সাংবাদিকদের হয়েছেটা কি? প্যারিস হামলা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলা হলেও এর পেছনে কেন সাংবাদিকরা চোখ দেয়নি? কেন সত্য ঘটনা প্রকাশ করা হয়নি। কারা আসলে আইএস? তাদের পেছনে কারা? সাংবাদিকরা কেন পর্দার আড়ালের কাহিনী তুলে আনতে পারেন না? আজ সোমবার উল্লিখিত প্রশ্নগুলোরেখে একটি ব্লগ লিখেছেন আমেরিকান নাগরিক পার্থ ব্যানার্জী। ওয়ানফাইনালব্লগ নামক একটি ওয়েবসাইটে প্যারিসের সাম্প্রতিক হামলা, এর প্রেক্ষাপট ও সাংবাদিকতা নিয়ে তথ্যবহুল ছিল ওই লেখাটি।
ব্লগে ব্যানার্জী লিখেছেন, সম্প্রতি মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন আইএসের প্রসংশা করেন এবং ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটনপোস্ট, সিএনএন, এনপিআর, এনবিসিসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলো এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেনি। কিন্তু ছবিগুলো সহজে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
এমনকি আজ, প্যারিস হামলার পর গণমাধ্যমগুলো সংবাদ পরিবেশন করেনি যেওবামা সরকার এবং রিপাবলিকান কংগ্রেসরা আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। আইএসের প্রশংসা করা হলেও, তাদের সমর্থন করা হলেও ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের ‘প্রশংসার’ ব্যাপারে দায় নিচ্ছে না। মার্কিন এবং পশ্চিমা ‘উদার’ সংবাদমাধ্যমগুলো এ ক্ষেত্রে সাধু সেজে বলছে ‘তারা বিষয়টি জানে না।’
খুব বেশিদিন হয়নি, পুলিৎজারপ্রাপ্ত নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জুডিথ মিলার ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসাযজ্ঞ চালিয়েছিল এমন একটি অস্ত্রের কাহিনী তৈরী করেছিল। যে অস্ত্রের সাহায্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহজে সফলতা পেয়েছিল। খরবটি বৈশ্বিকভাবে ভীত ছাপা অক্ষরের পত্রিকাগুলো সপ্তাহব্যাপী প্রথম পাতায় ছেপেছিল। যে প্রতিবেদনে সকল প্রকার সাংবাদিকতার মান আরোপের স্পর্ধাও করা হয়েছিল। অথচ, সেখানে বৈশ্বিকভাবে নিন্দিত আহমেদ সালাবি’র সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সংবাদটিতে বুশ, ডিক চেনি, ডোনাল্ড রামসফেল্ডকে ইরাকে গণহত্যা শুরুর জন্য সমর্থন করা হয়েছিল।
তিনি লিখেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস কখনোই বিরক্ত হয়নি এটা বলতে যে, সালাবী ছিল সিআইএ’র কেনা এজেন্ট। তবে এটা সত্য যে, গত এক সপ্তাহ আগে তারা সেটা প্রকাশ করেছে সালাবীর মৃত্যুর পর।
উল্লেখ্য, ইরাকে ২০০৩ সালে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার ক্ষেত্রে যিনি সবচেয়ে বেশি সমর্থন যুগিয়েছিলেন তিনি ইরাকি রাজনীতিক আহমেদ সালাবি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের শাসনামল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে তথ্য দিতেন সালাবি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরাক আক্রমণের অন্যতম উৎসাহদাতা বলা হয় তাকে।
পার্থ লিখেছেন, এবার আমাদের ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনের দিকে আলোকপাত করা দরকার। যে নির্বাচন সারা বিশ্বের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটনপোস্ট, সিএনএন, এনবিসি এবং এ ধরনের শক্তিশালী সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই উল্লেখ করেনি যে, হিলারী ক্লিনটনের প্রতি সমর্থন রয়েছে (১) মোসান্ত, জিএমও করপোরেশন, যিনি ভারতের বিপুল পরিমাণ কৃষকের আত্মহত্যার জন্য দায়ী; (২) গোল্ডম্যান স্যাচ, ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার জন্য যিনি একজন অপরাধীর তালিকায় রয়েছেন; (৩) ওয়ালমার্ট, যে প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকার উৎপাদনশীল কর্মক্ষেত্র কমানোর জন্য দায়ী এবং (৪) প্রাইভেট প্রিজন করপোরেশন, যে প্রতিষ্ঠানটি কৃষাঙ্গ ও অভিবাসীদের জেলে ঢুকিয়ে ব্যাপক মুনাফা করে। আর অভিশপ্ত সাংবাদিকতার কারণে এ বিষয়গুলো উঠে আসে না বলে পার্থ মনে করেন।
তিনি লিখেছেন, আমি নোয়াম চমস্কী’র একজন ছাত্র। কিন্তু আমি জানিনা তিনি কখনো ‘অভিশপ্ত সাংবাদিকতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন কি-না। আমি এটা ব্যবহার করে আসছি এবং আমি আমার রাজনীতিকভাবে সচেতন ও সাহসী বন্ধুদের বড় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি মাথা উঁচু করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে বলেছি। এতে কেবল এ যাবতকালের হিংস্রতাঅহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অন্যদের থেকে চুরি যাওয়া সময় ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে, ছলচাতুরি থেকে রক্ষা করবে। বর্তমান বৈশ্বিক সন্ত্রাস, আমেরিকা ও আইএস উভয়কেই নিজেদের রাস্তা খুঁজে নিতে বাধ্য করছে এবং এই ব্যাপক ছলচাতুরি ও ভণ্ডামি মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করছে। আমারা কি তাদের এই সংঘাতের সঙ্গে যাব?
এদিকে, সোমবার কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো আইএসের উত্থানের পেছনে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। কিউবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত কাস্ত্রোর লেখা এক প্রবন্ধের বরাত দিয়ে রাশিয়া টুডেসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ সংবাদ প্রকাশ করেছে।
কাস্ত্রো তার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন ষড়যন্ত্র করে আইএস গঠন করেছে। যে দলটি এখন ইরাক এবং সিরিয়ার অনেক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।’ আইএস গঠনের এই পুরো প্রক্রিয়াকে জার্মানির এসএস ট্রুপের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘ন্যাটোর নেতৃত্বও হিটলারের মতোই আধিপত্যবাদী। তাদের আবস্থানও অ্যাডলফ হিটলারের সাম্রাজ্যের লোভের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’
অপরদিকে, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহম্মদ আইএস ও অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টির জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন।
সোমবার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় একটি প্রেস কনফারেন্সে বক্তৃতার সময় তিনি বলেন, ‘আরব বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাদের জমি কেড়ে নেয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। তারা শুধু তাদের মতো করে জবাব দিচ্ছে এবং আমরা একে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করছি। কিন্তু মনে রাখবে তুমি যখন জনগণের ওপর বোমা ফেলবে সেটাও সন্ত্রাসবাদ।’
প্রেস কনফারেন্সে মাহাথির দাবি করেন, ইসরাইল প্রতিষ্ঠার আগে বিশ্বে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বলে কিছু ছিল না।
Source : সময়ের কন্ঠস্বর
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৬