somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সামাজিক মূল্যবোধ

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দুইটি রাষ্ট্র বিভক্ত হয়েছিল মূলত ধর্মের ভিত্তিতে। মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান এবং হিন্দুদের জন্য ভারত। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে আমাদের পূর্ববঙ্গঁকে (বাংলাদেশ) কেন তৎকালীন নেতারা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করলেন। শুধুই কি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে ? এই দেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, পোষাক, চালচলন ইত্যাদি কিছুই কি তাদের দৃষ্টি গোছর হয়নি। হয়তো হয়েছিল কিংবা হয়নি। বিষয়টি যাই হোক না কেন তৎকালীন নেতাদের যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধুমাত্র কয়েকজন নেতার ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আজও বাংলাদেশের হিন্দু , মুসলমানেরা তিলে তিলে তাদের (নেতাদের) ভুলের মাসুল দিতে হচেছ। এই দুইটি সম্প্রদায়ই এখনও পর্যন্ত তাদের জাতিগত সমস্যার সমাধান খুঁজে পায় নাই।পুর্ববঙ্গ , পশ্চিমবঙ্গ আসাম ও এিপুরা নিয়ে বাঙালিদের জন্য আলাদা একটি আবাসভূমি(বাংলাদেশ) হলে কি হতো অনুমান করে বলাটা হয়তো ঠিক হবে না। কিন্তু পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করাতে সে ভয়াবহ অবস্থার তৈরী হয়েছে তাতো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ৭১ - এর মত একটি মার্মান্তিক যুদ্ধ সংগঠিত হয়ে গেল শুধু মাত্র -৪৭ এর একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারনে যাই হোক উপরোক্ত বিষয়টি আলোচনার একটিই কারন তা হচ্ছে এখনও যে আমাদের দেশে সে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করছে কিংবা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এবং দলগুলোর নেতারা সে সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গুলো নিচ্ছে সেই সব সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব সে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভোগ করতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমি খুবই উৎকন্ঠিত যে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সে ধারা প্রভাহিত হচ্ছে তাকে কখনও সুস্থধারার রাজনীতি বলা যায় না। তা হলে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কি তৈরী করছি ? শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সে অধঃপতন তা কি কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সরকার এর দায় এড়িয়ে যেতে পারবে ? ৭৫-পরবর্তী সরকার গুলো কি এই শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধঃপতনের দায়ভার নিবেনা? নিতে হবে জাতির কাছে তাদের একদিন জবাব দিতেই হবে যে, কেন তারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা একটি দেশে কেন তারা মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আদর্শকে অনুসরন করেন নাই কিংবা মুক্তিযুদ্ধে ও আর্দশে লালিত বঙ্গঁবন্ধুর শিক্ষা ও সংস্কৃতির নীতি এড়িয়ে নিজেদের মত করে পাকিস্তানী কায়দায় কিংবা সম্প্রদায়িকতার লেভাসে নিয়ম ও নীতি তৈরী করেছিল।
যাই হোক এখনও কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সসুম্মত রেখে রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে ? যদি না হয়ে থাকে তা হলে আমাদের গতি পথ কোন দিকে যাচ্ছে তা ভাবার সময় এসে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই দেশের মানুষের নৈতিক মুল্যবোধ তৈরী হয়েছে কি না কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা ধারন করছি কিনা সেই বিষয়গুলোকে একটু নিরীক্ষামূলক ভাবে পর্যবেক্ষনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।
এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা কি ?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মুল কথা হচ্ছে, স্বাধীনতাকে সসুম্মত ও টিকিয়ে রাখার সে আদর্শ কিংবা সংকল্প। ১৯৭১ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা লাভ করতে পারি নাই। সাংস্কৃতিক ভাবে প্রতি নিয়ত হোচট খাচ্ছি। দেশের অধিকাংশ সাধারন মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষার করুন পরিনতি, তাই স্বাধীনতার যে উপকরন গুলো রয়েছে প্রত্যেকটি উপকরন বিশেষত একজন মানুষ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে যে স¦কীয় মূল্যবোধের পরিচয় বহন করার ইচ্ছা পোষন করে তা সম্পন্ন করার নামই স্বাধীনতা । সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এখনও আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। সুতারাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা এখনও আমাদের কাছে মূখ্য বিষয় হয়েই আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সে মূলমন্ত্র গুলো জড়িয়ে আছে তা হচ্ছে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্র। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি-এই চারটি মূলনীতি আমরা কিভাবে তৈরী করলাম। কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার/মুক্তিযুদ্ধের সাথে এই মূলনীতি গুলোই বা কেন আসবে। একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাই যে-৪৭ পরবর্তী সময়ে যে সব আন্দোলন সংগ্রাম গুলো হয়েছিলো যেমন-৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। ৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৯-এর ১১ দফা তথা পূর্ববাংলার স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে গণঅভুত্থ্যান। এর পর ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন। এই স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে আন্দোলন সংগ্রামগুলো সংগঠিত হয়েছিল এই সবগুলোর পিছনে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অবিশ্বরনীয়। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো ছিল এই সময়টুকুতে, প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামের নেপত্যে কিংবা প্রত্যক্ষে থেকে বঙ্গঁবন্ধু এই সব আন্দোলন সংগ্রাম গুলোতে নেতৃত্ব্ দিয়ে সফল ভাবে বাঙালি জাতিকে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্তম্ভে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন। আর এই স্তম্ভের মিশ্রনে তিনি চার মুলনীতির মিশ্রন গঠিয়ে বাঙালির জন্য স্বাধীন স্বার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই বঙ্গঁবন্ধুর চেয়ে আর কেউ বেশী করে বুঝতে পারবে না যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা কি রকম অথবা কি হতে পারে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়টুকুতে বঙ্গঁবন্ধু বাংলাদেশকে বাঙালির উপযোগী করে এবং বিগত দিনগুলোর আন্দোলন সংগ্রামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের নির্যাস থেকে এই দেশের মহান সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন এবং এই সংবিধানে আমাদের ধর্মীয় অবস্থান কি হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় কি হবে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি হবে, আমাদের জাতীয়তা কি হবে সবকিছুরই স্পষ্ট ধারনা তিনি দিয়েছিলেন। এইসব ধারনাগুলোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধারনা, এই সব ধারনাগুলো আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধারনা, এই সব ধারনাগুলোই আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারনা,এই ধারনাগুলোই আমাদের গণতন্ত্রের, আমাদের সমাজতন্ত্রের ধারনা। আর এই সব কিছু নিয়েই সম্পূর্ণ একটি ধারনা সৃষ্টি হল তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আর আমার মুল আলোচ্য বিষয় হল এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর দাঁড়িয়ে বর্তমান সময়ে এসে সাধারণ মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ কতটুকু তা নির্নয় করা।
এখন দেখা যাক সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়টা কি ?
মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই সামাজিক জীব। প্রকৃতিগতভাবে সমাজ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই এই সমাজের ভালমন্দ, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, আদর্শ, চিন্তা সব কিছুর সাথে মানুষের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই সব কিছুকে দিয়েই মানুষকে সমাজে বসবাস করতে হয়। তাই সমাজের মধ্যে বিদ্যমান এই সব উপাদান গুলো সামষ্টিক ভাবে মেনে চলাই মানুষের জন্য সামাজিক মুল্যবোধ।
সাধারণত উপরোক্ত সংজ্ঞাটি সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে। যাই হোক না কেন মানুষ এই সব সামাজিক মুল্যবোধের উপাদানগুলোকে ধারন করতে পারলে তাকে মানবিয় গুনাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ হিসাবে সমাজে তাকে মূল্যায়ন করে থাকে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ এই মূল্যবোধের অধিকারী হওয়া।
এই মূল্যবোধ এমনি এমনি আসে নাই। সামাজিক শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি যদি যথাযথভাবে গ্রহন ও রপ্ত করা হয় তবে মূল্যবোধের বিষয়টা এমনিতে চলে আসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটাও আমাদের একটি মূল্যবোধের উপাদান। যে ব্যক্তির এই মূল্যবোধের ঘাটতি আছে তাকে সামাজিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি বলা যায় না। এখন দেখতে হবে এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা আমাদের সাধারণ মানুষ কিভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। এখানে যদি এই চেতনার মূল্যায়ন করার মনমানসিকতার সৃষ্টি না হয় কিংবা আগ্রহ না থাকে তাহলে কিন্তু চেতনার মূল্যবোধে বিস্তর গড়মিল পাওয়া যাবে। সুতারাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাধারণ মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ বুঝতে গেলে কয়েকটি স্তরে এই বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে।
প্রথমতঃ বর্তমান রাজনীতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতটুকু কাজ করছে। এখানে আমি নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলবো না। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা করবো।
বাংলাদেশের রাজনীতির দুইটি পক্ষ দৃশ্যমান। একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আর অপরটি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। এই পক্ষ-বিপক্ষ নিয়েও তর্ক-বিতর্ক আছে। আমি সে বির্তকে যাব না। আমি শুধু আলাদা আলাদা ভাবে পক্ষ ও বিপক্ষের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বর্ণনা করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনা সমৃদ্ধ যে রাজনৈতিক দলগুলো জনগনের জন্য রাজনীতি করছে তাদের দলীয় মেনুফেষ্টুর সাথে রাজনৈতিক কার্যক্রম কতটুকু মিল আছে তা একটু দেখা যাক।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনায় যে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক করে আসছে তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি দলের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সফলতা, মুক্তিযুদ্ধের জয়ের যে সুবিধা ভাগা ভাগি নিয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল দীর্ঘ দিন থেকে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব নিয়েও বির্তক সৃষ্টি এবং মত বিরোধের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনার রাজনীতি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে একধরনের ইসতেহার এবং নির্বাচনের পরে অন্যরকম ইসতেহার সঠিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়নি। দলীয় সংকীর্ণতা, ব্যক্তিগত স্বার্থ-সংকীর্ণতা তাদের মন মানসিকতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হাড়িয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে নিজ নিজ প্লটফর্ম থেকে মুক্তিযুদ্ধের নিজেদের মত করে বিচার বিশ্লেষন করছে। পক্ষান্তরে -৩০ লক্ষ্য শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এবং স্বাধীনতার যে সুফল সাধারণ মানুষ পাওয়ার দরকার ছিল সেই বিষয়বস্তু থেকে এই রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দূরে অবস্থান করছে। তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যস্ত। দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির যে লক্ষ্য এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে নিহিত ছিল তা তারা ভুলে গেছে। সেই কারনে সাধারণ মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধটুকু খুবই ক্ষীন ও গুরুত্বহীন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পারিক সংকীর্ণতার প্রভাব সাধারণ মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের উপর গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাইতো আমরা অনেক মুক্তিযুদ্ধাকে দেখতে পাই নিজে মুক্তিযুদ্ধার পরিচয় দিতে দিধাবোধ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেও সনদ নিতে অনিহা প্রকাশ সহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থেকে নিজকে সরিয়ে রেখেছে। এটা অভিমান নয় প্রতিবাদ। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারায় বাংলাদেশ চলছে না। স¦াধীনতার পরবর্তী সময়টুকুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতসব নৈতিবাচক ঘটনা ঘটে গেছে যে যার কারনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সাধারণ মানুষের সামাজিক মূল্যবোধটুকু তেমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আরো একটি বৃহত্তর কারন হচ্ছে-যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে কিংবা পরবর্তী প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান তারা প্রত্যেকে দেখলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলই মুক্তিযুদ্ধের যে চারটি মুলনীতি কার্যত অনুসরন করছে না। সমসামায়িক বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে তারা তাদেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে দেখা গেছে। তাহলে কিভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের একটি সার্থক সামাজিক মূল্যবোধ তৈরী হবে ?।
স্বাধীনতার বিপক্ষের কথাতো বাদই দিলাম। তারাতো চায়ই না বাংলাদেশের মানুষের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ কোন মূল্যবোধ কিংবা সামাজিক চেতনা তৈরী হউক। তাতো আমরা লক্ষ করেছি বঙ্গঁবন্ধু হত্যাকান্ডের মধ্যে দিযে সে রাজনৈতিক ধারা বাংলাদেশে প্রভাহিত হয়েছে বিগত কয়েক দশক ধরে বিশেষ করে মেজর জিয়া থেকে জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে পাকিস্তানী আদলে যেভাবে দেশ পরিচালিত হয়েছে এবং সঠিক মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে; বির্তর্কিত করা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষনা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলোকেও । ৯০ পরবর্তী রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর কিছুটা আশার আলোর স¦প্ন দেখেছিলাম আমরা । কিন্তু না আবারও খালেদা জিয়ার শাসন এলো। ৯৬ সালে এসে বঙ্গঁবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার দল ক্ষমতায় আসলো। এটি একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল, দেশের সাধারণ মানুষের অনেক আশা-আখাংকা ছিল এই দলটির প্রতি। পক্ষান্তরে আমরা লক্ষ্য করলাম কিছু বিপরীত প্রতিচ্ছবি। হেফাজতের সাথে সমঝোতা, প্রগতিশীল পাঠ্যপুস্তককে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার অর্ন্তভুক্তি করাও একদিকে জঙ্গীঁবাদের দমননীতি পালন অন্যদিকে জঙ্গীঁবাদের আখরা মাদ্রাসাকে জাতীয়করনের সুবিধা ও সকল ধর্মীয় ও ধর্মযুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে অবাধে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়া। এই সব কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সাধারণ মানুষের চিন্তা চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যতটুকু সামাজিক মূল্যবোধের সূষ্টি হওয়া দরকার ছিল তা বাধাগ্রস্থ হল। তাছাড়া চেতনা বিষয়টিও এর সহজ কোন বিষয় নয়। যে কোন বিষয়ের উপর একটি চেতনা জন্মানো কিংবা প্রভাহিত ধারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করার একটা ধারাবাহিকতা আছে। মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ এই চেতনাকে প্রভাবিত করে। দুই রকম দৃষ্টিকোণ থেকে এই চেতনাকে বিচার করা যায়। একটি আর্দশিক অন্যটি ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে অর্থাৎ ( চার মূলনীতি) ধারন করে ক্রমাগত আমাদের মনতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক আচরনগুলো ঠিক একইভাবে এগিয়ে যেতে পারে তবেই কোন বিষয়বস্তুর উপর নির্মিত চেতনার লক্ষ্য পুরন করতে পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টিও ঠিক সেই ধরনের ।আমাদের চেতনায় গলদ আছে বিধায় আমরা সঠিক লক্ষ্যের দিকে গড়াতে পারছি না। বার বার দিক ভ্রান্ত হচ্ছি। শুধুমাত্র গানে, কবিতায়, গল্পের ও উপন্যাসের কিংবা নাটক ও সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ক্রন্দন করে মৌলিক কোন লাভ নেই। এই চেতনার মূল্যবোধটুকু প্রয়োগিক পদ্ধতিতে চর্চাবোধের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে বুঝাতে হবে যে কোনটি সঠিক। যতদিন পর্যন্ত না সাধারণ মানুষের মননে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা দাগ না কাটবে ততদিন পর্যন্ত এর সামাজিক মূল্যবোধের কোন অগ্রগতি হবে না। এই ক্ষেত্রে বঙ্গঁবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন চর্চা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত করতে পারে। কারণ বঙ্গঁবন্ধুর রাষ্ট্রগঠনের যে মুল উপাদান গুলো ছিলো সবগুলেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বা চেতনার নির্যাস। তাই বঙ্গঁবন্ধুর দর্শন ব্যতিত এই মুক্তিযুদ্ধকে চেনা যাবে না। চেতনাতো দূরের কথা।
পরিশেষে বলবো যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যদি আমাদের সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারি তবেই সঠিক ভাবে প্রগতিশীল বিশুদ্ধ সামাজিক মূল্যবোধের প্রকাশগুলো আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। এর জন্য আমাদেরও প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। চুপচাপ বসে বসে ধ্বংসের রূপ দেখলে চলবে না। ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, বৃদ্ধ, শ্রমিক সকলে ঐক্যবন্ধ হয়ে সুন্দর একটি সোনার বাংলা তৈরী করতে হবে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের কাছে এই সংবাদ পৌঁছে দিতে হবে যে সুন্দর একটি সোনার বাংলার জন্য চাই সঠিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সামাজিক মূল্যায়ন। তাহলেই নির্মান করা যাবে আমার সোনার বাংলা। যে সোনার বাংলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ। যে সোনার বাংলা বঙ্গঁবন্ধুর আর্দশে সমৃদ্ধ। যে সোনার বাংলা অসাম্প্রদায়িকতা; সাম্যতা, বৈষম্যহীন সমাজ তৈরীর ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক : আবুল কালাম আজাদ
-----০০০-----

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×