somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ব্যবসা!

২৫ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারগরি শিক্ষা উন্নয়নশীল জাতির জন্য হাতিয়ার। পত্রপত্রিকার পাতা খুললে একধরণের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে কম্পিউটার সাইন্স এ চার বৎসরের অনার্স কোর্স-এ ভর্তির জন্য AIU, BIU, CIU, DIB, NSB, EWB (নাম ঈষৎ পরিবর্তিত) নামের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। কখনো কখনো কোর্স ফিও উল্লেখ থাকে-১,৪০,০০০/- হতে ৫,৯০,০০০/-। তাদের চিত্তাকর্ষক এধরণের বিজ্ঞাপন যেকোন অনার্স ভর্তিচছু ছাত্রকেই আকর্ষন করবে।

যাই হোক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার এইবারের লেখা নয়। বরং বাংলাদেশের সরকারী একটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এই লেখা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স নামক ডিগ্রীটি শুধুমাত্র বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নাকি বাবসা !) এর মাধ্যমে প্রদান করছে কেন? উল্লেখ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয় যেমন- বাংলা, ইংরেজী, গনিত, জীববিদ্যা, পরিসংখ্যান ইত্যাদি গুরুত্বপর্ণ বিষয়গুলোতে কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কোন আগ্রহ নেই অর্থাৎ পড়নো হয় না। কারন কি? উক্ত বিষয়গুলো পড়ানো লাভজনক নয় বলে কি? দেশের ঐতিহ্যবাহী ডিগ্রী কলেজগুলোতে ( যেমন- রংপুর কারমাইকেল কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, করোটিয়ার সাদাত কলেজ ইত্যাদি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সকল বিষয় পড়নো হলেও কম্পিউটার সায়েন্স কেন পড়ানো হয় না ? কিংবা যদি পড়ানো হত তাহলে কত কোর্স ফি নেওয়া হত? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ যে কোন কোর্সে রেজিষ্ট্রেশন ও ভর্তি হতে ৯০০/- হতে ১৮০০/- কিংবা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা লাগতে পারে। তাহলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্সে ভর্তি (যে কোন প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে) হতে পচিঁশ-তিরিশ হাজার টাকা লাগবে কেন? এই অতিরিক্ত টাকা যায় কোথায়? সর্বোপরি কোর্স শেষ করতে আরও চাই লক্ষাধিক টাকা। অন্যান্য (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের) কোর্সের সাথে মিলিয়ে দেখলে এটি কতটুকু যুক্তি সংগত?

এসকল প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, মহাখালী এধরণের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত কেন? কম্পিউটার সাইন্সে ডিগ্রী প্রদানকারী এসকল প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানী ঢাকার বাইরে আর কোথায় কোথায় আছে ? দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এদেরকে কি পাওয়া যাবে? দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের কাছে কি এধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন মূল্য আছে? এসব প্রতিষ্ঠানের যদি সত্যিই ইচ্ছে থাকতো কম্পিউটার শিক্ষার আলো দেশের প্রতিটি প্রান্তরে পৌছে দেওয়া, তাহলে তারা কি শুধু মাত্র ধানমন্ডি-বারিধারার বিত্তশালী মানুষের দরজায় ক্যাম্পাস বানাতো?

এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান কেমন? বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট শিক্ষকদের দ্বারা কোর্স কন্ডাক্ট করা হয়। একটি বিশ্ববিদ্যায় কিংবা ইনস্টিটিউট স্থাপনের পূর্বশর্তগুলো এ সকল প্রতিষ্ঠান মেনে চলে কি ?

সম্ভবতঃ আসল উদ্দেশ্যটি হল দেশের ধনী অমেধাবী (ক্ষেত্র বিশেষে মেধাবীও হতে পারে) এবং দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের মাঝে একটি দেয়াল তৈরী করা। কারণ একটি ছাত্র যতই মেধাবী হোক না কেন তার যদি পর্যাপ্ত অর্থ (অন্তত লাখ দুই) না থাকে তবে সে কিছুতেই ভর্তি হতে পারবে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স নামের সাবজেক্টটিতে (ধরে নিচ্ছি আসন স্বল্পতার কারণে দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ মেলেনি তার)। কারন কোন সরকারী ডিগ্রি কলেজে এটি পড়ানো হয়না। অন্যদিকে একজন ছাত্র যে সাধারণ একটি সরকারী কলেজে ভর্তি হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না, খুব সহজেই সে ভর্তি হতে পারছে এসকল প্রতিষ্ঠানে মোটা টাকার বিনিময়ে।

সবশেষে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়েলর এইরূপ প্রহসনমলক আচরনের ধিক্কার জানাই। অনেকে হয়তো বলবেন, এসকল প্রতিষ্ঠানেরই কেবলমাত্র কম্পিউটার সাইন্স পড়ানোর অবকাঠামো রয়েছে কিন্তু সরকারী ডিগ্রী কলেজগুলোর নেই। কিন্তু কম্পিউটার সাইন্সের সাথে সাথে বিবিএ নামক আরও একটি সাবজেক্ট এসব নামধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুঠো বন্দী হয়ে আছে, যা সরকারী কলেজগুলোতে অন্যান্য প্রচলিত বিষয়ের সাথে পড়ানো যেত। এরজন্য অতিরিক্ত কোন ল্যাব কিংবা আমদানীকৃত ইন্সট্রুমেন্টও দরকার ছিল না। কিন্তু তা হচেছ কি? আর একটি কথা, যেহেতু এদুটি বিষয়ে বিদেশী বই এর মূল্য ও শিক্ষকদের বেতন অত্যাধিক বেশী তাই কোর্স ফিও বেশী- সহজ হিসাব। তাই এ কথাও অনেকে বলবেন। কিন্তু দেশের প্রতিটি বিভাগে এবং জেলায় যদি এসকল বিষয় পড়ানো হত তাহলে নিশ্চয় এই শিক্ষক সংকট দূর হত এবং সহজলভ্য শিক্ষা উপকরণ পেতাম এবং আমরা আরও বেশী ট্রেড এন্ড টেকনোলজী জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ পেতাম।

এটি এখনও শুরু করা যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে শুধু মাত্র কয়েকটি নামধারী শিক্ষা (তথা ব্যবসা) প্রতিষ্ঠান, কারন সর্বত্র এদের মুঠো বন্দী এই এসকল প্রায়োগিক বিষয়গুলো পড়ানো আরম্ভ হলে হয়তো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই দেশের মানুষেরা যেতে হয়তো খুব একটা আগ্রহী হবেন না, কতিপয় নামধারী শিক্ষকের ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়টাও হতো কমে যাবে কিন্তু ফলশ্রূতিতে লাভবান হবে দেশের অগণিত মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।

অনেকে হয়তো কোয়ালিটির কথাটা বলবেন, কিন্তু ভাল শিক্ষক ও ছাত্র পেলে, কোয়ালিটি সয়ংক্রিয়ভাবেই বাড়তে থাকবে। আর ল্যাব ফ্যাসিলিটিগুলো সময়ের সাথে ডেভেলপ করবে। অন্ততঃ আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা দরকারী (এবং ইন্টারেস্টিংও বটে) এই বিষয়গুলোর টাচ পেতে পারবে!

আমরা তাহলে কোন পথ বেছে নেব ?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩৩
১৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×