শাহাবুদ্দিন শুভ
চোখ খোললেই সমস্যার শুরু।
এই চোখ দুটো খুললেই যেন পৃথিবীটা অচেনা হয়ে ওঠে।
চারপাশে শুধু বিভেদ, হাহাকার, প্রতিযোগিতা—
কে বড়, কে ধনী, কে গরিব, কে সাদা, কে কালো—
এ যেন এক অনন্ত বিচারকের আসর,
যেখানে প্রতিমুহূর্তে আমাদের তুলনা করা হয় অন্য কারও সাথে।
অথচ চোখ বন্ধ থাকলে সব একাকার।
সাদা-কালো বলে কিছু নেই, ধনী-গরিবের দেয়ালও ভেঙে পড়ে।
চোখ বন্ধ করলেই আমি হয়ে উঠি নিজের জগতের রাজা।
চাইলেই দাঁড়িয়ে পড়তে পারি আইফেল টাওয়ারের চূড়ায়,
হাঁটতে পারি লন্ডন ব্রিজের ওপর দিয়ে
অথবা স্পর্শ করতে পারি ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান।
মিশরের পিরামিডের অন্ধকার গহীনে ঢুকে
অনুভব করতে পারি প্রাচীন সময়ের নিঃশব্দ কাহিনি।
চোখ বন্ধ করলেই আমি ফিরে পাই আমার স্বপ্নের মানুষকে—
যে চলে গেছে, বা যে আজও আসেনি।
তার হাত ধরে পার করে দিই শত শত বছর।
স্মৃতির পথ ধরে ঘুরে বেড়াই পুরোনো দিনগুলোয়,
যেখানে ছিল শুধু নির্ভেজাল ভালোবাসা,
ছিল না প্রতারণা, ব্যস্ততা, কিংবা হিসেবের অঙ্ক।
চোখ বন্ধ করলেই আমি নির্মাণ করতে পারি এক নতুন পৃথিবী—
যেখানে যুদ্ধ নেই, হিংসা নেই, নেই রক্তপাত কিংবা দুর্নীতি।
সেখানে সবাই মানুষ, শুধু মানুষ—
জাতপাত, ভাষা কিংবা দেশের দেয়াল নেই সেখানে।
কিন্তু চোখ খোলার পরেই শুরু হয় বাস্তবতার কষাঘাত।
চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে তৈরি হয় দূরত্বের দেয়াল,
শুরু হয় বৈষম্যের হিসেব—
কে কী পেলো, কে কী হারালো, কে কোথায় পৌঁছালো।
চোখ খুললেই বোঝা যায়—
স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝখানে কী ভয়ঙ্কর ফারাক।
চোখ খুললেই আমরা হারিয়ে ফেলি সেই নিঃশর্ত ভালোবাসার জগৎ,
যেখানে ছিল কেবল অনুভব, ছিল কেবল শান্তি।
তবু বারবার আমরা চোখ খুলি,
কারণ জানি, চোখ বন্ধ করলেই হয়তো স্বপ্ন দেখা যায়,
কিন্তু পথ হাঁটা যায় না।
চোখ খুলেই আমাদের লড়তে হয়—
নিজের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে, সমাজের অদৃশ্য নিয়মের সঙ্গে।
তবে মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ করে ফিরে যাওয়া যায় সেই স্বপ্নলোকটিতে,
যেখান থেকে আমরা সাহস নিয়ে আবার চোখ খুলতে পারি—
একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৩