বাংলাদেশে বিদ্যুতের অবস্থা নিয়ে প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষোভ কম বেশি আছে। তারপরও বলব বিদ্যুতের অবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতি, আইন,নিরাপত্তা এগুলোর মতো অতো ভয়াবহ নয়। হয়তো রেশনিং এর ব্যবস্থাপনা ভালো হলে মানুষের বুঝতে সুবিধা হবে আর বুঝতে পারলে সহ্য ক্ষমতাও বাড়বে।তবুও সহ্য ক্ষমতা আর রেশনিং দিয়ে তো আর উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব নয়, বড় জোর দু/এক মাস পেরিয়ে বছর চলতে পারে, চলছেও তেমন করে।
সম্প্রতি ভাড়া ভিত্তিক ও বেসকারি উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা দেশের মানুষকে দ্রুত আংশিক সমাধান এনে দেবে হয়তো কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে দামে বেড়ে গরীবের নাগালের বাইরে চলে যাবে এই কাক্ষিত বিদ্যুত। বিদ্যুত তো আর মুঠোফোন ব্যবস্থার মতো না যে এর গ্রাহক বাড়লে ট্যারিফ (রেট) হ্রাস পাবে, এটা হলো উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ ও বিপননের মতো ক্রমানুসারিক সমন্বিত এবং বহু স্তরে বিন্যস্ত এক প্রক্রিয়া যার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই প্রযুক্তি। বাংলাদেশের মতো দেশকে যদি দ্রুত উন্নতি করে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে হয় তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক সেল গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় বিনিয়োগে ক্ষুদ্র শিল্প কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বহুজাতিক আর দেশীয় শক্তিশালী দু চারটি কোম্পানী টয়লেট টিস্যু থেকে কলার চিপস্ তৈরি করে চাহিদা পূরণ সহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনছে সত্য কিন্তু ধনিক শ্রেণীর হাতে উৎপাদনের পুরো ব্যবস্তাপনা ধনি দরিদ্রের বৈষম্য চরমে নিয়ে যাচ্ছে এতে সন্দেহ নেই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে মান সম্পন্ন পন্য স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটাতে পারলে অর্থনৈতিক কাঠামো সম্প্রসারিত হতে বাধ্য। ধনি দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে হলে প্রান্তিক ভাবে বিনিয়োগ খুবিই গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার আর এ বিনিয়োগের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনের নিশ্চয়তা দিবে সহজ লভ্য ও নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ।১৬ কোটি জনতার দেশে পণ্যের প্রারম্ভিক বাজার তৈরির থেকে নিরবিছিন্ন পণ্য সরবরাহ বেশি জরুরী যার অনেকটাই বিদ্যুতের সাথে সংশ্লিষ্ট। যদি বিদ্যুতের জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোগতা উৎসাহ হারায় তবে সেইটার সামগ্রিক ক্ষতি ভয়াবহ।আর যে বিদ্যুৎ এতো কিছুর সমাধান দিবে তার নিজের উৎপাদনের ব্যবস্থা যদি বেসরকারি/ ব্যক্তি হাতে চলে যায় তবে আমরা দ্রব্য সামগ্রী সিন্ডিকেটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন সিন্ডিকেটের দেখা পাবো। অমাদের দেশে রাজনৈতিক দল গুলোর রাষ্ট্র অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্র পরিচালনে অদক্ষতার কারণে এবং আইন প্রণেতারা দ্রুত মুনাফা লাভে সম্ভব এমন বানিজ্যে নিজেদের সম্পৃক্ত করবার অভিলাষের ফলে আগামী দেড় দশক হবে বিদ্যুৎ বানিজ্যের দশক। কারিগরী দিক না হলেও ভাড়া ভিত্তিক কেন্দ্র গুলো বানিজ্যের দিক থেকে লক্ষ্যে পরিণত হবে............। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৯