somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিউটিফুল ব্রিটিশ কলাম্বিয়া

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“বিউটিফুল ব্রিটিশ কলাম্বিয়া” গাড়ীর নাম্বার প্লেটের উপরের অংশে স্পষ্ট অক্ষরে লিখা। রাস্তাঘাট অনেকটা আমেরিকার সাদৃশ্য তবে মূল সমস্যা স্পীডিং। জিপিএস এ দেখাচ্ছে মাইল হিসেবে কিন্তু রাস্তায় লিখা স্পীড লিমিট “সাধারন যানবাহন ৯০ কি. মি.” ! তবে উপায় একটা আছে বটে! আসে পাশের গাড়ী ফলো করা এবং তাদের সমান গতিতে কিংবা কিছুটা ধীর গতিতে চলা। বিশেষ করে যে সব গাড়ীর নাম্বার প্লেটে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া লিখা।
মহাসড়কের দুপাশে বিশাল খামার আর জমিতে মেশানো কম্পোস্ট সারের উৎকট গন্ধ। কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করলাম মাথায় পাগড়ি পরা অনেক পাঞ্জাবি (শিখ) জমিতে কাজ করছে। আশেপাশে বেশ কিছু শিখ মন্দিরও চোখে পড়লো।

আমেরিকা-কানাডা বর্ডার অতিক্রম করে আরো আধাঘণ্টা ড্রাইভ করার পর দূর থেকে দেখা মিললো পৃথিবীর অন্যতম বসবাস উপযোগী মেগাসিটি “ভ্যাঙ্কুভার”, দেখতে অনেকটা প্রতিবেশী শহর সিয়াটলের মতো। সাগরের মোহনায় গড়ে উঠা ভ্যাঙ্কুভার একাধিক দৃষ্টি নন্দন সাস্পেনশান ব্রিজ দিয়ে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠা মসৃণ মহাসড়ক মাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চললাম।



ভ্যাঙ্কুভার পশ্চিম কানাডার সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ সিটি। চাইনিজ ও পাঞ্জাবী (শিখ) সম্প্রদায়ের আধিক্য বেশ চোখে পড়ার মতো। ডাউনটাউনের আশেপাশে গড়ে উঠা আকাশচুম্বী কণ্ডোমেনিয়ামে শহরের অধিকাংশ মানুষের আবাসস্থল। ২০১০ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের হোস্ট ছিলো ভ্যাঙ্কুভার। ব্যাবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন খাত নগরীর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। গ্রীষ্ম কালীন সময়ে ভ্যাঙ্কুভার টু আলাস্কা নৌ বিহারেরও ব্যাবস্থা আছে।

আপাতত আশেপাশের কোথাও ফাস্ট ফুডের দোকানে বসে ইন্টারনেট সুবিধা পেতে হবে অতঃপর দেশী হালাল রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খোঁজার পালা। মাত্র পনের মিনিটের মধ্যেই সব কিছুর সমাধান মিললো। দেশীর কায়দায় ভুঁড়ি ভোজন শেষে থাকার জন্য বেছে নিলাম ভ্যাঙ্কুভারের পাশেই ২০ কিলোমিটার দূরে আরেক শহর “সারে", শুনেছি এই শহরেই অধিকাংশ উপমহাদেশীয় ও মুসলিম ক্যমুনিটির আবাসস্থল। অতএব, দেশী খাবার দোকান বা জুমা পড়ার জন্য মসজিদ খুঁজে বের করতে সমস্যা হবে না।

পরদিন শুক্রবার জুমা পড়তে রওনা হলাম ব্রিটিশ কলাম্বিয়া মুসলিম এসোসিয়েশান পরিচালিত স্থানীয় একটি মসজিদে। বৃহদাকৃতির মসজিদ, চারপাশে বিশাল বাগান, আসন্ন রমাজান নিয়ে ইমামের উপমহাদেশীয় ধাঁচের খুৎবা ইত্যাদি। তবে মসজিদ থেকে বের হতেই ঘটলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মসজিদের দরজায় এক মাহিলা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে সাহায্য প্রার্থনা করছে। তাকে সাহায্য করতেই পেছন থেকে একজন দেশীয় মুরুব্বী কিছুটা দুরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন “আপনার ওই মহিলাকে সাহায্যে করা উচিৎ হয়নি, আমাদের ইমাম ওকে সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে অমুসলিম!”
জবাবে আমি বললাম আপনাদের ইমাম আর কি কি বলেছেন?? উনাকে গিয়ে বলবেন দুনিয়াতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে। এইসব ছোটখাট ব্যপারে এতো বেশি মাথা ঘামালে তো চলবে না! কিছুক্ষনপর দেখলাম লম্বা দাঁড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ ছুটে এসে ওই মহিলার হাতের প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নিয়ে হারাম হারাম বলে চিৎকার শুরু করলো!!



ক্যাপিলানো সাস্পেনশান ব্রিজঃ
ছোটবেলায় আমার বয়সী অনেকের অন্যতম প্রিয় টিভি সিরিজ ছিলো ম্যাকাইভার “MacGyver”, সেই ম্যাকাইভারের অধিকাংশ সিজন (৩-৬) মোট ৭ সিজন। নির্মিত হয় ভ্যাঙ্কুভারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। রিচার্ড ড্যান এন্ডারসনের দেওয়া সেই সব লোমহর্ষক দৃশ্যের অন্যতম স্পট হলো এই ক্যাপিলানো সাস্পেনশান ব্রিজ! বাঞ্জি জাম্পিং এর জন্য বেশ উপযুক্ত স্থান বলা যায়।
ভ্যাঙ্কুভারের উত্তরে ক্যাপিলানো ব্রিজ নির্মাণ করা হয় ১৮৮৯ সালে। এর দৈঘ্য ৪৬০ মিটার এবং উচ্চতা ২৩০ মিটার। ব্রিজ পেরিয়ে অপর প্রান্তে গেলেই দেখা মিলবে ট্রি হাউজ ও ১৩০০ বছর বয়সী পাইন ট্রি’র। রোমাঞ্চপ্রিয়দের জন্য রয়েছে ক্লীফ ভিউর সুযোগ। প্রতি বছর প্রায় এক মিলিয়ন পর্যটক এই ব্রিজ ভ্রমনে আসেন।


উইস্টলার রিসোর্ট টাউনঃ
ভ্যাঙ্কুভার থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার উত্তরে পর্বত বেষ্টিত দর্শনীয় স্থান উইস্টলার। সুউচ্চ পর্বত আর উপসাগরের মাঝ দিয়ে তৈরি দীর্ঘ সড়কের নাম করণ করা হয়েছে “সি টু স্কাই সড়ক”, এই সড়কে ভ্যাঙ্কুভার থেকে দুই ঘণ্টা ড্রাইভ করলেই সোজা উইস্টলার!!!!!
উইস্টলারকে আসলে একটি অলিম্পিক ভিলেজ বলা চলে। ২০১০ সালে শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে মুলত এই শহরের আধুনিকায়ন করা হয়। জনসংখ্যার অধিকাংশই পর্যটক। প্রসাদ আকৃতির বহুতল ভবন, স্কিং, বিভিন্ন আকৃতির ক্যাবল কার, হর্স রাইড, এটিভি ট্রিপ, সহ নানা রকমের বিনোদনের ব্যাবস্থা।






জুলাই ৭, ২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫২
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×