১২ মার্চ মহাসমাবেশ সফল করতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ব্যাপক লোক সমাগম ঘটিয়ে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ নিয়েছে নানা অপকৌশল:
@ আজ নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবে। অবস্থান জানান দিতে মঞ্চের সামনে জায়গা পেতেই দলটির এ কৌশল।
@ ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও জোনাকি সিনেমা হল_ এই তিন পয়েন্টে জমায়েত হবে জামায়াত। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যাবেন তারা। তবে গ্রেফতার ও সরকারি দলের বাধা এড়াতে রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীদের শোডাউন না করে আসার নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির তরফ থেকে।
@ এই তিন পয়েন্টে পেঁৗছানোর আগে কোনো ব্যানার বহন কিংবা মিছিল করবেন না জামায়াত নেতারা।
@ অসুস্থ কিংবা বয়োবৃদ্ধ না হলে দলের সব পুরুষ রুকন ও বাছাইকৃত কর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে হবে। কেউ যেতে না পারলে, তার বদলে আরেক জনকে ঢাকায় পাঠানোর খরচ দিতে হবে। ময়মনসিংহ জেলার মতো অনেক জেলা জামায়াতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অসুস্থতা কিংবা পরীক্ষা না থাকলে শিবিরের সাথী ও সদস্যদের সমাবেশে যোগ দেওয়া 'বাধ্যতামূলক'।
@ ঢাকায় শিবিরের মেস ও দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা। এর সত্যতা স্বীকার করে শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, 'সমাবেশে এসে কেউ কারাগারে যাক, তা হতে দিতে পারি না। তাই কর্মীদের বাসা-বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।'
@ দলীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও শিক্ষার্থীদেরও আসতে হবে সমাবেশে : জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও যোগ দিতে হবে মহাসমাবেশে। ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মচারী এ তথ্য জানিয়ে সমকালকে বলেন, 'স্যারেরা সমাবেশে যেতে বলছে।' শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, 'কাউকে জোর করে সমাবেশে আনার কোনো নির্দেশ নেই। যারা আমাদের ভালোবাসেন তারা আসবেন।'
@ বরিশাল বিএম কলেজের শিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত মাহমুদুল হাসান দোলন বলেন, "দলের তরফ থেকে তো আর লিখিত নির্দেশ থাকে না। যারা চাকরি করেন তাদের বেশিরভাগই সংগঠন করেন। যারা সংগঠন করেন না, তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আসেন। অফিসকে 'খুশি' রাখতে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন তারা।" কর্মসূচিতে গিয়ে কেউ আটক কিংবা আহত হলে তার দায়িত্বও অফিস নেবে বলে জানান তিনি।
@ ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীতে চার দলের গণমিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের কর্মচারী শফিকুর ইসলাম। তার পরিবারের দাবি, শফিক জামায়াতের সমর্থক ছিলেন না। চাকরি রক্ষায় দলটির কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধ্য হতেন।
একই ব্যবস্থা জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মুফতি আমিনীর
@ লালবাগ মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে যোগ দিতে শিক্ষকরা উদ্বুদ্ধ করেছেন। মাহফুজ নামে ফিকাহ বিভাগের নিচু ক্লাসের এক ছাত্র সমকালকে জানায়, সমাবেশে যোগ দিতে মাদ্রাসার 'বড় ভাই'রা তাদের বলেছেন। মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, কারও ওপর কোনো জোর নেই। যেসব ছাত্র রাজনীতি করে তারা সমাবেশে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। ক্লাস বাদ দিয়ে সমাবেশে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দেশের জন্য কাজ করছে। একদিন ক্লাস না করলে এমন কোনো ক্ষতি হবে না।'
@ জামায়াতপন্থি কর্মচারীরা সতর্ক: চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশে যোগদানের বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন সচিবালয়ের জামায়াতপন্থি সরকারি কর্মচারীরা। তারা প্রকাশ্যে মিছিল করে এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন না। তবে অফিস ছুটির পরে সমাবেশে অনেকেই অংশ নেবেন। এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গতকাল সমকালকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান শিকদার। জানা গেছে, সচিবালয়ে বর্তমানে জামায়াতপন্থি কর্মচারীদের দুটি গ্রুপ রয়েছে।
জামায়াতকে নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি।
জামায়াতকে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। সূত্র মতে, বিএনপির জন্য জামায়াত এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। একদিকে দলের মুক্তিযোদ্ধা নেতা ও অপরদিকে বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ জামায়াত থেকে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ডকে চাপ সৃষ্টি করলেও রাজপথের আন্দোলন বিবেচনায় রাখতে গিয়ে দলটি জামায়াতকে না পারছে গিলতে, না পারছে ছাড়তে। শত বাধা সত্তে¡ও জামাতকে এড়িয়ে চলতে পারছে না তারা। আর জামায়াতের কারণেই রাজনৈতিক জোটের পরিধি বাড়াতে পারছে না বিএনপি। নাম সর্বস্ব যে কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গে জোটে ভিড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে এগুলোর অধিকাংশই জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট হলেও এলডিপি ও কল্যাণ পার্টি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান করায় এ দুটি দলকে জোটে নেয়ার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে জামায়াতের। আর এ কারণে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দলগুলোকেও জোটে নিতে পারছে না বলে
আরো দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:৫১