

আইনের পরিভাষায় অনুচ্ছেদ (article) হচ্ছে সম্পূর্ণ আইনটির খণ্ড ভাগ বা একই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি সেট। আর ধারা (section) হচ্ছে একটি অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত বিধান সমূহ। অর্থাৎ কতগুলি ধারার সমন্বয়ে একটি অনুচ্ছেদ। যেমন কতগুলি বাক্যের সমন্বয়ে একটি অনুচ্ছেদ।

আবার চুক্তির ক্ষেত্রে পক্ষগুলির প্রতিটি অধিকার, দায়িত্ব এবং বাধ্যবাধকতাকে অনুচ্ছেদ (article) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

যেমন, সংবিধানে লেখা হয়েছে, "প্রথম ভাগ প্রজাতন্ত্র" তারপর অনুচ্ছেদ (article) ১, ২, ৩ ইত্যাদি। এই ধারাক্রম সম্পূর্ণ ভুল। এটা হওয়া উচিত ছিল "প্রথম অনুচ্ছেদ প্রজাতন্ত্র" তারপর ধারা ১, ২, ৩ ইত্যাদি।

সংবিধানের সর্বত্র এই ধারাগুলিকে ভুলক্রমে অনুচ্ছেদ (article) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন ধারার জায়গায় অনুচ্ছেদ লিখাতে আইনগত কি অসুবিধা হয়েছে? আইনগত অসুবিধার চাইতে এই অসঙ্গতি দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে সংবিধান প্রণয়নের সময় লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স, লিগ্যাল থিউরি, লিগ্যাল ফিলসফি ইত্যাদির দিকে মনোযোগ দেয়া হয় নাই। সংবিধান ও আইন লেখার সময় জুরিসপ্রুডেন্সের কতগুলি নীতি অনুসরণ করতে হয়। শুধু আইন বা সংবিধান না, যেকোন লিগ্যাল ডকুমেন্ট তৈরির সময় নির্দিষ্ট ফরমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। যেমন আর্জি বা জবাব লেখার একটা ফরমেন্ট আছে। এই ফরমেন্ট এমনই সুনির্দিষ্ট যে কার্যবিধি আইনে ফরমেন্টের নমুনা দেয়া আছে। অর্থাৎ কেউ আর্জি বা জবাব লেখার সময় নিজের ইচ্ছা অনুসারে লিখলে হবে না, আইনে নির্ধারিত ফরমেট অনুসারে লিখতে হবে। তাই এই ধরণের ছোট অসঙ্গতিগুলি বিবেচনায় রাখলে সংবিধানের বড় বড় অসঙ্গতিগুলি নিয়ে আলোচনা করার সময় এর অন্তর্নিহিত কারণগুলি ধরতে সুবিধা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×