বিগত কিছুদিন ধরেই জামাত শিবির কর্মীরা জঙ্গী স্ট্যাইলে পুলিশের উপরে হামলা করে আসছে। পুলিশও যথেস্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পাল্টা গুলিছোড়া থেকে বিরত আছে।তবে জামাতের বুদ্ধিমত্তা আন্ডার এস্টিমেট করার সুযোগ নাই। যতদিন যাবে এবং যত রায় বের হবে ততই পুলিশের উপরে হামলা বাড়বে ধরে নেয়া যায়।
জামাতের এ মুহুর্তের পরিকল্পনা স্পস্টতই পরিস্কার। জামাত আন্তর্জাতিক মিডিয়া, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র,ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলির সামনে নিহত দলীয় নেতা কর্মীর লাশ উপস্থাপন করে ফায়দা নিতে চাচ্ছে। বিচারকার্য চলাকালিন সময়ে বাইরে আন্দোলনরত জামাত সদস্যরা গুলিতে মারা গেছে এমনটা দেখানোই জামাতের উদ্দেশ্য। সরকার এখনো জামাতের ফাঁদে পা দেয় নাই সেইটা সবচেয়ে বড় খবর।
ব্লগে, ফেসবুকে,ঘরোয়া আড্ডায়, জনসভায় টক শোতে আমি আপনি অনেক সময় জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী তুলি। আসুন দেখার চেস্টা করি এর সমস্যা ও সম্ভাবনা কতটা প্রাপ্তির সম্ভবনা ও ক্ষয়ের আশংকা কেমন। বিষয়টা বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ রাস্ট্রের জন্য তুলনামুলক কতটা সহজ বা কতটা জটিল সিদ্ধান্ত তা নির্মোহ ভাবে অনুধাবনের চেস্টা করি।
জামাত শিবির নিষিদ্ধ করা না করাঃ
সংগঠন হিসাবে জামাতে এ ইসলামি প্রকাশ্যে বেশি বিপদজ্বনক নাকি আন্ডার গ্রাউন্ডে বেশি বিপদজ্বনক? এ নিয়ে বিতর্ক আছে। বিতর্ক আছে প্রকাশ্যে জামাত শিবিরের রাজনীতি হ্যান্ডেল করা তুলনামুলক নিরাপদ নাকি এদের নিষিদ্ধ করে নিশ্চিন্ন করার ঝুকি নেয়াটা ভাল? অনেকেই বলেন (আমিও প্রশ্ন তুলি) ব্যাপক মেজরিটি থাকা সত্যেও সরকার ক্যানো জামাতকে নিষিদ্ধ করছে না? নাকি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হাতিয়ার বিসাবে ব্যবহার হয় বলেই আওয়ামী লীগ জামাত নিষিদ্ধ করছে না। নাকি সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে?
এখন দেখি জামাত শিবির নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে কিছু পজেটিভ ও নেগেটিভ আফটার ম্যাথ।
পজেটিভ সিনারিওঃ
দৃশ্য ১। ১৯৭১ এ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অক্সিলারি ফোর্স হিসাবে জামাত ও ইসলামি ছাত্রসংঘ(শিবির) কাজ করছে বিধায় শ্রেফ নৈতিক কারনেই এই স্বাধীন দেশে এদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই।
দৃশ্য ২। নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে জামাত স্কুল, ক্যাডেট মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি কর্মী রিক্রুট করার সুযোগ হারাবে।ফলে ছাগু উৎপাদনের প্রধান ফ্যাক্টরি সাময়িক ভাবে হলেও বন্ধ হবে। সমগ্র উপমহাদেশে ধর্ম ভিত্তিক মৌলবাদি রাজনীতি বিরাট ধাক্কা খাবে।
দৃশ্য ৩। প্রকাশ্যে সংগঠন চালানোর সুযোগ হারানোয় দলের পক্ষে চাঁদা আদায় করা ও সমর্থকদের চাঁদা দেয়া বেআইনী হওয়ায় তা একদম কমে আসবে।এরই মধ্যে বর্তমান অ্যাকশনের খরচ চালাতে নেতা কর্মী ও শুভানুধ্যায়ি মাসিক চাঁদার হার দেড়্গুন বাড়ানো হইছে।
দৃশ্য ৪। নিষিদ্ধ সংগঠন হিসাবে এর সমস্ত আর্থিক প্রতিস্টান সরকারের ফেবারে বায়েয়াপ্ত হবে।ফলে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড সাময়িক ভাবে ভেঙ্গে যাওয়ায় আন্ডার গ্রাউন্ডে কাজ চালানো কঠিন হয়ে যাবে। নেতা কর্মীরা সাময়িক আর্থিক সমস্যার ফলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে ফলে এদের ৯০ ভাগ কে সমুলে উৎপাটনের সম্ভবনা তৈরি হবে।
দৃশ্য ৫। নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হবে না। শিবির কিছু দিন ডাক চিৎকার দিলেও সরকার সহজেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। কিছু কর্মী রাজনীতি বাদ দিয়ে সৌদি কুয়েত মালয়শিয়া এসব দেশে চলে যাবে। এক সময় সিনিয়র নেতাদের ফাঁসী বা জেল হয়ে যাওয়ার পর জামাতের বাদবাকি সক্রিয় কর্মীরা বিএনপিতে মার্য হয়ে যাবে। ফলে জামাত শিবির নামের সংগঠন এমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
দৃশ্য ৬। বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই প্রথমবারের মত সেক্যুলার ডেমক্রেসী প্রতিস্টার পাওয়ার সম্ভবনা তুলনামুলক ভাবে অনেক বেশি সামনে চলে আসবে।
দৃশ্য ৭। শিবির কর্মীরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে ও সেখান থেকে চোরাগোপ্তা হামলা ও বোমাবাজি শুরু করলে নিশ্চিত ভাবেই কিছু পাবলিক ক্যাজুয়েল্টি হবে এবং যার ফলে তাদের উপর দেশের সাধারন জনগন দ্রুত ক্ষেপে যাবে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এরা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বিবেচিত হবে। সরকার তখন সেনাবাহিনী, র্যাব,বিজিবি নামায়ে কঠোর হাতে নির্বিচারে দমনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জামাত শিবির চ্যাপ্টারের ইতি ঘটাবে। এই সিনারিওতে বিদেশী কিছু বন্ধু রাস্ট্রের সমর্থন থাকবে ও আওয়ামী লীগের আরেক টার্ম নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হবে।
নেগেটিভ সিনারিওঃ
দল হিসাবে জামাত শিবির নিষিদ্ধ করা আর এর কর্মীদের বাতাসে উবে যাওয়ার প্রত্যাশা করা এক জিনিস না। দল বিলুপ্ত হলেও এরা থেকে যাবে। ভোটার ৮ কোটি হলে এর ২% জামাত সে হিসাবেও ১৬ লক্ষ কর্মী সমর্থক।
ওহাবিজম এর মত বিপদজনক ও সক্রিয় আইডিওলজি আছে এমন লোকজনের ক্ষেত্রে ১৬ লক্ষ তুরী দিয়ে উড়ায় দেয়ার মত কোন সংখ্যা না।
এখন দেখি কি কি নেগেটিভ সিনারিও ঘটতে পারে।
দৃশ্য ১। গনবিস্ফোরন ঘটবে এবং বিএনপি ও জনগন সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসে অনাস্থা জানাবে। বিবিসি আল জাজিরা সহ বড় বড় গনমাধ্যম যুদ্ধাপরাধের বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আখ্যা দেয় শুরু করবে। বিদেশী চাপ আর ব্যাপক আন্দোলনের পরিনতিতে সরকারে পতন হবে।
দৃশ্য ২। জামাত শিবির কর্মীরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং জেএমবি অথবা নকশালের মত কৌশল গ্রহন করে সরকারী কর্মচারি,স্থাপনা,আওয়ামী লীগ পার্টি অফিস সহ জনসমাগম স্থলে চোরাগোপ্তা হামলা বোমাবাজি শুরু করবে । ব্যাপক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যার্থ হয়ে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করলে এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী টেক ওভার করবে এবং সব ধরনের পলেটিক্স ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দিবে।
দৃশ্য ৩। নিষিদ্ধ ঘোষিত বিলুপ্ত জামাতের বেশিরভাগ সক্রিয় কর্মী বিএনপিতে যোগ দেয়ার কারনে আক্ষরিক অর্থেই বিএনপি’র তার জাতীয়তাবাদী আদর্শ হারাবে ও পার্টি হিসাবে বিএনপির অস্তিত্ব হুমকীর মুখে পড়বে। বিএনপি’র মুল কর্মীদের তুলনায় জামাতের কর্মীরা ডেডিকেটেড হওয়ায় তারাই বিএনপি’র মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করবে। সক্রিয় মাঠকর্মী ও ফান্ডের জোরে বিএনপি’র স্ট্যান্ডিং কমিটি সহ বেশির ভাগ কৌশলগত গুরুত্বপুর্ন পজিশনে প্রাক্তন জামাত নেতারা ঢুকে যাবে। বিএনপির ভিতরে যারাই এর বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের সরিয়ে দেয়া হবে। ফলে জামাতের নিজেস্ব গোপন এজেন্ডার পিছনে যোগ হবে বিএনপির বিশাল ভোটের জোর।
দৃশ্য ৪। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হলে ৩/৬ মাস ছোটখাট আন্দোলন করে এরপর জামাত কর্মীরা ধীরে ধীরে দুইটা বড় রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা কর্মীদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ৭০ ভাগ বিএনপিতে আর ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগে যোগ দিবে।২০১৯ সালকে টার্গেট করে পরবর্তি কয়েক বছর ঐ সব দলের ভিতরে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে নিজেদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে আরো সমর্থক যোগার করবে এবং অবস্থান শক্ত করে সুবিধাজনক সময়ে দুইটা দল ভেঙ্গে নতুন একটা নামে আত্মপ্রকাশ করবে ও সত্যিকার অর্থেই প্রথমবারের মত একক ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যেতে পারে।
দৃশ্য ৫। জামাত শিবির আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাবে ও আওয়ামী লিগ নেতা কর্মীদের টার্গেট করে চোরাগোপ্তা হামলা করবে এমন কি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার উপরে প্রাননাশের হামলা হবে এবং প্রকাশ্যে জামাতের কোন অস্তিত্ব না থাকায় সব দোষ বিএনপির উপরে পড়বে। ফলে দেশে লম্বা সময়ের জন্য অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করবে ও সাধারন নির্বাচন অনিদৃস্ট কালের জন্য স্থগিত হবে। এই সুযোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি উতপ্ত হওয়া সহ তেল গ্যাসের ব্লক বিদেশী কোম্পানীর কাছে হাতছাড়া হয়ে বাংলাদেশ স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখিন হবে। অথবা জরুরী অবস্থা জারি করে নাম মাত্র নির্বাচন অনুস্টিত হবে কিংবা দেশে যুদ্ধাবস্থার দোহাই দিয়ে রাস্ট্রপতি সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে সদ্য মেয়াদউত্তীর্ন পার্লামেন্টকে রাস্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব চালায় যেতে বলবে।
দৃশ্য ৬। জামাত শিবির নীরবেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকবে। সরকার বদল হলে নতুন নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করবে। যুদ্ধাপরাধ ও কোলাবরেটর খাতা থেকে আনুস্টানিক ভাবে জামাতের দায়মুক্তি ঘটবে।
দৃশ্য ৭। কঠোর ভাবে প্রতিপক্ষ দমন করে ২০১৩ সালের শেষের দিকে দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া একদলীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করবে ও দুই বছরের মাথায় আবার নির্বাচন দিবে। তখন আন্তর্জাতিক চাপ ও কৌশলগত কারনে তারা সুবিধাজনক সময়ে জামাতের রাজনীতির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠায়ে নিয়ে জামাতকে আবার রাজনীতি করার সুযোগ দিবে।ততদিনে কিছু সিনিয়ার লিডারের ফাঁসি ,জেল অথবা বাধ্যতামুলক রাজনৈতিক অবসর হবে ও বাকিদের সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করে এর বিনিময়ে ভোটের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জামাতের সমর্থন নিশ্চিত করবে।
(কারো আর কোন সম্ভাবনার কথা পজেটিভ ও নেগেটিভ দু রকমই মাথায় আসলে লিখুন যোগ করে দেয়ার চেস্টা করবো।)