একজন নাস্তিক, প্রশ্ন করলেন -- তের শ কোটি আলোক-- বর্ষ দূরের ছবি নাসার পাঠানো টেলিস্কোপ পাঠিয়েছে। কিন্তু স্রষ্টার সন্ধান পাওয়া যায় নি, তার কোন ছবি ও পাওয়া যায় নি। সুতরাং তার অস্তিত্ব কি প্রশ্নের মুখেই বরাবরের মত থেকে যায় না?
আমি বললাম স্রষ্টা নিরাকার, জগতের কোনো ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তোলা সম্ভব নয়।
এবার তিনি প্রশ্ন করলেন, যা দেখা যায়না তার অস্তিত্ব কিভাবে থাকে?
: দেখুন বিদ্যুতের কথা যদি বলি, বিদ্যুৎ এর কি আকার আছে? দেখা যায়? তবে কি বিদ্যুৎ নেই??
মধ্যাকর্ষন শক্তিই কি দেখা যায়? নাকি আকার আছে? তবে কি মধ্যাকর্ষন শক্তি ও নাই??? আগে সৃষ্টির ব্যাপারে একটা ফয়সালা হোক তারপরে না হয় স্রষ্টার খোঁজ খবর নেয়া যাবে।
: স্রষ্টা কি বিদ্যুৎ এবং মধ্যাকর্ষণের মতো শক্তি? শক্তির কিন্তু চিন্তা করার ক্ষমতা থাকে না। শক্তি পরিমাপের একক থাকে, স্রষ্টার একক কি?
: আমি অল্প জ্ঞানে যতটুকু বুঝতে পারি বলছি, তিনি শক্তি না, তিনি মহাশক্তি - মহান সত্তা যিনি কোটি কোটি গ্যলাক্সি এবং তার অন্তস্থ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি জগতের কতটুকু আমরা জানি বলেন? আগে তো সৃষ্টি কে জানুন, তারপর না হয় স্রষ্টার খবর নেয়া যাবে। সমগ্র সৃষ্টি জগতের অন্তত ১% জ্ঞান ও কি আমাদের আছে ? তাহলে এত কিছু কে সৃষ্টি করল তা জানা আমাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে বলুন? আমরা যাহা জানি না বা বুঝতে পারিনি এ জন্যই সেটা নাই তা বলা কি ঠিক হবে?? সুতরাং আগে সৃষ্টিকুল ভালোভাবে অবলোকন করি, তারপর স্রষ্টার ধারণা বুঝতে সহজ হবে।
: তিনি যে শক্তি না বরং মহাশক্তি। তিনি যে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এসব আপনি কি ভাবে বুজলেন?? সৃষ্টি জগত মানে কি? জগত যে সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে জানলেন? আমরা যাহা জানি না সেটা আছে বলা কি ঠিক হবে? যেমন ধরেন আমি যদি বলি ব্যাঙ্গমি আছে। আপনি আমার এই দাবির প্রমাণ চাইলেন, তখন আমি বললাম যেহেতু ব্যাঙ্গমি আছে নাকি নাই আমরা জানি না সুতরাং ব্যাঙ্গমি আছে। এটা কি যৌক্তিক হবে? তার মানে যেটা জানি না বলতে হবে জানি না। স্রষ্টা আছে কি নাই আমরা জানি না, এখন পর্যন্ত স্রষ্টার কোন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নাই। এবং স্রষ্টা থাকার কোন প্রয়োজনীয়তা ও এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় নাই।
: আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, এই যে আপনি আছেন তা আপনার কি কোন স্রষ্টা আছে বা নাই? আপনি কিভাবে আপনি হলেন তার কোন প্রমাণ কি আপনার কাছে আছে??
: মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছি, সৃষ্টি হই নাই। মানুষকে সৃষ্টি করা হয় এমন কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
: আপনি মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন ঠিক আছে। সেখানে কিভাবে এলেন আপনার কাছে কি কোন প্রমাণ আছে?
: হ্যাঁ প্রমাণ আছে। আমার বাবার একটা শুক্রাণু মায়ের ডিম্বাণু কে নিষিক্ত করার মাধ্যমে আমার শুরু।
: বাবার শুক্রাণুতেই যে আপনি হয়েছেন এতটা নিশ্চিত কিভাবে হলেন? এমনও কি হতে পারে না যে শুক্রাণু ছাড়াই হঠাৎ দৈব ঘটনায় আপনি মাতৃগর্ভে অস্তিত্ব লাভ করেছেন এবং ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছেন?
: শুক্রাণু ছাড়া জন্ম লাভ করা সম্ভব না। মাইক্রবায়োলজি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলে বুঝতে পারতেন।
: ধরুন পৃথিবীতে ৮০০ কোটি মানুষ, এর মধ্যে দু-একজন ও কি প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে দৈব ঘটনায় জন্মলাভ কিম্বা অস্তিত্ব লাভের সুযোগে আছে? একটু ভেবে বলুন। আপনি এবারে ও হাসছেন। ভাবছেন এ আমি কার সঙ্গে কথা বলছি যে কিনা মাইক্রোবায়োলজি সম্পর্কে একেবারে নুন্যতম বেসিক ধারানাটুকুও রাখে না! আপনার কথায় ফিরে আসি, তাহলে সবাইকে জন্ম নেয়ার জন্য একজন বাবার শুক্রাণু অবশ্য অবশ্যই লাগবে। তাহলে পৃথিবীতে যখন প্রথম মানুষের আবির্ভাব হলো সেই আদি মানবের শুক্রাণু আপনি কোথায় পেয়েছিলেন?
: পৃথিবীতে হুট করে একদিন প্রথম মানুষ আবির্ভাব হয়নি। প্রথম এককোষি প্রাণী থেকে মানুষ পর্যন্ত সব স্তরের বংশ বৃদ্ধির ব্যাখ্যা আছে জীববিজ্ঞানে।
: ওকে, এখন মাইক্রোবাইয়োলজি থেকে চলে আসলেন বিবর্তনবাদে! ঠিক আছে। আমি যে ডিভাইস দিয়ে এখানে লিখছি এটা কেউ তৈরী করেনি। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরিত লাভার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছিল, তারপর বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় উন্নত হয়ে আজকের এই লেটেস্ট ডিভাইসে পরিনত হয়ে আজকে আমার হাতে। এর পেছনে কেউ ছিল না। এটা কি বিশ্বাস করেন??
: না বিশ্বাস করি না। কারণ মোবাইল যে মানুষ বানায় তার প্রমাণ আছে। আপনি ইচ্ছা করলে মোবাইল এর কারখানা পরিদর্শন করতে পারবেন। অসংখ্য মানুষ মোবাইল তৈরির সাথে জড়িত। তাই প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা জানি মোবাইল মানুষ তৈরী করে। কেউ আমাকে স্রষ্টা বিশ্বাসের একটা কারণ দেখাতে পারলে তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
: আপনি বলেছেন মোবাইল মানুষ বানায়, এটা তো সবারই জানা। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে কারো সাহায্য ছাড়া বিবর্তনের মাধ্যমে এ ধরনের বা এর চাইতে উন্নত কোনো ডিভাইস সৃষ্টি হওয়া সম্ভব কিনা? কিম্বা অন্য কোন ধরনের উন্নত যন্ত্র এভাবে তৈরি হয়েছে এমন কোন প্রমান আপনার কাছে আছে কি? কিম্বা একটা কম্পিউটার তৈরির কারখানা মানুষ বা অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই একা একাই দীর্ঘ দিনের বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠা সম্ভব কিনা?
: ডিভাইস বা কম্পিউটার কারখানা মানুষের তৈরী। এগুলোকে কৃত্রিম বলে। একই বা আরও বেশী কর্মক্ষম কিছু প্রকৃতিতে তৈরী হতে পারে। আর বিবর্তন এর মাধ্যমে যা তৈরী হয় সেগুলো প্রাকৃতিক। যেমন মানুষ, উদ্ভিদ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি। মানুষের ব্রেন কম্পিউটার থেকেও বেশী শক্তিশালী, প্রাণীর চোখ অনেক পাওয়ার ফুল। এসব বিবর্তন এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী।
: দেখুন কম্পিউটার কারখানা যে মানুষের তৈরি এটা তো সবারই জানা কথা। আমার প্রশ্ন ছিল এধরণের প্রযুক্তি কারো সাহায্য ছাড়া বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠা সম্ভব কিনা? এর উত্তর হতে পারতো "হা" অথবা "না" অথবা "জানা নাই" কিন্তু আপনি প্রশ্নটার উত্তর দেন নাই, এড়িয়ে গিয়েছেন। আপনাকে আরেকটি প্রশ্ন করি, আপনি যে বিবর্তনবাদ সমর্থন করেন বিবর্তনের শুরু টা নিশ্চয়ই বিগব্যাং থেকেই ধরবেন, বিগব্যাং সংগঠিত হওয়ার আগে কি ছিল? এর পেছনের মহাশক্তিই বা কি? এই মহাজগত ও গ্যালাক্সি এগুলো কে সৃষ্টি করল? এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড কোটি কোটি নক্ষত্র কে সৃষ্টি করল? এগুলো কি শূন্য থেকে এমনি এমনি হয়ে গেল?? শূন্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি করা যায়??? এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলে??
এবার তিনি চুপ!
এক সপ্তাহ পর বললাম আমার প্রশ্নের উত্তর দিন প্লিজ। এবারও তিনি চুপ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৭