আল কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে, “পবিত্র ও মহিমাময় সেই মহান সত্তা- যিনি তাঁর বান্দাকে এক রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসাতে ভ্রমণ করালেন- যার চারদিককে আমি বরকতময় করেছি- যেন আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন।“ (১৭/সূরা বনী ইসরাইল:১)
মিরাজ:
১.আভিধানিক অর্থে মি’রাজ মানে উত্থান বা উর্ধ্বগমন।
২.পারিভাষিক অর্থে- মি’রাজ বলতে বোঝায় আল্লাহপাক তাঁর নবী-রাসূলগণকে নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য যে ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর রহমতের সান্নিধ্যে ডেকে নিতেন, ঐ ডাকে হাজির হওয়াকে মি’রাজ বলে।
৩.মিরাজপূর্ব পরিকল্পিত ও সময়োচিত ঘটনা
৪.মি’রাজ প্রায় প্রত্যেক নবী-রাসূলগণেরই হয়েছিল। কিন্তু সবার মি’রাজ একই স্থানে ও একই ধরনের হয়নি।
৫.আদম (আঃ)-এর মি’রাজ হয়েছিল বেহেশতের মধ্যে, মূসা (আঃ)-এর মি’রাজ হয়েছিল তূর পাহাড়ে আর বিশ্বনবীর (সাঃ)-এর মি’রাজ হয়েছিল সাত আকাশের উপরে আরশে মুয়াল্লায়।
মিরাজের উদ্দেশ্য:
১.নিদর্শন দেখানো (বনী ইসরাইল-১)
২.নবুয়তের দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষা প্রদান (নবী রহমতরূপে প্রেরিত)
৩.দ্বীনের বিজয় ও পরকালীন মুক্তি (সূরা সফ-৯)
৪.শিরক থেকে মুক্তি
চিন্তার বিষয়:
১.ট্রেনিং এ যাতায়াতের বিবরণ আসল নয়
২.আসল হলো ট্রেনিং এ প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা দ্বারা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন
মিরাজের দিন-তারিখ ও পথের কাহিনী:
১.নবুয়তের দ্বাদশ বছরে হুজুর (সাঃ)-এর ৫২ বছর বয়সে ২৭ শে রজব (২৬ তারিখ দিবাগত) বুধবার রাতে মিরাজ হয়েছিল।
২.প্রথমে যমযম কূপের পাশে সিনা চাক, তারপর বোরাকে সওয়ার, তারপর মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস তারপর উর্ধ্বগমন।
৩.অতিথিকে নিয়ে আসার জন্য যেমন গাড়ি পাঠানো হয় সেভাবেই বোরাক পাঠানো হয়েছিল।
৪.প্রথম আকাশে দেখা হয় আদম (আঃ)-এর সাথে, দ্বিতীয় আকাশে দেখা হয় ঈসা (আঃ)-এর সাথে, তৃতীয় আকাশে দেখা হয় ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে, চতুর্থ আকাশে দেখা হয় ইদ্রিস (আঃ)-এর সাথে, ৫ম আকাশে দেখা হয় হারুন (আঃ)-এর সাথে, ৬ষ্ঠ আকাশে দেখা হয় মূসা (আঃ)-এর সাথে এবং ৭ম আকাশে দেখা হয় ইব্রাহিম (আঃ)-এর সাথে।
মিরাজ উর্ধ্বলোকে কেন:
১.উর্ধ্বলোক বলতে উদ্দেশ্য হলো দূরত্ব বেশি।
২.কত সময়ে মেরাজে গেলেন: সময় বলতে গেলে লাগেইনি। (বোরাক শব্দের উৎপত্তি হলো বিদ্যুৎ থেকে।)
মিরাজ স্বশরীরে না স্বপ্নে:
স্বশরীরে হওয়া সম্ভব এবং হয়েছেও।
সময় অতিবাহিত হলো না কেন:
আল্লাহর ইচ্ছায় হয়তো সময়ের গতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যেমন প্রশাসনের ইচ্ছাই বিশেষ ব্যক্তির যাতায়াতের সময় অন্যান্য যাতায়াত বন্ধ থাকে।
নবীজী (সাঃ)-কি আল্লাহকে দেখেছেন:
বিষয়টি বিতর্কিত। তবে নবী (সাঃ) কর্তৃক আল্লাহকে দেখা অসম্ভব নয়।
শেষ বিচারের পূর্বে দোজখে লোক দেখা কি সম্ভব:
আল্লাহ চাইলে এখনই ভবিষ্যতকে দেখাতে পারেন। যেমন- মুক্তি পায়নি এমন কোন সিনেমা বন্ধুকে সবার আগে দেখাতে পারেন একজন নির্মাতা।
মিরাজের প্রকৃত শিক্ষা:
১.আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা না করা
২.পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করা
৩.আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও পথিককে হক বুঝিয়ে দেয়া
৪.অন্যায়ভাবে অর্থ ব্যয় না করা (অপচয় না করা)
৫.কৃপণতা না করা
৬.ধনের সাধারণ পার্থক্যকে মেনে নেওয়া
৭.দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের হত্যা না করা
৮.ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া
৯.কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা না করা
১০.এতিমকে না ঠকানো
১১.ওয়াদা পূরণ করা
১২.সঠিকভাবে ওজন করা (না ঠকানো)
১৩.অহেতুক ধারণা না করা
১৪.যমীনের উপর গর্ব সহকারে চলাফেরা না করা
মিরাজে গিয়ে রাসূল কি দেখলেন:
১.জিহাদকারীদের পুরস্কার
২.অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তির পুরস্কার
৩.নামাযে অমনোযোগী ব্যক্তির শাস্তি
৪.যাকাত অস্বীকারকারী, যেনাকার, খেয়ানতকারী, প্রতারক, গীবতকারী, ইলম গোপনকারী ও বদ আলেমদের শাস্তি
শেষকথা:
মিরাজের শিক্ষার আলোকে জীবন গঠন করতে হবে।
১. ০৬ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫ ০
আস সালাম আলাইকুম